আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইতিহাস রচনা করলো সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তর :: সবক্ষেত্রে আইনের এমন প্রয়োগ হলে দেশে কোন অন্যায় হত না।

আমি একজন সহজ সরল মানুষ। সিলেটের আলোচিত মলাইটিলার ‘পুকুর’ ভরাট করে তাতে গাছ লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ‘এনফোর্সমেন্ট’ কর্তৃপক্ষ। টিলা কাটার সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে এর অন্যতম মালিক আবাসন প্রকল্প শালিমার হাউজিং লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকার বেশি জরিমানা করে তাৎক্ষণিক এর অর্ধেক আদায় করা হয়। সিলেট অঞ্চলে টিলা ও পাহাড় ধ্বংস কোনো নতুন ঘটনা না হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিজেরাই বলেছে, সিলেট জেলার ইতিহাসে এই প্রথম পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে অবৈধভাবে পাহাড়ের টিলা কাটার অপরাধে এনফোর্সমেন্ট অভিযানের আওতায় ক্ষতিপূরণ দণ্ড আদায় করা হলো। গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় ‘টিলার চূড়ায় পুকুর’ শিরোনামে খবর প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে সিলেটসহ সারা দেশে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত হয়।

গতকাল মঙ্গলবার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর নেতৃত্বে পরিচালিত হয় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এ অভিযান। এ সময় মলাইটিলার ‘পুকুর’ অংশের মালিক ‘শালিমার হাউজিং লিমিটেড’ নামের আবাসন প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলমগীর হোসেনের হাতে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ পাহারায় চূড়ার পুকুরসদৃশ বিশাল গর্ত ভরাট ও বৃক্ষরোপণ শুরু করা হয়। সিলেটে টিলা কাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের এ রকম উচ্চপর্যায়ের অভিযান মলাইটিলা এলাকাবাসী আনন্দমিশ্রিত বিস্ময়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করেন। ঘটনাস্থলে প্রতিষ্ঠানের এমডি আলমগীর হোসেনকে টিলার গর্ত পুনঃ ভরাট করার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশের পর প্রতিষ্ঠানটি সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক দিয়ে গর্ত ভরাট শুরু করে।

ভরাটকাজের পাশাপাশি এনফোর্সমেন্ট দলের নির্দেশে এক ঘণ্টার মধ্যে চূড়ার চারপাশের সীমাজুড়ে দুই শতাধিক বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ করা হয়। এনফোর্সমেন্ট টিমের অভিযানে দেখা যায়, টিলা কাটার কারণে গাছপালার ক্ষতি, ভূত্বকের পরিবর্তন, ভূমিক্ষয় ও ভূমিধস এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে। টিলার অন্যতম মালিক শালিমার হাউজিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়। পরবর্তী পাঁচ দিনের মধ্যে (২৫ জুন) কর্তিত টিলায় জরিমানার অবশিষ্ট পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার টাকা দিয়ে গর্ত ভরাট করে গাছপালা লাগিয়ে সবুজায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতির জন্য আবাসন প্রকল্পকে কয়েকটি ধাপে অর্থদণ্ডের ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়।

এনফোর্সমেন্টের পরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট অভিযান সিলেটে পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন, এ অভিযানের ‘সূতিকাগার’ গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘টিলার চূড়ায় “পুকুর’’’ শিরোনামের সচিত্র প্রতিবেদন। মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী অভিযানের শুরুতে গতকাল সকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ‘সিলেটের একটি টিলার এমন অবস্থার চিত্র তুলে ধরায় প্রথম আলোর অবস্থান এভারেস্ট-চূড়ায় পৌঁছে গেছে। প্রথম আলো পরিবেশ রক্ষায় সবচেয়ে সচেতন। পত্রিকাটি আমাদের চোখ খুলে দেওয়ায় আমি সিলেটে এসে সার্বিক পরিস্থিতিতে চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছি।

যারা টিলা কেটে পরিবেশ ধ্বংস করে, তারা পরিবেশঘাতক। এ সমাজে পরিবেশঘাতক থাকবে, না আমরা থাকব—এ বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। ’ সকাল সাড়ে ১০টায় পরিবেশ অধিদপ্তরে ডেকে এনে এনফোর্সমেন্ট দলের মুখোমুখি করা হয় মলাইটিলায় পুুকুর খননকারী আবাসন প্রকল্পের চেয়ারম্যান রেজাউল হাসান লোদী (কয়েস লোদী) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর হোসেনকে। অভিযানকারী দলের সামনে প্রকল্পের চেয়ারম্যান কয়েস লোদী তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি নিজেকে ২২ জন মালিকের একজন উল্লেখ করে বলেন, ‘২০০৫ সালে ২২ বিঘা জমি কিনে এ প্রকল্প শুরু হয়।

