আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

FRIENDSHIP, তুই আর...........!!!

সাধারণেই আমি অসাধারণ

লেখাটি আসলে জীবনে প্রথম প্রেমে পড়া নিয়ে। ২০০৮ সালে ssc পাস করে সদ্য কলেজে পা দিলাম। মনের ভেতর আলাদা একধরনের ভাব চলে এলো। আগে ভাইয়ার মুখে কত কলেজের কথা শুনেছি, আর তখন নিজেই কলেজে পড়ি। তো, কলেজের কোন এক স্যার এর দুর্নীতির কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন করে।

ওই ঘটনায় যাচ্ছি না। তো ওই আন্দোলনেই তাকে আমার প্রথম দেখা। কিন্তু ওইদিন তেমন খেয়াল করিনি। একদিন আমি আর আমার বন্ধু রিক্সায় কলেজ যাচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি ও আর ওর বান্ধবী ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আমরা ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, (নতুন কলেজ এ উঠেছিলাম তো, একটু টাঙ্কি মারা শুরু করেছিলাম......)।

ওরা ব্যাপারটা লক্ষ্য করে আমাদের উদ্দেশ্য করে হাত নাড়ে। আমি আর আমার বন্ধুটি বেশ অবাক। আমার কাছে ব্যপারটা বেশ মজার লেগেছিল। এটা যে ওদের পক্ষ থেকে একটা দুষ্টামি ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্যাপারটা আমার খুব ভাল লাগে।

এখানে উল্লেখ করে রাখি, আমাদের কলেজ এ মেয়েদের ছুটি হয় দুপুর ১২টায়, আর ছেলেদের শুরু হয় ১২:২০ এ। আশ্চর্যজনক ভাবে কলেজের একটা ফেসবুক গ্রুপে না জেনেই ওকে frnd request পাঠাই। সেও না জেনে আমাকে add করে। কারণ, দুজনের কেউই বাস্তব প্রো-পিক দেই নি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ওর সাথে ফেসবুক এ ভাব জমিয়ে ফেলি।

তখনো জানি না যে আমি ওর সাথেই ভাব জমিয়েছি। তো কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারি ওই সেই। আরেকদিন পরীক্ষা শেষে রিক্সা না পেয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম, কলেজ এলাকা তখনো ছাড়ি নি, এমন সময় একটি বাস সামনে দিয়ে যাচ্ছে, আমি বাসটার দিকে তাকালাম। দেখি জানালায় ওকে দেখা যাচ্ছে। চোখে চোখ পড়তেই ও ১টা হাসি দিল।

আমি "ফিদা"+"হা" হয়ে গেলাম.........!!! ওর সাথে নেক্সট দেখা হয় একটা ব্যাংকে কলেজের বেতন দেয়ার সময়। আমি লাইন এ দাঁড়িয়ে ছিলাম.......কিছুক্ষণের মধ্যে আবিষ্কার করলাম ও ব্যাংক এর আরেক জায়গায় বান্ধবীদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে আর আড় চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমিও শুরু করলাম তাকানো। সেদিন ওই তাকান পর্যন্তই। এভাবে চোখাচোখি করতে করতেই কলেজ লাইফ শেষ হয়ে যায়।

HSC পরীক্ষা শেষ হতেই প্র্যাক্টিকাল পরীক্ষা শুরু হয়, এর মাঝখানে কিছুদিন বিরতি পাই। ওই সময়টায় ফাঁকিবাজির জন্য না করা প্র্যাক্টিকাল খাতাগুলো লিখতে থাকি। কিন্তু অনেক লেখা বাকি ছিল। তো ওই সময়ের ১দিন রাতের বেলা ফেসবুকে ওর সাথে চ্যাট করছিলাম, কথায় কথায় ওকে বললাম ফাজলামি করে, "তুই আমার প্র্যাক্টিকাল করে দে। "(ততদিনে আমরা তুই করে বলা শুরু করেছিলাম।

)। ও রাজি হল আর বলল যে কাল আমার সাথে দেখা করবে খাতা নেবার জন্য। আমি এতই অবাক হয়েছিলাম যে, বার বার ওকে ASK করছিলাম, সত্যিই ও আসবে কিনা। ও বলল যে আসবে। বু আমার কে দুরু দুরু শুরু হয়ে গেল।

আমি কোনদিন কোন মেয়ের সাথে দেখা করা দূরে থাক, কথাই বলি নি। তো পরের দিন সকাল আনুমানিক ১০.০০টায় বাসা হতে বের হই প্রাক্টিকাল খাতা আর বই হাতে, দিনটা ছিলো ২২ মে, ২০১০। মিরপুর ১ নম্বর ছিল আমাদের দেখা করার স্থান। আমি জায়গামত এসে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলাম, কিছুসময় পর দূর হতে ওকে আবিস্কার করি, হাত নাড়িয়ে আমার দিকে আসছে। আমার বুকে দুরু দুরু শুরু হয়ে যায়।

