আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অকল্যান্ডে ঘোরাঘুরিঃ কিছু কথা, কিছু ছবি

রানিং এন্ড রানিং...

৩ দিনে কুইন্সটাউনের পর্ব শেষ করে আমার পরবর্তি উদ্দেশ্য হইলো অকল্যান্ড। অকল্যান্ডে দুই রাত থেকে আবার কোরিয়া তে ব্যাক... এই হল আমার সংক্ষিপ্ত প্লান। এই পোষ্টে আমি অকল্যান্ডের কিছু ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো... অকল্যান্ড কে বলা হয় নাবিকদের শহর বা Sailor city (City of Sails) । আর একটা ইন্টারেস্টিং তথ্য হইলো, বিশ্বের মধ্যে এই শহরে নাকি ব্যাক্তি মালিকাধীন লাইসেন্সকৃত ইয়টের (Yacht) সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। চারিদিকে দেখে শুনে আমারো তাই মনে হল, কথা সত্য।

দুপুর ১২ টার দিকে ছিল ফ্লাইট... কুইন্সটাউন থেকে ২ ঘন্টা লাগলো আকল্যান্ড পৌছায়তে। এয়ারপোর্টে নেমেই ইনফরমেশনে হোটলের খোঁজ শুরু করলাম। বিভিন্ন রকম হোটেলের তথ্য দেওয়ালে বড় পোস্টার আকারে টাঙ্গানো ছিল, সাথে প্রত্যেকটার লোকেশন, ফোন নাম্বার আর ভাড়া তালিকা দেওয়া ছিল। আমি আমার সুবিধা মত ডাউনটাউনের ভিতরে একটা হোটেল কে ফোন করি। সব কিছু কনফার্ম করে তখন এয়ারপোর্টের বাইরে বের হলাম।

খুজতে লাগলাম কিভাবে ডাউনটাউন যাওয়া যাই। একটা এয়ারপোর্ট টু ডাউনটাউন শাটল বাসের খোজ পেলাম প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় যায়। একসময় আমার আকাংখিত বাস চলে আসলে উঠে পড়ি। বাস ড্রাইভার কে আমার লোকেশনটা বুঝিয়ে বলে সিটে বসলাম... ৪০ মিনিট লাগে এয়ারপোর্ট থেকে মূল শহরে যেতে। বাসের জানালা দিয়ে অকল্যান্ড শহর দেখতে দেখতে একসময় আমি আমার ডেস্টিনেশনে এসে পড়লাম।

দোতালার একটা রুম পেলাম, বেশ সুন্দর ছিমা ছাম। কিছুক্ষন গা এলিয়ে বিছানায় শুয়ে আকাশ পাতাল ভেবে ভেবে তারপর ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হলাম, কারন ততক্ষনে প্রায় ডিনারের টাইম হয়ে গেছে। কোথায় ডিনার টা করা যায়, তাই চিন্তা করতেছিলাম। আসলে একা থাকলে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে একটু নিজেকে কনফিউজড মনে হয়। হোটেলের লবি তে যেয়ে ম্যানেজারের কাছ থেকে কিছু আসে পাশের এলাকা সম্পর্কে টিপস নিয়ে বের হলাম।

প্রায় ঘন্টা খানেক হাটা হাটি করলাম। বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন বর্নের মানুষ দেখতে ভালই লাগছিল। তাদের প্রত্যকের মুখের দিকে তাকিয়ে তার ভিতর সম্পর্কে জানার বৃথা চেষ্টা করছিলাম আর হাঁটছিলাম... বেশ ভালই লাগে আমার এইসব। একসময় বুঝতে পারলাম আমার আসলেই খুব ক্ষুধা লাগছে। কি আর করা, সামনেই তখন একটা ম্যাকডোনাল্ডস পেলাম, তাই সেইখানেই ঢুকে পড়ি।

