আনন্দবতী মেয়ে আমি হাওয়ায় উড়াই চুল,চোখের ভেতর ছলাৎ ছলাৎ মনের ভেতর নীল ঘাসফুল
পৃথিবীর সব আনন্দ যদি এই মুঠোতে ভরে রাখা যেতো , আবার যদি প্রজাপতির মতো ছুটে যেতে পারতাম । কলেজ থেকে শিক্ষাসফরে গেলাম ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী । ততোটা আনন্দ হয়নি । কারণ বিজ্ঞান বিভাগের আমরা আর আর্টসের কয়েকজন । তবে একেবারেই যে হয়নি তা বললেও ভুল হবে ।
যখন ফিরে আসি তখন মনে হলো আর এ পথ আর আমাদের কোনোদিন এক করবেনা । সত্যিও হলো । শুনেছি জাকারিয়া মারা গেছে , ওর বোন ডালিয়াও নাকি আর নেই ।
আমাদের আড্ডা জমতো পুকুর পাড়ে নয়তো পদার্থ বিজ্ঞানের ল্যাবরটরীর বারান্দায় , যার পাশে লাইব্রেরী । আমাদের ক্লাশ যখন থাকতো না এতোটাই হুল্লোড় ।
আহ্ শুধু ওই আড্ডার জন্যই ঝড় - বৃষ্টি তোয়াক্কা না করে কলেজ ছুটে আসা । যদিও জানতাম ক্লাশ হবেনা । আমি আমাদের গ্রুপের নাম দিয়েছিলাম "স্টারলিট"।
ছেলে আর মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ত্ব কলেজে আমরাই প্রথম । প্রেম কেন করে মানুষ ? শুধু একজনের সাথে সারাদিন ! উফ্ ! অসহ্য ! কিন্তু সবাই ভাবতো নির্ঘাত প্রেম করছি , বিশেষ করে আমার আর বেলাল কে দিয়ে যে কতো কথা ।
কিন্তু সত্যি ও আমার সব বন্ধুদের মধ্যে সেরা । কি করিনি আমরা মারামারি থেকে শুরু করে গলায় জড়িয়ে ধরা । নাহ্ একে কোনো পাপ বা খারাপ বলতে পারিনা । এ সমাজের কিছু ব্যপার আমাকে বিরক্ত করে তোলে । ছেলে আর মেয়ের বন্ধুত্ত্ব নাকি হয়না ।
আমাদের এই সম্পর্ক কে নারী - পুরুষ এর প্রেম একে বলা যায়না , তাইতো এখনো ছুটে গিয়ে বেলালের গলা জড়িয়ে ধরতে পারি । নির্ভেজাল ভালোবাসা , স্বার্থহীন ।
একদিন আমাদের অধ্যক্ষ রসময় মোহান্ত স্যার আমাদের আড্ডার মধ্যে এসে দাঁড়ালেন আর বললেন আমায় , ক্লাশ শেষে আমি যেনো মেয়েদের কমন রুমে চলে যাই ছেলেদের সাথে আর বসতে পারবোনা । কেন জানতে চাইলে তাঁর কথা শুধু না । আমি বলে ফেললাম , "ক্ষমা করবেন আমার পক্ষে সম্ভব না , কি করেছি আমরা আপনি অনুগ্রহ করে বলুন"।
স্যার তখন এমন বাজে কথা বললেন , "এসব চরিত্রহীন ছেলেদের সাথে তোমার মতো মেয়ে মিশবে কেন ?" আমি বলার আগেই শান্ত ছেলে মিন্টু খুব ক্ষেপে গেলো । এটা ঠিক স্যার এর এভাবে বলাটায় আমাদের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হলো । আমরা কেউ মানিনি । বাপির কাছে সবাই বলতো আমি ছেলেদের সাথে চলছি বাপি বলেছিলো বেলাল, মিন্টু ওরা বাপিরই ছেলে আর "আমার মেয়েকে আমি ভালো করেই জানি"। কি যে শক্তি পেয়েছিলাম তাই তো ভুল করিনি জীবনে কখনো ।
আরেকদিন বাসে উঠেছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহপাঠী প্রদীপ এসে জানালায় দাঁড়িয়ে বললো , "আমি কেন মুসলিম ছেলে বেলাল কে ভালোবাসি ?" আমি বললাম বেলাল আমার ভালো বন্ধু , সে যা ভাবছে তা নয় । কোনোভাবেই মানছে না আরো উল্টাপাল্টা কথা শুরু করলো আর সেই কথা শুনলো বেলাল । রাগ ওঠেনা সহজে উঠলে পুরো পাগল হয়ে যায় । বাস থেকে নেমে এমন মারলো সবাই মিলে আটকালাম ।
মিন্টু আর আমি আবৃত্তি করতাম ।
একবার পূর্নেন্দু পত্রীর কথোপোকথন থেকে আবৃত্তি করলাম । এরপর আমাদের নাম হয়ে গেলো শুভঙ্কর আর নন্দিনী । যখন রিহার্সেল করি কি হাসি ! কোনোভাবেই ভালো হচ্ছিলো না ----
"আজকাল তুমি বড্ড বেশী সিগারেট খাচ্ছো শুভঙ্কর !