এভাবে হল আমাদের প্রথম দেখা। তো, রাস্তায় কিছুক্ষন কথা বলার পর, আমি ওকে নিয়ে একটা ফাস্টফুড এর দোকানে যাই, সেখানে ওকে প্রাক্টিকাল খাতা আর বই দেই। ওকে অনেক সাধলাম কিছু খাওয়ার জন্য, কিন্তু ও খাবে না। আমি বললাম তুই আমার জন্য এত কস্ট করে এসেছিস আর কিছু না খেয়ে চলে যাবি। জোর করে ওকে 7UP খাওয়ালাম।

আমার ওর সাথে দেখা করে কলেজ এ যাবার কথা ছিল, ওকে বললাম যে তুই কোথায় যাবি, ও বলল যে কলেজের এক স্যার এর কাছে যাবে। স্যার এর বাসা আর কলেজ একি দিকে। তখন দুজনে একসাথে হাঁটা শুরু করলাম, আর যাবতীয় হেন তেন কথা বলছি। ওকে স্যার এর বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। ছোট্ট একটা হাসি আর thnx দিল।

এরপর আমি আপন মনে কলেজের দিকে পা বাড়ালাম। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলাম, কিন্তু মন পড়ে রইল ওর কাছে, হাজার হোক জীবনে প্রথম কোন (অনাত্মীয়) মেয়ের সাথে কথা বলা, দেখা করা, ইত্যাদি.....আমার অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। কিন্তু তখনো ওর প্রতি সেই ভালোলাগাটা তৈরি হয় নি। FRIENDSHIP এর বাইরে আমি কিছু দেখতে চাই নি। সেদিন ঠিক হয়েছিল ১দিন পর অর্থাৎ ২৪ মে, ২০১০এ ওর কাছ থেকে প্রাক্টিকাল খাতাটা ফিরিয়ে নিব।

আমি ওর জন্য ছোট্ট একটা গিফট কিনলাম। ও তখন মোবাইল ব্যবহার করতো না। তো, আমি সকালে গিয়েছিলাম ফার্মগেট কি একটা কাজে। ফিরলাম দুপুর ২টায়। যখন ওর সাথে দেখা করার জন্য রেডি হচ্ছি, সেসময় আমার মোবাইলে একটা ফোন আসে, ফোনটা করেছিল ওর ছোট ভাই।

বলল যে, ও ৩.৩০ এ যায়গা মত থাকবে। আমিতো পুরো থ। যাই হোক ৩.৩০ এ যায়গা মত পৌঁছে গেলাম। ও আসলো। খাতা দিল।

এবার ওকে বললাম আজ তোকে খেতেই হবে, তুই আমার এতো বড় উপকার করলি আর কিছু খাবি না সেটা তো হয় না। ও রাজি হল। ছোট্ট একটা ফাস্টফুড এর দোকানে গেলাম। ওকে ওর জন্য কেনা গিফট টা দিলাম, ও খুশি হল। এরপর শুরু হল কথা বলা।

ও ওর লাইফ নিয়ে বলল আমি আমারটা বললাম, এভাবে আনুমানিক ২ঘন্টা আড্ডা দিলাম। অন্যরকম একটা অনুভূতি। এভাবে সেদিন গেলো। আমরা বাসায় ফিরে চলে গেলাম। রাতে আবার ফেসবুক এ কথা হল।

ইয়াহুতে, ও আমাকে একটা গান শেয়ার করল। গানটা আমার এতোই ভালোলাগে যে আমি নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, যেই আমি মেটাল ছাড়া কিছুই বুঝি না, সেই আমি এমন একটা সফট গান শুনে আপ্লুত হয়ে যাই কিভাবে। গানটার কিছু লাইন এমন, "আমার স্বপ্ন জুড়ে তুই, আর তোর চিন্তারা শুধুই, ঘুরে ফিরে যাচ্ছে বারেবার, আর কোন রাস্তা নেই আমার, বলনা তোর দোহাই, প্রেম ভাসাই কোন জলে..... ............Be my love, একটা গোলাপ চুপিসাড়ে রেখে গেলাম তোর কোলে............!!!" মজার ব্যাপার হল, আমি লেখাটা যখন লিখছি, তখনো গানটা শুনছি। এভাবে ফেসবুক এই চলতে লাগলো আমাদের আলাপন। মাঝখানে আমি ব্যস্ত হয়ে পরলাম ভর্তি কোচিং নিয়ে।

