http://farm5.staticflickr.com/4084/5106907209_d4c9a50a8b_z.jpg
শম্ভু পালের লম্বা বারান্দার এক পাশে নিথর ও নিঃশব্দ শরীর নিয়ে পড়ে আছে মাটির বিশাল চাক। আগের মতো দেখাও মেলে না সেই রাশি রাশি কাঁচা হাড়ি-মালসা। একরাশ বিষন্নতা গ্রাস করে আছে যেন রায়েরবাজারের পাল পাড়াজুড়ে। যদিও কালের পুতুলের মতো কিছু কুমার পরিবার মাটির গোলাকে শিল্পরূপ দিয়ে যাচ্ছে এখনও। কিন্তু হাজার বছরের সেই ঐতিহ্যিক শিল্প আজ শুধু চোখের আশ মিটাতেই আবদ্ধ।
সেই ৪০ বছর আগের কথা। হাজারিবাগ থেকে মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল রায়েরবাজারের পালপাড়া। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে পিটন আর বাউলার শব্দে সরব হয়ে উঠত কুমারবাড়িগুলো। ঘূণাবতির্ত মাটির চাকটিও বন বন শব্দে রূপ দিয়ে যেত একেকটি মাটির তৈজসপত্রের। কিন্তু প্রাযুক্তিক উন্নয়নের ধাক্কা এসে পড়ে মৃশিল্পেও।
হারাতে থাকে পুরনো সেই ঐতিহ্য। দেখতে দেখতে সৌখিন মানুষের চাহিদা মিটাতে আধুনিকতার ছোঁয়া পড়ে এর ধরণে। যেজন্য শুধুই সৌখিন সামগ্রীর উপর ভর করে নিজেদের টিকিয়ে রাখার প্রান্তাকর চেষ্টা চালিয়ে যায় মৃৎশিল্পীরা। যাদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় মূর্তমান হয়ে উঠে এক একটি মাটির গোলা।
বাড়ির বারান্দা থেকে শুরু করে সবখানেই ছড়ানো-ছিটানো মাটির নানান সামগ্রী।
যেদিকে তাকানো যায় সেদিকে আটকে যায় চোখ। বিছানার ওপর বিছানো কাঠের ওপর সার সার করে দাঁড় করানো শুকনো ও সদ্য তৈরি করা ফুলদানী ও পুতুল। এর মধ্যে ডায়াসে মাটি চড়িয়ে হাতি ও ঘোড়ার আদল দিয়ে যাচ্ছিলেন সবিতা পাল। আক্ষেপের সুরেই বলছিলেন তিনি, “ আগে জায়গার অভাব ছিল না। কাজেই বাসা বাড়ির বাইরের খোলা জায়গায় মাটির এই হাড়ি-পাতিলগুলো রাখা যেত।
এখন ভাড়া বাসায় থাকতে হয়। যেজন্য শত কষ্টের মধ্যেও কাজ করতে হয় আমাদের। ” এর মধ্যে মাটির এই সামগ্রীকে পোড়াতে নিজেদের মতো তৈরি করে নিয়েছে পৌনও। পোড়ানোর সময় প্রতিবেশীরাও আপত্তি করে বসে অনেক সময়। আর যেজন্য সব সমাগ্রী তৈরি শেষ হলেই তবেই সাড়ানো হয় পোড়ানোর এই কাজ।
এর সঙ্গে মাথায় রাখতে হয় সময়কেও।
২০-৩০ বছর আগেও বেশ সরব ছিল এই পালাপাড়া। এর পর পরই অনেক কুমার পরিবার ভারতে পাড়ি জমানো শুরু করে। শুধু রয়ে যায় কিছু পরিবার। যাদের মধ্যে কেউ কেউ এই পেশাকে আকড়ে ধরে টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।
লাভ না থাকায় আবার অনেকে বাধ্য হয়ে সরে দাঁড়ান পৈত্রিক এই পেশা থেকে। এরই মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তির ভিড়ে ধীরে ধীরে কমে যায় হাড়ি-পাতিলের কদর। যেজন্য কুমারদের এক অংশ রাজ মহিলা পালরা আর ধরে রাখতে চায় নি এই শিল্পকে। হাড়ি-পাতিলের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যায় রাজ মহিলা পালও। টিকে থাকে শুধু বাঙ্গালি পাল।
যারা এখনও মাটির কলসের পাশাপাশি তৈরি করে যাচ্ছে বিভিন্ন মৃৎ সামগ্রী। আর মাটির এই সামগ্রী তৈরি করতে প্রযোজন পড়ে এঁটেল মাটির। কিন্তু আগের মতো এই মাটিও আর পাওয়া যায় না। তাছাড়া প্রতি ট্রাক মাটির মূল্যও পড়ে যায় প্রায় ৫০০০ টাকা। যেজন্য মাটির সামগ্রীর মধ্যে তন্দুর চুলা ও শো’পিসের মতো লাভজনক কাজকে বেছে নিচ্ছেন অনেকেই।
যা তৈরিতে জমির সাধারণ ও দোঁআশ মাটি হলেই চলে। আর এভাবেই প্রতিকূলতার মাঝে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখে চলেছেন মৃৎ শিল্পীরা। যেহেতু চাককে ঘিরেই টিকে থেকেছে এই পাল প্রজন্ম। তাই পূর্বপুরুষদের এই কাজকে শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্বকর্মা পূজার আয়োজনে ভাটা পড়ে না এতটুকু। আর এই উৎসবের মধ্য দিয়েই আবারো মুখর হয়ে উঠে রায়েরবাজারের পালপাড়া।
শাপলা বড়ুয়া
()
Daily Samakal
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।