মীর জাফর, ঘষেটি বেগম ইতিহাসে ফিরে ফিরে আসে। মসনদ থেকে সিরাজ কে 'ফেলে' দেবার নামে ফিরে ফিরে আসে শ্বেত-শক্তির উপনিবেশ।
নিভৃত কোণে, জায়নামাজে চোখ মুদে, নিবেদিত চিত্তে নিজেকে প্রভুর কাছে সঁপে দেয়া ধার্মিক; ঝড়ের রাতে বিপদ তাড়ানিয়া দেবতাকে ডেকে, মন্দিরে ঠাকুরের পায়ে ষাষ্ঠাঙ্গে নিজেকে আমূল উজার করে দেয়া পূজারীর প্রাণ— ধর্মের নামে বহুবার খুন হয়েছে; প্রাণহীন দেহ হয়ে পড়ে থেকেছে বাড়ির দাওয়ায়, চৌকাঠে, পথে; ট্রেন ভরা লাশ হয়ে মাতৃভূমি থেকে দেশান্তরী হয়েছে নীড়হারা শান্তিকামী অসহায় অজস্র মানুষ।
তবু ইতিহাস সাক্ষী, সাক্ষী এ ভূ-ভারতের অশোক তমাল হিজলের বন, সাক্ষী দন্ডকারণ্যে হারিয়ে যাওয়া শ্যামল বাংলার কাজলটানা চোখের মিছিল।
তারা জানে, এই সবুজ ভূমি 'জ্বলে পুড়ে মরে ছাড়খার' হতে পারে, 'তবু মাথা নোয়াবার নয়'।
মসনদের লালসায়, 'হিন্দু না ওরা মুসলিম' এই প্রশ্ন তুলেছে যারা, তারা জানে, 'হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ' কেঁপে কেঁপে উঠতে পারে দূরন্ত 'পদ্মার উচ্ছ্বাসে'।
দালালেরা জানে, দেয়াশলাই কাঠি হয়ে বাংলার ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন জ্বেলে গেছে আলো।
আজও শাহবাগে, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে, সিলেট শহীদ মিনারে যে তারুণ্য 'কী দুঃসহ/স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি', এরা সব ক্ষুদিরাম, প্রীতীলতা, সূর্যসেন এর রক্তবীজ এর ধারক, এরা সব কালিয়া মোহন্ত আর কঙ্কা মাঝির বংশধর।
অতএব, কে শোনায় ভয়ের কথা, কে করে দ্বিধার উচ্চারণ? কে বলে, পথে পথে বেরিক্যাড দিয়ে, ছড়িয়ে মিথ্যের গুজব এই জমায়েত ভন্ডুল করা যাবে?
ইতিহাস জানে, শাহবাগে জড়ো হয়েছে যে বয়স, সে বয়স এই কথা বলে বারে বারে ফিরে এসেছে যে: 'অনেক দুঃখে রক্ত আমার অসংযত!'
ইতিহাস জানে, নিজের আত্মাকে যারা সঁপেছে 'শপথের কোলাহলে', ঘরে তারা কোনোকালে, কোনোদিন ফেরে নি তো শূন্য হাতে।
ইতিহাস সাক্ষী, মীর জাফরেরা জন্মেছে যতবার, তারও চেয়ে বেশি বার বাংলার ঘরে ঘরে জন্মেছে- মোহন লাল, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, শেখ মুজিব, মতিয়ূর, নূর হোসেনের দল।
সেই নামের মিছিলই আরো অগুন্তি মুখ হয়ে মিলেছে শাহবাগ চৌরাস্তায়। এই চৌরাস্তাই অজস্র সুকান্তের মুখ হয়ে বলছে:
'অনেক রক্তাক্ত পথ অতিক্রম করে
আজ এখানে এসে থমকে দাঁড়িয়েছি-
স্বদেশের সীমানায়। '
আজ আবারও, কে তুমি মীর জাফর— উদ্যত হয়েছো, এক নদী রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বদেশ কে বিলিয়ে দিতে বিদেশী বণিকের ঘরে?
কে তুমি শঠ, ভণ্ড, ধর্মবণিক— আমার কোমল জায়নামাজ, ঠাকুরের পায়ে রাখা আমার প্রণামকে পণ্য করে বাড়াতে চাও বেসাতি তোমার?
চেয়ে দেখো, দিকে দিকে ঘরে ঘরে অতন্ত্র প্রহরায় জেগে আছে বাংলার তরুণ বয়স।
ও বন্ধু আমার, যে তুমি এখনো ঘুমে, এখনো যার মনিবের কাছে বান্ধা আছে প্রাণ— তুমি একবার চোখ মেলে দেখো; দেখো, তোমার আত্মাকে বন্দী করে কেমন অবিরত খেলাচ্ছে এক দারূন শয়তান।
ও ভাই আমার, তুমি শুনো এ মাটির ডাক।
তুমি ফিরে এসো এই পতাকায়। ফিরে এসো, বাংলার মাঠ-ক্ষেত-নদী ও মানুষ ভালোবেসে।
তুমি জাগো, 'জাগবার দিন আজ, দুর্দিন চুপিচুপি আসছে'।
মসনদে তোমাকে বসানোর টোপ দিয়ে বাংলায় আবারো আসছে শাদা-ইবলিশ। আর তার সাথে সহযোগী হয়ে তোমাকে ধোঁকা দিচ্ছে এই্ জল-হাওয়া ও অন্নে বেড়ে ওঠা বাদামী ইতর।
অতএব, ভাই-বোন-বন্ধুরা, মাতৃভূমির নামে, 'তেরো শত নদী'র নামে, তোমার শৈশবের ছায়া-ঢাকা গ্রামের নামে, 'আজকে শপথ করো সকলে':
'বাঁচাব আমার দেশ, যাবে না শত্রুর দখলে'।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।