স্বপ্ন ছুঁয়ে গত কয়েক বছর ধরেই যে ব্যাপারটা নিয়ে খুব জোরেশোরে আলোচনা চলছে আমাদের রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তা হচ্ছে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারন। আমাদের প্রতিবেশী দুটি রাষ্ট্র ভারত এবং মিয়ানমার তাদের স্বাভাবজাত আধিপত্যবাদ আর গায়ের জোরে চাইছে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার প্রায় পুরোটাই নিজেদের দখলে নিতে। কিন্তু রাজনৈতিক কামড়াকামড়িতে ব্যস্ত এই প্রশাসন ব্যবস্থা সে ব্যাপারে কখনো উদাসীন আর কখনোবা সচেতন ভাবেই বিশ্বাসঘসাতক। তবু ও কিছু নিবেদিতপ্রান, দেশের প্রতি নিজের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট মানুষ এখনো আছেন যারা নিজের সামর্থ্য আর ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার ভেতর থেকেও এই দেশের সম্পদ , আমদের অধিকার রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদেরই একজনের কথা শুনুন।
তিনি ইয়াদুল, আমাদের সমুদ্রযোদ্ধা। নড়াইলের লোহাগড়ার প্রত্যন্ত এক এলাকা থেকে আসা এই তরুন এস এস সি এবং এইচ এস সি দুটোতেই মেধাতালিকায় ছিলেন অর্থাৎ স্ট্যান্ড করেছিলেন। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে, দেশের জন্য কিছু করার প্রত্যয়ে যোগ দিলেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় বুয়েটে নেভাল আর্কিটেকচার এন্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে , একজন দক্ষ নৌ প্রকৌশলী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য। অত্যন্ত সফলতার সাথে নিজের গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে এই মেধাবী তরুন বুয়েট থেকে।
এরপর আরো নিবিড় গবেষনা করতে থাকেন সমুদ্র আইন নিয়ে। ইয়াদুলই সর্বপ্রথম ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে আয়োজিত এক সেমিনারে তার গবেষনা প্রবন্ধে উপস্থাপন করেন যে, ১৯৮২ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত সমুদ্রসীমা নির্ধারন সংক্রান্ত আইনের ৭৪ ও ৮৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ার কথা ইকুইটেবল পদ্ধতিতে। কিন্তু প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র যাদের একটি অন্ধ সাম্প্রদায়িক আর আরেকটি লুটেরা সাম্রাজন্যবাদী , সেই ভারত আর মিয়ানমার সবার অলক্ষ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারনে ব্যবহার করতে চাইছে ইকুইডিসটেন্স পদ্ধতি। এর ফলে যেখানে বাংলাদেশের নিজের সমুদ্রসীমা জাতিসংঘ আইন অনুযায়ী দুই লাখ সাত হাজার বর্গ কিলোমিটার হওয়ার কথা সেখানে ভারত আর মিয়ানমারের দখলদারিত্বে তা নে মে আসতে পারে এক লাখ আটত্রিশ হাজার বর্গ কি মি তে! অর্থাৎ বাংলাদেশ তার মোট সমুদ্র এলাকার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই হারাতে পারে।
সমুদ্রসীমা শুধু সমুদ্র সীমাই নয়, এর সাথে অবিছিন্নভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের সার্বভৌমত্ব , আমাদের বানিজ্য, আমাদের সমৃদ্ধি, আমাদের তেল-গ্যাসের সুনিশ্চিয়তা ,আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের একটা স্বাধীন জাতি সত্তা হিসেবে বেঁচে থাকা।