মোটামুটি সব কিছু বিগ সাইযের অর্ডার দিয়ে ছোট্ট এক টেবিলে বসে পড়লাম। আসলে কিছু কিছু সময় একা থাকলে নিজেকে খুবি অসহায় লাগে। আশে পাশে যারা ছিল, সবায় প্রায় গ্রুপ ধরে গো গ্রাসে বার্গার গিলছিল, আর আমার দিকে আড় চোখে দেখছিল, ভাবছিল, আমার বুঝি কেউ নাই, আমি এক দুনিয়ার চুড়ান্ত অসহার ব্যাক্তি... কি আর করা, কাচুমাচু হয়ে কিছুক্ষন এইভাবে বসে থাকলাম। একসময় আমার অর্ডারটা পেয়ে গেলে, অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে খাওয়া শুরু করলাম। খাওয়া শেষ করে বের হইলাম... আবার হাটা হাটি... রাতের ডাউনটাউন ঘুরতে লাগলাম... ভালই লাগছিল... কিন্তু আর কত হাঁটাবো? রাত ৯ টা প্রায় বেজে গেছে... তাই আবার হোটেলের দিকে ফেরা শুরু করি।

হোটেলে এসে সার্ভিস ম্যানেজারের কাছে একদিনের আকল্যান্ড ট্যুরের প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে চাইলেই বলে, তাদের হোটেলের পাশেই একটা ট্যুর কোম্পানী আছে, তাদের সাথে আগামীকাল সকাল ৯ টায় দেখা করতে। এইটা জেনে অনেকটা নিশ্চিন্তে রুমে যেয়ে ক্লান্ত দেহে একটা লম্বা ঘুম দিলাম পরের দিন সকাল ৮টা পর্জন্ত। আমি এক রাতের জন্যই হোটেলের রুম টা নিয়ে ছিলাম। তাই আজকেই চেক আউট করতে হবে। চেক আউট টাইম ছিল সকাল ১০টা।

সকাল ৯ টার মধ্যে আমার ব্যাগ নিয়ে নীচে নেমে হোটেল ম্যানেজার কে বললাম, ব্যাগ টা তাদের তত্ত্ববধানে লকারে রাখতে, আমি বিকালের দিকে এসে নিইয়ে যাবো। ব্যাগটা তাদের কাছে দিয়ে আমি সেই ট্যুর কোম্পানী তে যেয়ে ৪৫ নিউজিল্যান্ড ডলার দিয়ে সারাদিনের প্যাকেজ টিকিট কিনে ফেললাম। তারা মোট ১৪ টা লিজেন্ড স্পটে ঘুরাবে। ঐ ১৪ টা জাইগায় তাদের বাস ৩০ মিনিট থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে পর পর যাওয়া আসা করবে। শেষ বাস ছাড়বে বিকাল ৪ টায় এবং ৫ টার পরে আর বাস যাবে না।

সুতরাং যেখানেই থাকি না, ৪ টা থেকে ৫ টার মধ্যে বাস ধরতে হবে। এইভাবে আমি আমার ইচ্ছা মত সব যায়গায় থেকে আবার পরের বাসে উঠে ঘুরতে লাগলাম পুরা অকল্যান্ড শহর। এইখানে একটা কথা বলা হয় নাই, কুইন্সটাউনের আমার সাথে কনফারেন্সে এক বাংলাদেশীর সাথে পরিচয় হয়েছিল, উনি জাপান থেকে আসছিলেন। সেই ভাইয়া আজকে সন্ধায় কুইন্সটাউন থেকে অকল্যান্ড আসবে। কথা ছিল, আমি আবার এয়ারপোর্টে যেয়ে তার সাথে এক সাথে সন্ধ্যা থেকে থাকবো, ঘুরবো।

