আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসংগ রোমানা মঞ্জুর,হাসান সাঈদ আর সেই নীতিবাক্য

সত্যের কাছে মিথ্যে চিরকালই পরাজিত একদিন আমরা বন্ধুরা সাধারনত যা করতাম ঠিক তাই, কার্জন হলের applied physics ডিপার্টমেন্টের সামনে বসে ছিলাম, এমন সময় আমাদের ক্লাসমেট(সম্ভবত রাখী) এসে আমাদের কে জানাল যে একটা লোক কি সব কথাবার্তা বলছে, আর আমাদের কে বলল তোরা একটু দেখ তো। ঐ লোকটাও পেছনে পেছনে এসেছে। আমার বন্ধুরা এগিয়ে গিয়ে একটা দু’টা কথা জিজ্ঞেস করতেই লোকটা আমতা আমতা করা শুরু করে দিল। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেল চড়, থাপ্পড়, ঘুষি। লোকটা বোকার মত মার খাচ্ছে কিছুই বলছে না।

এভাবেই কিছুটা মেরে ওকে কার্জন থেকে বের করে রাস্তার ওইপারে দিয়ে আসা হল। এতক্ষনে আমরা বুঝতে পেরেছি যে লোকটা মানসিক ভারসাম্যপূর্ণ নয়। আর আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি না মারলেও যার মারের মধ্যে যথেষ্ট পাওয়ার আছে সেই বিভাকর বণিক অনুশোচনায় ভুগতে শুরু করল, বারবার বলতে লাগল আমি ভুল করেছি, এমন কি সে মাফ চাইতে যেতে চাইছিল, আমরা বন্ধুরা বললাম যাক ব্যাপার না। এবার আসি মূল প্রসঙ্গে উপরের গল্পটা বললাম একারনে যে মানুষ মানসিক ভাবে অসুস্থ হয় তাহলে তার জন্য সাধারন বিচার প্রযোজ্য নয় বরং তাকে সহানুভূতির সাথে দেখতে হয়। কয়েকদিন আগে ঘটে গেছে একটা কুৎসিত ঘটনা যেটা কোনভাবে কোন যুক্তিতেই ঘৃণা না করে থাকা যায় না, হ্যাঁ সেই রোমানা মঞ্জুরের কথাই বলছি।

যেভাবে তার উপর অত্যাচার চালানো হয়েছে তা কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। অসুস্থতার আবার অনেক দিক আছে। যেমন আমাদের দেশে রাস্তায় পিটিয়ে মানুষ মেরে তার লাশের উপর মানুষের নৃত্য করার দৃশ্য দেখলে সেই মানুষগুলোকে অসুস্থ বলা যাবে না, কারন তাদের বিবেক নেই। যার বিবেক নেই তার বিবেক অসুস্থ হওয়ার সুযোগ নেই। সে সাঈদের কথাই বলছি, সে যেভাবে তার স্ত্রীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে তা যে কোন সুস্থ মানুষের মনে আচঁড় কেটে যেতে বাধ্য।

এর মাঝে ঘৃণা ছাড়া কোন সহানুভূতি দেখানোর মত কোন ব্যাপার নেই। আমিও ঘৃণা করি এই পাশবিকতাকে, এই মানুষের হিংস্রতা কে। কেন এই লোকটি এমনটা করল সেইটা আমার কাছে কৌতুহলের জন্ম দেয়, এর কারন এই সমস্যাগুলো দূর করা গেলে আর এসব ঘটবে বলে মনে হয় না। এই লোক যে মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ তা রোমানা মঞ্জুরের কথাতেই স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, উনার স্বামীর চোখের সমস্যা থাকায় হীনমন্যতায় ভূগতেন! এরকম একটা মানুষ অন্যকোন হীনমন্যতায় ভূগেন কিনা সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ! হয়তো নিজের হীনমন্যতার কারনেই বুয়েট থেকে পাশ করার পরও চাকুরী করেন নি তদুপরী তার বাবা-মা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন যা তার অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার নিশ্চয়তা দেয়।

তার মাঝে যে মানসিক অসুস্থতা সেটা আরো বেড়ে গেছে হয়তো স্ত্রীর কানাডায় পি এইচ ডি করতে যাওয়ায়। পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী এই লোক স্ত্রীকে কানাডা যেতে বারন করেছিলেন যা সেই হীনমন্যতার বহিঃপ্রকাশ। এই দীর্ঘ সময় স্ত্রী কন্যার অনুপস্থিতি তাকে মানসিকভাবে আরো অসুস্থ করে ফেলেছে বলেই মনে হয়। তবুও হয়ত চলছিল, কিন্তু বিপত্তি বাধে আবার কানাডা যাওয়ার কথা শুনে, এবার হিতাহিত জ্ঞান সবটুকু হারিয়ে ফেলেন। স্ত্রীকে যেভাবে আঘাত করেছেন তাতে তার অসুস্থতার ব্যাপারটা প্রকট হয়।

