দিতে পারো একশ ফানুস এনে...আজন্ম সালজ্জ সাধ একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই...
ছোট বেলায় আমার একটা ধারনা ছিলো যে বড়রা কমিকস পড়ে না। তাই এখনি সব পড়ে ফেলতে হবে। সে মতবাদ অনু্যায়ী সেই আমলের চাচা চৌধরী আর বিল্লু-পিঙ্কি থেকে শুরু করে বাহাদুর বিল্লি আর বাঁটুল দি গ্রেট- যা পাই সব পড়ে ফেলার চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু আমার বন্ধুরা যখন ক্লাস সেভেন-এইটে কমিকস পড়া ছেড়ে দিলো; আমি আবিস্কার করলাম যে আমার তখনো কমিকস পড়তে ভালো লাগছে। বড় আর আমি এই জীবনে হতে পারলামনা; কারণ এখনো যে কমিকস যেখানে পাই সাথে সাথে তা আমার বুক শেলফে ঢোকে।
আর না পারলে অবশ্যই মাথার ভিতরে।
চরিত্রের মাঝে আমার প্রিয় হচ্ছে অ্যাসটেরিক্স, টিনটিন আর স্পাইডারম্যান। যদিও ফ্যান্টম, হিম্যান, ব্যাটম্যান মায় অগ্নিপুত্র-অভয় আর লম্বু-মোটুর সব কমিকস আমার কালেকশনে আছে। তা সেসব তো বিদেশী লেখকদের। খুঁজতে শুরু করলাম দেশী কার্টুনিস্ট।
বাসায় আমার জন্য কিশোর তারকালোক, শিশু আর টইটুম্বুর রাখা হতো। কিশোর তারকালোকের মাধ্যমে আমার পরিচয় হলো আহসান হাবিব আর তারিকুল ইসলাম শান্তর সাথে। পটলা ক্যাবলা আর পটকা ভাইয়ের চরম ফ্যান ছিলাম। কিন্তু আর যা পড়তাম সবই ছিলো পশ্চিম বঙ্গের। প্রায় দেড় বছর ধরে নতুন একটি চরিত্র প্রথম আলোর স্ট্রিপ কার্টুন ন্যান্সির উপরে শোভা পাচ্ছে; তা হলো বেসিক আলী।
সবাই নিয়মিত পড়েন কিনা জানি না, তবে আমার বেশ লাগে। বলবো না প্রতিদিন মজার হয়, তবে দেশের সাম্প্রতিক কারনামা আর ডিজুস আমলের হালখাতা ভালোই আঁকেন কার্টুনিস্ট শাহরিয়ার।
শাহরিয়ারের সাথে আমার প্রথম পরিচয় রাইজিং স্টারের পিছনের পাতার কমিকস বাবু দিয়ে। তিনি ডেইলী স্টারের কার্টুনিস্ট। বাবু পড়ে আমার শাহরিয়ারের বাকি কাজ গুলি দেখার ইচ্ছা জাগে।
পরে দেখলাম সামাজিক এবং রাজনৈতিক ছাড়াও তিনি প্রচুর আজাইরা কার্টুন আঁকেন। এই আজাইরা কার্টুনগুলি দেখতে দেখতে আবিস্কার করলাম তার রসবোধের কোন তুলনা নেই। খালেদা হাসিনার ঝগড়া থেকে শুরু করে ভ্যাম্পায়ার-এলিয়েন আর পাড়ার প্রেম-সবেতেই শাহরিয়ারের অবাধ বিচরন। তাই লাইলী যখন আমার হাতে আসে; কিনতে এক সেকেন্ডও দেরী করিনি। লাইলীর প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারী ২০০৭।
আর লেখকের মতে লাইলী খুব সম্ভবত ভাংলা ভাষায় প্রথম গ্রাফিক নভেল।
লাইলী কে?
লাইলী হচ্ছে ঢাকার এক মধ্যবিত্ত পাড়ার ২৪ বছরের এক মারদাঙ্গা, হুমায়ূন আহমেদের নায়িকা টাইপ সুন্দরী ব্যাংকার। বাবার বদলীর চাকরীর জন্য ১০ বছর ঢাকার বাইরে বসবাস করে আবার সে ঐ পাড়াতেই ফিরে আসে। এসে দেখতে পায় যে পাড়ায় এখন ভোতন মাস্তানের তান্ডব। লাইলীর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে তাকে দেখা মাত্রই সবাই প্রেমে পড়ে যায়।
সে ভোতন গুন্ডাই হোক আর পাড়ার মজনু মঞ্জুই হোক। কিন্তু ১০ বছর আগে আর পরের লাইলীতে বিশাল তফাৎ। এখনকার লাইলীর আছে কারাটে ব্ল্যাক বেল্ট আর জাপান থেকে শিখেছে টাইকন্ড। সুতরাং গুন্ডা-বদমাস সাবধান!!
