ছয়টি বছর। কেবল ছয়টি বছর গড়িয়ে গেল। এই ক্ষুদ্র পরিসীমায় তাকে অনেক কিছুই করতে হলো। তার নবগঠিত ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের প্রধান শত্রুর হাত থেকে তাকে রক্ষার জন্য তিনি তার শত্রুর মিত্রদের সাথে তার শত্রুর সম্পর্কের ছেদ ঘটালেন কয়েকটি ক্ষুদ্র অভিযান, শান্তিচুক্তি এবং বাণিজ্যিক চুক্তি দ্বারা। ইতোমধ্যেই তিনি তার প্রধান শত্রুদেরকে একটি বড় যুদ্ধে হারিয়েছেন এবং নিজেও তার শত্রুদের সাথে আরেকটি বড় যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন।
কিন্তু,তার শত্রুদের প্রধান মিত্র যে তার নিজের রাষ্ট্রের আশেপাশেই বসবাস করছে! তারা দিনে দিনে বেপরোয়াও হয়ে উঠছে। অবশ্য তার প্রধান শত্রুরা তার সঙ্গে কারণ ব্যতীত যুদ্ধ বাধাতে পিছপা হবে। কারণ এর পূর্বে শত্রুদের এক-তৃতীয়াংশ সেনাবাহিনী নিয়েও তিনি তাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিত করেছেন। সুতরাং,তার বাহিনীর সাহসিকতা নিয়ে শত্রুপক্ষ খুবই ভীত। সুতরাং, আপাতত তার সাথে একটা কলহ টিকিয়ে রাখার প্রধান মাধ্যম হিসেবে তারা নিশ্চিতভাবেই ব্যবহার করবে তার রাষ্ট্রে অবস্থিত মিত্রদের।
কিন্তু বিশ্বের ইতিহাসের সফলতম রাষ্ট্রনায়ক তিনি। তাকে ধোঁকা দিয়ে এ কাজ তারা করবে;তা কিভাবে হতে পারে!! উপরন্তু সৃষ্টিকর্তার সাহায্যের হাত তো তার সাথে সবসময়ে আছেই। তাই তিনি সৃষ্টিকর্তায় সহায়তায় একটি পদক্ষেপ নিলেন তার শত্রুদের বেকায়দায় ফালানোর জন্য।
বুদ্ধিমান পাঠক হলে হয়তো ইতোমধ্যেই আপনারা বুঝে ফেলবেন আমি কার কথা বলতে চাচ্ছি। তিনি আর কেউ নন;আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ রাসূল(স)।
তার মতাদর্শ ছিল ইসলাম,রাষ্ট্র ছিল মদীনায় এবং প্রধান শত্রু ছিল মক্কার কুরাইশ সম্প্রদায়। কুরাইশদের অন্যতম মিত্র খাইবার গোত্র মদীনায় রাসূল(স) এর রাষ্ট্রের সাথেই বসবাস করত। রাসূল(স) একথা জানতেন যে, আর যত যা-ই হোক; কুরাইশরা তার সাথে নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধে লিপ্ত হবে না। সুতরাং,যদি তিনি এই চার মাসের কোন সময়ে হজ্জ্ব করতে মক্কায় যান,তাহলে কুরাইশরা বিপদে পড়ে যাবে। কারণ,তারা না পারবে তাকে যুদ্ধ করে সরিয়ে দিতে, আর তিনিও নাছোড়বান্দার মতো কা’বা ভ্রমণ করতে না দিলে সে স্থান ত্যাগ না করার হুমকি দিবেন।
ফলশ্রুতিতে যা হবে, তা হচ্ছে একটি শান্তিচুক্তি না যুদ্ধবিরতি চুক্তি। আর যদি সেটা কোনোভাবে বেশ কিছুদিনের মেয়াদে বাড়িয়ে নেয়া যায়, তাহলেই কুরাইশরা নির্বিষ হয়ে যাবে। তার পরে আসল যে সুবিধাটা মুসলিমরা পাবে সেটা হচ্ছে, খাইবারের ইহুদীরা একা হয়ে যাবে এবং খুব সহজেই খাইবারের ইহুদীদের উপর অভিযান চালানো যাবে। সুতরাং,মনে সেই আশা রেখে আল্লাহর নামে রাসূল(স) তার ১৪০০ সাহাবী এবং ৭০টি উট নিয়ে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা দিলেন।
