বল আমায় সেই সময়ের নেই কেন অস্তিত্ব, বোঝাও আমায় সেই কল্পনার নেই কোন সমাধান.....আমারি স্বপ্ন আজো জেগে রয় আধারো শুন্য চোখে ...
ঘরের সব বাতি বন্ধ, জানালা দিয়ে টুকু টুকু আলো আসছে বাইরের সোডিয়াম বাল্বে আলো থেকে। একটু দুরেই পরে আছে আগোছালো সৃতিগুলো। আজকাল আমার ভিতর একটা অন্য ধরনের উপলব্ধিতা অনুভব করছি যা আগে কখনো আমার ভিতরে ছিলনা। যারপরনাই আমার অনুভুতিগুলোকে নেড়ে চেড়ে দেখছি। হয়ত তা বোঝার চেস্টা করছি অন্য ধরনের উপলব্ধিতা জিনিসটা কি - ?
অনেকদিন হয়ে গেল আলমারির পেছন থেকে কাল হাতটাকে আর দেখা যায় না।
আগে প্রতিরাতে আসতো সেই কাল হাতটা। আমার গলাটাকে চেপে ধরত। সে সময় গুলোকে ভুলে যেতে আমি চাইনা। জীবনকে এগিয়ে নেবার জন্য কিছু কিছু দু:স্বপ্নের প্রয়োজন থাকে। আমার জীবনে তেমন কোন দু:স্বপ্ন না থাকায় আমি এগুলোকে হারাতে চাই না।
পরে না শেষ মেষ বাকী জীবনটা না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে হয়।
আজকাল আমি দু:চিন্তা ছাড়া ঘুমাতে পারিনা। দু:চিন্তা গুলোকে খুজে খুজে বের করে সেগুলোকে সাজিয়ে সাজিয়ে একটার পর একটা করে চিন্তা করতে ভাললাগে। ঘুমটা ভাল হয়। সকালে যখন বিছানা থেকে উঠি তখন অনেকটাই ফ্রেস অনুভুত হয়।
কারন দু:চিন্তা গুলোই দু:স্বপ্ন হয়ে ধরা দেয় আমার ঘুমের মধ্য। অনেকটা থ্রীলার মুভির মত। আমি ঘুমের ভেতর অজানায় ছুটতে থাকি আর আমার পেছনে পেছনে জট পাকিয়ে ছুটতে থাকে দু:স্বপ্ন গুলোর কিছু অজানা ক্যারেক্টার। কখনো কখনো ক্যারেক্টার গুলোকে অবজেক্ট এর অবছায়ায় আমি দেখতে পাই। এসব দেখতে দেখতে রাত থেকে ভোর হয়ে যায়।
আমি ঘুম থেকে উঠি। উঠে হিসাব করতে থাকি ঘুমিয়ে থাকা সময়ের। হুম ৫টা ঘন্টা অন্তত আমি আনন্দে কাটাতে পেরেছি। হোকনা সেটা স্বপ্ন 'কি' 'বা' দু:স্বপ্ন। আমাকে যদি আরও দু বছর বাচতে হয় তাহলে তো সেই সময় থেকে ৫টা ঘন্টাতো চলে গেল।
বাচা গেল। সময় যে আমার আর কাটে না। আমি যে আমার সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে অপেক্ষ্যা করছি। সময় তুমি কবে আসবে।
এখানে সবকিছুতে ধুলো পরে গিয়েছে।
প্রতিদিন ব্যাগ খুলে ছবি গুলো সযত্নে পরিস্কার করে রাখি। জানান দিই তাদের, যে আমি এখনো আছি, এখানে।
কোন একদিনের ভোর বেলাতে হয়ত এ ব্যাগটি আর আমার খোলা হবে না। ব্যাগটি এভাবেই সেখানে গিয়ে পৌছে যাবে, তার হাতে, তারপর সে ওটা খুলে দেখবে, জমাট বাধা রক্তের মত করে নাকের পাশদিয়ে নদীর সৃস্টি করবে। তারপর ভুলে যাবে, এইতো নিয়ম তাইনা।
কিন্তু সেটা কবে? আমার অপেক্ষ্যা কি শেষ হতে আরও বাকি আছে? আমি যে সেই নদীটাই দেখতে চাই। অন্তত কিছুক্ষনের জন্য আমি আবার সেই নদীতে বাইতে পারবো আমার 'নাও' - আমি খুব কাছ থেকে দেখতে চাই সেই মানুষটির ঘৃনাগুলোকে। কিভাবে সে তার ঘৃনাগুলোকে সাজিয়ে রাখে তাও দেখতে চাই। শিখতে চাই। কাছে না যেতে পারলে তো কখনো দেখতে পাবো না।
কাছে গিয়েই আমাকে দেখতে হবে। আমি দু-চোখ মেলে দেখবো তখন। দেখবো অগুলো আমার। আর আমার জন্যই সাজিয়ে রেখেছে কেউ। আমি তা দেখতে চাই ।
