যুক্তরাস্ট্রের ২০ তম প্রেসিডেন্ট জেমস এ গারফিল্ড, রিপাবলিকান দল থেকে মনোনীত, মাত্র ৪ মাস হল নির্বাচিত হয়েছেন।
তারিখটা ২ রা জুলাই ১৮৮১, সকাল ৯:৩০, প্রেসিডেন্ট সামার ভেকেশনে যাবেন ট্রেনে করে। এসেছেন ওয়াশিংটনের 'বাল্টিমোর এন্ড পটোম্যাক রেলরোড' স্টেশনে। জায়গাটা বর্তমান ওয়াশিংটনের সিক্সথ স্ট্রিট আর কন্সটিটিউশন এভিন্যুর মাঝখানেই। তখনকার ছবি নীচে:
প্রেসিডেন্টের সাথে তার দুই ছেলে জেমস এবং হ্যারিও ছিলেন।
এছাড়া তাঁকে বিদায় জানাতে এসেছেন সেক্রেটারী অফ স্টেট ব্লেইন আর সেক্রেটারী অফ ওয়ার রবার্ট টড লিংকন। উল্লেখ্য প্রেসিডেন্টের সাথে কোন দেহরক্ষি ছিলনা, ছিলনা কোন নিরাপত্তা বলয়। আদতে তখন সে রকম কোন সিস্টেমই ছিলনা।
এই সুযোগটা কাজে লাগালেন চার্লস জে গীত্যু নামে এক হতাশাগ্রস্হ যুবক, যিনি তখন স্টেশনে উপস্হিত হয়েছিলেন যুক্তরাস্ট্রের ২০ তম প্রেসিডেন্টকে খুন করবার জন্যই। আততায়ী চার্লস জে গীত্যুর ছবি দেখুন নীচে:
প্রেসিডেন্ট মাত্র স্টেশনের অপেক্ষাগারের দিকে রওয়ানা হয়েছেন আর তখনি গীত্যু খুব কাছ থেকে প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে গুলি করেন।
গুলি খেয়ে প্রেসিডেন্ট আর্তনাদ করে উঠেন, তখন গীত্যু আবার গুলি করেন। প্রেসিডেন্ট মাটিতে পড়ে যান। যে ধরনের রিভলবার দিয়ে প্রেসিডেন্টকে গুলি করা হয় তার ছবি নীচে:
একটা বুলেট প্রেসিডেন্টের কাধ ছুয়ে যায় আরেকটা গুলি পিঠ দিয়ে ঢুকে পেটের ভিতরে সম্ভবত প্যানক্রিয়াসের কাছে পৌছায়। মনে রাখবেন ঘটনাটা আজ থেকে ১৩২ বছর আগের, তখন বিজ্ঞান এত উন্নত ছিলনা যে বুলেটের নিখুত অবস্হান বের করা যায়। চিকিৎসা শাস্ত্রও এতটা উন্নত ছিলনা যে একটা গুলি সহজেই বের করা যায়, আর এটাই পরে প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়ায়।
যাহোক দ্রুত প্রেসিডেন্ট গারফিল্ডকে বাল্টিমোর এন্ড পটোম্যাক রেলস্টেশনের দোতালায় নেয়া হয় পরে সেখান থেকে হোয়াইট হাউসে নেয়া হয়। সবাই মনে করেছেলেন এই আঘাতে কিছু হবেনা। তবে ঐ দ্বিতীয় বুলেটটা পা্ওয়া যাচ্ছিলনা।
অনেক ডাক্তার ময়লা হাত আর অপরিষ্কার যন্ত্রপাতি দিয়ে পেটের ভিতরে ঐ বুলেট খোজা শুরু করেন। আর এতে করেই মারাত্মক ইনফেকশনে আক্রান্ত হন প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড।
ইনফেকশন সম্পর্কে ডাক্তারদের কোন ধারনাই ছিলনা মনে হয়। ডাক্তারদের কনফারেন্স নীচে দেখুন:
তখন এসি আবিষ্কার হয়নি আর জুলাই মাসে ওয়াশিংটনে বেশ গরম। ইউএস নেভীর লোকেরা প্রেসিডেন্ট গারফিল্ডের কামরাতে বিশাল একটা বরফের চাইএর উপরে একটা বড় ফ্যান ছেড়ে দিল, এতে সামান্য ঠান্ডায় প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেশ উপকার পেলেন ।
কিন্তু তার রক্ত বিষাক্ত হয়ে গিয়েছিল আর অন্যান্য নানা উপসর্গে প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড আরো দুর্বল হয়ে পড়েন।
চারিদিকের পরিবেশ ভাল করতে আর বিশুদ্ধ বাতাস দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্টকে নেয়া হয় নিউ জার্সির এল বেরন নামক জায়গাতে।
সেখানেই আহত হওয়ার প্রায় আশি দিন পর নিউমোনিয়া আর রক্ত বিষাক্ত হওয়ার কারণে যুক্তরাস্ট্রের ২০ তম প্রেসিডেন্ট জেমস এ গারফিল্ড ১৮৮১ সালের ১৯ শে সেপ্টেম্বর সকাল ১০: ৩৫ মিনিটে মারা যান।
অনেকের মতে তখনকার ডাক্তারদের অজ্ঞতা আর গাধামীর জন্য প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড মারা যান। ২ য় বুলেট খুজতে গিয়েতো একজন ডাক্তার প্রেসিডেন্টের লিভারই ফুটো করে ফেলেন।
ভাল ডাক্তার থাকলে হয়ত তিনি বাঁচতেন।
এদিকে আততায়ী চার্লস জে গীত্যুর বিচার শুরু হয় ১৮৮১ সালের নভেম্বরে।
গীত্যুর ডিফেন্স তাকে পাগল সাব্যস্ত করার বহু চেষ্টা করেন কিন্তু সফল হননি।
২৫ শে জানুয়ারি ১৮৮২ রায়ে তার ফাসীর আদেশ হয়। তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেন। আপীল অগ্রাহ্য হয় আর ৩০ শে জুন ১৮৮২ সকালে ডিস্ট্রিকট অফ কলম্বিয়াতে তার ফাসীতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। ফাসীর মন্চে যাবার সময় তিনি নাকি গান গাইতে গাইতে মন্চে উঠেন আর জল্লাদের সাথে করমর্দন করেন।
যুক্তরাস্ট্রের পরবর্তি প্রেসিডেন্ট হন গারফিল্ডের সময়কার ভাইস প্রেসিডেন্ট চেষ্টার এ আর্থার, ছবি নীচে:
সুত্র: ইন্টারনেট ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।