মুসলমানদের মক্কার দিকে আসার খবর পাওয়ার পর কুরাইশরা তাদের বীর যোদ্ধা খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং আবু জেহেল তনয় ইকরামাকে ২০০ অশ্বারোহী বাহিনী সহ পাঠালেন তাদের মক্কা আগমন রোধ করার জন্য।
ওদিকে কুরাইশদের মনে ভীতির সঞ্চার করার জন্য রাসূল(স) গৎবাঁধা সরল পথ দিয়ে মক্কায় না এসে বনু আসলাম গোত্রের এক ব্যাক্তির সহায়তায় এক বিকল্প পথে মক্কার অভিমুখে চললেন। কুরাইশরা এবারে বাদ সাধলো। যদিও মুসলিমদের হাবভাবে তারা নিশ্চিত হলো যে,তারা যুদ্ধ নয় বরং কা’বা তাওয়াফ করতেই মক্কা এসেছে তবুও নেহায়াত দাম্ভিকতার কারণেই তারা রাসূল(স) কে কা’বা তাওয়াফ করা থেকে বিরত রাখলো। যদিও এখানেই তারা মহা ভুলটা করে বসলো, তবুও আপাতদৃষ্টিতে তারা ভাবলো মুহাম্মদ(স) কে বাঁটে ফালানো গেল। যেহেতু মুহাম্মদ(স) কে হজ্জ্ব করতে দেয়া হবে না, এবং সে তা করতে না দিলে নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধের অবতারণা করতে পারে, তাই কুরাইশরা ভাবলো এটাই মহা সুযোগ।
এবারে নিজেদের ইচ্ছামতো একটি যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তি করে মুহাম্মদ(স) এর উপর কিছুটা ঝাল মিটানো যাবে।
রাসূল(স) এর সাহাবীদের অনেকেই তার এহেন কাজে অবাক হচ্ছিলেন এবং মনে মনে ভাবছিলেন তিনি কুরাইশদের দেয়া সকল শর্ত মেনে চুক্তির মাধ্যমে সমঝোতা (Compromise) করছেন কি না। তার এজন্যও অবাক হলেন যে, যেই রাসূল(স) সারা জীবনে সমঝোতার ধার ধারেননি তিনি কি করে এই কাজটা করতে পারলেন। তবে কি মতাদর্শ হিসেবে ইসলাম এতোটাই ঠুনকো যে এটাকে অন্য মতাদর্শের সাথে সমঝোতা করে চলতে হবে? অথচ আল্লাহ তা’লা বলেছেন,
“তিনি তার রাসূল(স)কে হিদায়াত(কুরআন) ও সত্য দ্বীন(মতাদর্শ/জীবন ব্যবস্থা) দিয়ে প্রেরণ করেছেন যেন তা অন্যান্য দ্বীনের উপর কর্তৃত্ব(Domination) লাভ করতে পারে যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। ”[সূরা আস-স’ফঃ০৯]
সে কথায় পরে আসছি।
আপাতত চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক রাসূল(স) এর সাথে করা হুদাইবিয়ার প্রান্তে এই যুদ্ধবিরতি/শান্তি চুক্তির ধারা গুলো কি কি ছিলো এবং এগুলো কি আদৌ সমঝোতা ছিলো কি কুরাইশদের জন্য ফাঁদ ছিল।
হুদাইবিয়া সন্ধিচুক্তির ধারাসমুহ হচ্ছেঃ
১) চুক্তিতে বর্ণিত সময়ে দুই পক্ষ পরষ্পরের মধ্যে সকল প্রকার যুদ্ধ ও হানাহানি হতে বিরত থাকবে।
২) কুরাইশদের মধ্যে কেউ যদি অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া মদীনায় আসে তবে রাসূল(স) তাকে মক্কায় তার অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবেন। পক্ষান্তরে, মুসলিমদের কেউ মক্কায় আসলে তাকে কুরাইশরা মদীনায় ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে না।
৩) আরব উপত্যকার কেউ মুহাম্মদ(স) এর সাথেও চুক্তি করতে চাইলে করতে পারবে,আবার কুরাইশদের সাথেও চাইলে চুক্তি করতে পারবে।