পুরো গল্পে বার বার এসেছে ঢাকার বর্তমান আইন শৃংখলার অবস্থা। আর তাই গল্পের ভিলেন ভোতন ১০ মামলার আসামী আর ওয়ান্টেড লিস্টে থাকা সত্বেও এমপি পদের জন্য মনোনিত।
শুরুতেই ভোতন গুন্ডার ডান হাত রফিক মনের ভুলে ভোতনের বাবাকেই ছিনতাই করতে বসে। গল্পে লাইলী বেশ কয়েকবার ইভ টিজিং এর শিকার হয়। তবে শাহরিয়ার এখানে লাইলীকে সিমি কিংবা তৃষা হতে দেননি। বরং পিটিয়ে গুন্ডাদের নাশ করেছে সে।
ঘটনা সংক্ষেপঃ
লাইলীকে বিয়ে করার জন্য অস্থির তোতলা ভোতন গুন্ডা।
লাইলীকে চায় মামা-ভাগ্নে আরিফ-মঞ্জু আর তার ব্যাংকের কলিগ মিঃ হোৎকাও। এমনকি ভোতনের নজরের আড়ালে তার ডান হাত রফিকও লাইলীকে পাবার ইচ্ছা পোষন করে। অবশ্য লাইলীর পছন্দ সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার আরিফকে। আরিফ লাইলীর বাসায় মঞ্জুর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়ে নিজেই লাইলীর প্রেমে পড়ে। কিন্তু লাইলীর মারদাঙ্গা মূর্তি দেখে ভয়েই আরিফ কিছু বলতে পারেনা।
নিজের মামার এমন বিশ্বাসঘাতকতা সইতে না পেরে ৪৯টা ছ্যাঁকা আর ৫০টা প্রেমের ইতিহাস নিয়ে মঞ্জু যায় আত্মহত্যা করতে। কিন্তু সে ডিজুস জেনারেশন। আর তাই ২ দিনে সব ভুলে গিয়ে প্রেম করা শুরু করে লাইলীর বোন শীবার সাথে। ভোতন নিত্য নতুন চাল চালতে থাকে। একবার বাসায় প্রস্তাব নিয়ে গিয়ে দাবড়ানি খায়; আরেকবার লাইলীকে তুলে আনতে গিয়ে চোরনি লায়লাকে তুলে এনে বিয়ে করে বসে।
শেষ পর্যন্ত ভোতন চায় লাইলী আর আর তার বোন শীবা দুইজনকেই বিয়ে করতে। ক্লাইমেক্সটা বাদ রাখলাম! মারামারিতে হিরোর চাইতে হিরোইন বেশী পারদর্শী। পুরো কমিক্সে ডায়ালগ আর ছবিতে রসের ছড়াছড়ি। যদি কেউ ডায়ালগ নাও পড়েন, ছবি দেখেই মুখে হাসি ফোটার কথা।
বইটি সম্পর্কে লেখক বলেছেনঃ
এই গল্পে কোনো প্লট নেই।
তবে আছে বিভিন্ন উদ্ভট চরিত্র যাদের মনে হবে কোথায় যেন দেখেছি। কারণ এর পটভূমি বর্তমান ঢাকা।
এই বইয়ের কুফলঃ এটা পড়ে কিছু বিটলা বুদ্ধি ছাড়া কিছুই শিখতে পারবেন না।
এই বইয়ের সুফলঃ এটা পড়লে ব্লাড প্রেশার বাড়বে না। বার বার ঘুমিয়ে পড়বেন এবং এতে স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে।
আমার কথাঃ
বইটা একবার অবশ্যই চোখ বুলানো উচিত। বিশেষ করে বিটলা বুদ্ধি যাদের মাথায় কচকচায়। তবে আদর করে ছোট ভাই বোনদের যেন কিনে দিতে যাবেন না। কমিকস হলেও আমার মনে হয়েছে এটা ১৪+।
****************************
এক নজরে বইটিঃ
লাইলী বাই শাহরিয়ার
ধরনঃ রঙিন গ্রাফিক্স নভেল।
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৬
প্রকাশকঃ পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
মূল্যঃ ১২০টাকা।
****************************
পুনশ্চঃ এটা আমার লেখা প্রথম কমিক্স/বুক রিভিউ। অনেক খুঁজেও লিঙ্ক পেলাম না। সেজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কেউ এটার লিঙ্ক পেলে প্লিজ শেয়ার করেন।
শাহরিয়ারের আঁকা দুইটা কার্টুনঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।