যা এখনও জানিনা তা বলতে চাই না তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি কনাকো ফিলিপস এর সাথে দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তির প্রতিবাদে ৩ জুলাই ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল এর ঘোষণা দিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ (তেল-গ্যাস-কয়লা) প্রভৃতির ব্যাপারে আজ পর্যন্ত যে সকল চুক্তি বিদেশীদের সাথে হয়েছে তার সিংহভাগই দেশের স্বার্থ বিরোধী। ১৬ জুন কনাকো-ফিলিপস এর সাথে চুক্তিটি এক বড় হঠকারিতা। এ ব্যাপারে আলোচনা দীর্ঘ না করে প্রতিবাদ কর্মসূচির সমালোচনা অংশে যাই।
মহাজোট বা সরকারের নেতৃস্থানীয় কেউই জাতীয় কমিটির এ কর্মসূচির সমালোচনার সুযোগ হাতছাড়া করে নি।
তারা যে পাঁচ বছরে দেশ বিক্রির কন্ট্রাক নিয়েছে তা তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট।
প্রথমেই আসি জাতির কন্যা শেখ হাসিনার মন্তব্যে- তিনি পুনর্বার বলেছেন যে, “দেশের সম্পদ বিক্রি করিনি বলে ২০০১ সালে নির্বাচনে বেশী ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসতে পারি নি। ” এ উক্তি থেকে আমরা তার আবেগ প্রবণতা দেখতে পাই, কত কষ্টেই না ছিলেন তিনি ৭ বছর প্রধানমন্ত্রীর গদি ছেড়ে। তাইতো এবার দেশের মানুষের সম্পদ বা রক্ত যা-ই হোক সব দান করার আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় আসা।
তিনি বলেন- “বিদেশীদের সাথে যে কোন চুক্তি সইয়ে যাওয়ার আগে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাপেক্স কে শক্তিশালী করাই এ চুক্তির উদ্দেশ্য। দেশের স্বার্থেই এ চুক্তি। ”
অবশ্যই আপা দেশের স্বার্থের কথা-ই তো লেখা আছে পিএসসি-২০০৮ এর ১৫:৪ অনুচ্ছেদ এ যেখানে বলা আছে উত্তোলিত সম্পদের ২০% এর অধিক কোন মতেই পাবে না বাংলাদেশ। এ ২০% এর মধ্যেও ঘাপলা আছে ১৪ নং অনুচ্ছেদে। এই পিএসসি-২০০৮ এর অনুসারেই তো করা হলো ১৬ জুনের চুক্তি।
যেখানে কনাকো-ফিলিপস এর পুরো প্রজেক্টের বাজেট ১০৫ মিলিয়ন ডলার। সেখানে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল থেকে গ্যাসক্ষেত্র পর্যন্ত পাইপ লাইন তৈরির খরচ ৩৫০ মিলিয়ন ডলার। গ্যাস উত্তোলনের জন্য ১০৫ মিলিয়ন ডলার নেই অথচ ২০% গ্যাস সাগর থেকে স্থলভাগে নিয়ে আসার জন্য ৩৫০ মিলিয়ন ডলার আছে! অতএব নিজেদের ঐ ২০% এত কষ্ট করে আনার দরকার কী? ওদের কাছে বিক্রি করে দিলেই তো ভালো। দেশের স্বার্থ এমনই হয়তো হবে সামনের বক্তব্যগুলো।
তিনি বলেন- দেশ প্রেমের নামে যারা গলা উঁচু করে কথা বলে।
দেশের সংকটের সময় তারা কোথায় ছিল? গ্যাস উত্তোলন না করলে শিল্পক্ষেত্রে গ্যাস কি জাতীয় কমিটি দেবে? তারা কি এর সমাধান করতে পারবে?”
দেশের স্বার্থ নিয়ে আমার চাইতে কেউ বেশি ভাবে না, আমার চাইতে বড় দেশপ্রেমিক, দেশের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করে এমন কেউ আছে আমি তা মানি না।
এখানে বুঝাই যায় তার সামনে গলা উঁচু করে কেউ কথা বলুক এটা তার পছন্দ না। জাতীয় কমিটি বহু আগ থেকেই এ সমস্যা সমাধানের কথা বলছে। সমাধান হলো জনগণের বা দেশের শতভাগ মালিকানা এবং রফতানি নিষিদ্ধকরণ আইন প্রণয়ন।
দেশের সংকট যে কারা করে আর কারা পাশে থাকে তা আর জনগণকে বুঝাতে হবে না।
এই বুদ্ধিজীবীরাই ’৫২, ’৬৯, ’৭১ ও ’৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের প্রধান শক্তি। যুদ্ধ ঘোষনা করলেই হয় না, যুদ্ধ করতে হয় যুদ্ধক্ষেত্রে।
এ চুক্তির ব্যাপারে যার উৎসাহ সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন মহাজোট সরকারের সুপার হিরো আবুল মাল মুহিত (রাইট ম্যান)। তিনি বলেছেন- কনাকো-ফিলিপস এর সাথে এ চুক্তিতে আমরা খুবই হ্যাপী। দেশের স্বার্থ রক্ষা করে এবং যথাযথ নিয়মেই চুক্তি হয়েছে।
না বুঝেই জাতীয় কমিটি আন্দোলন ও চুক্তির বিরোধীতা করছে। এটা অর্টারলি ননসেন্স। এগুলো বিরোধী দল ও মিডিয়ার সৃষ্টি।
