এখন সবাই ঘুরে বেড়ায় , এটা ভালো...
নীলপদ্ম একটা মীথ। রামায়নে আছে , লংকা জয়ের জন্য রামচন্দ্র দেবী দূর্গাকে অকাল বোদনের আয়োজন করেন। কিন্তু পুজার জন্য অপরিহার্য নীলপদ্ম না পাওয়ায় রামচন্দ্র নিজে আপন নীল চু উৎপাটনে উদ্ধত হলে স্বয়ং দেবী দূর্গা তাকে নিরস্ত করেন। নীল পদ্মের উল্লেখ হিন্দু পুরানে আছে ঠিকই কিন্তু বাস্তবে নীলপদ্ম থাকার কোন প্রমান মেলেনা।
গত সতের জুন কালের কন্ঠ পত্রিকায় ফখরে আলমের জলে ভাসা পদ্ম লেখাটি আমার দৃষ্টি গোচর হয়েছে।
তিনি নীল শাপলাকে নীল পদ্ম বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি তার লেখায় বলেছেন , নিমপ্যাসিয়া গোত্রের জলজ ভাসমান উদ্ভিদ হচ্ছে পদ্ম। যা কিনা হবে নিমফিয়া। ঘরসঢ়যধবধ পধঢ়বহংরং হচ্ছে নীল শাপলার উদ্ভিদ বিজ্ঞানীয় নাম আর পরিবার হচ্ছে ঘুসঢ়যধপবধব. ঘুসঢ়যধপবধব পরিবার ভুক্ত আরেক জলজ উদ্ভিদ পদ্মের উদ্ভিদ বিজ্ঞানীয় নাম হচ্ছে ঘবষঁসনড় হঁপরভবৎধ. নীল শাপলাকে ফখরে আলম সাহেব নীল পদ্ম বলে ভুল করেছেন! কিন্তু নীল শাপলাকে কোন ভাবেই নীলপদ্ম বলা যাবেনা। লেখক যথার্থই বলেছেন পদ্ম হল নেলুম্ব নুসিফেরা।
তাই নিমফিরার কোনও প্রজাতি পদ্ম হতে পারেনা।
বরিশালের ডা. আহমেদ একজন ফুলের মানুষ ছিলেন। প্রকৃতির সাথে ছিল তাঁর নিবিঢ় সম্পর্ক। তাঁর সুগন্ধি নীল শাপলার খুব সখ ছিল , বরিশালের আরেক প্রকৃতি প্রেমী শিশির গুহর কাছে ছিল সেই নীল শাপলা। যার ভাগ তিনি কাউকে দিতেন না।
এ নিয়ে ডা. আহমেদের মনে খুব দু:খ। সে দু:খের কথা তিনি প্রায়ই বলতেন তাঁর বন্ধু উদ্ভিদ বিদ্যার শিক , নিসর্গি দ্বিজেন শর্মাকে। দ্বিজেন শর্মা বাষট্টির ছাত্র আন্দলনের সময় ফেরারি অবস্থায় চাঁদপুরের এক গ্রামে আশ্রয় নেন। তিনি দেখেন গৃহকর্তার পুকুর বোঝাই নীল শাপলা। সে এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য।
নীল শাপলা আপনিই চারা গজায় বোঁটা আর ফলকসন্ধি থেকে। তিনি সেখান থেকে কিছু ফুলের কুড়ি পার্শ্বেলে ডা. আহমেদের কাছে পাঠান। এর পরের গল্প হচ্ছে দ্বিজেন শর্মা ধরা পরেন এবং জেলে চলে যান এবং কয়েক মাস জেল খেটে বরিশাল ফিরে দেখতে পান ডা. আহমেদের ছাদে নীল শাপলা ফুটে আছে এবং গন্ধ ছড়াচ্ছে! এর পর অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা একাত্তরে আগর তলায় নীল শাপলা ভর্তি একটি লেক দেখতে পান। তার মতে সেখান থেকেই নীল শাপলা চাঁদপুরে পৌঁচেছে। আর ঢাকার বলধা গার্ডেনের নীল শাপলা ডা. আহমেদ দিয়েছিলেন।
অমৃত লাল আচার্য্য এবং ডা. আহমেদ ছিলেন খুব ঘনিষ্ট বন্ধু। সেই সুবাদেই বলধায় নীল শাপলার আগমন। সারা বছরই বলধা বাগানে তিন চারটি চৌবাচ্চায় নীল শাপলা ফুটে থাকে। বিশেষ করে বলধা বাগানের সাইকী ভাগে প্রবেশের বাম দিকে ঘৃত কুমারীর পাশের চৌবাচ্চায় নীল শাপলা কখনও দেখা যায়নি এমনটা হয়নি। এখন অবশ্য অনেকের সংগ্রহে নীল শাপলা আছে।
ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এনার্জি পার্কের চৌবাচ্চায় আমরা নীল শাপলার দেখা পাই। ঢাকার লাল মাটিয়া কলেজের একজন অধ্যাপিকাসহ অনেকের সংগ্রহেই নীল শাপলা রয়েছে বলে জানা যায়। আর নীল শাপলার আখরা বলা যায় যাকে সে হচ্ছে মাধবপুর লেক। যে কেউ মাধবপুর বেড়াতে গেলে মাধবপুর লেকের নীল শাপলায় প্রান জুড়িয়ে নিতে পারেবন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: জলজ উদ্ভিদ শাপলা , মাখনা , পদ্ম এবং চাঁদমালার মধ্যে চাঁদমালা ছাড়া সবই নিমফিয়েস পরিবার ভুক্ত )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।