কনকনে শীতের ফাঁকা রাস্তায় হিমুর পাশাপাশি হাটছে রূপা। হাটতে হাটতে ভাবনার জগতে তলিয়ে গেলো সে। শেষ কবে এভাবে পাশে পেয়েছিলো সে হিমুকে! মনে করতে পারলো না।
আজ অনেক দিন পর রূপার মনে পড়লো হিমুর সাথে তার প্রথম দেখা হওয়ার দিনটির কথা...
জ্যৈষ্ঠের তালপাঁকা রোদের ঝাঝালো দুপুর। ভার্সিটি থেকে ফিরছিলো সে।
সদ্য কেনা টু থাউজেন্ড নাইন মডেলের রি-কন্ডিশন্ড প্রিমিও গাড়িতে ফুল স্পীড এসি চলছে। এমপি ত্রী প্লেয়ারে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা গাইছিলেন রবিন্দ্রনাথের ঘুম পাড়ানি গান। রূপার ঘুম এসে যাবার কথা! অথচ তার শরীর ঘামছে! সাথে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র থাকলে বলে দেয়া যেতো টেম্পারেচার কতো!
হঠাৎ রূপার নজর পড়লো ভার্সিটির মূল গেইটের পাশে। অদ্ভূত একটি দৃশ্য চোখে পড়লো তার। গেইটের ডান দিকে ছায়া মতন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলে।
২৬/২৭ হবে বয়স। মুখে খোচা খোচা দাড়ি। গায়ে কটকটে হলুদ পাঞ্জাবি। পায়ে জোতা নেই।
প্রথমে রূপা ভেবেছিলো পাগল-টাগল হবে।
কিন্তু ছেলেটির হাতে থাকা একটি প্লেকার্ড তাকে আগ্রহী করে তুললো। অখানে লেখা-
I m dead.
you are. even all living human being are dead.
According to all the philosopher and scientists there is nothing exists in the phenomenon beyond explanation.
Existance of nothing beleivable without explainable.
All man have Soul.
And the Souls are not explainable.
So it is not beleivable.
But man can not survive without Soul.
So We are not alive...
..........................................Himu the nobody
সহজ বাংলায় এর অর্থ করলে যা দাঁড়ায়,
আমি মৃত, তুমি মৃত, সকল জীবিত মানুষ মৃত। কারণ, দার্শনিক ও বিজ্ঞানিদের মতে পৃথিবীতে ব্যাখ্যার বাইরে কিছু নেই। ব্যাখ্যার বাইরের কিছু বিশ্বাসযোগ্য না। আমাদের ভেতরে আত্মা নামক একটি ব্যাপার আছে যা ব্যাখ্যার অতীত।
সুতরাং এটি বিশ্বাসযোগ্য না। আবার আত্মা ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকারও সুযোগ নাই।
সুতরাং আমরা বেঁচে নেই...
.........হিমু, কেউ না
কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে কাছে গেলো রূপা। ছেলেটিকে তার কাছে বেশ ইন্টারেষ্টিং মনে হচ্ছে। কাছে যাবার পর যে ঘটনা ঘটলো, তার জন্য রূপা মোটেও প্রস্তুত ছিলো না! ছেলেটি তাকালো রূপার দিকে।
কয়েক সেকেন্ড ধরে। তারপর অতি স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
শোন রূপা,আমার মাঝে দেখার কিছু নেই। আমি আগ্রার তাজমহল না যে, সামনে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে! ক্লাস শেষ হয়েছে। বাড়ি যাও। তাছাড়া আজ তোমার বর পক্ষের লোকজনের না তোমাকে দেখতে আসার কথা! হয়তো দেখা গেলো, তুমি অযথা দেরি করলে আর অদিকে অরা এসে বসে থাকলো তোমার অপেক্ষায়।
ব্যাপারটি কি ঠিক হবে? আফটার অল দিদেশ ফেরত ছেলে। কী না কি ভেবে বসে থাকে??
ভ্যাবাচেকা খেয়ে উঠলো রূপা। ঘটনার আকস্মিকতায় বোকার মতো চেয়ে থাকলো সে। সম্পুর্ণ অপরিচিত এক ছেলে তাকে তুমি করে বলছে। তার রাগ হবার কথা।
অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবের মেয়ে সে। ভার্সিটিতে দাপটের সাথেই তার চলাফেরা। আর এটা যত না বাবার কারণে, তারচে; বেশি ছোট মামার । রূপার ছোট মামা আ ক ম তোফাজ্জল করিম বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সিনিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর আপন চাচাত বোনের স্বামী।
হেভি পাওয়ারফুল ব্যক্তি। সংগত কারণেই ভার্সিটিতে রূপার দিকে কোনো ছেলে চোখ তুলে তাকাতেও সাহস পায়না। শিক্ষকরাও তাকে কিছুটা তোয়াজ করে চলেন বলে জনশ্রুতি আছে। অথচ সামান্য একটি রাস্তার ছেলে কি না তাকে...
হিমুর আচরণ তাকে এতো বেশি বিভ্রান্তিতে ফেলেছে যে, সে রাগ করার কথা ভুলে গিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো শুধু। যে ব্যাপারগুলো তাকে খটকায় ফেলেছে, তা হলো,
১) এই ছেলের সাথে আগে কখনো দেখা হয়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না।
দূর সম্পর্কের আত্মীয়-টাত্মীয় হলেও রূপার তাকে চেনার কথা। ভার্সিটির বেজম্যাট হবার তো প্রশ্নই আসেনা। তাহলে ছেলেটি তার নাম জানলো কেমন করে?
