আমারে দিবো না ভুলিতে
বন্ধুত্ব স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কঠিন দিনে বন্ধুত্ব হলো স্বস্তি ও শক্তির উত্স। বন্ধুত্ব কি করে পেতে হয়, একে লালন পালন করতে হয়, কি করে ভালো বন্ধু হতে হয় তা জানতে হয়। মাথা আশ্রয় খুঁজে পাবে এমন একটি কাঁধ চাই। ভালো একটি পরামর্শ।
দু:সময়ে। অব্যক্ত একটি স্বস্থি। ভালো সময়েও দুজনে মিলে প্রাণখুলে হাসা। বন্ধুত্বের অনেক হিতকরী গুণ আছে। বন্ধুত্ব উজ্জীবিত করে আত্মমর্যাদা, সঙ্গ, সাহচার্য দেয়, এমনকি শরীর ও মনের স্বাস্থ্যের উন্নতিও করে।
যদিও ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব গড়ে তোলা সহজ কাজ নয়। এত ব্যস্ত জীবন,কর্মজীবনের চাহিদা, পরিবারকে সময় দেয়া, বাচ্চাদের স্কুল-বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, বজায় রাখা কঠিন কাজ বটে। বন্ধুত্ব কেন এত গুরুত্বপূর্ণ: ভালো বন্ধু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এককাপ চা খেতে খেতে বন্ধুর সঙ্গে আলাপ, একত্রে নাটকের শো দেখতে যাওয়া, হাঁটতে হাঁটতে আলাপ, সংযোগ সম্পর্ক স্থাপনের বড় সুযোগ এসব। বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে নিজের মূল্যও বাড়ে, বাড়ে আত্মসম্মান বোধ, ইতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
জীবনের অনেক দু:খ ও শোকের সময় বন্ধুরা দেয় সান্তনা, দেয় অবলম্বন। জীবন যাপনে নানা বদভ্যাস যেমন-মদ্যপান, ধূমপান বর্জন করতে সহায়তা করে বন্ধু। খুব উদ্বিগ্ন ও হতাশ হলে, অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যাবার পরামর্শ দেয় বন্ধু। জীবনে সুখের সময়ও বন্ধু ঘর আলো করে নতুন অতিথি এলে, নতুন চাকুরীর আনন্দের সময়, নতুন গৃহে ঢোকার ক্ষণেও বন্ধু। সুখ দু:খে দুটি সময়ই যে থাকে সে বন্ধু।
রাজদ্বার ও শ্মশানে যে থাকে সেই তো বন্ধু, শাসে¿র কথা। সুখের সময় উত্সবের সঙ্গী বন্ধু, দু:খের দিনে অবলম্বন বন্ধু। বন্ধুর জন্য হাত বাড়াই: অনেকে নানা রকমের বন্ধু, বন্ধুদের বিশাল জাল পছন্দ করেন। আবার অনেকে পছন্দ করেন সামান্য কয়েকজন বন্ধু, খুব অন্তরঙ্গ, ছোট গন্ডীর বন্ধুত্ব। হয়ত মনের গভীর গোপন কথা বলার মত বন্ধু যেমন চাই, তেমনি সিনেমা একসঙ্গে দেখা বা খেলার জন্য বন্ধুও চাই।
নতুন বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হলে: ্ক হাটুন পাশের পার্কে, পায়ে চলা পথে, গড়ে উঠবে বন্ধুত্ব অনেকের সঙ্গে। ০ কাছের ব্যায়াম ঘরে, জিমে, কমিউনিটি ফ্যামিলিটিম এ যোগ দিন, বন্ধু পাবেন। মধ্যাহ্ন ভোজের পর হাঁটুন, বন্ধু পাবেন। ০ নতুন পরিচয় এমন কাউকে নিজের পছন্দের, ডাকুন না প্রাত:রাশে নয়ত লাঞ্চে। ০ কোন পার্টিতে, ডিনারে বা সামাজিক সমাবেশে, দাওয়াতে নেমন্¿ন্ন পেলে গ্রহণ করুন নতুন বন্ধু পাবেন গড়ে তোলার জন্য।
০ হাসপাতালে, উপসনাস্থলে, জাদুঘরে, কমিউনিটি সেন্টারে অনেক সময় স্বেচ্ছাসেবী প্রয়োজন হয়। সেখানে পারস্পারিক একই লক্ষ্যে একত্রে কাজ করলে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে অনেকের সঙ্গে। ০ কোন একটি মহান উদ্দেশ্যে একত্র হলে যেমন পরিবেশ আন্দোলন, ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দিলে বন্ধুত্ব গডে উঠে অনেকেরই সঙ্গে। প্রতিবন্ধীদের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে আমি পেয়েছি নতুন অনেক বন্ধু। ০ শখের দলে যোগদিলে, যেমন-ছায়ানটে গান শিখতে গিয়ে, লাইবেরীতে বই পড়তে গিয়ে, বাগান করতে গিয়ে পাওয়া যায় নতুন বন্ধু।
০ স্কুলে বা কলেজেও পাওয়া যায় নতুন অনেক বন্ধু। ০ ঘরের সামনে বারান্দায় রোদ্দুরে যেমন পড়ে, সে রোদ্দুরে বসে থাকতে যেমন মজা, আর সেখানে বসে থাকলে বন্ধুসুলভ মনে হবে- কারো সঙ্গে প্রথমবারের মত দেখা হলেই বন্ধু হবে তা নয়। বন্ধুত্বের হাতছানি তেই অনেক সময় স্থায়ী বন্ধুত্বের বীজ বপন হয়ে যায়। বন্ধুত্বকে লালন করতে হয়: কেবল নেয়া নয়, দেয়া নেয়ার মাধ্যমেই সুস্থ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। স্থায়ী হয়।
সহজ মেলা মেশা ভালো। বন্ধুকে ই-মেইল দিয়ে দিয়ে ফোন করে আপ্লুত করে দেয়া ঠিক নয়। যোগাযোগ হতে পারে সংক্ষিপ্ত। ফোনে পাঁচমিনিট অথবা ই-মেইলে কয়েক লাইন। সত্ ও আন্তরিক হতে হয় বন্ধুত্বের সঙ্গে।
বিপদে আপদে পাশে থাকা চাই। ভান করা, অযথা গর্বকরা, বডাই করা ঠিক নয়। রহস্য, কৌতুক থাকা ভালো। চাই ইতিবাচক, দৃষ্টিভঙ্গী। বন্ধুত্বে অনেক লাভ, অনেক সুখ, অনেক শান্তি।
জীবনের কঠিন দিনগুলোতে, দু:সময়ে বন্ধুরা হতে পারে শক্তির উত্স। যে বয়সে হোক বন্ধুত্ব শুরু হোক। এর কোনও বয়সই নেই। সেটা ফেসবুকে হোক, কলম বন্ধুত্ব হোক, হলেই হলো।
লেখক: অধ্যাপক ডা: শুভাগত চৌধুরী পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস, বারডেম, ঢাকা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।