যে চুক্তি নিয়ে আপনি খুশিতে আত্মহারা, সে আনন্দ থেকে জনগণকে বঞ্চিত করছেন কেন? চুক্তিপত্রটি প্রকাশ করলেই পারেন। শেয়ার কেলেংকারির পরে তো জনগণ জুতা মারার শ্লোগান দিয়েছে।
এবার তাহলে তা সম্পাদন করে গদি থেকে নামিয়েই পুনঃআনন্দ উৎসব করার সুযোগ পাবে। আর বিরোধী দলের দলের কথা বলে আমাদের জনগণের দাবিকে নোংরা করবেন না। এক শাক দিয়ে আর কত মাছ ঢাকবেন? দালালীরও একটা সীমা আছে।
এ চুক্তি সম্পর্কে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন-
নিজেদের স্বার্থ রক্ষাই এ কর্মসূচীর উদ্দেশ্য। এসব কর্মসূচি অযৌক্তিক।
এমন চুক্তি আরো করা হবে।
তার এ বক্তব্যের জন্য তাকে দালালীতে নাম্বার ওয়ান পুরস্কারের মনোনয়ন দেয়া যেতে পারে। সেই সুদূর ৩ জুলাই অর্ধদিবস শুধু ঢাকা শহর এর হরতালে তারা কেন এতো বিব্রত তা জনগণ বুঝে। কারণ এ হরতাল ক্ষমতার কামড়াকামড়ি নয় বরং জনগণের সম্পদ রক্ষার হরতাল। জনতাও তাই বলে যদি এমন চুক্তি আরো হয় তবে হরতালের মত আরো কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে।
এবার আসি সংসদে,
গত ১৯ জুন বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন- “কোথাকার কোন মানু মুহাম্মদ হুট করে তেল-গ্যাস রক্ষার জাতীয় কমিটি বলে হরতাল, আরে সম্পদ উত্তোলন না হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে কিভাবে? আমি বলি এটা জাতীয় কমিটি হলো কিভাবে, তিনি জাতির কি? কিছু টোকাই নিয়ে এসে জাতীয় কমিটি বললেই কমিটি হয় না। ”
তার বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, আনু মুহাম্মদ কে সেটা তিনি জানুন কিংবা নাই জানুন তবে তিনি ভয় অবশ্যই পেয়েছেন। তিনি আরো বুঝতে চেয়েছেন যে জাতির পরিবারের সদস্য ছাড়া জাতীয় হওয়া যায় না। আর ঐ টোকাই (যারা সর্বহারা) তাদের দাবি কিভাবে জাতীয় পর্যায়ে আসে। তাদের অবস্থান ঐ সংসদ এর বাইরে, ভিক্ষার থালা হাতে, তাদের দাবিতে কেন রপ্তানি প্রতিরোধ আইন করা হবে।
এ সংসদ তো ধনীদের সেখানে শুধু তাদের ভোগের জন্যই। তিনি আসলে বুঝাতে চেয়েছেন টোকাইরা আসলে এদেশের জনগণ নয়। তাদের স্বার্থ বা দাবী রক্ষা করা হবে না এ সংসদে।
অবশেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এর বক্তব্য হলো-
“এ চুক্তিপত্র প্রকাশ করুন। দেশবিরোধী কোন চুক্তি মানবে না বিএনপি।
”
এ বক্তব্যের মধ্যে অল্পকথায় বলতে গেলে বলতে হয় সুবিধাবাদী এবং লোক দেখানো। যদি আসলেই তারা এ চুক্তির বিরোধী হত তাহলে তারা চুপ করে বসে থাকত না। যে বিএনপি খালেদার বাড়ির জন্য হরতাল ডাকতে পারে সেই বিএনপি সাগর বক্ষের গ্যাস ব্লক বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার চুক্তির বিরোধীতা করছে। জনগণ জানে চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। তাই আজ আ.লীগের জায়গায় বিএনপি থাকলেও চুক্তি হতো।
আমি, আপনি, আমরা সবাই জানি এই দুই দল কতবড় দেশপ্রেমিক! দেশের মানুষের জন্য এদের দরদ উথলে পড়ে। এমনকি তাদের ছেলে মেয়েরা দেশপ্রেমের বিভোর হয়ে বিদেশী মাইয়া বিয়া কইরা দেশের সকল জনগণকে শালা-শালী বানায়। আর আজ তারাই দেশের সবচেয়ে বড় দেশপ্রেমিক! এদেশকে আর কেউ ভালবাসতেই পারে না। এতদিন মুক্তিযুদ্ধ ছিল পৈতৃক সম্পত্তি এখন দেশকে ভালবাসাও হবে পৈতৃক সম্পত্তি। শিয়াল আর খেক শিয়ালকে ক্ষমতায় রেখে দেশের সম্পদ হোক বা সাগরের গ্যাস হোক কিংবা দেশের আপামর জনতার কপালে রেখে জুটবে শুধু শকুনের খাবার।
আর তাই, নেমে আসুন রাজপথে। অনেক হরতাল দেখেছেন, হরতাল দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়েছেন, গালাগালি করেছেন আ.লীগ বা বিএনপি-কে। কিন্তু আগামী ৩ জুনের হরতাল দেশের সম্পদ দেশেই রাখার হরতাল, আ.লীগ বিএনপি-র দালালীর মুখোশ উন্মোচন করার হরতাল, আমার, আপনার ও আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন ও জ্বালানী রক্ষা করার হরতাল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।