লিখলাম
খ্রিস্টীয় একেশ্বরবাদী ধর্মপ্রচারকগণ হিন্দুদের বহুদেব উপাসক ও পৌওলিক বলে নিন্দা করেন। কিন্তু হিন্দু বহুদেবোপাসক হলেও পৌওলিক নয়। বেদে কতিপয় দেবতার উল্লেখ আছে, কিন্তু সে সকলই এক, বহুত্ব কল্পনামাত্র। প্রাচীনতম ঋকবেদে বলছে - একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ' (ঋক ১। ৬৪।
৪৬);' একং সন্তং বহুধা কল্পয়ন্তি'(ঋক ১। ১১৪। ৫) । 'দেবানাং পূর্বে যুগেহসতঃ সদজায়ত'(ঋক ১০। ৭২।
৭)-দেবতাদেরও পূর্বে সেই অব্যক্ত হতে ব্যক্ত জগৎ উৎপন্ন হয়েছে।
সুতরাং দেবতারা ঈশ্বর নয়,ঈশ্বরের প্রকাশ মাত্র। মানুষের মধ্যে যেমন ঐশ্বরিক শক্তির সাময়িক প্রকাশ, দেবগণেও সেই ঐশ্বরিক শক্তির সাময়িক প্রকাশ। ভয়ে, বিস্ময়ে ,ভক্তিতে বা স্বার্থসিদ্ধির শক্তিমানের পূজা সবাই করে। দেবগণের পূজাও সে রকম ।
যারা এইরূপ অন্য দেবতার পূজা করে তাদের ইস্টলাভ হলেও ঈশ্বরলাভ সম্ভব নয়। কিন্তু যারা শ্রদ্ধাসহকারে অন্য দেবতার পূজা করে, তারা তা অবিধিপূর্বক হলেও ঈশ্বরেরই ভজনা করেন। কারন ঈশ্বর ভিন্ন পৃথক কোন দ্বিতীয় শক্তি নেই।
কিন্তু তারা এই তত্ত্ব জানেনা বলেই ঈশ্বরকে প্রাপ্ত হন না, পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হয়।
হিন্দুরা যে দেবদেবীর মূর্তি পূজা করেন ,তাকে প্রতিমা বলে,পুওলিক বলে না।
প্রতিমা অর্থ সাদৃশ্য, বাংলায় 'প্রান-প্রতিম', 'সহোদর-প্রতিম' ইত্যাদি শব্দে এই অর্থ পাওয়া যায়। পুওলিকা অর্থ মৃত্তিকা মূর্তি(Idol)। নামরূপ ব্যতিত মানুষেরমন সেই অনন্ত শক্তির অব্যক্ত বস্তুর ধারনা করতে পারে না; তাই ঈশ্বরের শক্তি-বিশেষের সাদৃশ্য কল্পনা করে চিন্তার অবলম্বন -স্বরূপ একটা প্রতীক গ্রহণ করে মাত্র। মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা ,স্তব-স্তুতি,ধ্যান-প্রণাম ইত্যাদি মন্ত্রের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সাধক প্রতীক অবলম্বনে ঈশ্বরেরই পূজা করে, পুতুল পূজা করে না। এই জন্য বলছি যে, প্রতিমা-পূজক ও পৌওলিক এক কথা না।
কিন্তু যারা প্রকৃতির অতীত হয়ে অতীন্দ্রিয় তত্ত্বজ্ঞান লাভ করেছেন,তাদের প্রতিমার প্রয়োজন হয় না। তাঁর প্রতিমা(তুলনা) নাই, তাই সিদ্ধ, বুদ্ধ, সম্যগদর্শী ঋষিগণ তাঁরস্বরে বলেছেন-'ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদযশঃ'।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।