৪) মুসলিমরা সে বছর হজ্জ্ব করা ছাড়াই মক্কা ত্যাগ করবে। পরের বছর তারা কা’বা তাওয়াফে আসতে পারবে শুধু তিনদিনের জন্য। সাথে অস্ত্র হিসেবে তারা শুধু কোষবদ্ধ তলোয়ার ছাড়া অন্য কিছু রাখতে পারবে না।
৫)চুক্তির মেয়াদকাল দশ বছর। তবে যেকোনো পক্ষ থেকে শর্ত ভঙ্গ ঘটলে এ চুক্তির সমাপ্তি ঘটবে।
আপেক্ষিক দৃষ্টিতে আমরা তো বটেই উপস্থিত সাহাবীদের কাছেও ব্যাপারটি এক প্রকার মাথা নিচু করে তাদের সকল প্রস্তাব মেনে নেয়াই মনে হচ্ছিল। কিন্তু একটু গভীরভাবে খুঁটিয়ে দেখলে আমরা দেখব যে, এই সন্ধিচুক্তি মুসলমানদের পক্ষ থেকে কুরাইশদেরকে নির্বিষ করে দেয়ার একটি সূক্ষ্ণ চাল মাত্র। কিভাবে সেটা একটু চোখ বুলালেই বুঝতে পারবেন আশা করি।
১)সেই বছর মুসলমানদের হজ্জ্ব করা ব্যতীতই ফিরে যেতে হলো। কিন্তু এটাকে কি পরাজয় বলা যায়? হজ্জ্ব তো মুসলমানরা পরের বছরেই করতে পারবে।
ব্যাপারটি ছিলো হজ্জ্ব করার উদ্দেশ্যে এসে কুরাইশদেরকে সন্ধিচুক্তি করাতে বাধ্য করানো,শুধু হজ্জ্ব করা নয়।
২)সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই চুক্তির ফলে কুরাইশদের সাথে তাদের মিত্র খাইবারের ইহুদীদের যুদ্ধচুক্তির সমাধি ঘটে (যখন সে যুদ্ধ মুসলমানদের বিরুদ্ধে হয়)। এর ফলে খাইবারের ইহুদীরা একা হয়ে পড়ে এবং প্রায় মাসখানিক পরেই খুব সহজেই মুসলিমরা খাইবার বিজয় করে।
৩) যেহেতু পুরো হুদাইবিয়া চুক্তির প্রারম্ভের পূর্বের মুহূর্তে মুসলিমদের আচার-আচরণ ছিল খুবই শিষ্ট এবং শান্তিপূর্ণ আর অন্যদিকে কুরাইশদের আচরণ ছিলো দাম্ভিকতাপূর্ণ ফলে, আরব উপত্যকার অধিকাংশ গোত্রের Public Opinion মুসলিমদের পক্ষে চলে যায় যা তাদের মনে ইসলামকে গ্রহণ করার একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
৪)এই চুক্তি এবং খাইবারের ইহুদীদের সাথে অভিযান শেষে মুসলিমরা বিভিন্ন রাষ্ট্রে ইসলামের দাওয়াত পৌছানোর কাজে আত্ননিয়োগ করতে পারে নির্বিঘ্নে।
কারণ,আপাতত তাদের মাথা থেকে বড়সড় কোনো যুদ্ধের পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির তাগিদ ছিল না। পারস্য,রোম এবং মিশরের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে পাঠানো ঐতিহাসিক চিঠিসমূহ এই সময়েই শুরু করা হয়।
৫)কোনো কুরাইশ মদীনায় আসলে সে ইসলাম নামক জীবন ব্যবস্থার বাস্তব জীবনে প্রতিফলনের স্বরূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করার সুবর্ণ সুযোগ পেত। পরবর্তীতে সে মক্কায় ফিরে গেলে সেখানেও সে ইসলামের বাণী এবং কোরআনের শাসনের সুফল বর্ণণা করে ইসলামের উপকার করতে পারত।
৬)কোনো মুসলমান মক্কায় গেলে সে সেখানে ইসলামের বাণী বহন করতে পারতো।
এর ফলে, মক্কার লোকেরাও ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবার সুযোগ পেল।
হুদাইবিয়ার পরেই আল্লাহ নাজিল করেনঃ
“আমি আপনাকে মহাবিজয় দান করলাম”[সূরা ফাতহ-০১]
