আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই, আমায় কতটা ভালবাসো সেই কথাটা জানতে চাই..
দেশে থাকতে ভাবতাম ছিনতাই, খুন, মারামারি এসব শুধু আমাদের দেশের জন্য। ফ্রান্সে প্রবাস জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতায় এসে এখন নিরাপত্তাহীনতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শপিং শেষে মামাতোভাই সহ বাসার কাছের এক ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টে খেয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছি। ভাবছিলাম ইউরোপে লম্বা উইন্টার বিদায় নিয়ে এখন সামার, বিকালে কাজ শেষে প্রতিদিন ঘন্টাখানেক হাঁটলে মন্দ হবেনা। ঠিক তখনি আমাদের সামনে ৬-৭ জনের একটি খেজুরের গ্রুপ, (আরব দেশ থেকে আসা ইমিগ্র্যান্ট লোকদের আমরা খেজুর ডাকি) একজন পিছনে ফিরে আমার শপিং ব্যাগের দিকে তাকালো।
মনে সন্দেহ জাগলো আর সেকেন্ডের মধ্যে গ্রুপটা আমার কাজিনকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে পাকিং করা গাড়ির কাছে অন্ধকারে নিয়ে গেল। আমাকে ধরতে আসলে চিৎকার দিলাম। মুহুর্তেই আমাদের দুজনকে গ্রুপটা ঘিরে ফেললো, পালানোর কোন পথ নেই। ফাইট দিলেও পারবনা, মাইর খাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।
ছিনতাইকারীদের একজন আমার কাজিনকে চেক শুরু করলো।
তার মানিব্যাগ থেকে ইউরো যা ছিল নিয়ে নিল। দ্রুত চিন্তা করে দেখলাম, আমার মোবাইল ফোন সেভ করতে হবে। টাকা গেলে টাকা আসবে কিন্তু ফোন গেলে প্রয়োজনীয় নাম্বারগুলো হারিয়ে যাবে। তাই চেক করার আগেই ওয়ালেট থেকে টাকাগুলো দেখিয়ে দিয়ে দিলাম। একবার চিৎকার দেয়াতে তারা আমার পকেটে হাত দিলনা।
রাস্তা দিয়ে যদিও লোকজন যাওয়া-আসা করছিল কিন্তু কেউ সাহায্যে এগিয়ে এলোনা।
৫ মাস আগে আমার ১৪০০ ইউরোর ভিডিও ক্যামেরা চুরি করে নিয়ে নিল। এবার জীবনে প্রথমবারের মতো ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার ঘটনা।
▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼▼
বছরখানেক আগের ঘটনাটি সম্পূর্ন অন্যরকম---
এক বাঙালী ভাইয়ের বাসায় দাওয়াত খেয়ে রাত ১১ টায় বাস ধরার জন্য যাচ্ছিলাম। হঠাৎ এক ছেলে হ্যালো বলে লাইটার চাইলো- বললাম সরি, আমি সিগারেট খাইনা।
তখন সে হাত বাড়িয়ে বললো হ্যান্ডসেক করবে। তাকে ড্রাংক মনে হচ্ছিলো, মজা করার জন্য আমিও হাত বাড়ালাম। সে আমাকে একটা হাগ করে, বাই বলে আমি চলে যাচ্ছিলাম তখন সে বললো আরেকবার প্লিজ। এবার সে আমার পায়ের সাথে পা লাগিয়ে নাচের ভঙ্গিমা করতে লাগলো। বিদায় নিয়ে একটু সামনে গিয়ে দেখি- আমার কী যেন নেই? পকেট হালকা লাগছে কেন? মানিব্যাগ বাসায় ফেলে আসলাম না তো? মুহুর্তেই সন্দেহ জাগলো ছেলেটার দিকে।
কলেজ লাইফে একবার পেছন পকেট থেকে মানিব্যাগ খোয়া যাওয়াতে আমি সবসময় মানিব্যাগ প্যান্টের সামনের পকেটে রাখি। প্রথমবার সে সামনের পকেট থেকে ওয়ালেট নিতে ব্যর্থ হওয়াতে আমাকে সেকেন্ড টাইম হাগ করে সেটি নিয়ে নিল।
দ্রুত গিয়ে তাকে ধরে ফেললাম। দেখি, চোরের হাতেই আমার ওয়ালেট- টাকা গুনছে। শুয়রের বাচ্চা বলে ঘুসি দেয়ার জন্য হাত তুললাম, ভয়ে সে ব্যাগ ফেরত দিল।
☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠☠
ভয়ংকর অভিজ্ঞতাটিও মাত্র একমাস আগের। আমাদের সাইবার ক্যাফের সামনের রাস্থায় হঠাৎ দুটো গুলির আওয়াজ শুনলাম। ভাবলাম ভুল শুনলাম কিনা!!! এদেশে গোলাগুলি হবে নাকি?
