আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাচিন ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিতে যীশু

লিখলাম

প্রথম দুই শতকের যে সমস্ত পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেছে তা থেকে যীশুর জীবন সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। পরবর্তীকালের প্রাচীন উৎসগুলো মূলত যীশুকে পরিত্রাতা এবং ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যীশুর জন্মের সঠিক সময় এখনো জানা যায় নি। খ্রিস্টপূর্ব চার থেকে খ্রিস্টাব্দ সাত বছরকে সম্ভাব্য সময়সীমা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। যীশু নিশ্চিতভাবে হেরডের সময়ে জন্ম নিয়েছিলেন।

হেরড খ্রিস্টপূর্ব চার সালে মারা যান। একটা মানুষের ব্যক্তিত্ত গড়ে উঠার ক্ষেত্রে জীবনের শুরুর বছরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা থাকলেও বাইবেলের গসপেলে যীশুর বাল্যকাল ও শৈশব আর যৌবনের মধ্যবর্তী সময়কে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। তাতেও যীশুর জীবন সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা অস্পষ্ট। সমসাময়িক ঐতিহাসিকদের লেখায় যীশুর নাম আসেনি বা তাঁরা বলতে চাননি। গসপেলে বলা নানা অসাধারণ কাহিনীগুলো কোন প্রকার উল্লেখ ঐতিহাসিকরা করেন নি।

টাসিটাস (আনুমানিক ৫৫-১২০খ্রিস্টাব্দ) তাঁর লিখিত বর্ষপঞ্জিতে খৃস্টানদের 'কুসংস্কারাচ্ছন্ন সম্প্রদায়' বলে উল্লেখ করেছেন, যারা নিজেদের নামকরণ করেছে কোন এক ক্রিসটাসের সাথে সঙ্গতি রেখে, যাকে সম্রাট টিবেরিয়াসের সময়ে গভর্নর পণ্টিয়াসের অধীনে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এই সংক্ষিপ্ত বিবরণ মহান রোমান ঐতিহাসিক ১০৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ লিপিবদ্ধ করেন। প্লিনি দা ইয়ংগার(আনুমানিক ৬১-১১৪খ্রিস্টাব্দ) এবং সিউটোনিয়াস(আনুমানিক ৬৫-১৩৫খ্রিস্টাব্দ) তাদের লেখায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ব্যক্তি যীশু সম্পর্কে কিছু লেখেননি। ঐতিহাসিক সিউটোনিয়াস সম্রাট হাড্রিয়ানের কোষাধক্ষ ছিলেন এবং সম্রাটের মহাফেজখানায় তাঁর অনায়াস প্রবেশগম্যতা ছিল। এই সব নথীপত্র ঘেঁটে পূর্ববর্তী সম্রাটদের আমলের ঐতিহাসিক ঘটনার একটা ভাষ্য দ্বারা করানো যায়।

এর মধ্যে সম্রাট ক্লডিয়াসের শাসনামলে ইহুদীদের 'ক্রিসটোস'দ্বারা প্রভাবিত হবার কারনে রোম থেকে বিতাড়িত করা হয় , এর ফলে নাগরিক অশান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। ৫০ খ্রিস্টাব্দে রোমে খ্রিষ্টান ধর্ম ছিল এটা তার প্রমান বহন করে। চিত্রঃ জোসেপ বেন ম্যাথিয়াস ইহুদী ইতিহাসবেত্তা জোসেপ বেন ম্যাথিয়াস(আনুমানিক ৩৭-১০০খ্রিস্টাব্দ) রোমের নাগরিক হন এবং ফ্লাভিয়াস জোসেফাস নাম ধারন করেন, ৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি দি এন্টিকুইটিস অব দি জিউ নামে একটি বই লেখেন। সৃষ্টির সময় থেকে সম্রাট নিরোর সময় পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাস একটা প্রামানিক বর্ণনার মত করে বইটা লেখা এবং অ-ইহুদী পাঠকদের জন্য এটা লেখা হয়েছিল। যীশুর সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন এবং জন দি ব্যাপটিস্ট,হেরড এবং পন্টিয়াস পিলেটের নাম তিনি উল্লেখ করেছেন ,কিন্তু যীশুর নাম সারা বইয়ের কেবলমাত্র একবার উল্লেখ করেছেন ।

আর সেটাও জেমস নামে এক লোককে প্রস্তরাঘাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে 'যে যীশুর ভাই, তাকে তাঁরা ক্রিসটাস নামে সম্বোধিত করতো'। জৈনিক খ্রিষ্টান 'টেস্টিমোনিয়াম ফ্লাভিয়ানাম' নামে একটা জাল দলিল প্রস্তুত করেন ,যাতে দেখানো হয়েছে জোসেফাস খ্রিষ্টান ধর্মে দিক্ষিত ছিল। কিন্তু জাস্টিন মারটিয়ার ,টার্টুলিয়ান এবং সিপরিয়ান প্রমুখ চার্চের নিয়োজিত লেখক এধরনের মনোভাব পরিবর্তনের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না এবং ওরিজেন (আনুমানিক ১৮৫-২৫৪খ্রিস্টাব্দ)একাধিকবার উল্লেখ করেছেন যে জোসেফাস খ্রিষ্টান ধর্মে দিক্ষিত ছিলেন না। লেখক জাসটাস অব টিবেরিয়াস,ইনিও ইহুদী, জোসেফাসের সমসাময়িক ছিলেন । তিনি ইতিহাস বিষয়ে বিশাল এক গ্রন্থ রচনা করেন যেখানে মোজেসের সময় থেকে তার সময় পর্যন্ত ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করেন।

কিন্তু তিনি একবারও যীশুর নাম নেন নি। আলেকজান্দ্রার মহান ইহুদী পণ্ডিত ফিলো ছিলেন যীশুর সমসাময়িক ,তাকে বাইবেল আর ইহুদী সম্প্রদায়ের ব্যাপারে তাকে একজন বিশেষজ্ঞ ধরা হয়। কিন্তু তিনিও যীশু সম্বন্ধে এক ফোটা কালিও খরচ করেন নি। খ্রিষ্টানবিরোধী সমালোচক সেলসাসের লেখা থেকে আমরা যীশু সম্বন্ধে কিছু জানতে পারি- 'আদর্শায়িত' যীশু বলে কাউকে অভিহিত করার সময়ে তিনি তার ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। তাই ঐতিহাসিক গবেষণার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য তথ্যভাণ্ডার হিসেবে নিউ টেস্টামেন্ট আমাদের সামনে প্রতিভাত হয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।