আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা শিক্ষাঙ্গনের ধর্ষক হিসেবে শুধু পরিমলকে চিনছি? বাকিদের কারা রুখবে?

রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র ১. সম্প্রতি ধর্ষক পরিমলের কুকর্ম মিডিয়াতে প্রচার হওয়াতে বাংলাদেশি জনগণ বুঝতে পেরেছে শিক্ষকেরাও সুযোগ পেলে ধর্ষণ করতে পছন্দ করেন। এবং আধুনিক তরুণদের মতো সেটা মোবাইল ফোনে ভিডিও করে রেখে ব্ল্যাকমেইল করতেও ভুলে যান না। বলা বাহুল্য, ভিকারুননিসার মতো স্বনামধন্য স্কুলের স্কুলছাত্রী ধর্ষিত হওয়াতেই এই ঘটনাকে আমলে নিয়েছে বাংলাদেশের অতিমাত্রায় সচেতন জনগণ। এদিকে গ্রামে-গঞ্জে, ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলাগুলোতে, অলিতে-গলিতে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, কোচিং সেন্টারের শিক্ষকেরা যে তাদের ধর্ষণকক্ষে সমানতালে ধর্ষণ করে চলেছেন অজস্র কিশোরীদের, সেটা মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার হচ্ছে না। কিশোরী মেয়েটির লুকানো ডায়েরির পাতায় চাপা থাকছে, সময়ের কালস্রোতে একসময় মুছে যাচ্ছে... এই হলো সেকুলার বাংলাদেশ।

ব্লগে বিভিন্ন পোস্টে দেখছি পরিমলকে নিয়ে রীতিমতো ধর্মবৈষম্য শুরু হয়ে গেছে! পরিমল হিন্দু তাই ধর্ষণ করেছে, কেন মুসলমান শিক্ষকেরা কি ধর্ষণ করে না? ধর্ম না, মূল কারণ যৌনবিকৃতি। পর্নোছবি পাল্টে দিয়েছে হালের যৌনতার স্বরূপ। পর্নোছবির বিকৃতি এসে লেগেছে প্রায় প্রত্যেক দেশের সংস্কৃতিতে, যৌনরুচিতে। আমেরিকানরা-জাপানিজরা অন্তত এই একটা দিক থেকে চেতনাগতভাবে ধ্বংস করে দিতে পেরেছে সর্বস্তরের সবাইকে। যে শিক্ষক যে ছাত্র হরদম পর্নোছবি নিয়ে মেতে থাকবেন, তার মাথার ভেতরে ঢুকবে ওভাবে যৌনকর্ম চালানোর শয়তানি বুদ্ধি এবং সেটাকে ক্যামেরাবন্দী করে রাখার জঘন্য পরিকল্পনা।

২. যখন থেকেই শিক্ষক নামের এই সম্প্রদায় বুঝতে পেরেছে তারা মানুষ হিসেবে সকলের উর্ধ্বে তখন থেকেই তাদের কিছু ক্ষমতা তৈরী হয়ে গেছে বলে তাদের ধারণা। অনেকটা পুলিশের মত। অস্ত্র আছে, পোশাক আছে, ধর্ষণ করো ইচ্ছেমতো। ঠিক তেমনি পরিমলের মতো বিকৃত যৌনরুচির শিক্ষকেরাও 'হাতে নাম্বার আছে, পরীক্ষা আছে, প্রাইভেট পড়ো, ধর্ষণ করো' নীতিতে বিশ্বাসী। এরা মূলত পেডোফিলিক গোত্রের।

অল্প বয়স্ক কিশোরীদের প্রাইভেট পড়ানোর কথা বলে বাসায় ডেকে নিয়ে যৌনকর্মে ব্যবহার করে। মেয়েদের বয়স অনুসারে এ বয়সে তারা আবেগপ্রবণ এবং অনেকটাই অবুঝ হয়ে থাকে। অবশ্য কারো কারো প্রাপ্তবয়স্কতার সাথে এরা পেরে উঠতে পারে না। তখন সেই মেয়েটার নামে বাজে কথা ছড়িয়ে দেয়। এমনি কিছু শিক্ষকদের বর্ণনা নিয়ে আমার এই পোস্ট।

