দৃষ্টিভংগি বদলালে বিশ্ব বদলানো সম্ভব আগেই বলে নেই আমি খুব বেশি একশন, থ্রিলার, লজিকাল, বা অতিরিক্ত ইমোশনাল,ফিলোসফিকাল টাইপ মুভি পছন্দ করি না। আমার পছন্দ হল এ্যানিমেশন (মেগামাইন্ড,ওয়াল ই) ফ্যান্টাসি(নারনিয়া,জুমান্জি টাইপ), কমেডি(মিন গার্লস,এনাদার সিন্ডারেলা স্টোরি), একটু রোমান্টিক(হোয়েন ইন রোম,মাই বেস্ট ফ্রেন্ডস ওয়েডিং) আর খুব অরডিনারি স্টোরির অল্পসল্প প্র্যাক্টিকাল। । ফ্রিকি ফ্রাইডে মেইনলি একটি কমেডি মুভি কিন্তু অনেক ডিপ একটা ম্যাসেজ ক্যারি করে।
যাইহোক কথা অনেক হল।
এবার আসা যাক কাহিনীতে, মুভির মেইন ২ টা ক্যারেক্টার হল এ্যানা কোলমেন ও তার মা টেস কোলমেন,তাদের পরিবারে আরো আছে এ্যনার ছোটভাই হ্যারি আর টেসের বাবা। এ্যানার বাবা কয়েক বছর আগে মারা যায়। টেস যেকিনা পেশায় একজন কাউন্সিলর ২য় বার বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয় তার বয়ফ্রেন্ড রায়ানকে যা এ্যানা মেনে নিতে পারছিল না। আর এর জন্য মা-মেয়ের মধ্যে দুরত্ব বেরে গেছিল অনেক। এ্যানা তার লাইফে খুশি ছিল না ।
স্কুলে বার বার বিনাকারণে ডিটেনশনে থাকত, বাসায় ছোটভাইয়ের সাথে ঝগড়া,কথায় কথায় মায়ের সাথে মনোমালিন্য,কড়া ডিসিপ্লিনের নিরস এ্যানার জীবনে যদি কিছু আনন্দের ছিল তা হলো তার ব্যান্ড। এ্যানা অনেক ভালো গিটার বাজাত, তাদের বাসার নীচে গ্যারেজে সবাই মিলে প্র্যাক্টিস করত। এই হলো এ্যানা কোলম্যানের (লিন্ডসেয় লোহান) পরিচয়।
এবার আসি এ্যানার মা ড:টেস কোলম্যানের পরিচয়ে। টেস পেশায় কাউন্সিলর।
এ্যানার বাবা মারা যাওয়ার পর রায়ান নামের একজনের সাথে তার এ্যাফেয়ার হয়। তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। টেস এ্যানাকে নিয়ে সবসময় চিন্তায় থাকত, কারন প্রথমত এ্যানার হাইস্কুল থেকে প্রায়ই এ্যানার নামে অনেক বিচার আসত, আবার এ্যানা রায়ানকে তাদের পরিবারে মেনে নিতে পারছিল না। রায়ান যতই এ্যানার সাথে কমফোর্টেবল হবার চেষ্টা করুক না কেন এ্যানা সবসময়ই রায়ানকে এড়িয়ে চলত। এসব কারনে টেস আর এ্যানার মধ্যে চলত ঝগড়া।
টেসের একান্ত চেষ্টা ছিল এ্যানাকে আরো সেন্সিবল করে তোলার প্রতি যা এ্যানার বিরক্তির কারন হয়ে দাড়ায়।
ইনি হলেন ড:টেস কোলম্যান(জেমি লি)। খুবই গোছালো,দায়িত্বশীল এক ব্যক্তিত্ব।
যদি এ্যানা আর টেসের দিনের শুরু কেমন হয় সেই দৃশ্য কল্পনা করতে চান তাহলে একটু সাহায্য করে দেই।
তো ঘটনার শুরু হয় টেসের বিয়ের রিহার্সাল ডিনারের আগের দিনে।
