এই গল্পটা শুরু করা যায় মনীষাকে দিয়ে। মনীষা আমাদের এই গল্পের মূল চরিত্র। আমাদের সব রাগ, ক্ষোভ, সমবেদনা, এমনকি দুশ্চিন্তাও থাকবে মনীষার জন্য। আরো অন্য দশটা টিনএজ মেয়ের মত মনীষা এক সময় প্রেমে পড়ে যায়। মনীষার ভাষায় উথাল-পাথাল প্রেম।
প্রেমে পড়ার গল্পটা সাধারণ, বৈচিত্র্যহীন। অবাক হওয়ার মত কিছু নেই। এর পরের গল্পগুলো কখনো কৌতুহল জাগায়, কখনো কৌতুকবোধ, কিছুটা বিরক্তিও কি?
এই গল্পের আগে আমি জানতাম মনীষা একটা অলস, কিন্তু দুরন্ত মেয়ে। মনীষার আলসেমিতে আমি খুব বিরক্ত হতাম। কারণ সেটা বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে।
অন্ততঃ আমার সেটাই মনে হত। ওর বয়েসী অন্য ছেলে-মেয়েদের চোখে আমি ভবিষ্যৎ গড়ার তাড়না দেখতাম- মনীষার মাঝে সেটা আশ্চর্যরকম অনুপস্থিত। সে যেন অন্য কোথায়ও থাকে, অন্য কোনখানে। মনীষার ভাষায় সে হচ্ছে ডেয়ারিং এন্ড কেয়ারিং।
ছেলেটার সাথেও পরিচত হয়ে যাওয়া দরকার।
ওকে আমি দেখিনি বা কথাও বলিনি। তাই মনীষার বর্ণনাতেই তাই আমাদের ছেলেটাকে খুঁজে নিতে হবে। নাম রাশেদ, রসায়নের ছাত্র। দেখতে সুন্দর অথবা আরো ভালোভাবে বললে 'অন্নেএএক কিউট'। এত্ত সুন্দর, এত চমৎকার করে কথা বলে- ছেলেটার প্রতি ওর মুগ্ধতা মনীষা লুকোতে চায় না, বলে যেতে থাকে- যে কোন মেয়েই ওর প্রেমে পড়ে যেতে বাধ্য।
একটা মেয়ে, মিতু, সত্যিই প্রেমে পড়ে যায়। মিতু মনীষার বান্ধবী, আর সহপাঠী। অনেক আগে যখন মিতু ক্লাস নাইনে পড়তো রাশেদ ছিল ওর টিউটর। যেহেতু যে কোন মেয়েই রাশেদের প্রেমে পরতে বাধ্য, সেহেতু সূত্রানুযায়ী মিতু যে রাশেদের প্রেমে পড়ে তাতে আমি অবাক হইনা। বরং, রাশেদ যখন বলে- দেখ মিতু, আগে তুমি ভালোভাবে পড়াশোনা কর, ভালো রেজাল্ট কর, তখন দেখা যাবে- আমার মনে হয় আমি সস্তা কোন প্রেমের উপন্যাস পড়ছি, কিংবা এই দৃশ্যটা যেন ঢাকাই কোন ছবি থেকে নেয়া।
যেইদিন আমার এসএসসির রেজাল্ট দিল তার পরের দিনের কথা। একটা অপরিচিত নম্বর থেকে এসএমএস আসে। আমি ভাবছিলাম সেটা তানভীরের। তানভীর আর আমি একই কোচিংয়ে পড়তাম। ও আমাকে পছন্দ করতো।
বিশ্বাস করেন, আমি একদমই করতাম না। এইটা নিয়ে ঐদিন ওর সাথে আমার খুব ঝগড়া হইছে।
কথাগুলো একদমে বলে গেল মনীষা যেন কথাগুলো কোথায়ও পালিয়ে যাচ্ছে।
তানভীরের সাথে আসলে ওইদিন বেশি খারাপ বিহেইভ করছিলাম। আমার নিজের কাছেও কিছুটা খারাপ লাগতেছিল।
ঐ সময়ে ঐ এসএমএস। আমি ভাবছিলাম তানভীরই হবে। ও এরকম বিভিন্ন নম্বর থেকে আমাকে আই লাভ ইউ মেসেজ পাঠাইত। কিন্তু সেটা তানভীর ছিল না। বুঝতে পারছি কয়েকদিন পর।
সেই অপরিচিত কণ্ঠের সাথে অনেক অনেক কথা হল। আমিই বলতাম, ও শুনত।
তো মনীষা, শুধু এইটুকু পরিচয়ে, এইটুকু আলাপে তুমি প্রেমে পড়ে গেলে?
কি করব বলেন? ভাইয়া, আমার আসলে করার কিছুই ছিল না। আমার শুধু মনে হচ্ছিল ওকে ছাড়া আমার চলবে না। আমি... আমি ওকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছিলাম না।
মনীষা খুব দ্রুত কথা বলে। একদমে, একবারেই যেন সব বলে ফেলতে চায়। এত কিসের তাড়া?
তারপর? প্রেম হয়ে গেল? আবার বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে হাঁটতে হবে/ শুতে, বসতে, ঘুমাতে হবে/ প্রেম এসে গেছে- তাই না?
এইটা কী বললেন?
