সৃস্টির সেরা মানুষ তার অতি ক্ষুদ্র জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় এ সুবিশাল মহাবিশ্বের অসীম অজানার কণাতম রহস্যও ভেদ করতে না পারার চরম ব্যর্থতায় স্রস্টাকেই অস্বীকার করার স্পর্ধা দেখায়!!! পর্ব এক. কাঁহানী পেহেলী রিংগকি!
মেঘ চাইতেই বৃষ্টি না হয়ে একেবারে শিলাবৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল গতবছরের মে মাসের ১৪ তারিখে ~~~~
আমার শ্বাশুরীমাতার বিবাহপূর্ব একমাত্র শর্ত ছিল, বিয়ের পূর্বে অবশ্যই দুজনকেই এমবিএতে ভর্তি হতে হবে~~~তো দুজনই বিয়ে করার জন্য তড়িঘড়ি করে এমবিএতে ভর্তি হয়ে গেলুম গতবছরের এপ্রিলের শেষ দিকে ঢাবির ইভিনিং এমবিএতে (দুজন দু সাবজেক্টে) এরপর আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে আমার অভিভাবকদের চিটাগাং থেকে উড়িয়ে আনতে হলো দুপক্ষের পাঁচজন করে মুরূব্বীদের কি একটা বৈঠক না পানচিনি এসবের জন্য এবং শেষ মুহূর্তে ঠিক হলো যেহেতু আমার পক্ষের বেশীরভাগই চিটাগাং থেকে কষ্ট করে আসবে তাই একেবারে এনগেজমেন্টই হয়ে যাক
আমারতো কাহিনী শুনে পাঁছায় হাত একমাত্র গার্লফ্রেন্ডকে পাঁচ বছরের যুদ্ধজয় করে পেতে যাচ্ছি এখন ডায়মন্ডের রিং না দিলে কেমনে হয়!মাত্রই এমবিএ ভর্তির জন্য বাপের কাছে টাকা নিলাম-তাই বাবাকে বললাম, রিংগ আমি দেব বাকিটা (i.e. শাড়ি,গয়না,কসমেটিকস্ হাবিজাবি এসব) তুমি ম্যানেজ করো। এমবিএতে ভর্তি হয়েই আমি আমার জিগিরি দোস্ত তাওসীফের বাসায় উঠে যাই--ও মাত্র সেমাসেই Ctg এর জব ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় নতুন চাকরীতে জয়েন করে। অতঃপর বিপদে বন্ধুর পরিচয় পেয়ে তাওসীফের SCB Credit Card এর উপর ভরসা করে প্রোগ্রামের আগের শুক্রবার আমি,তাওসীফ আর লিসি (লিসি কে পাঠকরাতো বুঝেই গিয়েছেন তাই ব্লগের নায়িকাকে আর আলাদা করে পরিচয় করালামনা) আমার হবু শ্বশুরের গাড়িতে করে রওনা দিলাম ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের উদ্দেশ্যে...
তাওসীফের তখন নিজের বিয়ের সব প্রস্তুতিই নেয়া শেষ শুধু পাত্রীই ঠিক হয়নি আর আমার অবস্থা ছিল ঠিক উল্টো সে যাই হোক তাওসীফ থাকাতেই সেদিন বড় বাঁচা বেঁচেছিলাম...
