২. ব্যক্তির চেতনা একটু হলেও লুপ্ত হয় যখন সে কোন প্রতিষ্ঠানে যুক্ত থাকে। ১. যদি চতুর্দিক বন্ধ নিরেট পাথরের ভিতরেও কেউ ভাল কাজ করে, তবু সেটার কল্যাণ পৃথিবীতে ছড়াবেই। (এটি হাদিস। ) ০.সাপের মাথা বাদে বাকি পুরোটাই লেজ। সো, লেঞ্জা ইজ কোয়াইট ইম্পসিবল টু হাইড।
এক কানা কয় আর এক কানারে,
চলো এবার ভবপারে,
নিজে কানা, পথ চেনে না,
পরকে ডাকে বারংবার!
এসব দেখি কানার হাটবাজার!
- লালন কিন্তু জানতেন বিষয়টা। তাঁকে ট্রিট করার ক্ষেত্রে কানামি করা হবে।
বছর কয়েক ধরে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করি।
একটা সিরিজও করার ভাবনা ছিল, 'কেন এসেছিলেন লালন সাঁইজি: বাউল রে, তোর দু:খটা কেউ বুঝল না' নাম দিয়ে শুরুও করেছিলাম। তারপর জ্ঞানগম্যির আক্রমণ দেখে ভাবলাম, থাকগা, বিতর্কে নাই।
কারণ ঠিক করে নিয়েছি, একমাত্র মহামানবদের নিয়েই আমাদের চুলকানি। এবং তাঁদের মহামানব হওয়ার কারণ নিয়েই চুলকানি। তাঁদের কথিত 'অন্ধকার' নিয়ে নয়।
সিরিজের কারণ
মহামানবরা হলেন পাবলিক ফিগার। আর পাবলিক ফিগার মানেই নিজের ছায়া।
যেভাবে খুশি ট্রিট করো, কোন সমস্যা নাই। নিজের নিজের মত ব্যাখ্যা করো।
চোখের সামনে লালন সাঁইজিকে ধর্মদ্রোহী ঘোষণা করল তিনটা গোত্র- অন্ধ 'মুসলিম', অন্ধ 'সনাতন' এবং অন্ধ 'মানবতাবাদী'। পাঁচ চক্রে ভগবান যদি ভূত হওয়ার সামর্থ্য রাখেন (মেটাফরিক্যালি বলছি, ভগবান শব্দটাকে নিয়ে নয়) তাহলে ত্রিচক্রে লালন কেন ধর্মদ্রোহী হিসাবে সমাজে প্রচার পাবেন না? তিনি ধর্মদ্রোহী হিসাবে প্রচার পেলে যে তিন চক্রের সবারই লাভ!
ঠিক একইভাবে আর সবাইকে ট্রিট করা হয়। পার্শিয়ালি কানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখে তাঁদের আসার কারণ নির্ধারণ করা হয়।
তাঁদের 'আদর্শ' কে অপরপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত করে দুইটা শ্রেণী-
১. তাঁদের 'অনুসারীরা'। হ্যা, দ্বিধাহীন ভাবে বলব, 'অনুসারীরা'। কিন্তু কোটমার্কের ভিতরে বলব। কারণ অনুসারীদের কিছু পক্ষ আদপেই মনে করে যে তারা অনুসারী। এবং তাঁর বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতকেই একমাত্র লক্ষ্যবস্তু করে নেয়।
তিনি যে অন্যান্য বিষয় অনুমোদন করেছেন বা করেননি, সেদিকে খেয়াল যায় না।
২. তাঁদের নাম ভাঙিয়ে আদপে যারা তাঁদের বিরোধী, তারা।
তাহলে সিরিজের কহতব্য কী?
কথা কি বেশি শ্লেষযুক্ত হয়ে যাচ্ছে? রাশ টানতে হল।
বলতে চাচ্ছি,
মহামানবরা একটা সার্টেইন পরিবর্তন টার্গেট করে আগমন করেন। কিন্তু অন্য সব শুভতা ধারণ করেন।
কোন শুভতার বিরুদ্ধে তাঁদের অবস্থান নয়। পরবর্তীতে, এই মহামানবদের শুধু সেই সার্টেইন সম্ভাব্য পরিবর্তনটাই দৃষ্টিতে পড়ে, অন্য যেসব শুভতা তাঁরা ধারণ করছেন সেসব চোখে পড়ে না।
অথচ স্পষ্ট পড়ে থাকে হাজারো প্রমাণ।
কেন এসেছিলেন গৌতম বুদ্ধ?