দেশের অনেক বড় বড় মহারথীরা , রাজনীতিবিদেরা কেউই মাথা ঘামাতে চাননি এত গুরুত্বপূর্ন ব্যাপারটি নিয়ে। আর যারা মাথা ঘামিয়েছিলেন তারা ছিলেন সব বিশ্বাসঘাতক, বেইমানের দল। বিদেশী পা চাটা সারমেয়র দল। সুকৌশলে জনগন এবং সরকারকে এই বিষয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল, যাতে কেউ কিছু জানতে না পারে। আর ২০১৩ এর মধ্যে আমরা যদি আমাদের সমুদ্রসীমা না চিহ্নিত করতে পারি তবে এরপর ভারত , মিয়ানমার যা বলবে তাই মেনে নিতে হবে আমাদের।
ষড়যন্ত্রের কি ভয়ঙ্কর রুপ। কিন্তু আমাদের আছেন ইয়াদুলের মতন সমুদ্র যোদ্ধা। তাইতো তার গবেষনা প্রকাশিত হওয়ার পরেই টনক নড়ে বাংলাদেশ সরকারের, সারা দেশে মানূষ জানতে পারে, জাতিসংঘে দৌঁড় ঝাপ শুরু হয়, ত্রি মাত্রিক সমুদ্র জরিপের কাজ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শুরু করা হয়। মিয়ানমার-ভারতের সাথে আলোচনাতেও অন্যতম প্রধান আলোচক আমাদের ইয়াদুল।
কিন্তু যে সমুদ্রযোদ্ধা তার সব জ্ঞান, চেষ্টা একত্র করে লড়ে যাচ্ছিল মাতৃভূমির সমুদ্র সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সে যোদ্ধা আজ নিজের মৃত্যুর মুখে।
সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল হসপিটালে শুয়ে ক্যান্সারের সাথে লড়ছেন এই সেনানী। কিন্তু ব্যায়টা যে অনেক বড়। এখনো প্রয়োজন ২৭ লক্ষ টাকা। কিন্তু আমি জানি আমরা ইয়াদুলকে হারতে দিব না। কোনভাবেই না।
তাকে যে বড় প্রয়োজন আমাদের দেশের। এই সমুদ্রযোদ্ধার হার মানে আমাদের হার, আমাদের অপূরনীয় ক্ষতি। ইয়াদুলকে ফিনিক্স পাখির মত ফিরিয়ে আনতেই হবে আমাদের, আমাদেরই স্বার্থে, এই দেশের স্বার্থে। এটা লজ্জাজনক যে এরকম একজন দেশপ্রেমিক, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি রাষ্ট্র থেকে সহায়ত পাচ্ছেন না। কিন্তু তাতে কি।
এই রাষ্ট্র, প্রশাসন ব্যস্ত হীন রাজনীতি নিয়ে, কিন্তু আমরা তো ইয়াদুলকে হারাতে পারি না।
অনেকেই এগিয়ে আসছেন। ইয়াদুলের বুয়েটিয়ান বন্ধুরা, নেভীর সহকর্মীরা, মার্চেন্ট নেভীর ব্যক্তিরা। কিন্তু ব্যায়টা অনেক বেশি, যুদ্ধটা অনেক কঠিন। তাই সবার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি প্লিজ ইয়াদুলের পাশে এসে দাঁড়ান, এ দেশের এক বীর সমুদ্রযোদ্ধাকে আমাদেরই বাঁচাতে হবে।
আমি জানি ব্লগে অনেক বুয়েটিয়ান আছেন। তাদের সবার কাছে অনুরোধ ইয়াদুলের পাশে দাঁড়ান। আর বুয়েটে অতি শীঘ্রই কি করা যায় এ ব্যাপারে তা নিয়ে যদি কারো কোন পরামর্শ থাকে তবে তাও জানাতে পারেন। এছাড়াও ব্লগে আরো যারা আছেন সবাইকে অনুরোধ করছি নিজের স্থান থেকে একটু ভালোবাসা, একটু আন্তরিকতা দেখানোর জন্য।
একজন যোদ্ধাকে কখনো সাহায্য করা যায় না, বরং তার পাশে দাঁড়ানো যায়।
ইয়াদুলের পাশে দাঁড়াতে পারেন আপনিও দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে। আপনার আন্তরিকতাটুকু জানাতে পারেন নিচের একাউন্ট গুলোর মাধ্যমে,
শাহিনা ইসলাম, একাউন্ট ০০০২-০৩১৩০০০১৯৪, ট্রাষ্ট ব্যাংক, প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চ, ঢাকা সেনানিবাস। বিদেশের বন্ধুরা এই একাউন্টে পাঠাতে পারেনঃ Account name: Md Hasan Iftekhar; DBS Saving Plus account number: 054-5-027108; DBS Bank; Branch code:054; Bank Code:7171; Singapore ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।