আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভূটান ভ্রমনঃ ১/২

কয়েকমাস আগে ভূটানে ঘুরতে গিয়েছিলাম । প্রায়ই ভাবি ব্লগে বিষয়টা শেয়ার করি । আজ করব কাল করব করে কয়েকটা মাস পার হয়ে গেল । যাই হোক , কথা না বাড়িয়ে কাজের কথায় আসি । খুব অল্পদিনের ভ্রমন ছিল ।

২৭ শে মার্চ থেকে ২ এপ্রিল । যাওয়ার প্ল্যান আগে থেকেই ছিল । কিন্তু ঠিক কখন যাব, এই বিষয়ে সিওর ছিলাম না । ১৫ তারিখের দিকে হঠাত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যাব । ছোট দেশ যাওয়া নিয়ে ঝামেলা হওয়ার কোন কথায় না ।

বলে রাখা ভাল, বাংলাদেশ থেকে ভূটান যাওয়ার ১ মাত্র ফ্লাইট হল দ্রুক এয়ার । তাও সপ্তাহে ২ দিন । থাইল্যান্ড-বাংলাদেশ-ভূটান । ঠিক মনে পড়ছে না, মনে হয় ২০,২১ তারিখের দিকে ১ টা ফ্লাইট ছিল । ভাবছিলাম ওটায় গিয়ে মাসের শেষের দিকে চলে আসব ।

এরপরেই পরে গেলাম বিপদে । প্লেনের টিকেট পাই না । বলছে পরবর্তী মাস ছাড়া হবে না । আমার মাথায় বাজ । পরবর্তী মাসে কোনভাবেই যাওয়া সম্ভব না ।

৬ এপ্রিল এর আগে আমাকে দেশে থাকতেই হবে । যাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম , যাওয়ার ঠিক ২ দিন আগে ১ টা টিকেট কিভাবে জানি ম্যানেজ হয়ে গেল । যাই হোক অবশেষে ২৭ মার্চ চলে আসল । বলে রাখা ভাল এটাই আমার প্রথম ভিন দেশ ভ্রমন । সকাল সকাল এয়ারপোর্ট এ চলে আসলাম ।

মনে হয় ৯ টায় ফ্লাইট ছিল । খুজতে খুজতে দ্রুক এয়ার এ । মোটামুটি বড় লাইন । টিকেট এর জন্য দাঁড়ালাম । আমি লাইনে দাড়িয়ে একটু ইতস্তত বোধ করছিলাম ।

আসে পাশে দেখি সব চাইনিস টাইপ চেহারা, কোন বাংলাদেশি দেখি না । মজাটা এর পরেই টের পেলাম । কাউন্টার এ টিকেট এর অনলাইন কপি , পাসপোর্ট দিলাম । আমাকে দেখে হাসতেছে । একজন বার বার পাসপোর্ট আর আমাকে দেখতেছে ।

আমিও বিষয় তাতে বেশ মজা পাইলাম । পরে ১ মহিলা বলল, এটাই প্রথম বিদেশ ভ্রমন ? (পাসপোর্ট এ একটাও ভিসা ছিল না) । এরপর ইমিগ্রেশন এর লাইনে দাঁড়ালাম । বিশাল বড় লাইন । আর বিদেশিদের লাইনটা খুব ছোট ।

হটাত দ্রুক এয়ার থেকে ১ জন দেখতে পেয়ে, আমাকে বলল , ভূটান ? আমি বললাম, ইয়েস । (আমি সন্দিহান, আমি ভুটানিজ নাকি আমি ভূটান যাব । কোন প্রশ্নটা করল ? ) আমাকে বিদেশি দের লাইনে নিয়ে গেল । অফিসার বলল, আপনি তো বাংলাদেশি । এই লাইনে দাড়াইছেন কেন ? আমি বলি, আমি কি জানি ? দ্রুক এয়ার থেকে এখানে দাঁড়াইতে বলছে , দাড়াইছি ।

আর কয়েকটা প্রশ্ন করল, কতদিন থাকবেন, কত টাকা নিছেন, হোটেল বুকিং দিছেন কিনা এইসব । অবশেষে পার পেলাম । এরপর ডিপারচারে ২ টা বাংলাদেশি মেয়ের সাথে দেখা হল । ওরাও যাচ্ছে । অপেক্ষা করছি প্লেনের জন্য ।

প্রথম প্লেন ভ্রমন । মনে মনে অনেক উত্তেজিত । যাই হোক সময় হল, প্লেন এ উঠলাম । ভুটানিজ এয়ার হোস্টেজ । তা আর বলতে !!! না দেখলে বর্ণনা করা যাবে না !!!! লোল ! আমি জানালার পাশে সিট পাইনি ।

আমার পাশে ২ জন মার্কিনী । ১ টা পুরুষ ১ টা মহিলা । প্রথমে মনে হল স্বামী স্ত্রী । কিন্তু ভালভাবে খেয়াল করলাম মহিলার বয়স আছে । মা ছেলেও মনে হল ।