তারপর, সেই ভাইয়ার এক বন্ধু থাকেন অকল্যান্ডে তার বাসায় যাব, রাতের ডিনার করবো, থাকব, পরেরদিন আমরা একসাথে সকালে বের হবো, কারন আমাদের দুইজনের ফ্লাইট প্রায় একি সময়ে ছিল, ২ ঘন্টার ডিফারেন্সে। তাই, যাই করি না কেন আমি, আমাকে সন্ধার আগেই এয়ারপোর্টে যেতে হবে, এই প্লান আগে থেকেই ছিল। আমার প্যাকেজ ট্যুর শেষ করে দ্রুত আগের হোটেলে ফিরে এসে আমার আমার ব্যাগ নিয়ে তাই বিকাল ৫ টার দিকে আবার এয়ারপোর্টের দিকে দৌড় দিলাম। আমার একটু দেরী হইয়ে গেছিলো। আমি বুঝিনা, আমি প্রায় সব যায়গাতেই লেট করি।

আমার জন্য সেই ভাইয়া টা প্রায় ৩০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছিলেন, তার বন্ধু সহ। অবশেষে তাদের সাথে দেখা, টেনশন দূর হইলো... এখন আর আমি একা নয়, ভাবতেই ভাল লাগছিল... সাথে এমন একজন কে পেলাম যে কিনা এই শহরের বাসিন্দা। তারপর অনেক কথা, অনেক আড্ডা, শপিং এ যাওয়া, রাতে ভাবির হাতে জম্পেশ রান্নার ডিনার, একেবারে সেইরকম... যাইহোক, এখানেই শেষ অকল্যান্ডের সংক্ষিপ্ত গল্প, এখন আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই, আসেন ছবিতে ফিরে যাই... কুইন্সটাউন এয়ারপোর্টের বাইরে অকল্যান্ড থেকে এখুনি উড়ে আসলো, আবার ১ ঘন্টা পরে আমাদের কে নিয়ে উড়ে অকল্যান্ড যাবে স্কাই টাওয়ার, অকল্যান্ড অকল্যান্ডের রাস্তা ইয়টের শহর অকল্যান্ড অকল্যান্ড শহরের একাংশ চারিদকি শুধু ইয়ট আর ইয়ট অকল্যান্ড মিউজিয়াম অকল্যান্ডের ভলকানো সোর্স মুখ থেকে তোলা পুরো অকল্যান্ড শহর এই ট্রামে করে কিছুক্ষন ঘুরছি, আর সায়েন্স মিউজিয়ামে গেছি... ট্রামের ভিতরে ট্রামের সামনে ট্রামের পাইলট... সবকিছু ম্যানুয়ালি চলে স্টিম রেল ইঞ্জিন দুইটা ট্রাম, এখন মিউজিয়ামে অকল্যান্ড মিউজিয়ামের ভিতরে, মাউরি দের কাঠের মূর্তি মাউরিদের ব্যাবহার্য বিশাল নৌকা একটা মাউরি ফ্যামিলি... শোনা যায়, মাউরি রা নাকি অনেক হিংস্র স্বভাবের ছিল। এখন যেসব মাউরি নিউজিল্যান্ডে বাস করে, তারা নাকি বেশি ভাগ ভবগুরে টাইপের। অনেকে চুরি চামারী করে।

কোথাও কিছু চুরি হইলেই নাকি মাউরি দের দোষ হয়। সরকার অবশ্য অনেক পৃষ্ঠোপোষকতা নাকি দেয়। ভলকানো রিয়েল ভিক্টিম, ইনি একজন নারী ছিলেন কিছু পুরানো রিভলবার, পিস্তল, অকল্যান্ড মিউজিয়াম নিউজিল্যান্ডের যুদ্ধ তালিকা অকল্যান্ড এয়ারপোর্টের বাইরে এবং শেষে ভাবীর হাতের সেইরকম জম্পেশ ডিনার এরেঞ্জমেন্ট... কুইন্সটাউন, নিউজিল্যান্ড ভ্রমনের আগের পোষ্ট এখানেঃ Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।