কিচ্ছু না। একটা কবিতা। তো প্রেম এসে গেছে, না?
হুম, আমার নিজেকে মনে হচ্ছিল যেন একটা পাখি।
শুধু উড়ছি আর উড়ছি। আমার সব বন্ধুদেরকে আমি বলছিলাম ওর কথা। একদিন, জানেন, মিতুকেও বললাম। যখন বললাম ছেলেটার নাম রাশেদ,ও একটু কেমন যেন ভাব করল।
তুমি জানতে না মিতু আর রাশেদের ব্যাপারটা?
জানতাম।
তখন তো ওদের মধ্যে কোন রিলেশান ছিল না। আমি জানতাম না মিতু যেই রাশেদের কথা বলে ওই যে সেই। আবার ও আমাকে বলত একটা মেয়ে ওকে পছন্দ করত আমি জানতাম না সেটা মিতু।
তো কিভাবে জানতে পারছ?
আমার এক বান্ধবীর কাছ থেকে। আমাদের একটা বান্ধবী ছিল ঐশী।
ওর বড় ভাইয়ের বন্ধু ছিল রাশেদ। আমাদের পাড়ারই ছেলে। একদিন কি হইছে জানেন?
আমি কিভাবে জানব?
আমি কোচিংএ যাচ্ছিলাম। পথে মিতুর সাথে দেখা। ও, জানেন, একদম সন্ত্রাসীর মত করে আমার জামার কলার চেপে ধরছে- দেখ, তোর রাশেদ আমার রাশেদ না তো? আমি না তখনও বুঝতে পারি নাই।
আমি কোন দিন হিন্দী ছবি দেখি নাই। তবুও আমার মনে হল এই থ্রীসাম বা তিনকোণা প্রেমের কাহিনী যেন হিন্দী ছবি থেকে নেয়া।
আমি যখন জানতে পারলাম আমার এত খারাপ লাগতেছিল। ও আমার সাথে মিথ্যা কথা বলল! আমি ওকে ফোন করে যাচ্ছেতাই ভাষায় বকছি। জানেন, ও একটা কথাও বলে নাই।
একদিন পর ও আমাকে বলে ও মিতুকে হ্যাঁ বলে দিয়েছে। আমার চারপাশটা যেন ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছিল। আমি কী যে করব... আমি কী যে করব, আমার কেউ নাই, আমার কিছু নাই-কী ভয়ংকর সেই অনুভূতি আমি কিভাবে বোঝাব? আমার তখন পাগল-পাগল অবস্থা। এত কান্না ছিল আমার ভেতর!
সয়ে গেলে না কেন, ঝিনুক? আমরা মুক্তা পেতাম। আমি মনে মনে ভাবি।
মনীষার কন্ঠে বেদনটা তের পাই।
রাশেদ বলছিল ও আর আমার জীবনে আসবে না। ও আসতেও চায়নি। আমিই জোর করছি। এত সহজে ছেড়ে দেব কেন?
সেটাই।
এত সোজা। কেন ছেড়ে দিবে?
আমার কৌতুক মনীষাকে স্পর্শ করে না। সে বলে যেতে থাকে- এত কথা ছিল মনীষার !
মিতু কী এমন একটা মেয়ে হয়েছে? ওকে তো আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি। কী স্বার্থপর, কী ডিসগাস্টিং একটা মেয়ে! ও কী রাশেদের জন্য আমার চেয়ে বেশি স্যাক্রিফাইস করবে? কিন্তু ও তো করবেনা। কিন্তু, বুজছেন, ওর বন্ধুরাও মিতুর পক্ষে ছিল।
কেন?
আসলে মিতু বেশ ধীর-স্থির, গোছানো স্বভাবের মেয়ে। আর আমি তো পাগলী টাইপের। মিতু যদি উত্তর হয়, আমি তাহলে দক্ষিণ। সবকিছুতেই ও আমার উল্টা।
বুঝলাম।
কিন্তু মিতুকে আমার মোটেও ডিসগাস্টিং মেয়ে বলে মনে হচ্ছে না।
উফফ, ভাইয়া, ও একদম বিরক্তিকর। ও খুব ভাব ধরে রাশেদের জন্য ও এই করবে, সেই করবে- আসলে তো কিচ্ছু না। একবার হইছে কি জানেন- রাশেদ অনেকদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে গেছে। ও এর মধ্যে একবারও ফোন করে নাই।
আসলে রাশেদের ব্যাপারে ও কোন কেয়ারই করত না।
আমার কৌতুহলী প্রশ্ন- তুমি কেয়ার কর নাকি?
কি বলেন, ভাইয়া, আমি সারাদিন ওর টেনশনে থাকি। কী যে অস্থির অস্থির লাগে! একবার হইছে কি- আমাদের তখন প্রি-টেস্ট পরীক্ষা চলতেছিল। আমি যখন শুনলাম ও বাইরে ওয়েট করতেছে, আমি কী লিখছি-না লিখছি বিশ মিনিটের মধ্যে খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে আসছি।
মনীষার কথা শুনে আমার হাসি আসে।
একটা পুরানো কবিতার কথা মনে পড়ে।
অবস্থা যা দেখতেছি,
ভালোবাসা ছাড়া কোন উপায় দেখি না।
(ক্লান্তিকর এই গল্পের শেষ অংশ অন্য কোন সময়। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।