আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এফবিআইয়ের ওয়েবসাইটে কোকোর ঘুষ কেলেঙ্কারি

এফবিআই-র ওয়েবসাইটে কোকোর ঘুষ কেলেঙ্কারির তথ্য এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। এছাড়াও বিশ্বব্যাংক-ইউএনওডিসি প্রকাশনা এ্যাসেট রিকভারি হ্যান্ডবুকে জাতীয় সম্পদ চুরির উদাহরণ হিসেবে কোকোর ঘুষ কেলেঙ্কারি এবং দেশের অর্থ বিদেশে পাচারের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। এই হ্যান্ডবুকের ১৯৬ পৃষ্ঠায় এ বিবরণ রয়েছে। অর্থ পাচার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আরাফাত রহমান কোকোসহ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রায় ৫৩ লাখ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৯ কোটি টাকা) ঘুষ দিয়েছিল জার্মানির প্রতিষ্ঠান সিমেন্স ও চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার। চট্টগ্রামের নিউমুরিংয়ে কন্টিনেন্টাল টার্মিনাল স্থাপন এবং টেলিটকের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ পাওয়ার জন্যই এ ঘুষ দেওয়া হয়।

২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়ার জেলা আদালতে দায়ের করা এ সংক্রান্ত মামলার নথিতে এর বিস্তারিত বিবরণ এবং তথ্যপ্রমাণ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ওয়াশিংটন ফিল্ড অফিসের ওয়েবসাইটে এ ঘুষ কেলেঙ্কারির তথ্য এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। এফবিআইর ওয়েবসাইট ছাড়াও বিশ্বব্যাংক-ইউএনওডিসি প্রকাশনা এ্যাসেট রিকভারি হ্যান্ডবুকে জাতীয় সম্পদ চুরির উদাহরণ হিসেবে কোকোর ঘুষ কেলেঙ্কারি এবং দেশের অর্থ বিদেশে পাচারের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি উদ্যোগের আওতায় প্রকাশিত এই হ্যান্ডবুকের ১৯৬ পৃষ্ঠায় এ বিবরণ রয়েছে। এফবিআইর উন্মুক্ত তথ্যে দেখা যায়, যুক্তরাাষ্ট্রের 'ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস' ২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি কলাম্বিয়ার জেলা আদালতে বিদেশে কাজ পাওয়ার জন্য ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সিমেন্সের বিরুদ্ধে 'বাজেয়াফতকরণ' মামলা করে।

এ মামলার আবেদনে বলা হয়, 'চট্টগ্রামের নিউমুরিংয়ে কন্টিনেন্টাল টার্মিনাল এবং একটি মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ পাওয়ার জন্য জার্মানির সিমেন্স এবং চীনের চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ সংশ্লিষ্ট কয়েক সরকারি কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়। 'ফরেন করাপ্ট প্রাকটিস' আইনে অভিযুক্ত হওয়ার পর ২০০৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিমেন্স কোম্পানি তাদের স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করে, কোম্পানির অনুকূলে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে আরাফাত রহমান কোকো এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের ৫৩ লাখ ১৯ হাজার ৮৩৯ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা) ঘুষ দেওয়া হয়। মামলার আবেদনে সিমেন্সকে অভিযুক্ত করার কারণ হিসেবে তৎকালীন মার্কিন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাথিউ ফ্রেডরিখ আদালতকে বলেন, "সিমেন্স জার্মানির কোম্পানি হলেও এই কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত। একই সঙ্গে কোম্পানি যে ৫৩ লাখ মার্কিন ডলার ঘুষ দিয়েছে তার মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ মার্কিন ডলার দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে। প্রায় তিন যুগ আগে মার্কিন কংগ্রেসে পাস হওয়া 'ফরেন করাপ্ট প্রাকটিস অ্যাক্ট' অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানি কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত কোনো কোম্পানি বিদেশে কোনো কাজ পাওয়ার জন্য ঘুষ দিতে পারবে না।

সিমেন্স এ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে। একই সঙ্গে মার্কিন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ সরিয়ে ঘুষ দেওয়ার কারণে তারা মানি লন্ডারিং আইনেও অভিযুক্ত। " আবেদনে বলা হয়, "কোকো কে দেয়া ঘুষের টাকা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এই টাকা সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত আছে। অবৈধ এ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে কোকো এবং তাদের সহযোগীদের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। ফরেন করাপ্ট প্র্যাকটিস অ্যাক্ট অনুযায়ী এ ঘটনার বিচার এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অর্থ বাজেয়াপ্ত করার অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে।

এ কারনেই যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্রদত্ত ৩০ লাখ মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করার আবেদন করা করা হয়েছে এই মামলায়। " একাধিক মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ঘুষ দেওয়ার জন্য সিমেন্স কোম্পানিকে এর আগেও মার্কিন আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬০ কোটি ডলার জরিমানা দিতে হয়। আরও যেসব দেশে ঘুষ কেলেঙ্কারির জন্য সিমেন্স অভিযুক্ত হয়, সেসব দেশ হচ্ছে আর্জেন্টিনা, ইসরায়েল, চীন, ইরাক, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, রাশিয়া, ভেনিজুয়েলা এবং ভিয়েতনাম। এই ঘুষ কেলেঙ্কারির সূত্র ধরেই ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ সিমেন্সের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে দুদক মামলা দায়ের করে। এই মামলায় কোকো এবং তার বল্পুব্দ সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী আকবর হোসেনের ছেলে সায়মনের বিরুদ্ধে ২৮ লাখ ৮৪ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার এবং ৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৭২ মার্কিন ডলার অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ করা হয়।

গত ২৩ জুন এই মামলার রায়ে আদালত কোকো এবং সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রীর ছেলে সায়মন প্রত্যেককে ছয় বছরের জেল এবং ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জরিমানা করেন। (সমকাল থেকে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।