ভ্রমনের এই পর্বটাও আমার কাছে অমিমাংসিত । লোল । পোলাটা, জানালার পাশে সিট পাইনি বলে আমার আফসোস বুঝতে পেরেছিল । বেশ অমায়িক । হাসিমুখেই বলল, কোন সমস্যা নেই ।

ছবি তুল । জানালা দিয়ে বেশ কয়েকটা ছবি তুললাম । ঘন্টাখানেক পরেই “পারো এয়ারপোর্ট” এ নামলাম । ক্লিক ক্লিক শুরু হল পুরদমেই । ইমিগ্রেশনে ঢোকার আগে অদ্ভুদ পোশাক পরা মানুষ দেখলাম ( ট্র্যাডিশনাল ড্রেস ) ।

এই পোশাক পরেই মনে হয় ওয়েলকাম জানাচ্ছে । কিন্তু পরে কয়েকদিন এ যা দেখলাম, মোটামুটি সবাই এই ড্রেস পরেই থাকে (ছেলেরা) । ক্লিক ক্লিক এর কারনে আমি লাইনের সবার শেষে । মনে হয় ৩ টা লাইন ছিল । মহিলা অফিসার, আমারে বলে কোন দেশ ।

আমিঃ বাংলাদেশ । অফিসারঃ কিন্তু তুমি তো বাংলাদেশিদের মত দেখতে নও । আমাদের মত দেখতে । লোল । আমিঃ অবশ্যই অবশ্যই ।

লোল । দেশেও অনেকে আমাকে ভাবে আমি ভুটানিজ, চাকমা, চাইনিস । ব্লা ব্লা ব্লা ( ভাব জমাইতে সমস্যা কোথায় ? লোল) অফিসারঃ ইয়া ইয়া ফিলিপিনো , থাই ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা । লোল । তারপর হোটেল বুকিং দিয়েছি কিনা, কোথায় , কতদিন থাকব এসব জেনে ভিসা দিয়ে দিল ।

(ভূটান এর ভিসা কিন্তু অন অ্যারাইভাল) । কতদিন থাকতেই চাই, জানতে চাইল । ২ সপ্তাহ বলাতে, ২ সপ্তাহেরি দিয়ে দিল । আরও যদি লাগে, পরে বারায় নিতে বলল । আফিসিয়ালি ভূটান এ প্রবেশ করলাম ।

এবার যাব থিম্পু, ভুটানের রাজধানি । পারো থেকে ১ ঘণ্টার পথ । ১ টা ট্যাক্সি ঠিক করলাম । ৮০০ গুল্ট্রাম (ভুটানিজ টাকা)। ড্রাইভার এর নাম হল, বাল কুমার ছৈত্রি ।

লোল । ভূটান এ আরও এমন কিছু নাম শুনলাম । পুরা ভিম্রি খাইছি । এমনও নাম আছে যেগুলো উচ্চারণ করতে পারি নাই । আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্ট এ কয়েকটা স্যাম্পল দেখতে পাবেন ।

আর, আরেকটা কমন নাম পাইছি ( টাইটেল ও হতে পারে ) । আমার মনে এটাই প্রশ্ন, এটাও কি মানুষের নাম হতে পারে ?!?!?!?! ওরা যদি জানত , এটার বাংলা অর্থ কি ? (বিশেষ করে মেয়েরা ) । আমার মনে হয়না , কেউ আমাদের দেশের কারো কাছে ওদের নাম বলত । লোল । পারো থেকে থিম্পু ।

পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো । মাঝে মাঝে ২,১ টা বাড়ি চোখে পরে । শুধু পাহাড় আর পাহাড় । সাথে প্রকৃতিক দৃশ্য ফ্রি । থ্রি ইডিয়টস মুভিতে এরকম কিছু দৃশ্য দেখেছিলাম বটে ।

থিম্পু শহরে ঢোকা শুরু করলাম । প্রায় সবগুলো বাড়ির ডিজাইন একইরকম !!!!! উচু নিচু রাস্তা । বেশ শান্ত শিষ্ট । কোন রিকশা চোখে পরল না । এক আত্মীয়র বাসায় উঠলাম ।

সেদিন আর কোন ঘুরাঘুরি না । সোজা ঘুম দিলাম । ঢাকায় তখন অনেক গরম । তখন আমার রুমে হিটার চলেছিল !!! এরপরের দিন ২৮ তারিখ, বিকেল বেলা । ঘুরতে গেলাম পাহাড়ের উপর একটা জায়গায় ।

অনেক বড় বুদ্ধ মূর্তি । বিশাল এলাকা জুড়ে । যাওয়ার সময় ট্যাক্সি তে যাই । আসার সময় পায়ে হেটে হেটে । সে অন্যরকম ১ অভিজ্ঞতা ।

