Never Ever Give Up..... Revenge is Sweet........
প্রকাশনা উৎসবে শর্মিলা বসু, সঞ্চালক রবার্ট হ্যাথওয়ে এবং সাংবাদিক আর্ণল্ড জিটলিন
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে এনা:
একাত্তরে পাক হানাদাররা বাংলাদেশে কোন নারীকে ধর্ষণ করেনি কিংবা কাউকে হত্যা করেনি। অনুমান নির্ভর হয়ে সুসংগঠিত একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালিরা লাগাতার অপপ্রচার চালাচ্ছে। কবিতা, গান, গল্প-উপন্যাস সর্বত্র পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে-যা খুবই দু:খজনক। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের সর্বোচ্চ র্যাং কধারি একজন সৈন্যকে হায়েনা হিসেবে চিহ্নিত করে কামরুল হাসান নামক একজন শিল্পী চিত্র একেঁছেন -এটাও বিকেকপ্রসূত নয়। একাত্তরে ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ এবং ২ লাখ নারী সম্ভ্রম হারানোর তথ্য সঠিক নয়, এ সংখ্যা প্রচার করা হয়েছে সোভিয়েত রাশিয়ার মদদে-এ ধরনের বক্তব্য উপস্থাপনের পর উপস্থিত প্রায় সকলের তীব্র আপত্তির মুখে চুপসে যান বাঙালি বংশোদ্ভূত আমেরিকান লেখিকা শর্মিলা বসু।
পশ্চিম বঙ্গের প্রখ্যাত রাজনীতিক নেতাজী সুভাষ বসুর ভাই সনদ চ্যাটার্জির কন্যা (বস্টনে জন্মগ্রহণকারী এবং বর্তমানে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ফেলো) শর্মিলা বসুর একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘ডেড রেকনিং’ এর প্রকাশনা উৎসব হয় ১৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ববিখ্যাত উড্রো উইলসন সেন্টারে। সারাবিশ্বের মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সুশাসন নিয়ে গবেষণারত এ প্রতিষ্ঠানের এশিয়া বিষয়ক প্রোগ্রাম অফিসার রবার্ট হ্যাথওয়ের সঞ্চালনে এ প্রকাশনা উৎসবে আলোচকদের মধ্যে ছিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম মাইলাম, ১৯৭১ সালে এপির সংবাদদাতা হিসেবে ঢাকায় দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিক আর্ণল্ড জিটলিন, সাংবাদিক আরশাদ মাহমুদ, ভয়েজ অব আমেরিকার সাংবাদিক আনিস আহমেদ, টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্য হিসেবে পাক হানাদারদের সাথে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা বিজ্ঞানী ড. নূরন্নবী প্রমুখ। উল্লেখ্য যে, বহুল বিতর্কিত তথ্যে পরিপূর্ণ গ্রন্থটি ছাপার কাজ শেষ হয়েছে ৩দিন আগে। প্রকাশের আগেই উড্রো উইলসন সেন্টারে প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করায় সুধিজনে কথা চালাচালি হচ্ছিল। এরই বহি:প্রকাশ ঘটে প্রকাশনা উৎসবে লেখিকা শর্মিলা বসুর উপস্থাপনার সাথে সাথে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সেনসাস ব্যুরোর কর্মকর্তা এবং কম্যুনিটি লিডার ড. খন্দকার মনসুর। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে শর্মিলা বসুর বয়স ছিল ১২ বছর, সে সময় তিনি বাংলাদেশে যাননি, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে প্রত্যক্ষ কোন ধারণাও তার নেই। অথচ তিনি লিখেছেন একাত্তরের স্মৃতিচারণ এবং এর পুরোটাই হচ্ছে পাকিস্তানীদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে। এ কারণে তিনি তার গ্রন্থে লিখেছেন যে, বাংলাদেশে সে সময় পাক বাহিনীর সদস্যরা হত্যাযজ্ঞ চালায়নি। কোন নারীকেও ধর্ষণ করেনি।
সে সময় বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত ছিলেন। শর্মিলা বসু তার গ্রন্থে আরো উল্লেখ করেছেন যে, পাঞ্জাবী সৈন্যদের চেয়ে বালুচরা অনেক ভদ্র আচরণ করেছেন বাঙালিদের সাথে। ইত্যাদি।
শর্মিলা বসুর তথ্যক সর্বৈব মিথ্যা ও সত্যের অপলাপ হিসেবে অভিহিত করে এপির সাবেক সংবাদদাতা আর্ণল্ড জিটলিন বলেন, সে সময় আমি পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্যে ঢাকায় ছিলাম। আমি অনেক সময়ই দেখেছি ইয়াহিয়া খানকে মাতাল অবস্থায় তার অধস্তন কর্মকর্তা এবং তার সমর্থক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলতে।