কতটা ক্রোধ জমাট বাধায় এই লোক তার স্ত্রীর চোখ উপড়ে ফেলতে চেয়েছিল, শুধু তাই নয় নাকে মুখে কামড়ে দিয়ে যে পশুত্ব সে প্রকাশ করেছে তা মানসিক ভারসাম্যহীনতার বহিঃপ্রকাশ মনে হয়। কারন সে কোন ফুলদানী দিয়ে আঘাত করে নি, কোন ছোরা দিয়ে জখম করে নি, চায়নি হত্যা করতে, ছিল না পূর্ব পরিকল্পনা। যা সে করেছে তা তার সেই সময়ের ক্রোধ থেকেই করেছে। এতকিছু বলে আমি তার পক্ষে ওকালতি করার চেষ্টা করছি না, সে যেই কাজটা করেছে সেটা যে তার ভেতরের পশুত্বের বহিঃপ্রকাশ মাত্র তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু প্রশ্ন হল আমরা যারা বিবেকসম্পন্ন তারা যেভাবে বিবেকের পরিচয় দিচ্ছি তাতে আমরা নিজেদেরকে সুস্থ দাবী করতে পারি? সাইদ কে জুতা মারা, গুলি করে মারা, চানাচুরের মত চিবিয়ে খাওয়া, জানোয়ার বলা থেকে শুরু করে সকল গালিগালাজ আর কুৎসিত শব্দে প্রতিবাদ জানাচ্ছি, সেটা কি আমাদের বিবেকের পরিচয়? রোমানা মঞ্জুর আমাদের ঢাবির শিক্ষক আমরা সাধারন জনগন যাকে কোনদিন চিনতাম না, জানতাম না অথচ তার উপর এমন অত্যাচারে আমাদের ক্রোধ এতই বেশি যে সামনে পেলে সবাই তাকে মেরে ফেলতে চাইছি।

একজন তার মৃত্যু কামনা করে ব্লগ লিখে ফেলেছে। নিজের ক্রোধকেই সংবরন করতে পারছি না। যেই ক্রোধের কারনেই আজ রোমানা মঞ্জুরের এই অবস্থা। ফেসবুকে একটা গ্রুপ ও খোলা হয়েছে যার নাম “wanted dead or alive: জানোয়ার হাসান সাইদ”! আমার প্রশ্ন পৃথিবীর কোন আইনে স্ত্রী নির্যাতনের বিচারে মৃত্যুদন্ডের বিধান আছে? আবার অনেকেই এই সুযোগে বুয়েটের পাত্রের চেয়ে আমরা ভালো টাইপ বিজ্ঞাপনও দিয়ে দিচ্ছে! না এসব হাসান সাইদের পক্ষাবলম্বন নয়, আর তার কোন যুক্তিও নেই, শুধু এটুকুই বলতে চাই আমাদের হিতাহিত জ্ঞান কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে? ঢাবিতে মানববন্ধন হচ্ছে, মানুষ প্রতিবাদ করছে, সেটা যুক্তিযুক্ত কিন্তু আবেগের বাড়াবাড়ি হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। কেউ এ সুযোগে সরকারকেও গা্লি দিচ্ছে, আমার প্রশ্ন সরকার কি ঘরে ঘরে RAB মোতায়েন করবে, স্বামী-স্ত্রী কে নজরদারিতে রাখবে? কেউ গালি দিচ্ছে ধর্মকে, কেউ সেকেলে সেকেলে বলে গলা ফাটাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাবা-মার বুয়েট পাশ ছেলে, পিএইচডি করা ঢাবির শিক্ষক, যাদের বাবা-মা দের মধ্যে রয়েছে খুব চমৎকার সম্পর্ক তারা কি সেকেলে ধারনায় বন্দী হয়ে এই ঘটনার স্বীকার হয়েছে? আর আমরা বিরাট আধুনিক হয়ে গেছি? রোমানা মঞ্জুর এই ঘটনার শিকার হয়ে এখন বলছেন দশ বছর ধরে অত্যাচার করা হচ্ছে, অথচ উনার বাবা-মা কোনদিন জানতেও পারে নি! আবার রোমানাদের বাড়ীতেই থাকত এই সাঈদ। এসব কিছুতেই এটাই মনে হয় এই ভয়াবহ আচরনের স্বীকার হয়ে আগের নিজেদের মধ্যে তুচ্ছ বাক-বিতন্ডা, যা সব পরিবারেই হয়ে থাকে সেগুলোকেও মানুষের কাছে প্রকাশ করে নিজের মনের ঘৃণাই প্রকাশ করছেন রোমানা মঞ্জুর। এটা আমাদের দেশের সব মহিলাদের একটা সাধারন বৈশিষ্ট্য “তোমার ঘরে এসে কোনদিন শান্তি পাইনি” টাইপ কথা বলা। এসবকেই বড় করে একেকজন সমাজকে ধুয়ে দিতে চাইছে। অথচ সমাজের হাজারো অন্যায় এদেরকে বিচলিত করে না।

কই মা যখন তার মেয়েকে হত্যা করে অন্য প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যায় কেউ তো ফেসবুকে পেইজ খুলে নি। তখন সবাই মনে করে দেশ আধুনিক হচ্ছে, পরকীয়া করার মত সাহস দেখাচ্ছে আমাদের দেশের নারীরা, এটা তো প্রগতির লক্ষন। পরিশেষে একটা কথা বলি, প্রতিবাদের ভাষা শালীন হতে দোষ কি? আর পুথিগত যে বিদ্যা দিয়ে পাশ করে উঁচু শ্রেণীর মানুষ বলে দাবী করছি, সেই পুথিতেই লেখা ছিল, “পাপকে ঘৃণা কর পাপীকে নয়”। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।