রেফারেন্সের পুরোটুকুই আমার বড় বোনের ডায়েরির পাতা এবং ১২ বছর আগের সে সময়টার আমি। ৩. ঢাকার কাছাকাছি একটি জেলা টাঙ্গাইল। সাহিত্য-সংষ্কৃতিতে বেশ সমৃদ্ধ। টাঙ্গাইলের চমচম, তাঁতশাড়ির রয়েছে বিশ্বখ্যাতি। এই টাঙ্গাইলেরই বেশ নামকরা কোচিং প্রতিষ্ঠান 'সৃষ্টি কোচিং সেন্টার'।

তখন সৃষ্টির প্রধান ছিলো মিরন স্যার নামের একজন। সাদা পাঞ্জাবি, জোব্বা, মাথায় পাগড়ি, গায়ে সুগন্ধি, চোখে সুরমা, হাতঘড়ি এবং হাতে ব্যাগ নিয়ে মিরন ঘুরতো সবসময়। মিরনের বাচনভঙ্গী, ব্যক্তিত্ব সব মেয়ের কাছেই অসাধারণ ঠেকতো। অত্যন্ত ধীরলয়ে কথা বলে সে। কোচিং সেন্টারের সব মেয়েরই মাথায় ওড়না এবং শালীন পোশাক পরা বাধ্যতামূলক।

মিরন সব মেয়েকেই ডাকতো 'আম্মা', 'মা' বলে। এই মিরন ভেতরে কতটা অসভ্য আর বিকৃত রুচির ছিলো সেটা যারা কাছ থেকে দেখেছে তারাই বুঝেছে। অত্যন্ত চাতুরির সাথে মেয়েদের পটিয়ে সে নিয়ে যেতো সৃষ্টির ভবনের ভেতরে, যেখানে তার একটা নির্জন কক্ষ ছিলো। এরপর বিভিন্ন ধরণের হ্যালুসিনেটেড নেশাদ্রব্য খাইয়ে মেয়েটাকে অর্ধচেতন করে তার সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতো। মেয়েটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বুঝতে পারতো না এবং পরে মিরনের উপর তার কোন রাগও কাজ করতো না! বায়োলজিক্যাল ব্যাপার।

যে মেয়েদের যৌনঅভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে, তাদের যৌনঅভিজ্ঞ করে তুললে তার ফলাফল কি হয়, সেটা খুব ভালো করেই জানতো মিরন। তাই বাধ্য হয়েই মেয়েগুলো পরে তার কাছে ছুটে আসতো। মিরনের জন্য হাত কাটা, পা কাটা, মিরনের বিয়ের খবর শুনে সুইসাইড করতে যাওয়া-এগুলো ছিলো 'কমন' ব্যাপার। আমার বোন তখন পড়তো ক্লাস এইটে। কেবল বেড়ে উঠছে, অন্যান্য বান্ধবীদের চেয়ে ওকে বেশি প্রাপ্তবয়স্ক দেখাতো।

ও সৃষ্টিতে পড়তো না কিন্তু মিরন ওর পিছে লেগে গেলো। যেখানে প্রাইভেট পড়তে যায়, মিরন গাড়ি নিয়ে অনুসরণ করে। তখন আমার বয়সও দশ এর মতো। মুখে প্রতিবাদ করতে শিখেছি তবে বড়দের অনেক বিষয়ে ইন্টারফেয়ার করাটা কেউ মেনে নিবে না। আমার বোন ছিলো মুখচোরা স্বভাবের সব বিষয় আমার সাথেই শেয়ার করতো।

তার বান্ধবীদের মিরন কিভাবে নষ্ট করেছে সেটা সে বয়সে কোনরকম বুঝেছিলাম। এই মিরন একবার বাসাতেও উড়োচিঠি পাঠালো। যেটাতে হাতের লেখা, ভাষা, হুমকি সবই ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে লেখানো। যথাসময়ে মিরন সেটা স্বীকারও করলো! মিরনের কথা বলার স্টাইল ছিলো এরকম, যখন সে টিনএজ মেয়েদের পটাতো : মিরন : আমি দার্জিলিং গিয়েছিলাম। সেখানে এক পাহাড়ে চড়লাম।