অপট্যাগ: গৌতম নাস্তিক। গৌতমে আধ্যাত্ব্যবাদ নেই।
গৌতম বেদ-বিরোধী ও সনাতন ধর্মবিরোধী। তিনি অ-মাংসাশী যা মানুষের শরীরের গঠন বিরোধী। তিনি কোন ধর্ম গড়তে চাননি।
মৌলিক প্রমাণ: দৃঢ়ভাবে গৌতম নাস্তিকতা ও আস্তিকতা দুইটা বিতর্ক এড়িয়ে গেছেন। তিনি স্পষ্ট ও দৃঢ় সুরে বলেছেন, আমি কি বলেছি, যে ঈশ্বর আছেন (তোমরা যারা আমার অনুসারী, তাদেরকে কি ঈশ্বর বিষয়ক কিছু নির্দেশনা দিয়েছি এখনো?)
ভক্ত বললেন, তাহলে কি ঈশ্বর নেই সেটাই ধরে নিব?
আমি কি বলেছি, যে ঈশ্বর নেই?
ভাগ্যিস, তখন অজ্ঞেয়বাদী ছিলেন না।
যদি থাকতেন, তাহলে তাঁকে জিগ্যেস করা হত, আপনি কি তাহলে ধরে নিয়েছেন যে ঈশ্বর আছেন কি নেই সেটা আপনি জানেন না?
কী জবাব দিতেন তিনি?
ইয়েস।
তিনি জবাব দিতেন, আমি কি বলেছি যে, আমি অজ্ঞেয়বাদী বা ঈশ্বর আছেন কি নেই সেটা আমি জানি না?
তিনি ঈশ্বরকে এড়িয়েছেন কেন?
১. কারণ তখন ঈশ্বরের আলো ছড়াতে আসা অনেক মহামানবকে দেবতা বানিয়ে ফেলা হয়েছিল। তাঁদের প্রত্যেককে ঈশ্বর বানিয়ে ফেলা হয়েছিল। ভয়ানক বিভেদ হচ্ছিল।
২.এবং ঈশ্বরের নামে যে কাস্ট সিস্টেম চালু হয়েছিল তা ভয়ানক।
মূলত সেক্ট বা চার জাত ছিল কাজের গুণের উপর নির্ভর করে প্রাচীণ বেদে। সেটা পরে বংশগত জাতিনির্ভর হয়ে পড়ে।
৩. বেদ সহ সনাতন ধর্মগ্রন্থগুলোতে মৌলিক ও যৌগিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। ঘটনা বর্ণণ এবং তাতে বিবর্তন হয়েছিল যা তুলসিদাসী রামায়ণ পর্যন্ত চলেছে। যে কোন মহামানবই মূল গ্রন্থের মৌলিক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কথা বলেন।
৪. বহু প্রথার প্রচলন। অনেক বেশি আচরণ ও প্রথা নির্ভরতা। এবং এইসব আচরণ ও প্রথার কারণে সময়-মনোযোগ-জনগতির ব্যাহত হওয়া। যাকে খাস মুসলমানি সুরে বলা চলে, বিদআত।
তাহলে, তাঁর আসার পরিপ্রেক্ষিত ছিল ধর্মীয়-সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে তৈরি হওয়া জীর্ণতা অপসারণ।
একে খাস ইসলামিক সুরে বলা চলে, মুজাদ্দেদি।
এর মানে এই নয় যে, তিনি বেদে অবিশ্বাসী, তিনি সনাতন হিন্দু ধর্মে অবিশ্বাসী এবং সবশেষে ঈশ্বরে অবিশ্বাসী। বরং তাঁর অগুণতি উদ্ধৃতিতে বেদের দ্যোতনা।
এমনকি আমরা উদ্ধৃতি পাই, গৌতম একজনকে ভক্ত করেননি তিনি 'ব্রাহ্মণ' নন দেখে। মোটাদাগে গৌতমকে দুষ্ট করা যায়।
তিনি তাহলে জাত্যাভিমানী?
আসলেই কি গৌতম বুদ্ধকে জাত্যাভিমানী বলা চলে?
তাহলে তিনি কেন 'ব্রাহ্মণ' নন বলে একজনকে যুক্ত করেননি?
আমরা যদি বিষয়টাকে এভাবে দেখি, যে কারণে আরবরা ইহুদি ধর্ম বা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত ছিল না প্রি-মোহামেডান দ. সময়কালেও।
আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে, আগের দিনে মহামানবরা আগমন করতেন- সুনির্দিষ্ট গোত্র এবং
সুনির্দিষ্ট অঞ্চলের এবং
সুনির্দিষ্ট ভাষার এবং
সুনির্দিষ্ট সময়কালের এবং
সুনির্দিষ্ট সংস্কারের উদ্দেশে।
এর বাইরে তাঁরা যেতেন না। লূত আ. বলতেন, আমার ক্বাওম, আমার গোত্র। ইব্রাহিম আ. বলতেন, আমার ক্বাওম, আমার গোত্র।
শুধু নির্ধারিত ক্ষেত্রেই তাঁদের সংস্কার। এর বাইরে নয়।
কারণ সহজেই অনুমেয়। মহান স্রষ্টা বলে যদি একজন থেকেই থাকেন, তিনি যদি সমাধানদাতা হয়েই থাকেন, তিনি তো অবশ্যই স্থানোপযোগী প্রতিনিধি পাঠাবেন।
এবং ওই সুনির্দিষ্ট এজেন্ডার বাইরে যারা পড়েন, তাঁরা ওই 'ধর্মের' আওতামুক্ত হয়ে থাকেন।
অ-মাংসাশী হওয়াটা কি খুব বেশি অবৈজ্ঞানিক? শুধু আমাদের মাংস কামড়ানোর দাঁত আছে এবং আমরা কার্নিভোরাস শুধু নই- অমনিভোরাস, এই কারণেই নিরামিষাশী হওয়াটা অবৈজ্ঞানিক?
