আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভূটান: ল্যান্ড অব থান্ডার ড্রাগন (দ্বিতীয় পর্ব)

দিতে পারো একশ ফানুস এনে...আজন্ম সালজ্জ সাধ একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই...
পারো থেকে থিম্পু যাবার সময় বেলা ৩টার দিকে চমৎকার এক জায়গায় থামলাম লাঞ্চ করার জন্য। পাহাড়ের কোল ঘেষে একটা নদী বয়ে যাচ্ছে, মাঝে কিছু বিশাল পাথর তার স্রোত সামলাতে ব্যস্ত। পানিতে হাত দিয়ে চমকে উঠলাম, একেই বোধ হয় বলে বরফ গলা নদী! ঠান্ডা বাতাসে খাবার উনুন থেকে নামানো মাত্র বরফের মত হয়ে যাচ্ছে। নদীর পাড় থেকে রাস্তায় উঠে মুগ্ধ হয়ে গেলাম, এমন একটা রাস্তা যার জন্মই হয়েছে উদ্দেশ্যহীন হাঁটার জন্য! রাস্তার মাঝে শুয়ে আকাশ দেখতে আমার দারুন লাগে, নেপাল, ইন্ডিয়া এমনকি থাইল্যান্ডের পাতায়াতেও সেটা করেছি, কিন্তু আব্বুর ধমকে এবার নিবৃত্ত হতে হল! এমন চমৎকার একটা জায়গা, অথচ সাথের ভূটানি একজনও এর নাম বলতে পারলো না, এমনকি নদীর নামও না। সেই স্বপ্নিল রাস্তা.... দুষ্টুমি থিম্পু পৌঁছতে আমাদের সন্ধ্যা হয়ে গেলো।

জানুয়ারীর ১০/১১ তারিখ হবে, ভয়ংকর ঠান্ডা, সাথে কনকনে বাতাস। আমাদের হোটেলটা, হোটেল কিসা ছিল একদম শহরের মাঝে, ওদের জাতীয় স্টেডিয়ামের পাশে। শহরে ঢুকে মনে হলো, এক নির্জন ভূতুড়ে নগরীতে এসে পৌঁছলাম। পরে শুনলাম যে পুরো ভূটানে নাকি লোকসংখ্যা মাত্র ৭ লাখ। সারা ভূটানে খাবার পানি, খাবার আর বিদ্যুত সবকিছুই সীমিত।

পানি খুবই হিসাব করে খরচ করে। হোটেলে ঢোকামাত্র স্টাফরা এই বিষয়ে আমাদের জ্ঞানদান করে গেলো। হোটেলটা ছিমছাম, হিটার খুব হিসাব করে চালায় তাই লবি বলতে গেলে বরফ। কিন্তু সার্ভিস যথেষ্ট ভালো। ডিনারে গিয়ে লজ্জায় পড়লাম।

বুফে পদ্ধতি রেখেছে, কিন্তু যা রেখেছে তা না রাখারই সমান। প্রত্যেকের জন্য দুই/তিনটা রুটি আর কি আলুর একটা সব্জী। দার্জিলিং এ গিয়েও এই অবস্থা হয়েছিল। তাদের আইডিয়াই নাই যে সাধারন মানুষ কতটা খায়! পাহাড় বেয়ে সারাদিন উঠা নামা করে আবার খায়ও কম, কি করে সম্ভব?। পানির মাঝে ফুল, এই দিয়েই ভূটান ভরা।

রাতে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ে। তাই সেদিন রাতে আর কেউই বেরোলাম না। পরদিন বের হলাম থিম্পু দেখতে। রাস্তার পাশের বাড়ি-ঘর আর দোকানপাট সবেতেই তাদের জাতীয় প্রতীক ড্রুক বা থান্ডার ড্রাগন আঁকা। গাড়ী আসতে দেরী হচ্ছিল, তাই রাস্তায় হাঁটছিলাম।

একটা জিনিস খুবই অবাক করল, ভূটানিদের সহনশীলতা আর ভদ্রতা। রাস্তা পার হতে গেলে এরা গাড়ী থামিয়ে ফেললো আর অপেক্ষা করতে লাগলো যে কখন আমাদের পার হওয়া শেষ হবে। হর্নের কোন বালাই নেই। রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে বেশ খানিকক্ষন ধরে পাহাড়ের ছবি তুলে হঠাৎ তাকিয়ে দেখি যে আমার পিছে একটা গাড়ী অপেক্ষা করছে কখন আমার শেষ হবে। গাড়ীর সামনের জানালা দিয়ে একটা ৪/৫ বছরের বাচ্চা উঁকি দিচ্ছে।