২) ছেলে পক্ষের আজ তাকে দেখতে আসার কথা, এই তথ্যটি জানে সে নিজে, আর জানেন বাবা মা আর ছোট চাচা। পঞ্চম কারো জানার কথা না। তাহলে এই ছেলে জানলো কীভাবে?
৩) ছেলে যে বিদেশ ফেরত, এই তথ্যই বা কীভাবে পেলো?
যথাসম্ভব মেজাজ সাভাবিক রেখে রূপা বললো,
দেখুন মিস্টার, প্রথম কথা হচ্ছে, আমি কোনো গার্লস স্কুলের ক্লাস সেভেনের ছাত্রী না যে, আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন।
আমি এ বছর অনার্স করছি, থার্ড ইয়ার। তাছাড়া আমাকে জড়িয়ে এভাবে বানিয়ে বানিয়ে এত কথা বলার মানে কি? এটা কোন ধরণের ফাজলামো?
রুপার কথায় হিমুর মাঝে কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেলো না। সে বললো, কথা বাড়াচ্ছ কেনো রূপা। যাও। তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও।
হোচট খেয়ে পড়ে তোমার মা আবার পায়ে ব্যাথা পেয়ে বিছানায় লম্বা হয়ে আছেন। মেহমানদের চা নাস্তার ব্যাপারটি তো তোমাকেই সামাল দিতে হবে। কাজের মেয়েদের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া কি ঠিক হবে?
আরো বেশি বিভ্রান্ত হলো রূপা। কী বলবে, ভেবে পেলো না। রাগ বিরক্তি বিভ্রান্তি এবং কিছুটা আতংক নিয়ে ড্রাইভার কে বললো গাড়ি ঘুরাতে।
বাড়ির গেইটে প্রবেশ করতেই আতকে ইউঠলো রূপা! বেলকনির সামনে ডাক্তার আংকেলের গাড়ি। বুকটা ধক ধক করতে লাগলো তার। গাড়ি থেকে নেমে প্রায় টলতে টলতে সোজা পা বাড়ালো দু'তলায়, মায়ের রোমের দিকে।
বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছেন মা। ডান পায়ের পাতা থেকে হাটু অবদি প্লাস্টার করা।
তাকে ঘুমের ইনজেকশান দেয়া হয়েছে। তিনি ঘুমোচ্ছেন।
রূপা বাকরুদ্ধ! বারবার তার মনে পড়তে লাগলো ভার্সিটি গেইটের সেই ছেলেটির কথা। অই ছেলে কেমন করে জানলো তার মা পা ভেংগে ফেলেছেন! কে সে? তার কি কোনো সুপার ন্যাচারাল ক্ষমতা আছে!!!
রূপা দুর্ঘটনার বিবরণ জানলো কাজের মেয়ে রহিমার কাছ থেকে-
বুঝলেন আফা, সকাল থাইক্কা আম্মায় লাগাইলো পেছাল। এইটা রান্ধন লাগবো, হেইটা রানতে অইবো।
আমরা কইলাম, আম্মা, আপনে হুদাই চিন্তাযুক্ত হইতাছেন। আমনে বইয়া বইয়া খালি দেখাইয়া দেন, যা করণের আমরাই করুমনে।
কে হুনে কার কথা। হেয় নিজেই গেলো রান্না করতে। আমরারে দিলো বাইর কইরা।
আতকা ঠাস কইরা একটা আওয়াজ হুইনা দৌড়াইয়া আইলাম। হায় আল্লাহ! আইয়া দেহি আম্মায় লম্বা হইয়া হুইয়া আছে। ডাক্তার কইছে দুইডা আঙুল নাকি ভাংছে...
ঘুমন্ত মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে রূপা চলে এলো নিজের রোমে। গালে হাত দিয়ে বসে থাকলো নিরবে। ভাবতে চেষ্টা করলো সিচুয়েশন।
পুরো ব্যাপারটি কেমন জানি ঘোলাটে লাগছে। আজ সারাদিনে যা ঘটলো, সেগুলোর একটির সাথে কি অন্যটির কোনো যোগসূত্র আছে?
হঠাত কাধে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করে মাথা তুলে তাকালো সে। বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো রূপা।
বাবা! কিছু বলবে?
দেখতো মা, তোর মায়ের অবস্থাটা দেখ।
কী দরকার ছিলো তার রান্না ঘরে যাবার। বাসায় কি কাজের মানুষের অভাব ছিলো। ডান পায়ের অনামিকা ও মধ্যমা, দু'টি আঙুলই নাকি ভেঙে ফেলেছে। অবশ্য চিন্তার কিছু নেই। ডাক্তার বলেছে তিন সপ্তাহ বেড রেষ্ট নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে ছেলে পক্ষকে জানিয়ে দিলাম আজ না আসতে। তোর মা পা ভেঙে বিছানায় শুয়ে আছে। এই অবস্থায় তো আর আমি বিয়ের আলাপ চালিয়ে যেতে পারিনা। মা, তোর কি মন খারাপ হলো?
চেহারায় হাসির আভা নিয়ে এসে রূপা তাকালো বাবার দিকে। মুখে কিছু বললোনা।
আস্তে করে মাথাতা রাখলো বাবার বুকে। নিরব আচরণে জানিয়ে দিলো, তার মোটেও মন খারাপ হয়নি।
রূপার মন খারাপ হয়নি ঠিক। কিন্তু অই রাত, সারারাত এক ফোটাও ঘুমোতে পারলো না সে। বারবার মনে পরতে লাগলো অদ্ভুত অই ছেলেটির কথা...
বিয়ের আড্ডায়-১
বিয়ের আড্ডায়-২-৩
বিয়ের আড্ডায়-৪
বিয়ের আড্ডায়-৫
ক্রমশ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।