তোমরা কেউ আমাকে দেখাও। কিন্তু মুখ দিয়ে বানান করে বললেই যে আমি দেখতে পাবো না তো না। আমাকে যেতে হবে তার কাছে।
এখন যেভাবে আছি সেভাবে আমি কোনদিনও যেতে পারবোনা সেখানে। ওখানে যেতে হলে লাগবে হল আইডি কার্ড মানে গেট পাস।
না, সবার জন্য না। এই দুনিয়াতে শুধু মাত্র আমার জন্যই এই সিস্টেমটা প্রযোজ্য। কোন আইটি প্রঠিস্ঠানের সহায়তার এ কাজটা করিয়েছে ও। মারাত্মক সিকিউরিটি সিস্টেম।
ঐযে কালো হাতটার কথা বলেছিলাম না।
ওটা আমাকে বলেছে, আমাকে নিয়ে যাবে, আর সাথে গেট পাসটাও যোগার করে দিবে, আরও কত কি। কিন্তু কই, আমি তো এখনো মুল বাস্তবেই মজুদ। প্রতিটাদিনই কালো হাতটা আসতো আর আমাকে কস্টদিত, কিন্তু নিয়ে যেত না। ইদানিং সেও আসাই বন্ধ করে দিয়েছে। তাহলে কি আমাকে আরও কিছু দিন ব্যাস্তবেই থাকতে হবে?
আমি কি কারনে ওখানে যেতে চাই ? কিছু কি দেখতে চাই - কিছুদিন আগে ঐ কালো হাতটা আমাকে এ প্রশ্নটা করেছিল।
আমি বলেছিলাম শুধু দেখতে না শিখতেও চাই। অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল কালো হাতটা আর বল্লো 'শিখতে চাও মানে'?
হ্যা, আমি শিখতে চাই, আমার জীবনে অনেক কিছু শেখা বাকী আছে। যেগুলো আমি হয়ত বেচে থাকতে কখনো শিখতে পারবো না। তাইতো ব্যাস্তব থেকে চলে যেতে চাই। হতে চাই একদম মুক্ত, এ শরীর থেকে।
যাতে আমি পেতে পারি সেই আইডি কার্ড, তার পর সারাদিন ঘুরবো। যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাব। ইস ! কত মজা। গানও গাইতে পারবো - 'কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা'। একটা লিস্ট করেছি।
ছোট খাটই হবে হয়ত। লিস্টের ভিতর নাম্বারিং করেছি।
লাল-কালীর কলমটা খুজে পাচ্ছি না। কোথায় যে রেখেছিলাম। ওটা খুজতে গেলাম।
টেবিলেটাতে ময়লা আর ধুলো জমে গিয়েছে। অনেকদিনই তো আমার কোন কাজ নেই এখানে। তাই ময়লা বাবাজিদের এই আয়োজন আমার জন্য।
বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে সাতটা মাস হয়ে গেছে আমি তাদের খবর নিইনা।
ড্রয়ার খুললাম।
কালো কাপড়ে জড়নো একটা খাম। ও আমিতো ভুলেই গিয়েছলাম। এই কালো কাপড় দিয়ে মোড়ানো খামটা আমি নতুন কিনেছি। ঐযে একটু আগে বলেছিলাম আমার একটা গোপন কথা। ওমা ভুলে গিয়েছেন।
ভুলে যাবারি কথা। আমার মত মানুষকে কয়জন আর কতক্ষনি মনে রাখতে পারে। এই যে লেখাটা পড়ছেন - পাশেই লেখা আছে 'রোহান খান'। হয়ত এক বার এই ফাকে আমার প্রোফাইল নেমটা পড়েও নিয়েছেন। কিছুক্ষন পর আপনারও আমার মত একটা অনুভুতি জন্মাবে।
কিসের জানেন? সেটা হল ব্যাক ব্যাটন - আর নয় হয়ত ক্রস চিহ্ন এ ক্লিক। ব্যাস ভুলে যাবেন আপনিও আমাকে সেকেন্ড দশেক পর। এটাই নিয়ম। এটাই বোধহয় একমাত্র সামাজিক দায়িত্ব যা আমরা একশত ভাগ ঠিকমত পালন করে আসছি যুগ যুগ ধরে। আদিম অভ্যাস।
ভুল হবেই না।