লজ্জায় লাল হয়ে সরি সরি বলাতে চালক হাসিমুখে হাত নেড়ে চলে গেল। আমি ভাবলাম, হায় যদি আমি এই কাজ আমার ধানমন্ডির রাস্তায় করার দুঃসাহস করতাম! এতক্ষনে কান বন্ধ করে ফেলতে হতো!!! হেঁটে সবার আগে স্টেডিয়াম দেখতে গেলাম। দেখে টাশকি খেয়ে গেলাম! কলাবাগান মাঠটাও তো মনে হয় এর চেয়ে বড়। মাঝে একটা একতালা দালান যাতে বেশ অনেকগুলো পিলার আছে। ধারনা করলাম, বড় সড় খেলা হওয়ার সময় বুঝি এইখানেই রাজা বসেন।

ভূটানের জাতীয় খেলা মনে হয় তীর ধনুক। কারন মাঠে ওই একটা খেলারই প্রাকটিস চলছে দেখলাম। স্টেডিয়ামটা পাহাড়ে ঘেরা, এতই শান্ত সিগ্ধ যে মনে হয় সারাদিন ওখানেই বসে থাকি। ভূটানিদের যদিও অন্য খেলা তেমন দেখিনি, কিন্তু আমার এক বন্ধুর কাছে শুনলাম, ভূটান নাকি একবার বাংলাদেশকে ফুটবলে হারিয়েছিল। ঘটনা কি সত্যি?? স্টেডিয়াম।

গাড়ী আসার পর প্রথমেই দেখতে গেলাম ন্যাশনাল মেমোরিয়াল চোতেন। রানী তার ছেলে ড্রুক গ্যালপো (dragon king) এর জন্য বানিয়েছেন। আশা করেছিলাম সমাধি, কিন্তু গিয়ে ভিতরে পেলাম বৌদ্ধ মন্দির। নেপাল দার্জিলিং এর মত এখানেও প্রেয়ার হুইলের আধিক্য! সেইসাথে অসংখ্য কবুতর। হঠাৎ হঠাৎ একসাথে উড়ে যাচ্ছে… বেশী জোস! ভিক্ষুরা তদের ঝোলা মেলে বসে আছে।

দেখে খুব বেশী আহা উহু করার সুযোগ পেলাম না, কারন একই আর্কিটেকচার। তাদের স্টেডিয়াম, ঘর-বাড়ী, মন্দির সব কিছু একই রকম, একই রঙ। মনে হয়ে এদের আর্কিটেক্টদের স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকার নেই। বা কে জানে এদের স্কুলে হয়ত এই একটা জিনিসই পড়ানো হয়! মূল মন্দির প্রেয়ার হুইল এরপর আমাদের গাইড আমাদের নিয়ে গেল থিম্পুর সবচেয়ে উঁচু চূড়ায়। পুরোপুরি হতাশ, কারন সবচেয়ে উঁচু যে জায়গা, সেটা কোথাও মার্ক করা পর্যন্ত নেই।

গাইডের মুখের কথায় বিশ্বাস করতে হলো। চারপাশে মেটে রঙের পাহাড় আর নীচে একই রকম বাড়ী-ঘর। আকাশের রঙটাও মনে হলো ধূসর। এরপর গেলাম এদের জাতীয় পশু তাকিন প্রিজারভেশন কেন্দ্রে। অনেক বড় জায়গা নিয়ে কেন্দ্র।

ধূসর পাহাড়ের গায়ে লম্বা এক জাতীয় গাছে ভর্তি, তবে তা পাহাড়ের ধূসর ভাব বিন্দুমাত্র কমাতে পারেনি। তাকিন দেখার জন্য পাহাড় বেয়ে অনেকখানি উঠতে হয়। দুইটা পাহাড়ের মাঝে অনেকখানি জায়গা জাল দিয়ে ঘেরা যেন তাকিনগুলো স্বাধীন ভাবে ঘোরাফেরা করতে পারে। শাম্বার হরিণ জাতীয় প্রানী। নামেই কেন্দ্র, কিছুই খুঁজে পেলাম না।

ভয়ে ভয়ে একটার মাথায় হাত দিলাম। সে খুবই তেজের সাথে শিং নাড়া দিলে আমি দুই হাত দূরে ছিটকে পড়লাম- এছাড়া আর কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা নাই! বোকা বোকা চেহারার তাকিন। (আগামী পর্ব সমাপ্ত) ভূটানঃ ল্যান্ড অব থান্ডার ড্রাগন (প্রথম পর্ব) ভূটান: ল্যান্ড অব থান্ডার ড্রাগন (শেষ পর্ব)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।