আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু ভাই বোনেরা সাবধান হও।



এটা মূলত তাদের জন্যই লিখা, যারা এইবার এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। তোমরা ভালো করে পড়ালেখা করো, ভালো ফলাফল করো, যাতে একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারো। ভালো বিশ্ববিদ্যালয় বলতে শুধু সরকারীগুলো না, বেসরকারী যে ৫-১০টা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলে সবাই চিনে, সুনাম আছে, তারা কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা নেয়। তাই শুধু টাকা থাকলেও হবে না, ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই টিকতে হবে। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে কোথাও চান্স না পেলে আমার বাপের টাকা আছে, আমি টাকা দিলাম আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম, সেই যুগ মনে হয় শেষ হতে চলেছে।

অনেকগুলো বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু টাকা দিলেই হয়, ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া লাগে না, কিংবা পরীক্ষা হলেও তা নামে মাত্র। আমার লিখা এই শেষের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর। অনেকটা বলা যেতে পারে B, C কিংবা D ক্যাটাগরীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন ছাত্র ভর্তি করাতে পারবে না। কারণ, অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়েই আগামী সেশনে নতুন ছাত্র ভর্তি করাতে পারবে কিনা সন্দেহ জাগছে। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এক নির্দেশই এর কারণ।

বিশ্ববিদ্যালয় স্হাপন করার দীর্ঘ সময় পরও নিয়ম অনুযায়ী স্হায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারাতে এই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর প্রতি নতুন ছাত্র ভর্তির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। বিস্তারিত জানতে চাইলে নিচের খবরটা পড়ে দেখো। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে দেশের সিংহভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ওই সময়ের মধ্যে নিজস্ব এক একর জমিতে ক্যাম্পাস স্থাপন করতে না পারলে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তে দেশের প্রায় ৩৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হয়ে যাবে।

এতে বিপাকে পড়বেন লাখ লাখ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। তাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতারা জানান, তিন বিঘা নিজস্ব জমিতে ক্যাম্পাস স্থাপনের শর্তটি অত্যন্ত কঠিন। শর্ত পূরণ করতে গিয়ে ঢাকা শহরে 'তিন বিঘা, অখণ্ড, লাগোয়া, নিষ্কণ্টক' জমি খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। জমি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করেও জমির সন্ধান মিলছে না।

প্রতিষ্ঠাতারা বলছেন, ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৫টিই ঢাকা শহরে। রাজধানীতে একসঙ্গে তিন বিঘা জমি খুঁজে পাওয়া রীতিমতো দুঃসাধ্য। আবার সেই জমি হতে হবে নিষ্কণ্টক। ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্যই রাজধানীতে ১০৫ বিঘা জমি দরকার। সরকার জমি খুঁজে দিলে উপযুক্ত মূল্য পরিশোধে তারা রাজি।

কয়েকজন প্রতিষ্ঠাতা ভিসি সমকালকে বলেন, কেবল জমির পরিমাণ দিয়ে পৃথিবীর কোথাও শিক্ষার মান মূল্যায়িত হয় না। এটা হতেও পারে না। গত ১২ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এক সংবাদ সম্মেলনে ৪১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সরকারের রেড অ্যালার্ট জারির সিদ্ধান্তের কথা জানান। একই সঙ্গে তিনি জানান, আগামী ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব জমিতে ক্যাম্পাস স্থানে ব্যর্থ হবে তাদের শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে যেসব শিক্ষার্থীর কোর্স চলমান থাকবে তারা পড়াশোনা শেষ করা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলবে।

দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন ৫১টি। এর মধ্যে ৪১টিরই নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই। বাকি ১০টির মধ্যে আটটি নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করে পরিচালিত হচ্ছে এবং অপর দুটি_ 'আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ' এবং চট্টগ্রামের 'ইস্ট-ডেল্টা ইউনিভার্সিটি'র মেয়াদ এখনও ৫ বছর পূর্ণ হয়নি। 'বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০'-এর শর্ত অনুসারে নিজস্ব ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ৫ বছর সময় দেওয়ার কথা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন আইন জারি হওয়ায় সব বিশ্ববিদ্যালয় এ আইনের আওতায় পড়বে।