৫ এবং ৬ নং দেখে কারো মনে হতেই পারে যে,জীবন বাজি রেখে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা,এটা কেমন বিজয়!! কিন্তু বাস্তবে চিন্তা করে দেখুন,একজন মুসলিমের জীবনের আদর্শ যদি হয় জীবনে সর্বাবস্থায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন,তাহলে কি তার পক্ষে দাওয়াতের কাজে বের হওয়া,জিহাদে বের হওয়া কিংবা একা কোনো কাফির রাষ্ট্রে দূত হিসেবে গমন করা কোনো সমস্যা? আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, রাসূল(স) বা সাহাবীরা কখনো মুসলিম রক্ষার জন্য ইসলামকে বিসর্জন দেননি। আমরা যদি একথা মনে করে থাকি যে, আমরা ইসলাম আঁকড়ে ধরার কারণে মারা গেলে কিংবা আহত হলে ইসলাম এগিয়ে নিবে কে,তবে তা হবে ভয়ঙ্কর রকমের ভুল ধারণা। ইসলাম রক্ষার দায়িত্ব আপনার না আমারও না। এর দায়িত্ব নিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা’লা।
আমরা গুটিকয়েক লোক এর মাধ্যম হিসেবে নিজেদেরকে কাজে লাগাতে পারলে আল্লাহর কাছে পরকালে এর জন্য আমরা হয়তো নিজেদের পক্ষে কিছু প্রমাণ নিয়ে যেতে পারবো,এর বেশি উচ্ছসিত হবার মত কিছুই না। কিন্তু,ইসলামের দাওয়াত দেয়া, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদির জন্য কাজ করা প্রতিটি কাজই ইসলামের মধ্য থেকে আমাদের চেষ্টা করতে হবে। সেকুলার ব্যবস্থায় ঢুকে গিয়ে আমরা সেকুলারিসমেরই বদনাম করে ইসলাম আনবো একথাটা বাস্তবে কেন,কল্পনাতেও সম্ভব না।
এবারে আশা যাক আমাদের মূল ধারার আলোচনায়। আমাদের আশেপাশে অনেকেই আছেন যারা কিছু সাধারণ ব্যাধিতে আক্রান্ত।
তারা ভেবে বসে আছেন যে, ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে হলে সমঝোতা অবলম্বন করা ছাড়া উপায় নেই। তারা আরো ভাবেন যে,ইসলাম রক্ষার জন্য একটু ইসলাম বিসর্জন করে হলেও মুসলিমদের জান বাচানো উচিত। এবং সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে উনারা তাদের এই সকল viewpoint এর পক্ষে reference হিসেবে সেই হুদাইবিয়া সন্ধিকে টেনে আনেন যেই সন্ধির নাম শুনলে কাফিররা আজও অনুশোচনা করতে থাকে তারা এমন ভুল কিভাবে করলো,যে সন্ধির মাধ্যমে রাসূল(স) এর দূরদর্শিতা এবং ইসলামের পররাষ্ট্রনীতি কতটা কার্যকারী তার প্রমাণ মেলে। উনারা প্রকৃতপক্ষে তিনটি জায়গায় ভুল করে থাকেন এই হুদাইবিয়া সন্ধির ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে।
১) প্রমাণ করেন যে,ইসলাম কুফরের সাথে সমঝোতা ছাড়া টিকতে পারে না।
২) প্রমাণ করেন যে,ইসলামে বিপদের সময়ে কাফিরদের ব্যবস্থায় অংশগ্রহন করা যায়। ফলশ্রুতিতে তারা গণতন্ত্র,ব্যাংকিং,শেয়ার বর্জন করা তো দূরের কথা, ইসলামের সাথে তাদেরকে লিঙ্ক করে সেসব কুফরী মতবাদের ইসলামী ভার্সন বের করে রীতিমত নিজেদের অনিচ্ছায় ইসলামের জায়গায় কুফরের উপকার করে চলছেন।
বেশি বিতর্কে না গিয়ে তিনটি ঘটনাপ্রবাহ দিয়ে শেষ করবো।