আমি তখনো ওর প্রতি তেমন দুর্বল হইনি। এভাবে অনেকদিন কেটে গেল। হঠাৎ খেয়াল হল ওকে ১ সপ্তাহ ধরে ফেসবুক/ইয়াহু এ দেখি না। মনের মধ্যে কেমন জানি লাগল, কি ব্যপার নেই কেন? এরপর থেকেই টের পেলাম ওর প্রতি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছি, নিজের কাছেই হাসি পেল, এই আমি জীবনেও যে এমন পরিস্থিতিতে পড়ব কল্পনাও করতে পারি নি। যত দিন যেতে লাগল আমার মাঝে কেমন যেন একটা হাহাকার বাড়তে লাগল।

যদিও তা অতটা সিরিয়াস ছিলাম না। কিন্তু কেমন জানি লাগত। যাই হোক। সম্ভবত রোজার ঈদ এর দিন সন্ধে বেলায় বাইরে আড্ডা মারতে যাব বলে রেডি হচ্ছি, সে সময় আমার মোবাইলে একটা ফোন আসে। ফোনটা ছিল ওর।

বলল যে ওর কম্পিউটার নাকি নস্ট হয়ে গেছে তাই আর ফেসবুকে বসতে পারেনি, ওর ভাই এর পরীক্ষা শেষ না হয়া পর্যন্ত কম্পিউটার ঠিকও করবে না। ও নতুন ফোন কিনেছে। আর তখন আমাকে ফোন দিল। কিছুক্ষন কথা বললাম। কথা শেষে আমার কেমন একটা শান্তি শান্তি ফীল হতে লাগল, মনে হল হারানো কিছু যেন ফিরে পেলাম।

খুব ফুরফুরে মেজাজে বাসা হতে বের হলাম। এরপর এভাবে ফোনে কথা হতে হতে অনেকদিন কেটে গেল। কোরবানির ঈদ চলে এল, ঈদ এর আগের দিনের আগের দিন, আমি নিশ্চিত না, গরু কিনে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার যখন বের হলাম রাতের বেলায়, ওকে ফোন দিলাম, খবর নিলাম। বলল যে এবার নাকি কাজিনের বাসায় ঈদ করবে, ওর কাজিনের বাসা মিরপুর ১০ এর ওইদিকে। আমি বললাম আমি তো প্রায়ই সেদিকে আড্ডা মারতে যাই।

ও বলল যে ঈদ এর দিন দেখা করবে। আমি বললাম ওকে। ঈদের দিন বিকাল ৪টার দিকে বের হলাম বাসা হতে। ভাইয়া বাইকে করে পৌঁছে দিল ১০ নম্বর এলাকায়। কিছুক্ষন পর ও আসল, সাথে ওর কাজিন।

ওকে দেখে আমার এতো ভাল লাগছিল, মানে সেদিনের অনুভুতি প্রকাশ করার মত ভাষা আমার নেই। সবচেয়ে সুন্দর লেগেছিল ওর চোখ, কাজলের বেস্টনীতে অদ্ভুত সুন্দর দুটি চোখ । সেদিনই আমি ভাল করে বুঝে যাই যে আমি ওর প্রেমে পড়েছি। ওর সাথে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলাম। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে।

ও প্রস্তাব দিয়েছিল হাঁটার, আমি বললাম ওই এলাকায় আমার বন্ধুর ছড়াছড়ি। ওরা দেখলে পরে আমাকে খোঁচাবে। তো ওর কাছ হতে বিদায় নিয়ে আড্ডাস্থলে এলাম, কিন্তু আড্ডায় মন বসাতে পারলাম না। মন তো ও কেড়ে নিয়ে গেছে। এখনো ওর সাথে কথা হয়, দেখা হয়।

এইতো কাল আবার দেখা করতে যাব। কিন্তু সবকিছুই FRIENDSHIP এর চাঁদরেই হচ্ছে। ওকে আমি এখন বলিনি আমার ভাললাগার কথা। কেন? ? ? ঈদ এর দিন যখন দেখা করতে গিয়েছিলাম তখন অনেক কথার মাঝখানে ও আমাকে বলেছিল, "যার সাথে একবার FRIENDSHIP হয় তাকে আর অন্য চোখে দেখা যায় না"। আমি কথাটার প্রতিবাদ করিনি, কেন করিনি যানি না।

এখন যদি ওকে আমি আমার ভাললাগার কথা জানাই, আর ও যদি তা গ্রহন না করে, ওর সাথে আমার এত সুন্দর FRIENDSHIP টা ভেঙ্গেচুরে তছনছ হয়ে যাবে। সেটা আমি হতে দেই কি করে? তাহলে তো সারাজীবনের জন্য ওকে হারাব। এরচে FRIENDSHIP এর মধ্যে বেঁচে থাক আমার ভাললাগা। আমি যখনি ওর দেয়া সেই গানটা শুনি, তখনি ওর কথা মনে পড়ে যায়। গানটা আমার কখনই শুনতে বোর লাগেনি, গানটা শুনলেই মনটা কেমন করে ওঠে।

I LOVE YOU AURU.......................................!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।