অনেক সময় ইয়াহিয়া খান আমাকেও গালমন্দ করেছেন। আমিও নাকি পাকিস্তানের অখন্ডতা নষ্ট হয় এমন সংবাদ পরিবেশন করছি। মি: আর্ণল্ড বলেন, শর্মিলা বসু ইয়াহিয়া খানের মত মানুষকে ভাল মানুষ হিসেবে উপস্থাপনের প্রয়াস চালিয়ে সে সময়ের প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্তির চেষ্টা করেছেন-যা উচিত হয়নি।
আনিস আহমেদ বলেন, একাত্তরের ২৬ মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পরও পাক বাহিনী সেখানে অবস্থান করায় তারা দখলদার বাহিনীতে পরিণত হন এবং দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ হয়, সেটিকে ‘ভায়োলেন্স’ হিসেবে চিত্রিত করার কোন অবকাশ নেই। একাত্তরে পাক হানাদারদের আচরণ যারা প্রত্যক্ষ করেছেন তারা কখনোই তাদের পক্ষ অবলম্বন করতে পারেন না।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. নূরন্নবী বলেন, খান সেনারা জারজ সন্তান ছিল, হানাদার বাহিনীর মত আচরণ করেছে, ওদেরকে হায়েনা বলাই শ্রেয়, ইয়াহিয়া খানকে পিশাচ, বিশ্ববেহায়া, হায়েনার সাথে তুলনা করে প্রখ্যাত শিল্পী কামরুল হাসান যে চিত্র একেঁছেন তার বিকল্প ছিল না-ইত্যাদি বিশেষণেরই যোগ্য পাক বাহিনীর তদানিন্তন সদস্য-কর্মকর্তারা। ড. নবী বলেন, আমি যুদ্ধে অংশ নিয়েছি, আমার চেয়ে বেশী কেউ বলতে পারবেন না পাক হানাদারদের ব্যাপারে। শর্মিলা বসু যুদ্ধের সময় বাংলাদেশে যাননি, তাহলে তিনি কীভাবে সত্য লিখবেন? অন্যের কাছে শোনা কথায় প্রকৃত চিত্র উপস্থাপিত হবে কি? এছাড়া তিনি সবকিছু শুনেছেন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সে সময় যারা সাপোর্ট দিয়েছেন তাদের কাছে। এভাবে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধকে আন্তর্জাতিক মহলের সামনে হেয়প্রতিপন্ন করার মিশনে কেন তিনি নেমেছেন-এ প্রশ্ন রাখেন ড. নবী।
আরশাদ মাহমুদ আলোচনায় অংশ নিয়ে শর্মিলা বসুর কাছে জানতে চান, পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্খা আইএসআইয়ের কাছে মোটা অর্থের বিনিময়ে তিনি এ ধরনের অসত্য তথ্যে পরিপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন কিনা।
এর জবাবে শর্মিলা বসু ‘না’ বলেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম মাইলাম আলোচনায় হতবাক হয়ে মন্তব্য করেন, একাত্তরে বাংলাদেশে নারী ধর্ষণ এবং গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে-এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। তবে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে প্রকৃত তথ্য সবিস্তারে উদঘাটনে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ম্যারিল্যান্ডের হেমায়েতউল্লাহ পলাশ নামক এক বাংলাদেশী। তিনি তার মন্তব্যে উল্লেখ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সত্য নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জঘন্য অপপ্রয়াসের অংশ হিসেবে শর্মিলা বসু মাঠে নেমেছেন বলে অনেকের ধারণা।
এহেন অবস্থা সম্পর্কে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ৩৫/৩৬ জনের মধ্যে অন্তত : ৫/৬ জন ছিলেন জামাত-শিবিরের সমর্থক। তারা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ না নিলেও আলোচনা শেষে শর্মিলা বসুর ঐ গ্রন্থ ক্রয় এবং তার অটোগ্রাফ নেন। তারা শর্মিলা বসুকে অভিনন্দন জানাতেও কার্পণ্য করেননি।
ড. খন্দকার মনসুর বলেছেন, একাত্তরের ঘাতকদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর শর্মিলা বসুর এ ধরনের গ্রন্থ রচনার মাজেজা নিয়ে সকলকে ভাবতে হবে।
অনুষ্ঠানে একাত্তরের চিহ্নিত একজন ঘাতকের উপস্থিতি কারো দৃষ্টি এড়ায়নি।
দাদা বাবুরা এমন ক্যান ???
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।