হঠাৎ তোমার মুখটা ভেসে উঠলো... আমি চমকে উঠলাম! মেয়েটা : তাই নাকি স্যার? মিরন : হ্যাঁ তাই। এরপর আমি একটু দূরে দেখতে পেলাম একটি মন্দির। মন্দিরের এক পুরোহিত আমাকে এই সিঁদুরের কৌটা উপহার দিলেন, এই দ্যাখো? মেয়েটা হাঁ করে সিঁদুরের কৌটা দেখলো। এরপর মিরন মেয়েটাকে সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে ব্যাগ থেকে একটা চাকু বের করলো। তারপর মেয়েটাকে বললো, এই চাকুটা আমি সেখান থেকেই কিনেছি।

যদি আমার কথা না শুনো এই চাকু দিয়ে তোমাকে আমি মেরে ফেলবো কিন্তু! হা: হা: এরপর মেয়েটা ভয়ে কাঁপবে এবং প্রচণ্ড মানসিক চাপ এর মধ্যে পড়ে যাবে। এই বয়সে এ ধরণের আচরণ নাড়া দেয় অনেক বেশি। সে সময় অনেক ছোট ছিলাম, মিরনের মতো কুলাঙ্গারদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারি নি। আমাদের অভিভাবকদের অসেচতনতা এবং আমাদের ভদ্রবেশি শয়তানদের পা চাটার অভ্যাসের জন্য মিরনের মতো অপরাধীরা চিরকালই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে। এই মিরন বছর খানেক আগে বিয়ে-শাদি করে ভদ্র মানুষ হয়েছেন শুনেছি! এবং তার বিনয়ী আচরণের জন্য তাকে অনেকেই গুরু মানেন।

৪. এবার এক সহপাঠীর বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি। ক্রিমিন্যাল আরেকটা কোচিং সেন্টারের মালিক। নাম শাহীন। কোচিং সেন্টারের নামও তার নামেই করা ''শাহীন কোচিং সেন্টার''। শাহীন স্যারকে কাছ থেকে দেখেছি।

তার ভেতরে যে ভয়াবহ আরেকটা বিকৃত শাহীন আছে সেটা বুঝতে পারি নাই। একদিন সে মেয়েটাকে দেখা করতে বলে তার রুমে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে সে কম্পিউটারে বসে পর্নোছবি দেখছিলো এবং মেয়েটাকে কাপড় খুলতে বলে এবং যৌনকর্মে বাধ্য করাতে গেলে মেয়েটা দৌঁড়ে পালিয়ে ইজ্জত রক্ষা করে। এই হলো এদের শিক্ষকতার আড়ালের ভণ্ডামি! ৫. এমন অনেক ঘটনা দেখেছি, শুনেছি, চোখের সামনে ঘটে গেছে কিছুই করতে পারি নি বয়সের কারণে। এখন মনে হয়, এদের বিরুদ্ধে সেদিন রুখে দাঁড়ালে, এদের অন্ধকারগুলো ফাঁস করে দিলে হয়তো আরো মেয়ের সম্ভ্রম রক্ষা হতো, অনেকে হয়তো বুঝতেই পারছে না কী হারাচ্ছে! একটা বয়সে তীব্র ঘৃণাবোধ হবে যখন এই শিক্ষকরূপী পশুগুলোর কথা মনে পড়বে।

এখানে শুধু কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের কথা তুলে ধরেছি, সরকারি বালক ও বালিকা বিদ্যালয়ের, কলেজের শিক্ষকদের কুকর্ম পরের পোস্টে তুলে ধরবো। সেটা এর চাইতে কোনো অংশেই কম না। পরিমল শুধু একটাই না আরো আছে। সবার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। শিক্ষক যেন পুলিশের মতো ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে তার আগেই এদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া অতীব প্রয়োজন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।