বিয়ের সময় কনেকে কান্নাকাটি করতে হয়। আমি ভেবে দেখেছি এই কান্নাকাটি দুই প্রকার। এক, সত্যিকারের কান্না। আপনজনদের ছেড়ে যাওয়ার দুঃখে কলজের ভেতর থেকে বের হওয়া কষ্টের অশ্রু।
আরেক প্রকার কান্না আছে যাকে রেডিমেট কান্না বলা যায়।
মা বাবাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। মা কাঁদছেন, বাবা চোখ মুছছেন, ভাইবোন কাঁদছে। এখন একটু না কাঁদলে কেমন দেখায়! অতএব, লাগাও জোর! কান্না আসুক আর না আসুক, জোর করে হলেও দু'চারটি চিৎকার, দাঁতে দাঁত চেপে ধরা এবং গোঙানির মতো শব্দ করা, এই আর কি!!
এই তো গত মাসে বন্ধু জামানের বিয়েতে গিয়েছিলাম। বউ নিয়ে যখন ফেরার সময় হলো, তখন কনের চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠলো। ও মা গো! ও বাবাগো! আমি তোমাদের ছেড়ে যাবনা গো' টাইপ সুরেলা ছন্দ ও হাত পা ছুড়ার কসরত দেখে আমার মতো হিমুর নিজেরই খারাপ লাগতে শুরু করেছিলো।
আহা বেচারি!!
কিন্তু অই আহাবেচারি যখন গাড়িতে উঠে বরের পাশে বসলো, তখন আমি বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলাম, কান্না বা কষ্টের কোনো ছাপই নেই তার চেহারায়। সাদা কালো চোখের কোনো কোণাও লাল নেই। এতো কান্নাকাটি করলো মেয়ে অথচ চীখ লাল হলোনা! আশ্চর্য!!
মিনিক পাঁচেক পর আমার বিস্ময়ের ষোল কলা পূর্ণ হলো। বর কনে বসেছে পেছনে, আমি সামনে। লুকিং গ্লাস ছিলো এডজাষ্ট করা।
দেখলাম অই আহা বেচারি হাসি হাসি মুখ করে বরের বাম হাতের আঙুলগুলো মুঠোয় নিয়ে বসে আছেন। কুটুস কুটুস করে কথাও বলছেন! অবস্থা দেখে মনে হলো, এই মেয়েরচে' সুখি পৃ্থিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই।
আবেগ এবং কৌ্তূহল থেকে হিমুদের দূরে থাকার কথা। তাই এ নিয়ে আমার মাঝে ভাবান্তর হওয়াকে প্রশ্রয় দিলাম না। আমার জায়গায় অন্য যে কেউ বর্তমানের এই রোমান্টিক দৃশ্য এবং একটু আগের কান্নাকাটির অবস্থা দেখলে ভাবত, এই মেয়ে, তাকে উঠিয়ে দিতে দেরি হচ্ছে কেনো, এই দুঃখেই মনে হয় কাঁদছিলো!
আমি আজ অপেক্ষা করছি মাজারুলের বউ কী করে, দেখবার জন্যে।
এ পর্যন্ত মনে হচ্ছে, ফাটাফাটি ধরনের কান্নাকাটিই হবে। যাকে বলে আয়োজন করে কান্না। মা বোনেরা অন্তর থেকেই কাঁদবেন। একটু দূরের আত্মীয়-স্বজন চোখ মুছবেন। প্রতিবেশিরা দুঃখি দুঃখি চেহারায় তাকাবেন।
আমি আজ দেখতে চাই, কান্নাকাটির সময় আমার মানসিক অবস্থা কেমন থাকে! আমি পরীক্ষা করে দেখতে চাই তখন আমি সাভাবিক থাকতে পারি কিনা! যদি পারি, যদি তাদের কষ্টের আবহাওয়ায় দাঁড়িয়ে উৎফুল্ল থাকতে পারি, কষ্টের দৃশ্যের ভেতর থেকে যদি আনন্দের অনুভূতির বের করে নিয়ে আসতে পারি,তাহলে ধরে নেবো বাবার বাতলানো সূত্রে আবেগ ও মায়াকে জয় করার পথে আমি টুয়েন্টি ফাইভ পারসেন্ট সফল। বাকি সেভেন্টি ফাইভ এর জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হবে আসছে অগ্রহায়নের ১৯ তারিখ পর্যন্ত। অই দিন আমার আপন বোনের বিয়ে।
( হুমায়ূন আহমেদের হিমুর কোনো বোন ছিলোনা। এই হিমুর আছে।
আমি কী করবো! আপন বোন না থাকলে হিমু বুঝবে কেমন করে আপন কারো চলে যাওয়ার মুহুর্তে কষ্টের অনুভূতি কেমন হয়? হিমুর তো আর আপন বলতে কেউ নেই। এক মা ছিলেন। অই বেচারিকেও হিমুর বাবার হাত দিয়ে গলাটিপে মেরে ফেলেছেন হুমায়ূন সাহেব।
কাহিনীতে বোধয় আবারো প্যাঁচ লাগিয়ে ফেললাম! মা মারা গেলে আরেকটি বোন আসলো কোথ্যেকে! নাকি মৃত্যুর আগে তিনি আরেকটি কন্যাও জন্ম দিয়ে গিয়েছিলেন? নাকি হিমুর বাবা দ্বিতীয় বিবাহ করেছিলেন?
কী জানি!! অত শত আমার জানা নাই। আমার জেনে কাজও নাই।
আমার কাহিনির প্রয়োজনে একটি বোনের দরকার ছিলো। পাওয়া গেছে, ব্যস। পুরো ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যাখ্যা করে মিল দেয়া আমার দায়িত্ব না। তছাড়া আমি তো আর হুমায়ূন আহমেদ না যে, গল্পকে একদম গুছিয়ে সব দিকে মিল রেখে উপস্থাপন করতে হবে। চলুন চলে যাই আবার হিমুর কাছে)
আমার আপন বোনের বিয়ের দিন যদি মায়া ও কষ্টকে জয় করা যায়, বোনের ছেড়ে যাওয়ার মুহুর্তে যদি আমি স্বাভাবিক থাকতে পারি, কষ্ট ও মায়াকে জয় করে, বিন্দু মাত্র বেদনার চিহ্নও যদি আমাকে আচ্ছন্ন করতে না পারে, তাহলেই ভাববো, মায়াকে জয় করে ফেলেছি আমি।
বাকি সেভেন্টি ফাইভ পারসেন্ট কমপ্লিট।
আর তাহলে,
২৫% প্লাস ৭৫% সমান মহাপুরুষ!!
চলবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।