এ্যানা স্কুলে অনেক খারাপ একটা দিন পার করে বাসায় তার বন্ধু আর ব্যান্ড মেম্বারদের সাথে গানের প্র্যাক্টিস করছিল। তখন সে জানতে পারে যে তাদের ব্যান্ড একটা কম্পিটিশনে পারফর্ম করার সুযোগ পেয়েছে যেটা তাদের ব্যান্ডের জন্য অনেক বড় একটা প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। কিন্তু সমস্যা হল অডিশন আর টেসের রিহার্সাল ডিনার একি দিনে পড়ে গেছে। এ্যানা রাতে সবার সাথে ডিনার করতে বাইরে যায়, সেখানে সে তার মাকে অডিশনের কথা জানালে তাদের মধ্যে সেখানেই ঝগড়া লেগে যায়। কারন টেস এ্যানাকে রিহার্সাল ডিনার ছেড়ে অডিশনে যাওয়ার অনুমতি মোটেও দিবেনা।
যখন তারা ঝগড়া করে ঐ সময় রেস্টুরেন্ট এর ম্যানেজারের মা তাদের ফর্চুন কুকি খেতে দেয়, ২ জনের কুকিতেই একটা ম্যাসেজ থাকে। তারা সেটা পড়ার সাথে সাথেই একটা ভুমিকম্প হয় কিন্তু সেটা এ্যানা আর টেস ছাড়া কেউ টের পায় না। আর এখান থেকেই মুভির ইন্টারভাল শুরু।
সকালে টেস ঘুম থেকে উঠে দেখে সে এ্যানার রুমে। সবকিছু খুব অবাক লাগছিল তার।
হঠাৎ আয়নায় দেখে তাকে এ্যানার মত দেখাচ্ছে। আর নিজের ঘরে টেস যেয়ে দেখে তার বিছানায় তার মত একজন ঘুমাচ্ছে। টেস বুঝে গেল টেস আর এ্যানা একজন আরেকজনের রুপে রুপান্তরিত হয়ে গেছে। সে তাড়াতাড়ি এ্যানাকে জাগিয়ে সবকিছু বোঝালো। সব দেখে এ্যানা অস্থির হয়ে যায়।
কেউই বুঝতে পারেনা কি হয়েছে।
এরপর তাদের মনে পড়ে গতরাতের ভুমিকম্পের কথা আর রেস্তুরেন্ট ম্যানেজার পেই-পেই এর মায়ের কথা তখন তারা বুঝলো সেখান থেকেই কিছু হয়েছে। সুতরাং যদি এই সমস্যা সমাধান করতে চায় তবে সেখানে যেয়েই করতে হবে। কিন্তু এ্যানার সেদিন স্কুলে পরীক্ষা ছিল আর টেসের অনেকগুলি রোগীর সাথে কাউন্সিলিং এর এপোয়েন্টমেন্ট ছিল। তাই তারা একজন আরেকজনের কাজে চলে গেল, টেস এ্যানা সেজে এ্যানার হাইস্কুলে গেল আর এ্যানা গেল টেসের অফিসে।
এরপর সারাদিন খুব মজার মজার কান্ড ঘটে যেমন রায়ান টেসের সাথে ক্লোজ হতে চায় কিন্তু টেসের রুপে এ্যানা বারবার তার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায়, টেসের মার্জিত গেট-আপ এ্যানা পুরাটাই পাল্টে দেয়, কাউন্সিলিং আর টক শো তে অনাকান্ক্ষিত আচরন করে। আবার টেস এ্যানার স্কুলে যেয়ে এ্যানা যে ছেলেকে পছন্দ করে তাকে এড়িয়ে চলে, যেই ইংরেজী লেকচারার এ্যানাকে বারবার ফেইল করাতো তাকে অপমান করে,পরীক্ষায় নকল করে। এসবের কিছু নমুনা দেখতে পারেন।
যখন টেস(আসলে এ্যানা)রায়ানকে এড়িয়ে চলছে
এরপর তারা আবার রেস্টুরেন্টে যেয়ে জানতে পারে যে ফরচুন কুকির ম্যাসেজে যা লেখা আছে তা সত্যি হলেই আবার সব ঠিক হবে। বাসায় যেতে যেতে জেক (যাকে এ্যানা পছন্দ করে)আর টেস (যে আসলে এ্যানা)রেস্টুরেন্টে কিছুক্ষন কথা বলে আর জেক টেসের প্রেমে পড়ে যায় .......রায়ান আবার তাদের একসাথে বাইকে ঘুরতে দেখে এই নিয়ে শুরু হয় আরেক ঝামেলা।
