আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বে আরো একটি সম্পদে পরিপূর্ণ অথচ গরীব দেশের জন্ম ঘটলো।

হিংসা-বিদ্বেষ বিহীন, ভালবাসায় পরিপূর্ণ পৃথিবী চাই উত্তর এবং দক্ষিণ সুদানের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ১৯৫৫ সাল থেকেই৷ তখনই দক্ষিণ সুদানের মানুষের ভেতর স্বাধীনতার বীজ বুনতে থাকে৷ আজ রাতে বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটবে৷ দক্ষিণ হবে স্বাধীন, সার্বভৌম একটি দেশ৷ দক্ষিণ সুদানের মানুষরা কখনোই সচ্ছল ভাবে বসাবাসের সুযোগ পায়নি৷ এবং এর জন্য সবসময়ই তারা উত্তর সুদানকে দায়ী করতো৷ রাজধানী ছিল খার্তুম, তাই অর্থনৈতিক দিক থেকে খার্তুমেই সব পয়সা ঢালা হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও এবিষয়ে ছিল সন্তোষ৷ উত্তর সুদানের ওপর মিশর এবং ব্রিটেনের প্রভাব ছিল৷ আর এসব কারণেই সুদানের মানুষের মধ্যেই বিরাজ করছিল টান টান উত্তেজনা৷ আজ রাত বারোটায় আফ্রিকা তথা পৃথিবীর মানচিত্রে দুটি দেশ স্থান পাবে৷ উত্তর সুদান – যার রাজধানী খার্তুম এবং দক্ষিণ সুদান – রাজধানী জুবা৷ দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জন গারাং৷ কোন অবস্থাতেই আর আরবি ভাষীদের অধিনস্থ হয়ে কাজ করবেন না – এই মনোবলে এগিয়ে যান তিনি৷ ১৯৭২ সালে তিনি গড়ে তোলেন একটি আন্দোলনকারী দল, নাম আনইয়া-নিয়া৷ ১৯৭২ সালে উত্তর সুদান দক্ষিণ সুদানের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে, চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায়৷ সেই চুক্তি অনুসারে দক্ষিণ সুদানের স্বায়ত্ত্বশাসনের ক্ষমতা থাকবে, নিজেদের একটি সংসদও থাকবে৷ তবে সেই চুক্তি দশ বছর অতিক্রম করার আগেই ভেঙে পড়ে৷ উত্তর সুদান সেনাবাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দক্ষিণ সুদানের ওপর৷ ১৯৮৩ সালে জুবার সংসদকে পুরোপুরি ভেঙে দেয়া হয়৷ বলা হয়, ইসলামি আইন-কানুন অনুযায়ী দক্ষিণ সুদান শাসিত হবে৷ আবারো বিদ্রোহের দানা বাঁধতে থাকে দক্ষিণ সুদানের মানুষের ভেতর৷ গঠিত হয় আরেকটি দল, নাম সুদান পিপিল্স লিবারেশন আর্মি সংক্ষেপে এসপিএলএ৷ স্লোগান হয় ‘আমরা একটি নতুন সুদানের জন্য যুদ্ধ করি'৷ নেতৃত্ব দেন জন গারাং৷ এরপর সত্যি সত্যিই শুরু হয় সংঘর্ষ৷ বিমান হামলা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ওপর প্রতিনিয়ত হামলা করতো উত্তর সুদানের সেনাবাহিনী৷ জন গারাং বিশ্বাস করতেন, নতুন সুদান এমন একটি দেশ হবে যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ এবং আরবরা একসঙ্গে বসবাস করতে পারবে৷ মানুষে-মানুষে কোন ভেদাভেদ থাকবে না৷ ধর্ম, ভাষা, জাতি নিয়ে কোন সংঘর্ষ হবে না৷ কিন্তু এসপিএলএ-র অনেকেই এই ভাবধারায় বিশ্বাসী ছিল না আর উত্তর সুদান তো হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিল এই ধরণের আদর্শকে৷ তবে ১৯৭২ সালের শান্তি চুক্তি ভঙ্গ করায় দক্ষিণ সুদানের মানুষ সবসময়ই ক্ষিপ্ত ছিল উত্তর সুদান তথা খার্তুমের ওপর৷ মনে মনে সবাই প্রস্তুত ছিল স্বাধীনতার জন্য৷ ২০০৫ সালে আফ্রিকার অন্যান্য দেশের মধ্যস্থতায় আরেকটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ এবার তা হয় কেনিয়ায়৷ চুক্তি অনুসারে সুদানের প্রাকৃতিক সম্পদ গোটা দেশের মানুষের মধ্যে ভাগাভাগি করার কথা বলা হয়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অঙ্গীকার করা হয় এবং জন গারাং-কে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট করা হয়৷ চুক্তিতে উল্লেখ ছিল যে, চুক্তিটি ছয় বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এবং এরপর একটি গণভোটের আয়োজন করা হবে৷ জানা হবে, মানুষ কি একটি সুদানেই থাকতে চায় নাকি সুদান দুভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি পৃথক স্বাধীন দেশে পরিণত করতে চায়৷ ছয় বছর পার হয়েছে , এসেছে ২০১১৷ ভোটাভুটিও হয়ে গেছে ফেব্রুয়ারিতে৷ আর কয়েক ঘণ্টা পরেই আসছে দক্ষিণ সুদান৷ ২০০৫ সালের শান্তি চুক্তির কিছুদিন পরেই জন গারাং একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যান৷ তার পদে আসীন হন সালভা কির৷ তিনি পুরোদমে কাজ করতে থাকেন দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার জন্য৷ দক্ষিণ সুদানের মানুষের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই নিরক্ষর৷ তারা কেউ লিখতে বা পড়তে পারে না৷ এই অবস্থার পরিবর্তন করতে চান তিনি৷ তিনি বেশ জোর দিয়েই বলেন, ২০০৫ সালের চুক্তি অনুসারে কাজ করা হচ্ছে না৷ চুক্তি ভঙ্গ করা হয়েছে৷ দক্ষিণ সুদানের অনেক মানুষই বিশ্বাস করেন, তাদের দেশ এগিয়ে যাবে, তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটবে৷ এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গণভোটের মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ৯ই জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণ সুদানকে স্বাধীন ঘোষণা করা হবে৷ সেই গণভোটে স্বাধীন সুদানের পক্ষে ভোট পড়েছিল প্রায় ৯৯ শতাংশ৷ ৫০ বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে দক্ষিণ সুদানের মানুষদের৷ কাঙ্খিত স্বাধীনতাকে সত্যিকার অর্থে স্পর্শ করতে৷ তথ্যসূত্রঃ এখানে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।