হতাশা আর দু;খ ব্যাথা যাদের দেখে থমকে দাঁড়ায় আজকে তাদের খুব প্রয়োজন, বিশ্ব এসে দু হাত বাড়ায়।
মাছের দরদাম চূড়ান্ত করে দোকানী যখন মাছ পাল্লায় মাপছিল, সেদিকে সতর্ক নজর রাখছিলাম। বেটারা সুযোগ পেলেই মাপে ফাকি দেয়। মনে হলো কেউ একজন আমার হাত ধরে দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করছে। নিচের দিকে তাকাতেই দেখি ৮-১০ বছরের একটি ছেলের মিনতি ভরা চেহারা।
স্যার, মাছ কাটাবেন?
কৌতুহলী হই, জিজ্ঞেস করি কৈ মাছ কাটতে পারিস?
পারি স্যার, সব মাছ কাটতে পারি। আমার ভাই আছে, দুই ভাই মিলে কাটি। দুই কেজি মাছ তো, চল্লিশ টাকা দিয়েন।
ত্রিশ টাকা দাম ঠিক হতেই দোকানীর কাছ থেকে ছোঁ মেরে মাছগুলি নিয়ে যায়। দক্ষতার সাথে এক একটি জ্যান্ত কৈ মাছ পলিথিন থেকে বের করে, কাঠের মুগর দিয়ে জুতসই একটা বাড়ি দিতেই মাছটির নড়া চড়া বন্ধ হয়ে যায়।
এভাবে সবগুলি মাছকে আধামরা করে আবার নিয়ে তার ভাই মতির কাছে। মতির বয়স ১২ বছর। এবার সে মাছ গুলির আঁশ তুলতে থাকে দ্রুত, আর মতি তার চে সাইজে বড় বটি দিয়ে মাছগুলি কাটতে থাকে। ব্যাস্ত হাতে কাজ করতে করতে চোখ থাকে সতর্ক, কোন খরিদ্দারের মাছ ওয়ালার সাথে দরদাম ঠিক হলেই দৌড়ে যায়, স্যার মাছ কাটবেন??
ও হ্যা, ছোট ছেলেটির নাম সুয়েল (মনে হয় সোহেল বিকৃত হয়ে সুয়েল হয়ে গেছে)। বয়স আট বছর।
কয়েক বছর আগে ওরা বাবা হারিয়েছে। মা কে নিয়ে তিন ভাইয়ের সংসার। তিন ভাই পালাক্রমে মাছ কেটে সংসার চালায়।
দেশের জন্য কি করেছে বলতে গেলে আমাদের সরকার কিম্বা বিরোধী দল ঘন্টার পর ঘন্টা উন্নয়নের ফিরিস্তি দিতে পারবে। কর্পোরেটদের ঘটা করে করা সিএসআর লিস্টও অনেক লম্বা হবে।
বড়লোকেরা লাইন করে বছরান্তে যাকাতের শাড়ি-লুংগী বিতরন করে নিজেদের প্রদর্শন করবে।
কিন্তু সুয়েল-মতি এদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। তারা বঞ্চিত লেখা-পড়া থেকে, আনন্দময় শৈশব থেকে স্বপ্নময় ভবিষ্যত থেকে।
আসুন, আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব এই সব বঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করি, ওদের স্বপ্ন দেখতে শিখাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।