ইসলাম সম্পর্কে কট্টর ইসলাম বিরোধীরাও একথা অকপটে স্বীকার করে যে, ইসলাম তলোয়ার দিয়ে নয়, ইসলাম মানুষের মন জয় করেছে হƒদয় দিয়ে। যে ধর্মের নামই শান্তির ধর্ম সেই ধর্মের প্রচার প্রসার এবং প্রতিষ্ঠার ইতিহাস কমবেশি সব ধর্মাবলম্বীর জানা কিন্তু ধর্মের লেবাস পরে যারা ধর্মকে পণ্য হিসেবে বিক্রি করে সেই ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাছে শান্তির পরিবর্তে পাকিস্তান এবং ইসলাম সমার্থক। যদিও পাক-পবিত্রতার সঙ্গে ইসলামের কোনও বিরোধ নেই। কিন্তু শান্তি প্রশ্নে তো ইসলাম আপসহীন। ইসলাম শান্তির ধর্ম, সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতাসহ ইসলাম মজলুমের অধিকার প্রতিষ্ঠার ধর্ম।
এই মহান ধর্মকে ধর্ম ব্যবসায়ীরা পরিণত করেছে আÍস্বার্থ হাসিলের ধর্মে। ব্যবসায়ীদের কাজ হচ্ছে মুনাফা অর্জনের জন্য পণ্য বিক্রি। আর ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্ম বিক্রি করে ধর্ম বিকৃত করে-- এর চেয়ে ভয়ংকর কাজ আর নেই। এটি আর তখন ব্যবসা থাকে নাÑ ব্যবসায় মুনাফা ব্যক্তির পকেটে যায়, ব্যক্তির পকেট থেকে-- তাই এই ব্যবসায়ে ব্যক্তি লাভবান হয়Ñ কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমষ্টি, তথা অনেক মানুষ। ধর্ম ব্যবসায়ীদেরকে কাছ থেকে কেউ কিছু না কিনেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পরম্পরায়। কালক্রমে। সেটাই ভয়ংকর।
বাংলাদেশে ধর্ম ব্যবসায় সবচেয়ে বড় ব্যবসায়। ধর্মের নামে বাংলাদেশের মানুষকে যতো ঠকানো হয়েছে তত আর কোন ভূখণ্ডেই ঠকানো যায়নি।
বারবার প্রতারিত এদেশের মানুষ ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে। এদেরকে মুসলিম লীগ ঠকায়, জামাতে ইসলামী ঠকায়, আওয়ামী লীগ ঠকায়, ঠকায় বিএনপিÑ ধর্মের নামে-- ধারাবাহিক ভাবে। তবে এদেশে ধর্ম নিয়ে সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যবসা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামক দলটির। দেশের একজন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুল বারকাত হিসেবে নিকেশ করে দেখিয়েছেন আক্ষরিক অর্থে জামায়াতের ব্যবসা-বাণিজ্যের বার্ষিক টার্ন ওভার প্রায় বারো শ’ থেকে পনের শ’ কোটি টাকা। এটি দৃশ্যমান কিন্তু ধর্ম নিয়ে তাদের মূল ব্যবসায় টার্নওভার যদি হিসাব করা হয় তবে সেটা জাতিবিধ্বংসী বলে প্রতিভাত হবে যেকোনও বিবেকবান মানুষের কাছে।
এরা ১৯৭১-এ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়Ñ ভয়ংকর অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত একটি বর্বর হানাদার বাহিনীর তল্পিবাহক হিসেব স্বতোপ্রণোদিত হয়ে নিবেদিত হয়েছিলÑ যারা নিরস্ত্র নিজের দেশবাসীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা, লণ্ঠন এবং ধর্ষণের পৈশাচিকতায় মেতে উঠেছিল- সেই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর স্বতোপ্রণোদিত দোসর হয়ে এরাও ইসলাম রক্ষার নামে খুন ও হত্যায় মেতেছিল। তাদের সেই ১৯৭১-এর নয় মাসের সমস্ত তৎপরতা, কর্মকাণ্ডই যে ছিল ইসলামের লেবাস পরে ইসলামের বিরুদ্ধে তা স্পষ্ট জাজ্বল্যমান দলিল প্রমাণসহ উঠে এসেছে আলী আকবর টাবী সংকলিত দুটি গ্রন্থে ‘দৈনিক সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ভূমিকা’ এবং ‘মতিউর রহমান নিজামী আলবদর থেকে মন্ত্রী’।
জামাতে ইসলামীর নেতা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম এবং মতিউর রহমান নিজামীর ব্যক্তিগত ক্ষমতা-লিপ্সা, অর্থ-লিপ্সা পূরণে তারা পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কি ভয়ংকর ভাবে ব্যবহার করেছে তার স্পষ্ট চিত্র উঠে এসেছে এই বই দুটিতে। জামাতীদের মোনাফেকীর অসংখ্য অজস্র উদাহরণ তাদেরই আÍস্বীকৃত দলিল-- দৈনিক সংগ্রামের পৃষ্ঠায় পাওয়া যাচ্ছে। ১৯৭১-এ তারা জাতির সঙ্গে মোনাফেকি করেছে, গাদ্দারি করেছে, করে চলেছে আজও।
কেবল জাতি নয়, পৃথিবীর অন্যান্য মুসলমান জনগোষ্ঠির সঙ্গেও। ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে খোদ আমেরিকায় খ্রিস্টান-ইহুদী জনগোষ্ঠী প্রতিবাদে সরব হলেও এই একুশ শতকেও মানবতাবিরোধী এই অপরাধের বিরুদ্ধে জামাতীদের কোন বক্তব্য নেই। এ রকম আরও অনেক সময় ঘটেছে ইরান-ইরাক যুদ্ধ, কুয়েত দখল-- যে কোন সংকটেই এরা নিশ্চুপ থেকেই মোনাফেকির ষোলকলা পূর্ণ করেছে-- তারা ধর্ম ব্যবসায়ী এ সব থেকেই বারংবার তা প্রমাণিত হয়েছে। আলী আকবর টাবী তার বিবেকের তাড়নায় এই ভয়ংকর ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোশ উšে§াচন করতে তাদের নিজস্ব আয়নাটিই তাদের মুখের সামনে তুলে ধরেছেন। এদের প্রকৃত মুখাবয়ব শিশির-এর আঁকা কার্টুনের চেয়ে শতগুণ ভয়ংকর।
১৯৭১-এ এদের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম সরকারি গেজেটের চেয়েও জঘন্য রূপে হানাদারদের মনোরঞ্জন করেছেন। সংগ্রামের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় সেই মোনাফেকি আর দেশদ্রোহিতার আমলনামা। এ থেকে উšে§াচিত হবে এদের প্রকৃত স্বরূপÑ যার সঙ্গে শান্তির ধর্ম ইসলামের দূরতম সম্পর্কও নেই।
দৈনিক সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা। আলী আকবর টাবী।
জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ। প্রচ্ছদ : রাজিব রায়। দ্বিতীয় সংস্করণ : ফেব্র“য়ারি ২০১১। মূল্য ৪০০ টাকা।
মতিউর রহমান নিজামী আলবদর থেকে মন্ত্রী।
আলী আকবর টাবী। জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ। প্রচ্ছদ : শিশির ভট্টাচার্য। দ্বিতীয় সংস্করণ : ফেব্র“য়ারি ২০১১। মূল্য ১৫০।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।