আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই লড়াইয়ে জিততে হবে

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র “উপনিবেশিত জনতার জন্য সবচেয়ে প্রথম, সবচেয়ে জরুরি এবং সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু হলো তার জমি। এই জমি তাকে খাদ্য দেয়, তার চেয়েও বেশি যা দেয় তা হলো ‘সম্মান’ ”। - ফ্রাঞ্জ ফানো প্রাকৃতিক সম্পদে দরিদ্র ইংল্যান্ড নিজ দেশে শিল্প বিপ্লবের স্বার্থে আমাদের ভুখন্ডের সস্তা কাঁচামাল আর সস্তা শ্রমএর ওপর নির্ভর করতো। এককালে আমাদের ভুখণ্ডেই ভূমি দাসএর মতো নীলকরদের মন মর্জি অনুযায়ী আমাদের চাষবাস করতে হয়েছে। আমাদের শ্রমের ফসল ঘরে তুলে ফুলে ফেঁপে উঠে ঘটেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তার।

এই যে আধুনিক ইউরোপ, আলোকময় ইউরোপ, ঐশ্বর্যশালী ইউরোপ, শিল্প বিপ্লবের ফলে যেই ইউরোপের জন্ম, সেই ইউরোপের প্রাণশক্তি হলো উপনিবেশ। উপনিবেশ থেকে সস্তা কাঁচামাল, সস্তা শ্রম সংগ্রহ করে আবার উদ্ধৃত প্রক্রিয়াজাত পণ্যের বাজার হিসাবে উপনিবেশকেই ব্যবহার করা, এই করেই শিল্পবিপ্লবের চারা থেকে গাছ আর গাছ থেকে মহিরুহ হয়ে ওঠা। আধুনিক ইউরোপের ঐশ্বর্যময় কাহিনীতে আমরা বাঙালিরা ঘানিটানা দাস, সত্যিকারের প্রলেতারিয়েত, সাব অল্টার্ন, ফ্রাঞ্জ ফানো যারে বলছেন, “জগতের লাঞ্ছিত”। উপনিবেশে মানুষ নিজভূমেই হয় পরবাসী, নিজের জমির মালিকানাই যে শুধু তার থাকে না তা না, থাকে না নিজের শরীরের ওপর মালিকানা, সবশেষে নিজের মনের মালিকানা হারিয়ে সে হয় সত্যিকারের লাঞ্ছিত। ৪৭ এ সমাপ্তি হয়েছে ব্রিটিশ উপনিবেশের।

৭১এ সার্বভৌম স্বাধীনতা লাভ করেছে বাংলাদেশ। উপনিবেশ থেকে মুক্তি পেয়ে নিজ জমি আর নিজ প্রাকৃতিক সম্পদের উপর আমাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি? উপনিবেশের হাতে লাঞ্চিত আমরা কি আমাদের সম্মান ফেরত পেয়েছি? যদি পেয়েই থাকি তাইলে এশিয়া এনার্জির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জমির মালিকানার লড়াইএ কেনো শহীদ হতে হয়েছে আমাদের চাষাদের। নিজের প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকার কনকো ফিলিপসের মতো নয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে তুলে দিয়ে অসম চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে কেনো আমাদের লড়তে হচ্ছে? “সাম্রাজ্যবাদ যেইসব অবক্ষয়ের জীবানু জন্ম দেয় সেইসব জীবানুকে সুচারু ভাবে খুঁজে বের করে উৎখাত করতে হবে, শুধু আমাদের জমি থেকেই না বরং আমাদের মন থেকেও”। - ফ্রাঞ্জ ফানো ফরাসী উপনিবেশের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার মুক্তি সংগ্রামে ফানো নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। ফানোর সংগ্রামের এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর যুদ্ধ বিদ্ধস্ত ইউরোপ একের পর এক উপনিবেশকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হচ্ছে, এশিয়া এবং আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নতুন সার্বভৌম রাষ্ট্র। কিন্তু এইসব উত্তর ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রে, রক্ত এবং ঘামের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতায় কি জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, এই প্রশ্ন নিয়া উদ্বিগ্ন ছিলেন ফানো। এইক্ষেত্রে, তার ধারণা ছিল, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। এর কারন, দীর্ঘ ঔপনিবেশিক পর্বে এইসব রাষ্ট্রে ঔপনিবেশিক শিক্ষায় শিক্ষিত যে নেতৃস্থানীয় শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছে তারা চেহারা এবং বর্ণে স্বজাতির মতো হলেও চিন্তা চেতনায় ধারণ করে ঔপনিবেশিক প্রভুকে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে রাজনীতিতে নামলেও তাদের আনুগত্য পুরোদস্তুর পশ্চিমা প্রভুদের প্রতি নিবেদিত। এই শ্রেণী ক্ষমতায় থাকলে উপনিবেশী প্রভুদের সৈন্য সামন্ত সহকারে উপনিবেশ টিকিয়ে রাখার দরকার নাই, নতুন গড়ে ওঠা এই শাসক শ্রেণীর সাথে ব্যাবসায়িক এবং সার্থকত সম্পর্ক বজায়ে রাখলেই উপনিবেশ টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

