২৬ জুন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানালেন, সেখানে ফুলজানের (৬০) আর চিকিৎসার সুযোগ নেই। চিকিৎসকদের পরামর্শপত্র নিয়ে ঢাকার জাতীয় কিডনি ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের উদ্দেশে ফুলজানকে নিয়ে রওনা দিলেন ছেলে আবদুল হেকিম। ২৫ জুন তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
রাত দেড়টা।
ঢাকায় কিডনি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের সামনে এসে পৌঁছালেন ফুলজান। হাসপাতালের কর্মীরা জানান, ‘শয্যা ফাঁকা নেই। ’ বাকি রাত হাসপাতালে অপেক্ষা। লোকজনের পরামর্শে গতকাল সোমবার সকাল আটটায় বহির্বিভাগের লাইনে দাঁড়ালেন ফুলজানের স্বজনেরা। হাতে ময়মনসিংহের চিকিৎসকের দেওয়া কাগজপত্র।
সকাল নয়টার দিকে খিঁচুনি শুরু হলো ফুলজানের। স্বজনদের চেঁচামেচিতে অবশেষে আট ঘণ্টা পর চিকিৎসক এলেন ফুলজানের কাছে। অক্সিজেন লাগানো হলো। ততক্ষণে ফুলজানের জান বেরিয়ে গেছে। ফুলজান মারা গেছেন।
ফুলজানের রিকশাচালক ছেলে আবদুল হেকিম মাকে নিয়ে ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেখান থেকে জাতীয় কিডনি ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে পৌঁছেছেন ঠিকই; কিন্তু বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে কোনো সেবাই পাননি তিনি। এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের সংখ্যা ১০৫ জন, শয্যাসংখ্যা ১১৬টি।
ফুলজানের নাতি আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাত দেড়টায় তাঁরা যখন ফুলজানকে নিয়ে কিডনি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে পৌঁছান, তখন হাসপাতালের কর্মীরা রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। অন্যথায় সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান। সারা রাত অপেক্ষা করার পর সকাল সাতটায় আবার জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের বহির্বিভাগে পাঠান জরুরি বিভাগের কর্মীরা।
তাঁরা টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়ান। ফুলজানের অবস্থা খারাপ হতে দেখে স্বজনেরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন একজন চিকিৎসক বেরিয়ে এসে রোগী দেখেন। তারপর আসেন আরেকজন চিকিৎসক। তাঁর পরামর্শে অক্সিজেন দেওয়ার কক্ষে নিয়ে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হয়।
কয়েক মিনিট পর চিকিৎসকেরা জানান, রোগী মারা গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জরুরি বিভাগে ওই রাতে দায়িত্বে ছিলেন সদ্য বদলি হয়ে আসা চিকিৎসক রাশেদ আনোয়ার। তিনি বলেন, ওই রাতে তিনি ২০ জন রোগী দেখেছেন। কিন্তু ফুলজান নামের কোনো রোগী তাঁর কাছে যাননি।
সকালে ফুলজানের খিঁচুনি উঠলে কক্ষ থেকে বের হয়ে এসে প্রথমে তাঁকে দেখেন চিকিৎসক মোহাইমিনুল হক।
পরে তিনি ডেকে আনেন চিকিৎসক মোবাশ্বির আলমকে। তাঁরা জানান, তাঁদের নজরে আসার পর রোগীর কোনো অবহেলা হয়নি।
কয়েকটি প্রশ্ন: গভীর রাতে জরুরি বিভাগে হাসপাতালের কোন কর্মীরা থাকেন? তাঁদের দায়িত্ব কী? তাঁরা এত রাতে আসা রোগীকে চিকিৎসকের কাছে যেতে না দিয়ে নিজেরা পরামর্শ দিলেন কেন? চিকিৎসক ছাড়া হাসপাতালের কোনো কর্মী রোগীকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার বা অন্য হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন কি না? সকালে জরুরি বিভাগ থেকে আবার কারা এই রোগীকে বহির্বিভাগে পাঠালেন? একজন রোগী কেন হাসপাতালের ভেতরে থেকেও আট ঘণ্টায় কোনো চিকিৎসকের দেখা পেলেন না? তাহলে সেখানে কী ব্যবস্থা আছে রোগীদের জন্য!
এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন যিনি, তিনি হাসপাতালের পরিচালক এ কে এম জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া। কিন্তু ফুলজানের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, তিনি এ বিষয়ে এখনো কিছু জানেন না। খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।