আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোলকায়ন সূত্রে পণ্যের জীবন চক্র+ বেনিয়া ভোগবিলাস = ?

সমাজ পচনস্তরের বিপ্রতীপ মেরুর এই বাসিন্দার পেট চলে শব্দ শ্রমিকের কাজ করে :: ইহা একখানা আতেলমূলক পোস্ট, অতি আতেলরা পড়িতে চান পড়িতে পারেন তবে আপনাদের উদ্দেশ্যে লেখা হয় নাই:: অধুনা বিশ্বে কেনা-বেচা’র সরল সূত্রে আর সীমাবদ্ধ রাখা গেল না পণ্যকে। কেননা গোলকায়ন বাণিজ্য তার উদারীকরণ মোড়কে বাজারজাত পণ্য হয়ে উঠছে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। ব্যাক্তি জীবন থেকে সামাজিক রীতিশ্রীদ্ধ অনেক বিষয়ই আজ পণ্যের গন্ডিতে বাধা পড়ে ছটফট করছে। মানসিকতার বৈকালঙ্গে আমাদের সুখানুভূতিগুলোকে আজ একটু একটু করে গিলে খাচ্ছে 'ভোগ' চিন্তা। পণ্য বা সেবা কিংবা পানি বা ধর্ম, গিলে খাওয়ার আয়োজনে সে দৈত্যের সঙ্গী বিজ্ঞাপন নামের আরেক ফ্রাঙ্কেনস্টাইন।

তাইতো অহরহ আমরা বলতে শুনছি 'জীবিকার স্বার্থে বাঁচো, জীবনের জন্য নয়'। ফলস্বরূপ উঠানের এক চিলতে জায়গা থেকে পারিবারিক বন্ধন পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে যোগ হয়েছে বহুজাতিক ভোগ লালসা। আর অসম এ বন্দোবস্তকে হালাল করতে দেয়া আছে গ্লোবালাইজেশন বা গোলকায়ন পেসক্রিপশন। তাতে বলা আছে, পণ্যের প্রয়োজনে যেমন খুশি তেমন সাজো, লোকালাইজডকে করো গ্লোবালাইজড। এককথায় সবার উপরে পণ্য বিক্রি তাহার উপরে নাই।

আর এতে ত্বক মেজে হরদম বিক্রি বাড়ছে নতুন নতুন সব পণ্য। সাথে চমকে দিতে আছে মোড়কজাত বিজ্ঞাপন। বাজার অর্থনীতির এ যুগে উৎপাদিত পণ্যের ব্যবহার ও চলাচল শুধুমাত্র মানুষের ইচ্ছাশক্তির উপর আর চলছে না। পণ্য বলছে, সে প্রবেশ করেছে বস্তু অর্থনীতির যুগে। যে যুগে তার প্রাণ থাকার জানান দিয়েছে সে নিজেই।

সূত্র মতে, Extraction>Production>Distribution>Consumption>Disposal চক্রে তার জীবন বাধা। এর প্রতিটি পর্ব পরস্পরের সাথে যোগসূত্রে বাধা। চাইলেই কেউ এ চক্রের বাইরে যেতে পারে না। কেননা এর প্রভাব সরাসরি আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত। উল্লিখিত চক্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মানুষ বা রাষ্ট্রের জনগণ।

কেননা প্রতিটি স্তরের কোন না কোন পর্যায়ে মানুষ জড়িত। কিন্তু সব মানুষের অংশগ্রহণ এখানে সমান নয়। এক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ ও নিয়ন্ত্রন থাকে সরকারের হাতে। তাই সরকারই অর্থব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন ও বন্টন করে থাকে যাকে সরল ভাষায় বাজেট বলা হয়। তাই রাস্ট্রযন্ত্র Avgv‡`i নসিহত করছে Of the people, For the people, By the people এর মন্ত্র| কিন্তু সত্যি কি সরকার জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটায়? এ নিয়ে বিশ্ব মাতব্বর মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের জনগণের ভোক্তা অধিকার নিয়ে গবেষণা করেছেন এ্যানি লিওনার্ড।