এমনকি জেক টেসের জন্য তাদের বাসার নিচে গান ও গায় কপাল ভাল ছিল রায়ান শুনেনি। অবশেষে ফরচুন ম্যাসেজ পাওয়া গেল, যেখানে লেখা ছিল নি:স্বার্থ ত্যাগই তাদের নিজেদের আসল রূপে ফিরিয়ে আনবে। রিহার্সাল ডিনারে এ্যানাকে যখন তাদের বন্ধুরা অডিশনের জন্য নিতে আসে তখন এ্যানা মানা করে দেয়, কিন্তু রায়ান যেতে বলে আর টেসকেও এ্যানার সাথে থাকতে বলে। টেস(এ্যানা) তখন বুঝতে পারে যে রায়ান অনেক ভাল একজন মানুষ যে কিনা টেসের পরিবারকে আপন মনে করে। এরপর টেস আর এ্যানা মিলে ধুমধারাক্কা একটা পারফোরমেন্স দেয়।
সেখানে এ্যানার(টেস) পারফোরমেন্স দেখে জেক টেসকে ভুলে আবার এ্যানাকেই পছন্দ করে। তারা দুজন যখন আবার পার্টিতে যায় তখন আসল টেস এ্যানাকে বলে যে তার বিয়ে পিছিয়ে দিতে যেহেতু তারা নিজেদের আসল রুপে ফিরতে পারেনি কিন্তু এ্যানা(টেসের রুপে) সবার সামনে বলে যে এ্যানা রায়ানকে মেনে নিয়েছে আর সাথে সাথে আরেক দফা ভুমিকম্প হয় যা সবাই টের পায়। এরপর এ্যানা আর টেস নিজেদের আসল রুপ ফিরে পায়। পরদিন টেসের বিয়েতে এ্যানার কাছে জেক এসে মাফ চায় , আর তারা নতুন সম্পর্কে যায়, টেসেরও কোন আপত্তি থাকে না কারন যখন সে এ্যানার রুপে ছিল সে তখন দেখেছে যে জেক একটা ভাল ছেলে। And They All Lived Happily Ever After........
এই সিনেমাটা আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে ।
কারন, একেতো এখানে অনেক কমেডি আছে আর একটা বিষয়কেও সুন্দরভাবে প্রেজেন্ট করেছে। মা-মেয়ের (বা তার সন্তানের)সম্পর্ক অনেক বেশি সুন্দর,একদম নি:স্বার্থ। তাদের মতে,চিন্তাভাবনায়, দৃষ্টিভংগিতে যতই তফাৎ থাক, মনের খুব গভীরে পরস্পরের জন্য অনেক ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে। যদি তারা একজন আরেকজনের জীবন, মানসিকতা ,পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে , তার অবস্থানে নিজেকে রেখে সবকিছু একটু বুঝতে পারে তবে সেই লুকানো ভালোবাসাটা তাদের জীবনে অনেক আনন্দ নিয়ে আসতে পারে। টেস যখন এ্যানার স্কুলে গেল তখন সে বুঝতে পারল যে আসলেই এ্যানা বিনাকারনে বার বার ডিটেনশনে যেত।
ইংরেজী লেকচারার এ্যানাকে বার বার এফ দিত এ্যানা যতই পড়ালেখা করুক, কারন টেস একবার তাকে কলেজে থাকতে রিফিউজ করেছিল। তারই প্রতিশোধ সে এ্যানার কাছ থেকে নিচ্ছিলো। আবার এ্যানাও বুঝে যে টেজের জীবনটা অনকে ঝামেলা-ঝন্ঝাটপূর্ন যেখানে আনন্দের কোন জায়গা নেই। ঠিক এভাবেই তারা অনেক সুন্দর একটা জীবনের দিকে এগিয়ে গেল যা আমরাও পারি যদি আমরা আমাদের আপন মানুষের জায়গায় নিজেকে রেখে চিন্তা করতে পারি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।