আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কানাডা থেকে রুমানাকে নিয়ে চিঠি

কানাডার ভ্যাঙ্কুবার এবং ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (UBC) বাংলাদেশী পরিবার রুমনার ব্যাপারে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। যা আপনারা এই লিংকে পাবেন। আপনাদের জন্য তা বাংলায় দেয়া হল: সম্মানিত সম্পাদক, আমরা কানাডার ভ্যাঙ্কুবার এবং ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায়(UBC) অবস্থিত বাংলাদেশী পরিবার। আমরা গভীর দুঃখ এবং কষ্ট পেয়েছি আমাদের বোন রুমানার প্রতি ভয়ানক আক্রমণে। আমরা এ চিঠি লিখছি রুমানার স্বামী কর্তৃক ভিত্তিহীন বিবাহ বহির্ভুত বৈবাহিক জীবনের বানোয়াট গল্পটি শুনে।

ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (UBC) তে বাংলাদেশ কমিউনিটি-টি অতি স্বল্প পরিসরের কমিউনিটি। এখানে একজন আরেকজনের অজ্ঞাতসারে extramarital কোন সম্পর্ক তৈরী করা একেবারেই অসম্ভব। আমাদের যখন রুমানার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হয় আমরা দেখতে পাই একজন চমৎকার, ভদ্র এবং মেধাবী বাংলাদেশের শিক্ষার্থীকে। আমরা পাই তাকে একজন খুব মনোযোগী ছাত্রী এবং পরিবারের প্রতি অন্তর্প্রাণ ব্যাক্তি হিসেবে। বিভিন্ন সময় সে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যত শীঘ্র সম্ভব তার ডিগ্রী সম্পন্ন করে দেশে তার পরিবারের কাছে ফিরে যাবার ব্যাপারে।

যেহেতু সে তার পরিবার থেকে অনেক দূরে থাকছে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম তার উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং চেষ্টা করেছিলাম যতটা সম্ভব support দেয়ার। বাংলাদেশী এবং অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরাও তার জন্য অন্তর্প্রাণ ছিল। আমরা সকলে তাকে চিনতাম তার বন্ধুসুলভ আচরণ, সুন্দর কথা এবং চমৎকার রান্নার জন্য। আমাদের খুবই ভাল লেগেছিল সে শত ব্যস্ততার মাঝেও দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো আদায় করে নিতো। যখনই তার সাথে দেখা হত দেখতাম তার মাথা কাপড়ে ঢাকা থাকেতো।

গত রমজান মাসে সে যতটা সম্ভব চেষ্টা করতো মসজিদের অনুষ্ঠানগুলোতে শরীক হতে। মুসলমান শিক্ষর্থীরা তাকে হালাল খাবারের খোঁজ দিতেও সহায়তা করতো। এটা খুবই স্বাভাবিক যে মুসলমানরা একজন অপরজনকে ভাই/বোনের মতো সহায়তা করে। এখানে আমরা কোন অনৈতিক বা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক কখনোই দেখতে পাইনি- এটা আমরা সুদৃঢ়ভাবে বলতে পারি। সে কখনোই তার স্বামীর পেশাগত জীবনের দিকটি খারাপভাবে বলেনি উপরন্তু সে জানতে চেয়েছিল কানাডাতে তার স্বামীর ব্যবসা করার সুযোগ বা সম্ভাবনার ব্যাপারে।

সে তার কন্যার ব্যাপারে সব কিছুই অগ্রাধিকার দিত। তার মন-প্রাণ সবসময় যেন চাইতো ওদেরকে কানাডায় আনার জন্য। তার মধ্যে আমরা পেয়েছি শিশুসুলভ নিষ্পাপ সরলতা। আমাদের community-র শিশুদের সাথে ছিল তার খুবই বন্ধুত্ব। সে যেখানেই যেত শিশুরাই তার বন্ধু থাকতো।