দোকানে গিয়ে মোটামুটি দোকানীর মাথা খারাপ করে কয়েকশ আংটি দেখে তিনজন দশ-বারোটি শর্টলিস্টেড করলাম~~~ এরপর শুরু হলো চুলচেরা বিশ্লেষণের মতো আঙ্গুলচেরা আংটি বিশ্লেষণ সেলস্ম্যান তখনো হাসিমুখে সব মেনে নিচ্ছিল হয়তোবা আমরা একটু পরই যে না কিনেই বের হয়ে যাব সেটা আঁচ করতে না পেরেই! দীর্ঘ সময় ব্যাপিয়া আমরা দুবন্ধু কোনরকম মন্তব্য না করিয়াই এমনকি শর্টলিস্টেড আংটিগুলোর একটিরও মূল্য জিঙ্গেস না করিয়াই লিসিকে বলিলাম তোমার যেটা পছন্দ হবে সেটাই নেব এবং আমাদের দুজনের পছন্দের সাথে তার পছন্দটাও মিলে যাওয়ায় আমিতো মহাখুশী-অল্প সময়েই কাজ শেষ! কিন্তু বিধিবাম, কন্যা শেষ মুহূর্তে বলে বসলো, প্রথম দোকানে এসেই কিনে ফেলতে তার মন সাঁয় দিচ্ছেনা আমি কিছুটা বোঝানোর বৃথা চেস্টা করলাম, এর চেয়ে ভালো আর কোথাও নেই আবার ঘুরে আসার আগে এই রিংগটি সেল হয়ে যেতে পারে...এখনই কিনে ফেললে জুমার নামাযটাও পড়া যাবে..আর তিনজনেরই যেহেতু পছন্দ হয়েছে... কিন্তু কে শোনে কার কথা তাওসীফ অবশেষে পরিস্থিতি শান্ত করলো আর দোকানদারকে রাজী করালো যেন অন্ততঃ দুঘন্টা আমাদের জন্য অপেক্ষা করে তারপর রিংগটা বিক্রী করে।
তাই ব্লগের গাড়ীটা এখন গুলশান-১ থেকে ঘুরিয়ে বসুন্ধরা সিটি হয়ে আবার বনানীর কামাল আতাতুর্কে ডায়া গোল্ডে এসে থামালাম। গাড়ী থেকে নামার আগেই পাঠকদের জানিয়ে রাখি, বসুন্ধরায় ডায়মন্ড রিংগ খোঁজার নামে যা করলাম তার কারণে আজীবনের জন্য শয়তানের বড় ভাই হয়ে গেলাম।
কারণ অপচয়কারী যদি শয়তানের ভাই হয় তাহলে সময় অপচয়কারী নিশ্চয়ই শয়তানের বড় ভাই
বনানীর দোকানগুলোতে এসে কাহিনী আরো খারাপ হলো, একাধিক দোকানীই ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের হোয়াইট গোল্ডের উপর বসানো ডায়মন্ড নিয়ে আমার হবু সহজ-সরল হবুবধুকে পুরাই কনফিউজড্ করে দিল- ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের রিংগ নাকি ভালোনা!- আসলে কাহিনী হলো ঐদোকানগুলোর একটি রিংগও আমাদের তিনজনের কারোরই পছন্দ হচ্ছিলনা! কিন্তু কাকে বোঝাবো পুরোটাই মার্কেটিং গিমিক--- কন্যা ততক্ষণে বেঁকে বসেছে আজকে রিংগই কিনবেনা! ওদিকে বেঁধে দেওয়া দুঘন্টা সময় প্রায় যায় যায়~~ আমিও নিরুপায় হয়ে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের সেই ভাইজানকে ফোন করতে উদ্যত তখনই তাওসীফের আবারো ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভাব! আমরা দুজন রিংগ কেনা নিয়ে ঝগড়া করছি আর ও বেচারা এত ভালো চাকরী করেও মেয়ে পাচ্ছেনা এসব ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেল করে দুজনের হাসিবিহীন মুখে হাসি ফেরাতে না পারলেও অন্ততঃ বরফ কিছুটা গললো
আবার সেই দোকানে আসার পরও রাজকন্যার মুখে মেঘের ঘনঘটা কিন্তু দোকানদার এবার দৃরপ্রতিঙ্গ আমাদের খালি হাতে ফিরতে দেবেনা। কিন্তু রাগের কারণে আমার মাধ্যমে রিংগ নাপরে কন্যা নিজেই নিজের আংগুলে তা পরে নিলে মনটা আমারো খারাপ হয়ে রইলো। সেটা বুঝতে পেরেই হয়তোবা পাগলা তাওসীফ দোকান থেকে বের হবার আগ মুহূর্তে পাগলামীর চূড়ান্ত প্রদর্শনী শুরু করে আমাকে সিনেমাটিক স্টাইলে লিসিকে রিংগ পরাতে হবে এবং এই দোকানেই এ মুহূর্তেই পাগলাকে কোনভাবেই বুঝাতে নাপেরে ঐমুহূর্তে দোকানে তেমন কাস্টমার ভীড় না থাকার পরও লজ্জায় লাল-নীল-বেগুনী হয়েই তাওসীফের happy moment photograph এর আব্দার মেটালাম। অবশেষে রাজকন্যার মুখে হাসি ফুটলো
*** পাদটীকা, সেই happy moment photograph এর ছবিটি এই ব্লগের মাধ্যমেই প্রথম জনসম্মুখে প্রকাশ করা হলো-যদিও ফেসবুকে আমাদের দুজনের অনেক ছবিই রয়েছে। প্রথম পর্বের আপাতত সমাপ্তি।
দেখা হবে পরের পর্বে-----
পর্ব দুই. কাঁহানী দুশরী রিংগকি!
