আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিয়ান পর্বতের ভালবাসা

A candy-colored clown they call the Sandman.Tiptoes to my room every night.Just to sprinkle stardust and to whisper "Go to sleep, everything is all right" ১৯১৩ সাল। জাপানিরা সবে মাত্র কোরিয়াতে প্রবেশ করেছে । দক্ষিণ কোরিয়ার হান নদীর পাশ ঘেষে দাড়িয়ে আছে শিয়ান পর্বত। শিয়ানের ঝরনা থেকে নেমে আসা জল ধারা শিয়ান খাল (শিয়ান ঝন) নিচের বসতীকে দুটি আলাদা জনপদে ভাগ করেছে । শিয়ান খালের দুপাড় ঘিরে প্রতিদিন সকালে দুই গ্রামের মেয়েরা বসে কাপড় কাঁচতে , নতুন বউদের নিয়ে টিপ্পনী কাটে পুরানরা।

নতুনরা মাথা নীচু করে মুচকি হাসে। বউ ঝিদের পেছন পেছন আসা ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা মেতে উঠে নানান খেলায়। খালের বাঁকের ধারে আকাশিয়া বাগানের পাশেই প্যাগোডা-ছাদ দেয়া কাঠের মাঁচা । এখানে বসে পণচায়েত প্রধান কিম হো ইয়ং কখনো কখনো মাছ ধরেন আর পান করেন ঘরে তৈরী চালের মদ, সাথে মিস্টি চালের পিঠা। ওপারের গ্রামেই বাস করে সিন-ইকসু বৈদ্য,বাজারে তার জিনসেং এর দোকান।

জাপানি সৈন্যরা জিনসেং কিনে উপহার পাঠায় তাদের প্রিয়জনদের জন্য। সিন ইকসু’র এক মাত্র কিশোরি মেয়ে সিন জি-ইয়ং,প্রতিদিন শিয়ান খাল পেরিয়ে স্কুলে যায়। বিকেলে ফেরার সময় শিয়ানের নীচে যেখানটায় ক্যাথলিক গির্জার রাস্তা , ইচ্ছে করেই সেই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরে। ওখানে কাঠ বাদাম গাছের নীচে অপেক্ষায় থাকে কিম দোংহুন। দোংহুনের হাত ভর্তি নানা বুনো ফল আর বুনো ফুলে।

প্রিয়তমা জিইয়ং এর জন্য আজ সে একপ্রকার হালকা বেগুনি ফুল নিয়ে এসেছে , এই ফুল শুধু মাত্র শিয়ান পর্বতের একদম উচু চুড়ায় পাওয়া যায়। আর শুধুমাত্র সাহসীরাই শিয়ানের শেষ মাথায় উঠতে পারে। জিইয়ং এর চুলে পমেডের সুঘ্রানে দোংহুনের মনটা যেন আরো মাতাল হয়ে যায়, সে তাকে আরো কাছে পেতে চাইলে বুনো কাঠবিড়ালীর মত নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাড়ির পথে দৌড়াতে থাকে জিইয়ং। রাস্তার বাঁকে গিয়ে গলা উচিয়ে বলে , বাবা অপেক্ষা করছে ,মা’র জন্য তিলের তেল নিতে হবে,কাল আবার দেখা হবে। দোং হুন হাত নেড়ে উচু গলায় বলে যায়, ঠিক আছে,ঠিক এইখানটায়,কাল আবার , অপেক্ষায় থাকবো...।

দোংহুনের কথাগুলো শিয়ানের চূড়ায় প্রতিধ্‌ণিত হতে থাকে। এই কিশোর কিশোরির ভালবাসার একমাত্র সাক্ষী হয়ে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকে শিয়ান পর্বত । এভাবে কেটে যায় কয়েক বছর। শিয়ানের গাছগুলো প্রচন্ড শীতে কখনো হয়ে উঠে একেবারেই পাতা শূন্য আবার বসন্তের শুরুতে ভরে উঠে কঁচি সবুজাভ পাতায়; পাহাড়ি পাখীর কলরবে মুখরিত হ্য় শিয়ান পর্বতের বুক। তারপর এক সময় দোং হুনের বাবা কিম হো ইয়ং পাশের গ্রামের পণচায়েত প্রধানের মেয়ের সাথে দোং হুনের বিয়ে দেয়।

এর কয়েক মাস পর প্রচন্ড অভিমানে জিইয়ং শিয়ানের চূড়া থেকে লাফিয়ে আত্নহত্যা করে। পরের বছর শীতের শুরুতে এক সকালে শিয়ান খালে কাপড় কাঁচতে আসা বউ-ঝিরা দোংহুনের মৃত দেহ পড়ে থাকতে দেখে শিয়ান পর্বতের নিচে। প্রীয়তমার জন্য এভাবেই ভালবাসার প্রতিদান দিয়ে যায় কিম দোং হুন। ‘আমার চোখ দুটো রেখে গেলাম তোমাদের ভালবাসা দেখার জন্য’—পাহাড় থেকে লাফিয়ে পরার আগে ঠিক এই কথা গুলোলিখে রেখে যায় প্রেমিক দোংহুন শিয়ানের চূড়ার দেয়ালে । তারপর অনেক শীত অনেক বসন্ত গড়িয়ে যায় শিয়ান পর্বতের বুক বেয়ে ।

আস্তে আস্তে শিয়ানের ঝর্ণাটি দু ভাগ হয়ে নেমে এসে এক হয়ে যায় নিচের জল ধারায়। এ যেন ভালবাসার বিরহে পাহাড়ি অশ্রুধারা , দুর থেকে দেখলে এমনটিই মনে হয়। তাই গ্রাম বাসিরা এই জুগল ঝর্ণাধারার নাম দিয়েছে ‘শিয়ানের অশ্রুধারা’। আমাদের গল্পের সময় কাল ১৯১৩ সাল থেকে পরবর্তী কয়েক বছর। এখনো প্রতি বছর অনেক যুগল ‘শিয়ানের অশ্রুধারা’ ঝর্না দেখার জন্য ভিড় করে শিয়ান পর্বতের পাদদেশে।

নতুন টিনেজ যুগলরা দিদিমাদের কাছে জিইয়ং-দোংহুনের গল্প শুনে পরস্পর কে জড়িয়ে ধরে প্রচন্ড ভালবাসার আবেগে। পর্বতের দিকে তাকিয়ে আবারো প্রতিজ্ঞা করে অন্তহিন ভালবাসার । সময় ২০১০ সাল । মার্চ মাস। একদল প্রত্নতাত্নিক শিল্যা ডাইনেস্টির মূদ্রার খোঁজে শিয়ানের পাশে মাটি খুড়ে আবিস্কার করে একটি যুবকের বাধানো ছবি।

ছবির পেছনে লেখা ‘আমার চোখ দুটো রেখে গেলাম তোমাদের ভালবাসা দেখার জন্য’। সাইন ‘আন্দ্রেঁ কিম’,১৯১৫, শিয়ান ক্যাথলিক মঠ। ছবির চোখ দুটো ছিল আসলেই জীবন্ত, নড়াচড়া করছিল। পাদটিকাঃ এটি একটি কাল্পনিক গল্প। ছবি-সাহায্যঃ ইয়াহু কোরিয়া,গুগল ট্র্যান্সলেটর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.