এক কথায় উড়ে যায়, নিরামিষাশী কি শারীরিকভাবে দুর্বল? দুনিয়ার কোন্ মার্শাল আর্ট ওস্তাদকে আমরা শারীরিকভাবে দুর্বল বলতে পারব? আর নিরামিষ খেলে যদি শরীর ঠিক থাকে, তাহলে শুধু নিরামিষ খাওয়াতে দোষটা কোথায়?
আর একেক জীবনধারাতে বা 'শরীআতে' একেক জিনিস 'হালাল' ছিল। রাসূল দ.'র শরীআহ্ এ এমন কিছু খাদ্য হালাল, যা তাঁরই কথামতে, তাঁর পূর্ববর্তী রাসূল ও নবী আ. গণের সময় ছিল হারাম। ভাইস ভার্সা।
তাহলে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও কোন সমস্যা নেই।
তিনি কোনও ধর্ম নিয়ে আসেননি।
ধর্ম মানে কী? তিনি যে নিয়মাবলী দিয়েছেন, তাতে কঠোর মনোসংযোগ করেছেন এবং চর্চা করেছেন এটাকে ধর্ম না বলার কোন যৌক্তিকতাই নেই।
বৌদ্ধধর্মে আধ্যাত্ম্যবাদ নেই! বুদ্ধ জ্ঞানমুদ্রা করলেন। আর থেমে গেল হাতি। এইতো আধ্যাত্ম্যবাদ। ভবিষ্যদ্ব্যাণীই তো আধ্যাত্ব্যবাদ।
ভবিষ্যতের কথা বলতে পারা তো চাট্টিখানি কথা নয়, তা মিথ্যা হোক বা সত্যি। তা বলতে পারার মধ্যে মাত্র তিনটা বিষয় থাকে-
যিনি ভবিষ্যত বাণী করছেন, হয় তিনি-
ক. মিথ্যা বলছেন জেনেশুনে
খ. মিথ্যা বলছেন আন্দাজে
গ. মিথ্যা বলছেন ঘোরগ্রস্ত তথা মানসিক রোগী হয়ে
ঘ. অথবা তিনি জানেন যে, এই ঘটনাই ঘটবে। নিশ্চিত জানেন এবং বলছেন।
বুদ্ধের আইডিয়া কি বিচ্ছিন্ন কোন আইডিয়া?
আমিই একমাত্র বুদ্ধ নই, আমার আগেও অনেক বুদ্ধ আগমন করেছেন এবং আমার পরেও করবেন।
আর শেষ বুদ্ধের নাম মৈত্রেয়/ মেত্তেয়।
তিনি অশীতীবর্ষ সহস্রায়ুষ্ক পরে আগমন করবেন।
এইখানেই মামলা ডিসমিস।
বুদ্ধ বোধিপ্রাপ্ত হন ত্রিশের কোটা পেরিয়ে।
বুদ্ধের জন্মসাল সুনির্দিষ্টভাবেই জানা।
বুদ্ধসাল চন্দ্রসাল।
অর্থাৎ সৌরবছর থেকে গড়পড়তা দিন পনেরো কম।
এবার এক হাজার আশি বছর যোগ করুন। (মিলেনিয়া দিয়ে যেমন হাজার অর্থ হয় না, কিন্তু সহস্রাব্দ বোঝায়, সেঞ্চুরি দিয়ে যেমন একশ বছর পূর্ণ হওয়ার প্রমাণ নয়, কিন্তু একশ বছর বোঝায়, তেমনি সহস্রায়ুষ্ক। )
সনগুলোর সবগুলো রেফারেন্স আমার কাছে ছিল। এখন নেই।
নেটে মাত্র দুটা ক্লিকের ব্যবধান।
বৌদ্ধরা অপেক্ষা করছেন, শেষ বুদ্ধ আসবেন। তাঁর নাম চন্দ্রবুদ্ধ, মেত্তেয়, যার সাথে মৈত্রী করা যায়। তখন মেত্তেয়র পরিচালনাই সর্বশেষ পরিচালনা হবে...
ঠিক এক হাজার আশি বছর পরে, ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে, মরুময় স্থলে কোন্ শেষবুদ্ধ আগমন করেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।