তাই ৫ বছর সময় না দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা এ প্রজ্ঞাপনটি নতুন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। জানা গেছে, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি বছর প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তি হচ্ছেন। হঠাৎ করে ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হলে এসব শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে, না হলে তাদের বিদেশে চলে যেতে হবে। বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক স্তর উত্তীর্ণ হচ্ছেন। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মাত্র দুই লাখ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারছে।

বাকিরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতাদের সংগঠন 'অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিস অব বাংলাদেশে'র অন্যতম নেতা ও 'ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে'র প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী সমকালকে বলেন, 'বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বন্ধ করে দিলে উচ্চশিক্ষার প্রবাহ বাধা পাবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ' ড. মান্নান আরও বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অনেকগুলো শর্তের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাস একটি মাত্র শর্ত। শুধুমাত্র একটি শর্তের ওপরে ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া কোনো নির্বাচিত সরকারের কাজ নয়।

' ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. সাইফুল মজিদ বলেন, 'সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাস্তবতার আলোকে। ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া বাস্তবতাবর্জিত সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন ভিন্ন বয়স। সবাইকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ক্যাম্পাস করতে বলা যুক্তিযুক্ত নয়। ' তিনি বলেন, সরকার আরও তিন বছর সময় দিলে ভালো হয়।

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক বলেন, ছাত্র ভর্তি বন্ধ না করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সময় ও সুযোগ দিলে সবার জন্যই ভালো হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষাবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক ড. বেগম জাহান আরা সমকালকে বলেন, 'শিক্ষার হার বাড়াতে ও উচ্চশিক্ষার বিস্তার ঘটাতে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ না করে ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। জমি সংকটের দিকটি বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান নিজস্ব মালিকানাধীন 'ফ্লোর স্পেস'ও বিবেচনায় নিতে হবে। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাসেম হায়দার বলেন, ঢাকা শহরে জমির অপ্রতুলতা সবার জানা।

সেখানে জমির পরিমাণ নির্ধারণ করে আইন করে দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্যাম্পাস স্থাপন করতে পারছে না। ইউআইইউর উপাচার্য প্রফেসর ড. এম রিজওয়ান খান সমকালকে বলেন, নিজস্ব ক্যাম্পাস থাকা খুবই ভালো, তবে তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। গত ৪-৫ বছরে ঢাকা শহরে জমির দাম বেড়েছে ৮-১০ গুণ। তাই নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যে বিপুল অর্থ আয় করতে হবে, তা রীতিমতো অসাধ্য। ইউজিসির বক্তব্য : বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, '৫ বছরে ৫ একর জমির ওপর নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করার শর্তে রাজি হয়ে প্রতিষ্ঠাতারা বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছেন।

এখন তারা কেন বলছেন জমি পাওয়া সম্ভব নয়? প্রতিষ্ঠাতাদের পরামর্শেই আইনের শর্ত শিথিল করে ৫ একর জমির পরিবর্তে এক একর করা হয়েছে। এরপরও তারা বলছেন, জমি পাওয়া সম্ভব নয়। সরকার আর কত ছাড় দেবে?' শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সমকালকে বলেন, 'সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ই উচ্চশিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সব শিক্ষার্থীই আমাদের, আমরা তাদের অভিভাবক। তাই তাদের স্বার্থ দেখা দায়িত্ব।

' তিনি বলেন, 'হঠাৎ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বন্ধ করে দিতে আমরা চাইনি, তাই প্রথমে এ বছরের সেপ্টেম্বর এবং পরে আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভর্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। এ সময়কে কাজে লাগিয়ে যারা নিজস্ব ক্যাম্পাস করতে পারবে, তারা নিঃসন্দেহে আরও সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। ' কেন শিক্ষার্থী ভর্তির মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন, আর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, 'যারা ৫ বছরের মধ্যে ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১২-১৪ বছর কাটিয়ে দিল, আমরা কোন ভরসায় তাদের ছেড়ে দেব? যেসব বিশ্ববিদ্যালয় কোনো নিয়মকানুন মানবে না, নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষামান বজায় রাখবে না, তাদের ব্যাপারে অবশ্যই সরকারের দায়-দায়িত্ব রয়েছে। ' নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, 'বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যারা জমি কিনবে, ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠায় হাত দেবে, তাদের আন্তরিকতার পরিচয় দেবে, তাদের বিষয়টি অবশ্যই ভেবে দেখা হবে। যারা কিছুই করবে না, অবশ্যই তাদের শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে।

' Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৬১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.