এ জমির মধ্যে মাত্র দুই বিঘা টিলার অংশ। প্রকল্প হলেও কাজ শুরু হয়নি। এ অবস্থায় প্রথম আলোর মাধ্যমে দেখতে পাই টিলার ওই অবস্থা। আমরা জানি না, এ কাজ কারা করেছে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

আপনারা যে সমাধান বা আদেশ দেবেন, তা মেনে নেব। ’ ‘আপনার জমি অন্য কেউ কেটে নিল, আর আপনারা ২২ জন মালিক কিছুই টের পেলেন না—এ প্রশ্নে কয়েস লোদী বলেন, ‘প্রমাণ করতে না পারলেও চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আমরা এ কাজ করিনি। ’ এরপর সিলেট কোতোয়ালি থানার পুলিশ, পরিবেশ ও উপজেলা প্রশাসনের ভূমিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিচালিত অভিযানে টিলার চূড়ার গর্ত দেখে পরিচালক বিস্মিত হয়ে পড়েন। তিনি এ সময় বলেন, ‘আমি সারা দেশে পরিবেশ বিধ্বংসী কাজের বিরুদ্ধে অনেক অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু এ রকম সূক্ষ্মবুুদ্ধির পরিবেশঘাতক আর কোথাও দেখিনি।

’ সরেজমিনে মাপজোখে দেখা যায়, গর্তের আয়তন তিন হাজার ৫৬৪ বর্গফুট। অপসারণ করা মাটির পরিমাণ আনুমানিক ৫৪ হাজার ঘনফুট। টিলাটি রক্ষায় এনফোর্সমেন্ট দল তাৎক্ষণিকভাবে ভরাট শুরু করার নির্দেশ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক ৫০ জন মাটি কাটা শ্রমিক লাগানো হয় ভরাট কাজে। এ সময় উপস্থিত আবাসন প্রকল্পের এমডি আলমগীর হোসেনকে ২৫০টি গাছ লাগানোর সময় পর্যন্ত হাতকড়া পরিয়ে রাখার আদেশ দেওয়া হয়।

অভিযানে থাকা সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আইউব আলী আলমগীর হোসেনকে হাতকড়া পরিয়ে টিলার চূড়ায় অবস্থান করেন। আইউব প্রথম আলোকে জানান, বেলা পৌনে একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত টিলার চূড়ায় বৃক্ষরোপণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এমডি হাতকড়া পরা অবস্থায় ছিলেন। হাতকড়া পরা অবস্থায় এমডি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, প্রথম দফায় ৩৫ জন শ্রমিককে মাটি ভরাটের কাজে লাগানো হয়েছে। চারদিকে গাছ লাগানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন আরও সাতজন শ্রমিক। আগামীকাল (আজ বুধবার) থেকে শতাধিক শ্রমিক কাজে লাগানো হবে।

আলমগীর হোসেন অনুশোচনা করে বলেন, ‘এ ঘটনায় আমার তো একটা শিক্ষা হইল, পাশাপাশি যারা এ অবস্থা দেখবে, তারাও সতর্ক হবে। আমি আসলেই টিলার চূড়ার ওই অবস্থা সম্পর্কে অবহিত ছিলাম না। যেহেতু মালিক পক্ষ, তাই ঘটনার জন্য দুঃখিত!’ এনফোর্সমেন্ট অভিযানকারী দল এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পার্শ্ববর্তী আরও কয়েকটি টিলা পরিদর্শন করে। অভিযান চলাকালে ঘটনাস্থলে থাকা সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এনামুল হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুকুর ভরাট করতে সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ভরাট করার কাজ পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশাপাশি প্রশাসনও পর্যবেক্ষণ করবে।

ভরাট করার পর পুরো চূড়ায় বনায়ন করার নির্দেশনাও রয়েছে। আবাসন কর্তৃপক্ষ যদি এ কাজ সম্পন্নে কোনো ঢিলেমি করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে বাধ্য করা হবে। ’ সুত্রঃ Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.