আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাল বিড়ম্বনা



এ সময়ে টাকাঅলাদের পাড়ায় মাঝে মাঝেই ঢু মারতে হয়। টাকার টর্নেডোর টানে অসহায়ভাবে ঢুকে পড়তে হয় দিলকুশা বা মতিঝিলের ঘূর্ণি আবর্তের ভেতর। ঘূর্ণি আমাকে আছড়ে ফেলে, প্রাণ যায়-যায়। তো মাঝে মাঝেই যাচ্ছি যখন, পথে পথে টাকাঅলাদের হাতছানি। মানি একচেঞ্জের বন্ধুরা সারি সারি দাঁড়িয়ে ‘এই ডলার-রিয়াল’ হাঁকে।

প্রথম প্রথম খুব বিরক্ত হতাম। এখন বেশ উপভোগ করি। আমার মতো মানুষের কাছে ‘ডলার-রিয়াল’ থাকার সুযোগ কোনভাবেই নেই, এটা ওরা বুঝছে না ভেবেই মনে মনে খুশি হই। একদিন একজনকে জিজ্ঞেস করি, মামু, আমার কাছে ডলার আছে, আমার চেহারা দেখে তাই মনে হয়? উত্তরে কয়, ‘কেউ কি টাকা গলায় বেঁধে হাঁটে?’ আমাদের বণিকদের লাগি পহেলা বৈশাখ চলে গেলো। আমাদের শুকনো ভাতে লবনের ব্যাবস্থা হলো না।

আমাদের সরকারি দলের অহমিকা কমলো না। আমাদের বিরোধীদলের নাদানীপনা গেলো না। আমাদের আমিনীরা কাপড় তুলে কৃঞ্চকেশ প্রদর্শন করে। আমাদের বণিকের ব্যাটা বণিকেরা আমাদের ললিপপ-বুড়োআঙুল ঢুকিয়ে দেয় আমাদের মুখে। আমাদের যুবকদের ডিজুস আর ডিজিটাল সংস্কৃতির ঝাপটাই মাথা আওলা ঝাওলা।

বাজার বাণিজ্যের টাকা-টর্নেডোর ঘূর্ণিতে ঘুরছে আমাদের সকল ধ্যান-জ্ঞান, ধর্ম আর কায়াহীন ঈশ্বর। পহেলা বৈশাখের পর টাকাঅলাদের পাড়ায় গেছি ফের! আমার বাল মাথার চারপাশ দিয়ে ঝুলে পড়ছে। মামুরা, আমারে জেকে ধরলো। মাথা দুলিয়ে, হাত নেড়ে, মুখে হাসি ঝুলিয়ে ‘নাই’ শব্দটি বোঝাতে পারলাম হয়তো। আমি যখন একটা অফিসে টুকতে যাবো, এক মামু দৌড়ে এসে যেনো হুমড়ি খেয়ে পড়লো।

সে নিশ্চিত আমি টাকা ভাঙাবার জন্যই অফিসে ঢুকছি! তো আমি তাকে জিজ্ঞাসিলাম, তোমাদের কেনো মনে হচ্ছে আমার কাছে বৈদেশিক মূদ্রা আছেই? সে কইলো, ‘পহেলা বৈশাখ গেছে। আপনি কোন বিখ্যাত মানুষ হবেন, বিদেশ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে ফিরছেন, এমন কিছু মনে হচ্ছে। ’ কেমন? ‘বাউল শিল্পী মনে লয়!’ আমি বললাম, ‘বাউলদের বাল কেটে দেয়া হচ্ছে। আর আমারে দেখে বণিকদের টাকায় লালিত-পালিত নাগরিক বাউল, বিখ্যাত টাকা পয়সাঅলা লোক বলে মনে হয়!’ সে লজ্জিত হয়ে বললো, ‘বাউলদের বাল কাটাতে আমরা লজ্জিত। আমার এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

’ বাউল হোন, বাল লম্বা রাখেন, গঞ্জিকা সেবন করেন কিন্ত বণিকদের কেনা গোলাম হয়ে যান। শালার বাউল পেটে ভাত নেই, লম্বা চুল রেখে আমাদের লুটেরা সংস্কৃতির পরোয়া না করে লোভ-লালসাহীন, অসা¤প্রদায়িক মানুষ হবার তত্ব দিয়ে বেড়ায়! নেতা হিসেবে ধর্মের এ দেশীয় এজেন্ট হিসেবে আমরা কিভাবে এটা মেনে নিই? রাষ্ট্রে বসবাস করতে হলে রাষ্ট মানতে হবে, তার আইন মানতে হবে, এ রাষ্ট্রের মহান নেতাদের মানতে হবে। রাষ্ট্রের নিপীড়ন ও রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য টিকিয়ে রাখতে অনেক বেশি সাহায্য করে যে ধর্ম তাকে অবশ্যই মানতে হবে। ধর্মটা মানতে হবে ধর্ম ব্যবসায়ীদের মতো করেই! আবার একদিন গেলাম দিলকুশাতে। আমার মামু, টাকা হাতে বলতাছে, ‘ডলার-রিয়াল’।

আমি মাথা দোলাতে দোলাতে বাবরি দোলাতে দোলাতে হাঁটছি। মামু টাকা মুঠ করে ধরে গাইতাছে: ফকির লালন মরল...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।