তার গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রদত্ত আয়করের ৫০ ভাগেরও বেশি বরাদ্দ রাখা হয় সেনাবাহিনীর জন্য। যা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার বৈসাদৃশ্য। বিপুল এ বাজেট সংস্থানের জন্য বাধ্য হয়ে সরকারকে হাত বাড়াতে হয় বেসরকারী অর্থের দিকেও। সেখানে কখনো সরকারের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে কোম্পানি। এ্যানির মতে, পরস্পরের সমঝোতার ভিত্তিতে পুঁজিবাদি সমাজ ব্যবস্থায় কোম্পানিগুলো সরকারকে নিয়ন্ত্রন করে যাচ্ছে।

যার সাথে সাধারণ মানুষের ইন্টারেষ্ট মোটেই যুক্ত নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট অর্থনীতির ৪৯ শতাংশ সরকার এবং বাকী ৫১ শতাংশ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রনে। তাই দিন দিন কোম্পানিগুলো ক্রমশ ফুলে ফেঁপে উঠছে, বিপরীতে সরকার হয়ে যাচ্ছে কর্পোরেট শক্তির তাবেদার। সেখানে আজ কর্পোরেট শক্তির হাতছানি এড়ানোর ক্ষমতা হরিয়েছে সরকার। আজ সম্পদ ভোগে পণ্যচক্র নিয়ন্ত্রণ করে দিচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।

এ বিষয়ে গবেষণা পত্রটির ধারাবাহিক বর্ণনা দিচ্ছি। প্রকৃতিক সম্পদের সুষম ব্যবহার : কথাটির মর্মার্থ হলো ‘প্রকৃতির ধ্বংস’। যার প্রমান- বিশ্বব্যাপী বনজ সম্পদ হ্রাস, প্রজাতির বিলুপ্তায়ান, মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ বাড়ার মত ঘটনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর মোট প্রাকৃতিক সম্পদের এক তৃতীয়াংশ আমরা ভোগ করেছি গত ত্রিশ বছরে। উপরন্তু যে হারে ভোগ বাড়ছে, সে হারে প্রকৃতিক সম্পদ তার নিজের নিয়মে বৃদ্ধি পাচ্ছে না।

তাই পৃথিবীর মোট বনভূমির ৮০ ভাগ আমরা ইতিমধ্যে উধাও করেছি। শুধু আমাজানেই মিনিট প্রতি কাটা পরছে ২ হাজার গাছ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পা পড়েনি বিশ্বে এমন বনভূমি রয়েছে মাত্র ৪ভাগ। একইসাথে বিশ্বজুড়ে সুপেয় পানির ৪০ শতাংশ এরই মধ্যে পানের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কাজেই ভোগ তারা যথেষ্ট করেছে।

বরং বলা যায়, ভাগের অতিরিক্ত ভোগ করছে মার্কিনীরা। পরিসংখ্যান মতে,বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ৫ ভাগ বসবাস করে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু তারাই পৃথিবীর মোট সম্পদের ৩০ ভাগ ভোগ করছে। এই হারে যদি বিশ্বের প্রতিটি দেশ ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে ওঠে তাহলে আমাদের প্রিয় এই পৃথিবীর মত ৫ টি পৃথিবী লাগবে বসবাস করতে। এ চিত্র পুরো উন্নত বিশ্বের।

আজ তাই যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত বিশ্ব নিজে মিতব্যায়ী না হয়ে হাত বাড়াচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর দিকে। তার উপর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট মৎস্য চাহিদার ৭৫ ভাগ মেটাচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো। যে অঞ্চলের সম্পদ আহরণ শেষ হয়ে যাচ্ছে পরমূহুর্তে সে অঞ্চলের মানুষ বুর্জোয়া শ্রেণীর কাছে হয়ে পড়ছে মূল্যহীন। :: আপনাদের আগ্রহ থাকলে (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।