We Are For All !
প্রশান্ত মহাসাগরের বিচ্ছিন্ন একটি অঞ্চল। রানু কাও, মনগা তেরেভাকা ও কাটিকি নামের তিনটি আগ্নেয়গিরি দ্বারা বেষ্টিত এক নির্জন দ্বীপ। নাম তার ইস্টার। এই জনবিরল দ্বীপেই নীরবে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য পাথরের তৈরি ভাস্কর্য। সব মিলিয়ে প্রায় হাজারখানেক।
কিন্তু কারা এই মূর্তিগুলো তৈরী করলো? কবেই বা তৈরী করলো? আর কেনইবা তৈরী করলো? না এর কোন উত্তর নেই অন্তত আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ভাষায়, এ ভাস্কর্যগুলোকে বলা হয় মোয়াই। পুরো দ্বীপে সব মিলিয়ে প্রায় হাজারখানেক মোয়াই আছে। প্রতিটিই ১২ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট। একেকটির ওজন প্রায় ২০ টনেরও বেশি।
দ্বীপের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্যটি ৩২ ফুট উঁচু। এটির ওজন প্রায় ৯০ টন। তবে দ্বীপের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো সাতটি বৃহদাকার ভাস্কর্য। যাদের আসলে ‘নেভল অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ বলা হয়। স্থানীয় ব্যক্তিদের বিশ্বাস, এই ভাস্কর্য্য-এর শরীর স্পর্শ করলেই অনুভব করা যাবে সারা পৃথিবীর শক্তিকে।
এ ছাড়া ইস্টার দ্বীপে আছে ‘আহু’ বলে পরিচিত পাথরের বিশাল বিশাল প্ল্যাটফর্ম। আছে পাথরের তৈরি বিস্ময়কর দেয়াল, পাথরের ঘর ও গুহাচিত্র। পরস্পর সংগতিহীন এসব সৃষ্টি বিস্ময়কে যেন আরও বাড়িয়ে দেয়।
বর্তমানে ইস্টার দ্বীপ এখন দারুণ একটা পর্যটনকেন্দ্র। স্থানটিকে বিশ্বের অন্যতম ‘হেরিটেজ সাইট’ হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
নির্জন এ দ্বীপের জনসংখ্যা এখন প্রায় চার হাজার। বলা হয় ১৭৭২ সালে কোনো এক ইস্টার সানডে উত্সবে অ্যাডমিরাল জ্যাকব রগেউইন দ্বীপটি আবিষ্কার করেন। ডাচ্ এই অভিযাত্রীই দ্বীপটির নাম দেন ‘ইস্টার আইল্যান্ড’।
ইংরেজ অভিযাত্রী ক্যাপ্টেন কুকও নাকি দ্বীপটি ঘুরে গিয়েছিলেন। সে সময় এক পলিনেশীয় দোভাষীর মাধ্যমে তিনি স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বলেও জানা যায়।
এরপর ধীরে ধীরে ইংরেজ, পর্তুগিজ ও স্প্যানিশ অভিযাত্রীদের কাছে দ্বীপটি ছিল এক রকম বন্দর। তারা দ্বীপের অধিবাসীদের ধরে নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিক্রি শুরু করেন। বিদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়া এবং দ্বীপের প্রতিকূল পরিবেশ, সব মিলিয়ে কমতে শুরু করে দ্বীপের লোকসংখ্যা।
কিন্তু এর পূর্বাপর কোনো ঘটনাই এই ব্যাপারটি পরিষ্কার করতে পারে না যে, ইস্টার দ্বীপের মূর্তিগুলো কারা তৈরি করেছে। অনেকে মনে করেন, দ্বীপটিতে বাইরের জগত্ থেকে অভিবাসীরা বাস করে গেছে।
ভিনগ্রহের সেই প্রাণীরাই তৈরি করেছে এই মূর্তিগুলো। অনেকে বলেন, দ্বীপের বাসিন্দারা ছিল প্রাচীন মিসরীয়। অনেকে আবার মোয়াইগুলোর সঙ্গে প্রাচীন পলিনেশীয় জাতির ধর্মীয় দেবতা ও পূর্বপুরুষদের অবয়বের মিল খুঁজে পেয়েছেন।
আবার কেউ কেউ ধারণা করেন, দ্বীপে বসবাসরত সেই বাসিন্দাদের প্রতিটি পরিবারের সমাধিস্তম্ভ হিসেবে বানানো হতো একেকটি মোয়াই।
স্থানীয়দেরও আছে আলাদা গল্প —তাদের মতে হুটু মাটু নামের এক ধর্মীয় নেতা কোনো এক যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নির্জন এই দ্বীপে আশ্রয় নেন।
তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বংশধরদের নিয়ে দুটি দল তৈরি এবং তাদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। সেখান থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষের মাধ্যমে শুরু হয় এই দ্বীপের সভ্যতা। এবং তারাই এই মূর্তিগুলোর স্রষ্টা।
তবে এ শতকের মানুষ আজও হাজারো প্রশ্ন নিয়ে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থাকে অজানা রহস্যে ঘেরা মোয়াইগুলোর দিকে। আর ইস্টার দ্বীপের হাজারো মোয়াই নিজের রহস্য নিজ বুকেই ধারণ করেই মাথা উচু করে দন্ডায়মান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।