প্রায় পুরো থিম্পু শহর কে পাহাড় থেকে দেখা যায় । ক্লিক ক্লিক ; এটা তো চলতেই আছে । লোল । পাহাড় থেকে নামতে নামতে একেবারে রাত হয়ে গেল । আসার সময় ১ টা মন্দির এ থামলাম ।

অনেক্ষন ছিলাম । ছবি তুললাম । এরপর বাহিরে হাল্কা কিছু খেয়ে বাসায় ফিরে আসলাম । ভুটানে জিনিস পত্রের দাম আমাদের তুলনায় একটু বেশিই বলা যায় । সবকিছুতেই ।

তবে মদের দাম অনেক কম । কয়েক বোতল নিয়ে আসার খুব ইচ্ছে ছিল । লোল । ২৯ তারিখ, এদিন বলা যায় শহর ঘুরা শুরু করলাম । সাথে ছিল রাম ।

সে ছিল হাউজের কুক । সে এখন ভুটানি । কিন্তু তাদের পূর্ব পুরুষ নেপালি । মার্কেট, কাঁচাবাজার, স্টেডিয়াম, বাণিজ্য মেলা, আরচারি গ্রউন্ড, পার্ক । এসবি দেখলাম ।

কাঁচাবাজার টা ২ তলা মনে হয় । ২ তলা পর্যন্ত গিয়েছিলাম । সব দোকানদার মেয়ে । ২ তলায় ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছি । হঠাত ১ টা জিনিস থেকে গন্ধ আসছে ।

এরকম জিনিস আগে কাছ থেকে কখনও দেখিনি । বললাম কি এটা ?? বলল, শুকরের মাংস । ওহ !! যত তারাতারি পারছি অই এলাকা ত্যাগ করেছি । লোল । এরপর গেলাম স্টেডিয়াম ।

কিছুদিন আগে এখানেই ভুটানের রাজারানির বিয়ে হয়েছিল । মাঠের ঘাসের দিকে তাকালে সহজেই বুঝা যায় । এরপর বাণিজ্য মেলা । ওটা দেখে মনে হল, ভারতীও পণ্য-র বাণিজ্য মেলা । এই বিষয়ে আর বেশী কিছু বলতে চাচ্ছি না ।

ভুটানে আসলে বিষয়টা ক্লিয়ার হয়ে যাবে । এরপর আরচারি গ্রউন্ড । ছবি তুললাম । এরপর পার্ক । পার্কে ঢোকার মুখেই ১ টা সুন্দর মেয়ে দেখলাম ।

লোল । ওখানে ১ টা বুদ্ধ মূর্তি তৈরি হচ্ছিল । বেশ কিছু সময় ওখানে ছিলাম । আসার সময় দেখলাম অই মেয়েটা সিমেন্টের বস্তা টানতেছে !!! ওখানে থাকার সময় এই একটা জিনিস আমি ধরতে পারিনি । চেহারা, পোশাক দেখে বোঝার উপায় নেই, কে আসলে কোন শ্রেণীর ।

এটা আমার কাছে বেশ অবাকি লেগেছে । ৩০ তারিখ, এদিন অবশ্য আবহাওয়া ১ টু খারাপ ছিল । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি । তবে বিকেলে রাম কে নিয়ে বাইরে বের হই । ১ টা সিম কার্ড নেই ।

নেয়ার পর ব্যাবহার করিনি বললেই চলে । বি মোবাইল আর তাসিসেল । মাত্র ২ টা মোবাইল অপারেটর । আমার টা ছিল বি মোবাইল । অন্য আরেকটা পার্কে ঘরাঘুরির করি ।

মার্কেটে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে বাসায় চলে আসি । ৩১ তারিখ, ওহ সারাদিন বাসায় ছিলাম । শুধু ঘুমাইছি । যাওয়ার আগে এত পরিশ্রম করা হইছে যে, যখনি টাইম পাইছি তখনি ঘুমাইছি । সন্ধায় মার্কেট এ যাই , ১ টা জ্যাকেট কিনি ।

ঢাকায় জ্যাকেটের কোন প্রয়োজন দেখি না । কিন্তু সৃতি হিসেবে কিছু নিতে চাইছিলাম । ১ তারিখ, এপ্রিল । ওহ এটাই ছিল সবচেয়ে সুন্দর । তাগসাং ।

১ টা মন্দির আছে পাহাড়ের উপরে । ওখানে উঠতে ৩ ঘণ্টা আর নামতে ২ ঘণ্টা লেগেছিল । এটা নিয়ে আরেকদিন লিখব । নেট থেকে আগাম ১ টা ধারনা পাবেন । http://en.wikipedia.org/wiki/Paro_Taktsang আরও ছবি দেখতে চাইলেঃ Bhutan Trip (27 march 2012) Bhutan Trip-Thimpu( 28 march 2012) Bhutan Trip-Thimpu( 30 march 2012) চলবে  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।