সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক যুগ পরও বেশি দূর এগোয়নি তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে আলোচিত কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক স্থাপনের কাজ। এই পার্কের জন্য নির্ধারিত প্রায় ২৩২ একর জায়গায় সীমানাপ্রাচীর দিয়ে একটি প্রশাসনিক ভবন তৈরিসহ প্রাথমিক কিছু কাজ হয়েছে মাত্র।
আগে সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগে পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও মাত্র কিছুদিন আগে তা পরিবর্তন করে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে নির্মাণ-প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এ জন্য এখন নতুন করে উন্নয়নকারী (ডেভেলপার) নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উন্নয়নকারীরাই পার্কের সার্বিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, বিনিয়োগকারীদের পার্কে আসা নিশ্চিত করা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে।
এদিকে, রাজধানীর কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ারে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণকাজের অগ্রগতিও এখন পর্যন্ত সামান্য। এই অবস্থায় দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে টেকনোলজি পার্ক করার নতুন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আনওয়ারুল হক প্রথম আলোকে বলেছেন, কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য ডেভেলপার (উন্নয়নকারী) নিয়োগের কাজ চলছে। এ কাজের জন্য ১৬টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। এখন এগুলো মূল্যায়নের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে।
মূল্যায়ন শেষ হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আনওয়ারুল হক বলেন, জনতা টাওয়ারের জন্যও ডেভেলপার নিয়োগের কাজ চলছে। এখানকার জন্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। এগুলোও মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আর বিভাগীয় শহরগুলোতে টেকনোলজি পার্কের জন্য জায়গা নির্বাচনের কাজ চলছে।
কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক: ১৯৯৯ সালের ১৭ জুলাই গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে তালিবাবাদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের অব্যবহূত ২৩১ দশমিক ৬৮৫ একর জমিতে একটি হাইটেক পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর কয়েক বছর পর, ২০০৪ সালের ২৪ এপ্রিল বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের কাছে জমি হস্তান্তর করে ভূমি মন্ত্রণালয়। এরপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষার ভিত্তিতে পার্কের সহায়ক অবকাঠামো, যেমন—১০০ ফুট চওড়া ও পাঁচ হাজার ফুট লম্বা একটি প্রধান রাস্তা নির্মাণ, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণাধার তৈরি, ম্যুরাল তৈরিসহ আনুষঙ্গিক নির্মাণকাজের জন্য তিন বছর মেয়াদি ১৮ কোটি ৯৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
ওই প্রকল্পের আওতায় সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপনের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। নর্দমা নির্মাণের জন্য গণপূর্ত বিভাগ দরপত্র আহ্বান করেছে।
এসব কাজ করতেই দীর্ঘ সময় চলে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত অবকাঠামোসহ মূল কাজের কিছুই হয়নি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের উন্নয়নকারী নিয়োগের লক্ষ্যে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এক্সপ্রেশন অব ইন্টারনেট (ইওআই) আহ্বান করা হয়। গত ১ মার্চ ইওআই দাখিলের শেষ সময় পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ১৬টি প্রতিষ্ঠান ইওআই দাখিল করে। এগুলোর মূল্যায়ন শেষে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ‘রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি)’ চাওয়া হবে।
যাদের প্রস্তাব সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে, তাদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হবে। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ কাজ শুরু করা যাবে।
দেরির কারণ জানতে চাইলে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক প্রকল্পের পরিচালক আ ন ম শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে আমাদের দেশে এটি নতুন বিষয়। তা ছাড়া ১৯৯৯ সালে সিদ্ধান্ত হলেও এ জন্য বড় অঙ্কের টাকার দরকার ছিল, যার সংস্থান করা যায়নি। তাই কাজের দিকে পুরোপুরি নজরও দেওয়া হয়নি।
বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘মূলত রাজনৈতিক কারণেই দীর্ঘ সময় চলে গেছে। ১৯৯৯ সালে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও পরবর্তী সময়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৭ সাল পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। জায়গা নিয়েও সমস্যা জিইয়ে রাখা হয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এর সমাধান হয়। এখন আবার কাজ শুরু হয়েছে।
কিন্তু আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে কালিয়াকৈরের যোগাযোগব্যবস্থা। এখন ঢাকা থেকে কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্কের জায়গায় যেতে যানজটের কারণে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। এটা দূর করা না গেলে সেখানে কেউ সফটওয়্যারভিত্তিক শিল্প করতে যেতে চাইবে না। এ জন্য আমার মতে, ঢাকা থেকে হাইটেক পার্ক পর্যন্ত দ্রুতগতির কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালু করতে হবে। ’
জনতা টাওয়ার: এখানে পিপিপি মডেলে একটি ‘সফটওয়্যার টেকনোলজি’ পার্ক স্থাপনের সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে ভবনটি হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখনো তা হস্তান্তর করা হয়নি।
হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, শিগগিরই ভবন হস্তান্তর-প্রক্রিয়া শেষ হবে।
১২ তলাবিশিষ্ট ভবনটির প্রায় ৬০ হাজার বর্গফুট জায়গায় সফটওয়্যার শিল্প-সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভবনটির বিভিন্ন তলায় দরজা, জানালা, বৈদ্যুতিক কাজসহ অভ্যন্তরীণ সজ্জার কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। লিফট স্থাপন করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ভবনটিকে পরিবেশ দূষণমুক্ত একটি গ্রিন টাওয়ারে রূপান্তরের মাধ্যমে সফটওয়্যার পার্ক স্থাপন করার লক্ষ্যে একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে, এতে ৩৭ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।
বস্তির ফাঁদে মহাখালীর আইটি ভিলেজ: মহাখালীর কড়াইলে ৪৭ একর জমিতে এই ভিলেজ স্থাপনের কথা থাকলেও জায়গাটিতে বস্তি থাকায় শুধু সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, বস্তিবাসী উচ্ছেদের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বস্তিবাসীদের ভাষানটেক প্রকল্পে স্থানান্তরের বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
প্রতি বিভাগে টেকনোলজি পার্ক: দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে আইটি ভিলেজ বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলায়ও এ ধরনের পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এসব পার্কের জায়গা নির্ধারণের লক্ষ্যে সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দিলীপ কুমার বসাককে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।