বের হয়ে দেখি এক ছেলে ফুটপাথে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। কয়েক মিনিট পর চারিদিক থেকে হু হু করে লোকজন তাকে ঘিরে ধরলো। পুলিশ আসতে লাগলো ১০ মিনিটের মতো।
গুলিটা লেগেছে তার মাথার খুলিতে। পুরো এলাকা সিল করে দিল পুলিশ। এম্বুলেন্স এসে স্পটেই তার চিকিৎসা করতে লাগলো। সেদিন আর আমাদের ব্যবসা হলোনা। উইটনেস খুঁজতে পুলিশ আমাকে জিজ্ঞাসা করলো।
জানিনা পরে ছেলেটি বেঁচে আছে কি না? শুনেছি তার পরিচিত এক ছেলেই তাকে গুলি করেছে।
ফ্রান্সে বাংলাদেশীর সংখ্যা এখন ২০ হাজারের উপরে। সন্ধ্যার পর অনেকেই এসব খেজুরদের কাছে টাকা পয়সা দিয়ে দিতে বাধ্য হয়। পরিচিত এক বাংলাদেশী ভাইয়ের মানি এক্সচেন্জে অস্ত্র ধরে সব ক্যাশ নিয়ে গেছে।
আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া, সেনেগাল, আফ্রিকার জোন থেকে আসা ইমিগ্র্যান্টদের ২য় প্রজন্মের ছেলেরা এখানে নানান রকম অপরাধ করে যাচ্ছে।
গাজা অথবা অন্যান্য নেশাদ্রব্য কেনার জন্য উঠতি বয়সের ছেলেরা ক্রাইমে জড়াচ্ছে। পুলিশের এত চেকিংয়ের পরও কাজ হচ্ছেনা।
আরেকটা বিষয়- রোমানিয়ানদের এখন ফ্রান্সে খুব চোখে পড়ে। কেন যে এই দেশটাকে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে নিয়ে নিল মাথায় আসেনা। তাদের দেশের যতো চোর, ফকির, অশিক্ষিত, রাস্থার লোকজন ছিল মনে হয় সব ফ্রান্সে এক্সপোর্ট করে দিয়েছে...
ফ্রান্স সরকার এদেশে চুরি-ডাকাতি রোধ করতে পারছেনা।
এখন রাত ৯ টার পর সন্ধ্যা হয়, যারা রেষ্টুরেন্ট থেকে লেট নাইটে বাসায় ফিরে অথবা কাজের জন্য খুব ভোরে ট্রেনে চড়ে তারাই বেশী ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছে। পাতাল ট্রেনে গন ডাকাতির ঘটনাও আছে।
আমরা যারা প্রবাস জীবনে আছি তারা অনেক পরিশ্রম করে বিদেশে উপার্জন করছি। কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনায় মাঝে মধ্যে খুবই হতাশ হয়ে পরি...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।