----এক্ষুণি ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছি ।
কিন্তু তার বদলে !
----বড্ড হ্যাংলা , যেনো খাওনি কখনো । "
কবি দিলওয়ার ওই আসরেও এসেছিলেন ।
বলেছিলেন :"লিখিস ভালো , আবৃত্তিও দেখছি ভালোই করিস , বাহ্ !" আমাদের কষ্ট সার্থক হলো ।
দ্বিতীয় বর্ষ আমরা এখন সিনিয়র । আমরাই কলেজের মাথা । পিকনিকের জন্য আমরা অধ্যক্ষ স্যারের কাছে গেলাম । উনি রাজী না ।
কিন্তু আমাদের প্রিয় স্যারদের বললাম আর কি ! হয়ে গেলো গুছানো । আহ্, যদি আবার মাধবকুন্ড ঝর্ণার পাহাড়ের উপরে উঠে চিৎকার দিতে পারতাম ! সেই কলেজ পিকনিক । ভোরের আলো ফুটে বেরুনোর আগেই বাসা থেকে দৌঁড় । তারপর গান শুরু । যদিও তাকে বেসুরো গান বলেই আখ্যা দেয়া যায় ।
আমার প্রিয় চারজন স্যার রসায়নের বিশ্বজিৎ স্যার , ইংরেজির সুনীল স্যার , বাংলার রায়হান স্যার এবং জীববিদ্যার পল্লব স্যার সবাই মেতে উঠলেন আমাদের সাথে । পদার্থ বিজ্ঞানের বাসিত স্যারও ছিলেন যদিও উনাকে কেউই পছন্দ করতাম না । নিজেকে গুটিয়ে রাখতেন গাম্ভীর্যতার আড়ালে । একমাত্র বাসিত স্যারই না করেছিলেন উপরে উঠতে কে শোনে কার কথা ! অন্য স্যারদের বলে লুকিয়ে চলে গেলাম বেলাল আর মিন্টুর সাথে । আমার পেছনে রায়হান স্যারও আসলেন তাঁরও দেখার ইচ্ছা ।
নীচে দাঁড়িয়ে ছবি তুললো আহাদ । চোখের সামনে ভাসছে শীর্ষের উপর তিনটি বিন্দু । ওখানেই দেখা হয়ে গেলো কমলগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ের মাধবীর সাথে । কথায় কথায় জানলাম সে এখন সিলেট মহিলা কলেজে পড়ে আর তার সেই প্রেমিক বদল হয়েছে । চিন্তা করলাম একজন মানুষ কিভাবে বারবার প্রেমিক বদলায় !
তবে একটা বইয়ে (নামটা ভুলে গেছি ) পড়েছিলাম সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের বদল হয় আর এটা কোনো খারাপ কিছু না ।
প্রকৃতির এই-ই নিয়ম ।
নীলাঞ্জনা নীলা
ক্রমশ-------------
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।