১) একথা না বললেই নয় যে,রাসূল(স) কে মক্কায় তাওহীদের বাণী প্রচারের প্রথম থেকেই কাফিররা তাকে শত প্রলোভন দেখিয়ে আল্লাহর একাত্ববাদ প্রচার থেকে দূরে সরাতে চেয়েছে। তারা তাকে মক্কার সবচেয়ে সুন্দর রমণী,কা’বা গৃহের চাবি, অঢেল সম্পত্তি এমনকি দার-উন-নাদওয়া এর পদে বসানোর মতো লোভনীয় প্রস্তাবও দিয়েছিল।
জবাবে রাসূল(স) বলেছিলেন,
“আমার এক হাতে সূর্য এবং আরেক হাতে চন্দ্র এনে দিলেও আমি সত্য প্রচার হতে বিমুখ হব না। ”
যখন তাকে ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা,ওমাইয়া ইবন খলফ বলেন, “আসেন আমরা পরষ্পরের মধ্যে শান্তিচুক্তি করি যে, এক বছর আল্লাহর ইবাদত করবো আর এক বছর দেব-দেবীর পূজা করবো। ” তখন আল্লাহ নাজিল করেন যে,
“তোমাদের(কাফিরদের) দ্বীন(ও কর্মফল) তোমাদের জন্য,আমাদের দ্বীন(ইসলাম) আমাদের জন্য। ”[সূরা কাফিরুন-০৬]
২) রাসূল(স) বিভিন্ন গোত্রের গোত্রপ্রধানের কাছে মাক্কী জীবনে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নুসরাহ বা সহায়তা প্রার্থনা করেন। এদের মধ্যে কেবল মদীনার আউস এবং খাজরাজ গোত্র ব্যতীত সকলেই সমঝোতার নামে কিছু না কিছু শর্ত জুড়ে দেন।
অর্থাৎ, ইসলাম ও কুফর সহাবস্থান(co-exist) করার শর্ত। কিন্তু, এদের কারো থেকেই তিনি সহায়তা গ্রহণ করননি। এই ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলাম-কুফরের সহাবস্থান থেকে আস্তে আস্তে একসময় ইসলাম আসবে এই নীতি রাসূল(স) বর্জন করেছেন।
৩) হযরত আবুবকর(রা)যখন ইসলামের প্রথম খলীফা হন,তখন কিছু লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করে। আবার ইয়েমেনের মুসাইলিমাতুল কাযযাব নিজেকে নবী দাবী করে।
কাফির পরাশক্তিগুলো সোচ্চার হয়ে উঠে ইসলামের বিরুদ্ধে। ওসামা বিন জায়েদ(রা)এর নেতৃত্বে তখন একদল বাহিনী অভিযানে বের হয়েছিল। তখন কিছু সাহাবী বলেলন, “এখন তো মদীনা সামলানোই কঠিন হয়ে পড়েছে,ওসামা(রা) বাহিনীকে ফিরিয়ে আনলে হয় না? কিছু সাহাবী বলেন, “যারা যাকাত দিতে অস্বীকার করে,তারা তো নামাজও পড়ে। ” তখন আবুবকর(রা) বলেন, “জেনে রাখো, আল্লাহর রাসূল(স) যে বাহিনী রওয়ানা করিয়েছেন তার ক্ষাণিক বিলম্বও আমি হতে দিবনা, আর যারা যাকাত আর নামাজের মধ্যে পার্থক্য করে,যাকাত দিতে অস্বীকার করে, তাদের বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। জেনে রাখো,ইসলামের সামান্য ক্ষতিও আমি আবু বকর বেঁচে থাকতে হতে দিব না,প্রয়োজনে ইসলাম রক্ষার্থে আমার মত শত আবু বকর প্রাণ দিবে।
তবুও মুসলিমদের রক্ষার স্বার্থে আমরা ইসলামের কোনো ছাড় দিবো না। ”
শেষ কথা হচ্ছে,
আমাদের এত দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই যে,আমাদের মৃত্যূ হলে ইসলামের কি হবে। বরং, আমাদের বুঝা উচিত রাসূল(স) এর ৩১৩ জন সাহাবী যখন বদরের যুদ্ধে তিনগুণ সমর সজ্জিত কাফির বাহিনীর সামনে উপনীত হন,তারা কি চিন্তা করেছিলেন যে আমরা মারা গেলে ইসলাম রক্ষা কে করবে?
