শেরপুরের ঐতিহাসিক মা ভবানীর মন্দিরস্থলে রাম নবমী উৎসব
শেরপুরে মা ভবানী মন্দিরের শাঁখারী পুকুরে স্নানকালে প্রার্থনারত ভক্তকূল
শেরপুর (বগুড়া) :
বগুড়ার শেরপুরের ঐতিহাসিক পীঠস্থান মা ভবানীর মন্দির সংলগ্ন শাঁখারী পুকুরে গতকাল মঙ্গলবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা রাম নবমী স্নানে অংশ নেন। 'হে মহাভাগ শাঁখারী পুকুর, হে লৌহিত্য আমার পাপ মোচন কর' -এ পবিত্র মহামন্ত্র উচ্চারণের মধ্যদিয়ে লাখো পূণ্যার্থী এ রাম নবমী স্নানে অংশ নেন। এ উপলক্ষে গত সোমবার বিকেল থেকেই দেশ বিদেশের পূণ্যার্থীরা আসতে থাকেন। গতকাল মঙ্গলবার দর্শনার্থীদের পদভারে মন্দির প্রাঙ্গন ও আশেপাশের এলাকা কানায় কানায় ভরে ওঠে। অতীত জীবনের পাপ মোচনসহ পূণ্যলাভের আশায় উপমহাদেশের ৫১টি পীঠস্থানের অন্যতম এ মন্দিরস্থলে বসে পূণ্যার্থীদের মিলনমেলা।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ভারত, নেপাল, ভুটানসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পূণ্যার্থীরা এসেছেন পূণ্য সলিলে স্নান করতে। ধর্মীয় শাস্ত্রমতে দিনটিতে এ স্থানে অংশ নিলে তার অতীত জীবনের পাপ মোচনসহ পূণ্যলাভ হয়। আর সেই আশায় দেশ বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত নরনারী ও শিশু কিশোর মন্দিরের শাঁখা পুকুরে স্নান করেন। সেই সঙ্গে ঐতিহাসিক এই মন্দিরে রক্ষিত প্রতিমা দর্শন, পূজার্চনা, ভোগদান, অর্ঘ্যদান, মাতৃদর্শন করেন ভক্তরা। মন্দিরের পক্ষ থেকে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
সোমবার রাত থেকেই তিথি অনুযায়ি মা ভবানীর মন্দিরে রাম নবমী উৎসবে যোগ দিতে পূণ্যার্থীরা আসেন। এজন্য অসংখ্য দর্শনার্থী মন্দির এলাকা ও আত্মীয়স্বজনের বাসাবাড়িতে রাত্রি যাপন করে থাকেন। রাম নবমী উৎসব উদযাপন কমিটির অন্যতম সদস্য নিমাই ঘোষ ও সুজিত বসাক জানান, এ উৎসবে এবার লাখো ভক্ত অংশ নিচ্ছেন। প্রতি বছর চৈত্রের রাম নবমী তিথিতে মন্দির ও তার আশেপাশের এলাকাজুড়ে এ স্নান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। যুগ যুগ আগে থেকেই এ ধর্মীয় তিথি উৎসব পালন হয়ে আসছে।
এ বছরও এখানে দেশ বিদেশের বিপুল সংখ্যক ভক্তবৃন্দের সমাগম ঘটেছে। এখানে দূর-দূরান্তের পূণ্যার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও করা হয় বলে তারা জানান। রংপুর থেকে আসা চন্দনা রানী ঘোষ, কুরণা রাণী বলেন, মায়ের দর্শন নিতে এখানে এসেছি। এর আগেও অনেকবার মায়ের মন্দিরে এসেছি। মনের আশা পূরণে স্নান শেষে মায়ের কাছে আশির্বাদ চেয়েছি।
ঈশ্বরদীর রূপালী বরাতি বলেন, এখানে এলে দেহ মন পবিত্র হয়। তাই মায়ের মন্দিরে এসেছি। একই কথা জানান আরো অনেকে।
মা ভবানীপুর মাতৃমন্দির মহাশক্তির ৫১টি পীঠস্থানের অন্যতম। কালিকাপুরাণ অনুসারে দক্ষযজ্ঞে দেবী সতীর স্বামী নিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেন।
সতীর প্রাণহীন দেহ স্কন্ধে নিয়ে দেবাদিদেব মহাদেব প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। সেই মহাপ্রলয় নৃত্য থেকে বিশ্ব ব্রহ্মান্ড রক্ষা কল্পে স্বয়ম্ভু বিষ্ণু সুদর্শণ চক্র দ্বারা সতীর প্রাণহীন দেহ ৫১টি খন্ডে বিভক্ত করেন। সেই সব দেহখন্ড বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পতিত হলে একান্নটি পীঠস্থানের উদ্ভব হয়। ভবানীপুরে দেবীর বামতল্প বা বামপাজরাস্থি মতান্তরে দক্ষিণ চক্ষু পতিত হয়েছিল। এই পীঠস্থানে দেবীর নাম অর্পনা (ভবানী) এবং বামন ভৈরব।
এদিকে এ উপলক্ষে প্রতিবছর মা ভবানী মন্দিরের চারপাশে তিনদিন ব্যাপি মেলা বসে। মেলায় মিষ্টান্ন সামগ্রীসহ পাওয়া যায় রকমারি খাবার। সেই সাথে শিশুদের বিভিন্ন খেলনা, ইতিহাস ঐতিহ্যখ্যাত বই পুস্তকও মেলায় পাওয়া যায়। মেলায় উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য নানা প্রজাতির মাছ। এছাড়া মাংস, বিভিন্ন তরিতরকারি এবারের মেলায় পাওয়া যাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।