আমি কথা ছেড়ে ঢাকার ১৫ নাম্বার বাসের মত রিজার্ভ করে অন্য লাইনে যাচ্ছি। যাকগে - যে কথা বলছিলাম আমি - ঐযে - কালো কাপড় দিয়ে মোড়ানো খামটার কথা বলছিলাম। ওটা খুব কাজের বলে মনে নাহলেও আমার একটা উপকার হয়েছে। ঐযে একটু আগে বলেছিলাম আমার একটা গোপন কথা ব্যাপারটা।
গোপন কথা গুলো এই খামে ভরে কালো কাপড় দিয়ে মুড়ে রাখি। এটার ভিতর জমা করা আছে আমার গোপন কথাগুলো। কি মনে হচ্ছে - কি আছে এতে? আপনি সোজাসোজি বলবেন দু:খ বা কান্না । না, আপনার ভুল ভেঙে দিচ্ছি।
না, এসব না, এখানে সারি সারি করে সাজিয়ে রেখেছি আমার ঘৃনা।
তবে মাত্র দুটো সংগ্রহ করেছিলাম। সেই দুটোই এখানে আছে। কি আর করবো এই লাইনে নতুন তো তাই সহজে কাউকে ঘৃনা করতে পারি না। সাতটা মাসে মাত্র দুটো জমাতে পেরেছি। শবে তো শুরু করেছি।
ব্যাস্তবতা থেকে চলে যাবার আগে ভরিয়ে দিতে চাই এ খামটাকে। কিন্তু একটা ভয় হয়। আমি যে খেলা শুরু করেছি কিন্তু আমার তো খেলার টার্গেট জানা নেই। তাহলে আমি কি করে জানবো আমি কি জিতলাম নাকি হারলাম?
কালো হাতটার জন্য অপেক্ষ্যা করছি। কালো হাতটা চলে আসলে আমি আবার ওকে বলবো আমাকে তারাতারি নিয়ে যাবার জন্য।
ওখানে গিয়ে দেখবো 'ওর' কয়টা ঘৃনা জমেছে। তারপর ফেরত এসে বাকি গুলা চুপি চুপি বানাবো। একটা বেশী বানাবো। কারন ওকে তো হারিয়ে দিতে হবে তাইনা। এই কারনেই অদৃশ্য হয়ে 'ওর' কাছে যেতে চাই।
শুনেছি অদৃশ্য হওয়া অনেক কঠিন কাজ। হাজারটা দিন ধরে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। নিজের মনকে বার বার বোঝাতে হয়। মনে করতে হয়। এছাড়া নিজের মন নাকি সায় দেয় না সে কাজে।
কালোহাতটা বলেছিল এ কথাগুলো কোন একরাতে।
তারপর থেকেই মানসিক ভাবেই আমি প্রস্তুত। কোন একদিন খুব ভোরে বা খুব সকাল বেলা চলে যাবো আমি সেখানে। সফল অবশ্যই হব। কারন সফল আমাকে হতেই হবে।
আমি এদুনিয়ার সবাইকে ঘৃনা করে। যদি এই ঘৃনাগুলো এই খামে জমিয়ে চলে যাই তবে জমে থাকা ঘৃনা গুলো অবশ্যই 'ওর' জমানো ঘৃনার সংখ্যা গুলোকে অতিক্রম করবে ফলে মান (ভারী) আমারটাই বেশি হবে। ।
সকাল হয়ে গেছে। যাই উঠতে হবে ।
অফিসে অনেক কাজ বাকি পরে আছে। এদিকে শুভ্রদা ঘুম থেকে উঠাতে হবে। বেচারা প্রতিদিন মরার মত ঘুমায়। আমি যদই না ডাকদেই তাহলে তো সেদিনটাই তার মাটি। প্রতিদিনের মত ব্রাশ মুখে দিয়ে বাথরুমে ঢুকলাম।
আয়নার দেখি আমার চোখগুলো একদম লাল হয়ে আছে। সারারাত না ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখলে তো এমান হবেই। গোছল করার জন্য রুমে আসলাম। গামছা নিয়ে আবার যাব। একটু আগে লাইট জালাটে ভুলে গেছি।
সকাল ৫.৪৫ বাজে এখন। সূর্য উঠে প্রায় ৬ টার দিকে। তাই এখনো ঘরে অন্ধকার। বাইরে কড়িডোরের লাইটে আলো থেকে একদম অন্ধকারে প্রবেশ করাই কিছুই দেখছিনা।
হাফ প্যান্টের বা পাশের পকেট থেকে ম্যাচ লাইট বের করলাম লাইটে সুইচ খুজে জ্বালাবো বলে।
ম্যাচ লাইট জ্বলানোর সাথে সাথে আমার বিছার নিচের দিকে চোখগেল আমার - দেখলাম - কালো হাতটা উড়ে আসছে আমার দিকে, আমারি গলার বারাবর -
(সমাপ্ত) — feeling tir
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।