এই পর্ব অন-এয়ারে যায়, এনগেজমেন্টেরও পরে...যখন আমি তাওসীফের বাসা ছেড়ে নিজের বাসায় উঠি আগস্টের ৬ তারিখে ...আম্মু-আব্বু যথারীতি Ctg থেকে চলে আসায় আমি অনেকটাই নির্ভার ছিলাম বাসা ছাড়ার দিন---নির্ভার থাকলে আমিযে ভুলোমনাও হয়ে যাই সেটা জানতামনা গোসল করার আগে আমার রিংগটা খুলে টিভি ক্যাবিনেটের লকবিহীন ড্রয়ারে রেখেছিলাম যার কোন প্রয়োজনই ছিলনা আর রাখার পর ভুলে যাওয়াটা ছিলো আরো বেশী নির্বুদ্ধিতা আমি-তাওসীফ আর আব্বু জুমআর নামায পরে এসে দেখি আম্মুর নির্দেশনায় কিছু অল্প বয়স্ক ছেলে মহাউৎসাহে আমার জিনিসপত্র নামাচ্ছে আর বুয়া-দাড়োয়ান পাহাড়া দিচ্ছে! আমার শুধু ড্রাইভার পরিচিত ছিল! নতুন বাসায় আসার ঘন্টাখানেক পরও টের পাইনি আংটি নেই!!!! আর টের পাবার পরতো আমার রীতিমতো অবস্থা! বিয়ের আগেই আমার মতো কেউ এনগেজমেন্ট রিংগ না হারালে এই দুঃখ বুঝবেননা! ড্রাইভারকে আমি ফোন দিলাম এরপর আব্বুও ফোন দিলো, দুজনকেই ওই ছেলেগুলোর মধ্যে থেকে চোর কে বের করে আংটি ফেরত দেবার আশ্বাস দিলো!এরপর মাঝে মাঝে ড্রাইভারের ফোন অফ থাকলেই আমার হার্টবিট যায় বেড়ে, এমন খারাপ অবস্থা না পারছি ওকে জানাতে আর না পাচ্ছি আম্মু-আব্বুর স্বান্তনা! অবশ্য আব্বু-আম্মুও আমার চেয়ে কম চিন্তিত ছিলেননা। লিসি বারবার জিঙ্গেস করার পরও মন খারাপের কারণ বলতে পারছিলামনা----ওকে না জানিয়ে বরং জানালাম আমার র্যাবের সদস্য বন্ধু সোহেলকে। অর্থাৎ সোজা আঙ্গুলে রিংগ না পেলে আঙ্গুল বাঁকা করানোর প্রস্তুতি নিয়ে ফেললাম। দুদিন অপেক্ষা করে অফিসে বসে ফেসবুকে বিশাল এক মেসেজ পাঠিয়ে বাসায় এসে শুনি আব্বু-আম্মু ড্রাইভারের ফোন পেয়ে রিংগ ফেরত আনতে গেছে। যে ছেলে চুরি করেছে তাকে নাকি ওদের সমিতি শাস্তি দিয়েছিল আর আব্বু ড্রাইভারকে বখশিস ছাড়াও খুশী হয়ে বিয়ের দাওয়াতও দিয়ে ফেললো... তারপর থেকে সেই রিংগ এখনো পরম যত্নে আছে এবং কোন occation ছাড়া খুব একটা পরাও হয়না।
আমার স্ত্রী এতদিন আমার মতো অগোছালোর এ অতিসাবধানতার হেতু বুঝতে না পারলেও আজকে এ ব্লগের মাধ্যমে এতদিনের অজানা কাহিনী পাঠকদের সাথে সাথে তাকেও জানিয়ে দিলুম.... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।