আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কালোরাত্রির শহীদদের স্মরণে..

আমার চাতক চোখে তুমি হবে দূরের আকাশ...

আমার এ লেখা আবেগাল্পুত মনে উত্সর্গ করলাম সেই সব শহীদদের স্মরণে যারা... আজ ঈদের দিন, কান্নার রোল থেকেই অনুমান করে নিতে অসুবিধা হল না বাড়ীতে কেউ মারা গেছে। বাড়ীর ভিতরে ঢুকতেই সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদ যেকোন কঠিন হৃদয়ের লোককেও কাঁদিয়ে ছাড়বে। ঘটনাটি বহুদিনের কিন্তু আজও স্মরণ করা হয় সেদিনকে... সেই ঈদের দিন এলে মা রান্না ঘরের কোন এক কোনে বসে তার হারানো সন্তানের কথা স্মরণ করে সকলের অজান্তে অশ্রু ঝরায়। হয়তবা ঈদের দিনে সুন্দর একটি খাবার তৈরী করে মা মনে মনে ভাবছে... আমার ছেলেটা এ খাবারটা খুব পছন্দ করতো। তখন হয়ত মায়ের মনটা বড় বেশী আবেগময় হয়ে যায় তার সেই হারানো সন্তানের জন্য চোখের পানি ছেড়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদে।

বাবা মনমরা হয়ে কোথাও বসে ভাবে আজ যদি ছেলেটা বেঁচে থাকতো তবে এত্ত বড়টি হত... সাল ১৯৭১, ২৫শে মার্চ, কালো রাত্রি... এক রাতে এত মায়ের বুক খালী হওয়ার নজির ইতিহাসের কোন যুদ্ধে নেই। একরাতে এত সংখ্যক বিধবা হওয়ার রেকর্ড হয়তবা কোথাও পাওয়া যাবে না। এরা সবাই দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। এদের কারণে আজ আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। যদি তারা সেদিন জীবন না দিত তবে হয়তবা কোনদিনই বাঙালী জাতি পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার দুঃসাহস দেখাত না।

তাদের ঢেলে দেয়া রক্তে বাঙালী জাতির মৃতপ্রায় শরীর ও মনে প্রাণের সঞ্চার ঘটেছিল। হাজার হাজার মা-বোন ইজ্জত লুটিয়ে বাঙালী জাতিকে শিক্ষা দিয়েছিল যে, ইজ্জত রক্ষা করতে হলে অস্ত্র তুলে নাও, ঝেঁটিয়ে বিদায় কর মানুষরূপী এ কুত্তাগুলোকে। এ মনোবল এক বা দুটি শহীদের রক্তে তৈরী হয়নি। লাখ লাখ শহীদ নিজেদের রক্তে গোসল করে শাহাদতের সুধা পান করে সকল শ্রেণীর লোকদের যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল। শহীদদের পর মুক্তিবাহিনী শহীদদের রক্তের মূল্য দিতে দেশকে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে ছিনিয়ে এনেছিল।

কিন্তু আমরা কি পেরেছি শহীদদের রক্তের মূল্য দিতে? আমরা পারিনি তাদের সম্মান রক্ষা করতে, আমরা পারিনি তাদের রক্তের মূল্য দিতে... কিন্তু নিজেদের সংস্কৃতিকে, বাঙালী সংস্কৃতিকে ভুলে যখন আমরা ভারত বা পাকিস্তানী সংস্কৃতিকে নিজেদের জীবনে ইমপোর্ট করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাই তখন হয়তবা শহীদদের আত্মা এদেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে এটাই বলে ওঠে... এদের জন্য প্রাণ দিলাম!? ২৬শে মার্চ উপলক্ষে সামুতে বিভিন্ন পোষ্ট দেখলাম। ভালই লাগছে। কিন্তু আমাদের উচিত শহীদদের এ অবদানকে শুধুমাত্র শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে চিন্তা করা তাদের মহান উদ্দেশ্যকে সফল করার উদ্দেশ্যে যার যার স্থান হতে অবস্থান গ্রহণ করা। প্রথমে যে ঘটনাটি দিলাম তা শুধুমাত্র একটি বিষয়কে স্মরণ করার জন্যই। তা হল গতকাল ২৫শে মার্চ রাতে এমন কোথাও কোন বাঙালী কি ছিল যে হাসি-তামাশা না করে শহীদদের শোকে শোকার্ত থেকেছে? আমার মনে হয় যদি কেউ শোকার্ত থাকে তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য।

৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাত্রি ২৬শে মার্চ আমাদের দেশের সমস্ত জায়গা হয়েছিল মরা বাড়ীর ন্যায়। তারপরও আমরা শহীদদের স্মৃতিকে ভুলে মরা বাড়ীতেও আজ হাসি-তামাশার আয়োজন করেছি। কলেজ-ভার্সিটিগুলোতে হয়তবা চলেছে আড্ডা, বন্ধু মহলে ভুলেও একটি বারের জন্য শহীদদের স্মরণ করে এক ফোঁটা চোখের পানি কেউ ঝরায় নি। আমার এ লেখা আবেগাল্পুত মনে উত্সর্গ করলাম সেই সব শহীদদের স্মরণে যারা আমাদের স্বাধীনভাবে মাথা উচু করে বেচে থাকার জন্য নিজেদের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটি বিলিয়ে দিয়েছিলেন। #


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।