বাস্তবতাময় প্রকাশ্য
জারো্লাভ সিফার্ট-এর জন্ম হয়েছিল ১৯০১-এ একটি খেটে খাওয়া পরিবারে, চেক প্রজাতন্ত্রের জিজকভ শহরের উপকণ্ঠে। পরিবার ও শহরের দারিদ্র্য তাকে কমিউনিস্ট হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তিনি ১৯২১-এ কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। কিন্তু তাদের বলশেভিক চিন্তাধারার সমালোচনা তিনি করতে থাকেন এবং আট বছর পরে পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন।
তিনি একাধিক কমিউনিস্ট পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের সম্পাদনা করতেন।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কমিউনিস্ট সরকারের কঠিন সমালোচনা করায় তিনি প্রভাবশালীদের বিরাগভাজন হন। সিফার্ট সাংবাদিকতায় লেগে থাকেন। সরকারের প্রতিবন্ধকতার মুখে সিফার্ট ১৯৪৯-এ এক পর্যায়ে সাংবাদিকতাও ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
তিনি তার একক সংগ্রাম চালিয়ে যান। তিনি বহু রকমের লেখায়, বিশেষত কবিতা লেখায় মনোনিবেশ করেন।
কিন্তু কমিউনিস্ট সরকার তার লেখালেখির ওপর কড়া নজর রাখে এবং তার অনেক লেখা অপ্রকাশিত থেকে যায়। ১৯৭৭-তে চার্টার ৭৭ মানব অধিকার ম্যানিফেস্টোতে সই দেয়ার জন্য তিনি ব্ল্যাক লিস্টেড হন। তার কবিতা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৯৮৪-তে তিনি সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান। এবং এখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র চেক যিনি নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে সিফার্ট-এর শিক্ষাগত যোগ্যতা কি ছিলো?
এ বিষয়ে উইকিপিডিয়ায় কোন তথ্য না থাকলেও নোবেল প্রাইজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সিফার্ট এর বায়োগ্রাফিতে লেখা আছে তিনি সেকেন্ডারি স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন না বা কোন সার্ভিস কমিশনের ক্যাডারও ছিলেন না। তবে কি সিফার্ট ভালো লেখক বা ভালো সাংবাদিক, সর্বপরি নোবেল পাবার যোগ্য ছিলেন না???
হয়তো সিফার্টের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতে পারে কিন্তু চেক জনগণের কাছে সিফার্ট সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে। চেক জনগণ মনে করে তিনি ছিলেন একজন সাহসী ও প্রতিবাদী লেখক যিনি তার নীতির সঙ্গে আপস করেননি। জারো্লাভ সিফার্ট ভাগ্যবান, তিনি বাংলাদেশে চাটমোহরের বড়াল তীরে জন্ম নেননি! তাহলে হয়তো তার যোগ্যতা হতো প্রশ্নবিদ্ধ এবং তিনি হতেন বিতর্কিত!
এই মুহূর্তে আমি পড়ছিলাম, ৭ এপ্রিল দৈনিক চলনবিল'এর একটি রিপোর্ট।
"ইউএনও'র সাংবাদিক জ্ঞান" শিরোনামে রিপোর্টে এসেছে- চাটমোহরের ইউএনও ফিরোজ শাহ্ স্থানীয় দুজন সাংবাদিকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করেছেন, সাংবাদিকদের অশিক্ষিত বলেছেন এবং তাদের বিসিএস উত্তির্ন হয়ে আসতে বলেছেন!!!
আমি ভাবছিলাম, উচ্চ শিক্ষিত ইউএনও তার বোধকে কতটা নিম্ন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন! কারন, লেখক কিম্বা সাংবাদিকের সৃষ্টিশীল পেশার জন্য ভালো পড়াশোনা দরকার, পড়াশোনার ওপর ডিগ্রি নয়!(আমি বলছি না যে উচ্চ শিক্ষার দরকার নেই, আমার মতে, এ বিষয়ে উপদেশ হতে পারে, কটাক্ষ নয়)। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা নামে বিভাগ চালু আছে এবং এর ওপর পড়ালেখা করতে হয় তবুও বলবো সৃষ্টিশীল কাজে পড়ালেখা করে বোদ্ধা হওয়া যায় সৃষ্টিশীল মানুষ হওয়া যায়না, এ জন্য প্রয়োজন অনুশীলনের। আর চাটমোহরের ইউএনও'র মতো বোধ যদি সিফার্টের থাকতো তাহলে হয়তো তিনি লেখালেখি ছেড়ে তার বাবার মতো কারখানার শ্রমিক হতো। এ বোধ যদি দুখুমিয়া'র থাকতো তাহলে হয়তো সে নজরুল না হয়ে আজীবন রুটির দোকানে কাজ করতো।
আমি আশা করছি, ইউএনও মি. শাহ্ এ বিষয়ে সিফার্টের জীবন থেকে শিক্ষা নেবেন এবং তার ভুল বুঝতে পারবেন।
এখন প্রশ্ন হলো, এ থেকে চাটমোহরের সাংবাদিকেরা কি শিখবেন???
এ প্রশ্নর উত্তর দিতে গেলে স্বভাবতই যে প্রশ্ন দুটি আসবে-
এক, ইউএনও'র বক্তব্য কি সাংবাদিকদের অপমানবোধ জাগ্রত করেছে?
উত্তর-না! কারন এ বক্তব্যের পরও চাটমোহরের সাংবাদিকেরা ঐক্যমতে পৌছাতে পারেনি। তারা মিলিত ভাবে প্রতিবাদ করেনি! সাংবাদিকদের একদল একটি রিপোর্ট, একটি ফলোআপ ও একটি মিটিং করলেও তা সম্ভবত অপমানবোধ থেকে নয় বরং অহংবোধ সমস্যা থেকে তাই তারা অল্পতে মিইয়ে গেছে বা থেমে গেছে। আর থামার মাধ্যমেই তারা ইউএনও'র বক্তব্য মেনে নিয়েছে, প্রমান হয়েছে ইউএনও সত্য বলেছেন!!!
দুই, ইউএনও যদি সত্য না বলে থাকেন এবং তার বক্তব্য যদি অপমানজনক হয়ে থাকে তাহলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলো না কেন?
উত্তর- সাংবাদিকদের দূর্বল ব্যক্তিত্ব।
তাই এ ঘটনা থেকে চাটমোহরের সাংবাদিকেরা শিখতে পারে, ব্যক্তিত্ববান হতে এবং সিফার্টের মতো সাহসী, প্রতিবাদী ও আপসহীন হতে। -২৪এপ্রিল'১১।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।