আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সহিংসতাকে প্রতিনিয়ত উস্কে দিচ্ছে আমাদের মিডিয়া!

রাতের আকশে তারা দেখতে খুব ভাল লাগে........... চাঁদটা যখন আমাকে দেখে মিট মিট করে হাসে................ সহিংসতাকে প্রতিনিয়ত উস্কে দিচ্ছে আমাদের মিডিয়া! উস্কানির এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা বড়ই কঠিন হয়ে পড়েছে যেনো। কারণ এদেশের গণমাধ্যম, বিশেষ করে টেলিভিশনগুলো যেনো আলাদা নিউজ ফরম্যাট তৈরি করে নিয়েছে বাংলাদেশের জন্য। যেখানে সংবাদের ব্যাকরণ, এথিক্স কিংবা আন্তর্জাতিক মানের বালাই থাকে না বোধ হয়। যেমন হরতালের কথাই ধরা যাক। ১. হরতালে যদি সংঘাত-সংঘর্ষ না হয়, তখন মিডিয়া বলে..‘ঢিলেঢালা হরতাল পালিত’, যাতে এক ধরণের মানে দাঁড়ায়... হরতাল ততটা সফল হয়নি অথবা অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে।

ফলে, হরতাল আহ্বানকারি দলও মিডিয়াকে পারফরমেন্স দেখানোর জন্য ব্যাপক সহিংসতা ঘটায়। ককটেল ফাটায়, সাধারণ মানুষের গাড়ি ভাংচুর করে, আগুন দেয়... এক কথায় দেশ ও দশের ক্ষতি করে। ২.আর হরতালে যখন ব্যাপক হারে গাড়ি ভাংচুর, আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, গ্রেফতার কিংবা রাস্তা অবরোধের মতো ঘটনা ঘটে, তখন আমাদের মিডিয়াগুলো হেডলাইন করে.. ‘ব্যাপক ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাংচুর ও ধরপাকড়ের মধ্য অমুক দলের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত’। এতে নিজেদের খুব সফল মনে করে হরতাল আহ্বানকারি দলটি। কিন্তু, মাঝখান দিয়ে সাধারণ মানুষের কত যে ক্ষতি হয়ে গেলো, সে খবর তারাও নেয় না, মিডিয়াও বলে না।

৩.আবার হরতাল আহ্বানকারি দলের কর্মীরা যদি খুব বেশি রাস্তায় না নামে, তখন মিডিয়া বলে.. ‘হরতাল ডেকে মাঠে নেই অমুক দল’। ফলে, নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে মাঠে নামে তারা। হয় সংঘর্ষ, আহত হয়, মারাও যায়। তখন টিভি চ্যানেলে হেডলাইন হয়- ‘অমুকদলের হরতালে ব্যাপক সংঘর্ষ, সারাদেশে নিহত ১০/২০ কিংবা ১০০’। আর রিপোর্টার তার বিস্তারিত প্রতিবেদনে লেখেন.. ‘হরতালকারি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয় এতো জন’।

কিন্তু, কার গুলিতে কে মরলো, কার ঢিলে কে মরলো; হরতাল আহ্বানকারী মারলো নাকি হরতাল বিরোধীরা মারলো; যে মরলো তার পরিচয়ই বা কি?.. সেসব জানলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকাশ করে না মিডিয়া। আর, এই সুবাদে শুরু হয় দোষারোপের প্রতিযোগিতা। কেউ বলে আমার লোক মরেছে, কেউ বলে ওদের লোক মেরেছে; লাশ নিয়েও চলে টানাটানি। ৪. হরতালের দিন রাস্তায় কিছু গাড়ি চললে মিডিয়া বলে.. ‘হরতালের তেমন প্রভাব পড়েনি, জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক কিংবা অন্য হরতালের চাইতে আজ গাড়ি বেশি চলছে। কিন্তু, স্বাভাবিক কর্ম দিবসের তুলনায় ওইদিন যে ৯৯ শতাংশ গাড়ি কম চলেছে, সেটা জেনেও বলতে চায় না।

ফলে, কাভারেজ পাওয়ার আশায় গাড়ি চলাচলে বাধা দেয় হরতালকারিরা, ভাংচুর করে, আগুন দেয়। হরতালকে দিনকে দিন সহিংস করে তোলার পেছনে মিডিয়ার এমন চেতন-অবচেতন উস্কানি কম দায়ি নয়। তাই হরতাল এখন শুধু এক আতঙ্কের নাম, যার ভয়ে বেশিরভাগ অফিস আদালত, স্কুল-কলেজ দোকান-পাট আর গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। গণমাধ্যমে এই অনুন্নয়ন সাংবাদিকতার সংস্কৃতি সব আমলেই চর্চা হয়। তবে কোনো আমলে কম, কোনো আমলে বেশি।

তবে এই পলিসির জন্য মাঠ পর্যায়ের সংবাদকর্মীরা ততটা দায়ি নয় বলে মনে হয়। বরং, এর সিংহভাগ দায় যেতে পারে বার্তা বিভাগের বসদের। কিছু অংশে দায়ি মালিকপক্ষের রাজনৈতিক পলিসি, সরকারি চাপ আর বিরোধীপক্ষের প্রতি মায়া কিংবা ক্ষোভ। হরতালের মূল কথা হলো.. গাড়ি চলাচল, অফিস-আদালত, দোকান-পাট, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকা। যদি কোনো সহিংসতা ছাড়াই এসব অর্জিত হয়, তবে সেই হরতালকে একটি সফল হরতাল বলা যেতে পারে।

তাই হরতালের দিন সহিংসতার অপেক্ষায় না থেকে, সম্ভবত আমাদের সংবাদের মূল বিষয়বস্তু হওয়া উচিত-ওই দিন গাড়িচলাচল, অফিস-আদালত, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ কতটা চালু থাকলো নাকি থাকলো না। পাশাপাশি দ্বিতীয় বিষয় হতে পারে, হরতালে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আর অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।