“প্রত্যেক প্রজন্মকেই তার লড়াই খুঁজে নিতে হবে, এরপর হয় লড়তে হবে না হয় বিশ্বাসঘাতকতা করতে হবে”। - ফ্রাঞ্জ ফানো নিজ ভূখণ্ড, প্রাকৃতিক সম্পদ, নিজ মনন, অস্তিত্বের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের প্রজন্মের লড়াই। উপনিবেশের ছাপচিত্র ঝেড়ে পুছে বাঙলার প্রতিটা ইঞ্চি থেকে দূর না করা পর্যন্ত এই লড়াই চালাতে হবে। বাঙলার বুক থেকে উপনিবেশের কড়ি বর্গাদের উৎখাত না করা পর্যন্ত এই লড়াই চালাতে হবে। সাম্র্যবাদের জীবানু আমাদের জমি আর মন থেকে সমূলে উৎপাটন করার জন্য এই লড়াই আমাদের লড়তে হবে।

আর নাইলে ভবিষ্যতের ইতিহাসে বিশ্বাসঘাতকের খাতায় আমাদের নাম লেখা থাকবে। ১ আজকে যদি না হয় মর্দ, কোন কালেই না, ইতিহাসের পাতায় কিংবা বীর শহীদের শহীদ মিনার, ভবিষ্যতের রক্ত কিংবা বুকের ভেতর যতন করা, চেতন কিংবা বীর গাথাতে, জায়গা হবে না। মাথায় বান্ধো গামছা মর্দ, বুকের ভেতর ক্রোধ, রক্ত ঘামের ফসল লুটের, শতবর্ষী অপমানের, এবার নেবো শোধ। ২ মহাশ্বশান, এইখানে নাই গান, নাই কাব্য, পাখি নাই, নাই কোন প্রেমিক পরাণ। এইখানে লাশ আছে, মৃত, জীবিত, অর্ধমৃত, পঁচা, গন্ধ ছোটা লাশ আছে, পাশবিক সহবাসে উন্মত্ত্ব ডাইনিদের কামার্ত গোঙানীর শব্দ আর সিফিলিস কামরসে ভেসে যাওয়া এইখানে কোন এক কালে আমার দেশ ছিল, ছিল স্বপ্ন, ছিল গান, ছিল কাব্য, পাখি আর প্রেমিক পরাণ।

মহাশ্বশান। ৩ চুপকথা নগরীতে চুপ থাকা আইন বলে, চিৎকার, শিৎকার আর প্রার্থনায় থাকো বেঁচে, রক্ত বেচে, ইজ্জত, মায়ের গতর বেচে থাকো সুখে। চুপকথা নগরীতে কথা বলবে শুধু, বাচাল ডাইনি আর রক্তখোড় দানবেরা, শিকারী যুবরাজরা নামবে মানব শিকারে, বাঘ আর বাছুরেরা হয়ে গেলে শেষ। চুপকথা নগরীতে, বিষাক্ত বৃষ্টি নামবে পিশাচীর কান্নায়, ভুত আর দানবের তান্ডব নৃত্য হবে একমাত্র সুস্থ্য বিনোদন, শিকারী যুবরাজরা নামবে মানব শিকারে। চুপকথা নগরীতে, চুপ থাকা আইন বলে, লাঙল খুইয়ে তুমি খুঁজবেনা, কাধের জোয়াল আর পায়ের শেকল আশির্বাদ মেনে বেঁচে থাকো সুখে।

৪ মর্দ তোমার কান্ধে জোয়াল, মর্দ কোথায় তোমার খেয়াল, মর্দ তোমার পায়ে শেকল, মর্দ তোমার মগজ বিকল। ভাইয়ের কান্ধে কাধ মিলাইয়া, এইবার মর্দ জাগো তুমি, তোমার বোনের ইজ্জত আর তোমার মায়ের পূণ্যভূমি, বাঁচাও মর্দ, তোমার প্রিয়ার চুম্বন আর শিশুর হাউস, আদর সোহাগ, মর্দ তোমার নাইকি কোন ঘিন্না, পিত্তা, হিংসা, বিরাগ। ৫ মাথায় বান্ধো গামছা মর্দ, বুকের ভেতর ক্রোধ, রক্ত ঘামের ফসল লুটের, শতবর্ষী অপমানের, এবার নেবো শোধ। ৬ আজকে যদি না হয় মর্দ, কোন কালেই না।  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।