আমরা ইসলামকে কুরবান দিয়ে কাফিরদের ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করি এই ভেবে যে,এই বিষয়ে তাদের ব্যবস্থায় না গেলে ইসলাম আসবে না। প্রশ্ন হলো, ইসলাম কি এতোটাই দূর্বল হয়ে গেল যে,তাকে কুফরের ছায়াতলে গিয়ে ছদ্মবেশ ধরে আনতে হবে?
আমরা ভাবি আমরা সংসদে, ব্যাংকে,শেয়ারে অংশ নিয়ে সেখানে একটু একটু করে ইসলাম আনতে পারলে ক্ষতি কী? কেন,রাসূল(স) তো কখনো দার-উন-নাদওয়ায় গিয়ে একটু একটু করে ইসলাম আনেননি। তিনি তো কাবা’র মূর্তির গায়ে হাতও বুলাননি,সমঝোতা তো দূরের কথা।
ইসলাম ও কুফর। হক্ক ও বাতিল। তেল ও জল। কোনোটাই একটা আরেকটার সাথে মিশবে না। ইসলাম আসবে কুফরকে সম্পূর্ণভাবে বর্জন করে,রাসূল(স) যে পদ্ধতিতে এনেছেন সেভাবে।
আমরা যদি ইসলামের পতন খেয়াল করি তবে দেখব, কেবল কুফরের সাথে সমঝোতাপূর্ণ মনোভাবের কারণেই কাফিররা তার সুযোগ নিতে পেরেছে।
১)যখন কাফিররা শিক্ষাচুক্তির সমঝোতার মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে প্রবেশ করে মিশনারীজ ও গোয়েন্দা। এইসব মিশনারীজ এবং লরেন্সের মত গোয়েন্দারাই ইসলামে কুফরের বীজ-জাতিয়তাবাদ,ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি বপন করে। এর ধারাবাহিকতায়ই কিন্তু আরবে আর তুর্কীতে জাতিয়তাবাদী মনোভাব গড়ে উঠে যা এর পরে কিছু দালালদের সহায়তায় বিদ্রোহে রূপ নেয়।
২)প্রথম বিশযুদ্ধে হিটলারের সাথে সমঝোতা করে মুসলিমরা তাকে সমরাধিনায়ক মেনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তাদের হারানো ভূমি পুনরুদ্ধারের স্বপ্নে।
কিন্তু,এই সমঝোতাই কাল হয়ে দাঁড়ায় যা তাদের বাকি সব ভূমিকেও পরাধীন করে দেয়।
এবারে দেখুন আমাদের Compromise বা সমঝোতা ইসলামের কতটা ক্ষতি করেছে। তার পরেও যদি কেউ তরক করতে চান,তাদের জন্য দুটি আয়াত বলে দিচ্ছি,ভেবে দেখবেন।
“আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্ব পছন্দ করেন না”[সূরা নিসা-১৪১]
“কোন ব্যাক্তি যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবন-ব্যবস্থা অন্বেষণ করে,তবে তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ”[সূরা আল-ইমরান-৮৫]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।