সে সহজেই শিশুদের সাথে মিশতে পারতো এবং আমরা তার প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ তার আচরণ এবং সৌজন্যতায়, যা আমাদের সন্তানদের জন্য পাথেয়স্বরূপ। গত নয়মাসে আমরা কখেনাই তাকে দেখিনি লেখাপড়া থেকে বিচ্যুত হতে (যার জন্য সে এখানে এসেছে) এবং দেখিনি তার কন্যা এবং স্বামীর প্রতি কোন উদাসীন থাকতে। সে প্রতিটা মুহুর্তে তাদেরকে MISS করতো। সে যে সেলফোনটা ব্যবহার করতো তার সিগনাল সেই বিল্ডিংয়ে পাওয়া যেতনা। তাই প্রচন্ড শীত কিংবা পড়ার চাপ যাই থাকুক না কেন সবকিছু উপেক্ষা করে বাইরে ঠাণ্ডায় এসে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতো।

পরে সে Skype-এর মাধ্যমে তার শিশুকন্যা ও স্বামীর সাথে যোগাযোগ রাখতো। এমনকি সে তার মেয়েকে Homework করতে এবং আরো কিছু শেখাতো এখান থেকেই; যেমন: Skype-এর মাধ্যমে সে দেখিয়ে দিয়েছিল কিভাবে ফুল আঁকতে হয়। আমরা লক্ষ্য করতাম তার আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও যখনই সুযোগ পেত মেয়ের জন্য দামী খেলনা কেনার চেষ্টা করতো। সে কানাডাতে থেকেই থিসিস পেপার সম্পন্ন করার কথা ছিল। যদি এখানে তার অন্য কোন ব্যাপারে সংশ্লিষ্টতা থাকতো তবে অনায়াসই কানাডায় থাকতে পারতো।

কিন্তু সে অনেক সংগ্রাম করেছে দেশে ফেরা এবং বাংলাদেশে বসে থিসিস সম্পন্ন করার জন্য। এমন একটা পর্যায়ে সুপারভাইজারের কাছে না থেকে সময়মতো থিসিস জমা দেয়ার ব্যাপারটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল কিন্তু তাও সে তার স্বামী-সন্তানের জন্য দেশে ফেরা্র জন্য জোর দিয়েছিল। আমরা তার ভালোর জন্যই তাকে দেশে ফিরতে তখন বারণ করেছিলাম কিন্তু সে সুস্থিরভাবে বলেছিল যে, কোনক্রমেই তার পরিবার থেকে দূরে থাকতে পারছেনা। আট মাস পরিবার থেকে দূরে সময় কাটিয়েছে - আর না। সে এই একই কারণে পি.এইচ.ডি করার সময়টাকে একবছর বাড়িয়ে নিয়েছে।

আগামী সেপ্টেম্বরেই তার পি.এইচ.ডি শুরু হবার কথা ছিল কিন্তু পরিবারের কথা ভেবেই সে এ ক্ষতিটা মেনে নিয়েছে। যদি তার মেয়ে এবং স্বামীকে এনে একসাথে থাকতে পারে তবে পি.এইচ.ডি করবে। একজন International Student হিসেবে আর্থিক সংকুলান করা বেশ দুরূহ। কিন্তু সে একবছর সময় নিয়েছে গুছিয়ে নেয়ার জন্য। আমরা নির্বাক এবং অত্যন্ত ব্যথিত যে, তার ঘটনার প্রেক্ষিতে মিথ্যা ও বানোয়াট বিবাহ বহির্ভূত সম্পন্ধ প্রচার জেনে।

এটা অত্যন্ত মর্মন্তুদ যে রুমানা তার পরিবারের কাছে ফিরে গিয়েছে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত অতি মূল্যবাদ সম্পদটি (দৃষ্টিশক্তি) হারাবার জন্য। আমরা অনুভব করছি অত্যন্ত জোরালো ভাবে এর প্রতিবাদ করা উচিত- আমাদের সকলের প্রিয় রুমানা সম্পর্কে বানোয়াট এবং আজেবাজে মন্তব্য সম্পর্কে। আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ এমন দুর্ভাগা মেয়েটি আর বাংলাদেশের একজন আলোকিত মানুষের চরিত্র হননের পেছনে আপনারা আর লাগবেন না। ভ্যাঙ্কুভার এবং ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় (UBC) অবস্থিত বাংলাদেশী পরিবার যারা রোমানাকে চিনে ও জানে Shahin Aktar Email: Saif Islam Email: ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।