দিল ঠান্ডা তো দুনিয়া ঠান্ডা।
সামুর সিনেমাখোর গ্রুপে রবিন হুড (২০১০) মুভিটা নিয়ে একটু হতাশা দেখলাম কয়েকটা পোস্টে। তাদের বক্তব্য মুভিটা তাদের আশা মত হয় নাই।
যাই হোক, মুভিটা দেখে আমার কি মনে হয়েছে এবং কয়েকটা পয়েন্ট এ যে সবাই হতাশ হয়ে মুভিটাকে বাজে বলেছেন, সে ব্যপারে নিজের কিছু বক্তব্য তুলে ধরতে চাই।
মুভিটার উদ্দেশ্যে প্রথম অভিযোগ ছিল এটা আমাদের জানা কাহিনীর সাথে মেলে না।
এ ব্যপারে আমার সীমিত জ্ঞান যা বলে তা হল, রবিন হুড ইংল্যান্ডের একটি কিংবদন্তী স্বরুপ চরিত্র। তার সম্পর্কে তেমন কোন লিখিত তথ্য পাওয়া যায় না, কেবল কিছু গীতি কাব্য ও ছড়া ও কিছু গল্প।
এর ফলে অবস্থা যা দাড়িয়েছে, রবিন হুড আসলে কে ছিল, কিভাবে সে রবিন হুড হয়, কিংবা তার পরিনতি শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিল সে সম্পর্কে তেমন কোন ইদিহাস নির্ভর হার্ড এভিডেন্স পাওয়া যায় না।
সেবা থেকে কাজী আনোয়ার হোসেন যে রবিন হুড প্রকাশ করে ছিলেন, তার ভিত্তি ছিল উপকথা ও গীতিকাব্য যেগুলো ইংল্যান্ডে প্রচলিত। সেটাতে দেখানো হয়েছে রবিন একজন সাধারন মানুষ, যার নাম ছিল রবার্ট অভ লক্সলি।
পরে রাজার রক্ষী বাহিনীর ষড়যন্ত্রে সে দস্যু হয়ে যায়।
যখন সে দস্যু হয়, রানী এলেনর তরুনী, তার স্বামী (নাম মনে নেই) ইংল্যান্ডের রাজা। তার দুই সন্তান হল রিচার্ড দ্য লায়ন হার্ট ও প্রিন্স জন। দস্যবৃত্তির এক পর্যায়ে রাজা রিচার্ডের অধীনে রবিন যোগ দেয় রাজকীয় বাহিনীতে। পরে এক সময়ে জেরুসালেমে ধর্মযুদ্ধ ক্রুসেড এ রাজা রিচার্ড মৃত্যু বরণ করলে ক্ষমতা দখল করে নেন প্রিন্স জন।
এরকম সময়ে রবিন আবার শেরউডে ফিরে আসে এবং জনের সাথে তার যুদ্ধ শুরু হয়।
বিবিসি থেকে রবিন হুড কে নিয়ে একটি সিরিজ বার করা হয়েছিল, সেটাতে দেখান হয়েছে, রবিন নিজেও ক্রুসেড এর একজন নাইট ছিল। যুদ্ধের মাঝে সে কোন কারনে জানি না, ফিরে আসে নিজের এলাকায়, দেখে তার জামিদারি দখল হয়ে গেছে বাবা মারা যাবার পর। মেরিয়ান এর বিয়ে হয় হয় করছে এলাকার প্রভাবশালি খারাপ মানুষ দখলকারী জমিদার এর সাথে। সেখাসে অবশ্য রবিনকে কোন যোদ্ধার বদলে একটা ছিচকে চোরের মতই লেগেছে।
ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে এক ব্রিটিশ গবেষকের বই অনুবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল। সেটা পড়ার সুযোগ হয় নি তাই বলতে পারছি না সেটাতে কি বলা হয়েচিল। তবে অন্য রকম কোন কাহিনী থাকলেও অবাক হব না।
বিটিভি তে যে ফ্যান্টাসী সিরিজ দেখানো হয়েছে রবিন হুড নামে, সেটাকে কি এগুলোর সাথে তুলনা করতে হবে? যে কেউ বুঝবেন, সেটা ছিল দর্শক মাতাবার জন্য একটি ফ্যান্টাসী শো। সুতরাং সে বিষয়ে কথা নাই বা বললাম।
সবশেষে আসি মুভির কথায়। এত লম্বা পোস্ট নিশ্চয়ই বিরক্ত সৃষ্টি করেছে ইতোমধ্যে সবার মাঝে।
মুভিতে দেখান হয়েছে, রবিন রাজা রিচার্ডের একজন সাধারন তীরন্দাজ সৈনিক। তারা যুদ্ধ করছে চিরন্তন ইংল্যান্ড-ফ্রান্স যুদ্ধ। তার নাম রবিন লংস্ট্রিড।
এই যুদ্ধে রাজার সহচর স্যার রবার্ট লক্সলি। রাজা মারা যডাবার পরে তার রাজমুকুট দেশে ফিরিয়ে নেবার দায়িত্ব পায় স্যার রবার্ট। কিন্তু ব্যর্থ হয় প্রিন্স জনের বন্ধু গডফ্রে এর কারনে। সে মারা যায়, শেষ সময়ে রবিন দেখা দেয় যুদ্ধস্থলে। তাকে অনুরোধ করে স্যার রবার্ট, রাজমুকুট দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার এবং তার তরবারি তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দেবার।
একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের শেষ অনুরোধ এবং রাজার বাহিনী থেকে পলাতক রবিন এটাকে একটা সুযোগ হিসেবে দেখে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে দেশ ফেরার।
কাজের সুবিধার্থে স্যার রবাট লক্সলির নাম ও পরিচয় নিয়ে সে রাজমুকুট হস্তান্তর করে। এর পরে সে যায় লক্সলিতে, তরবারি ফেরত দিতে। সেখানে আবার আরেক নাটক। স্যার রবার্ট লক্সলির বাবা ও রবার্ট লক্সলির স্ত্রী মেরিয়ান পড়েছে বিপদে।
তাদের জমিদারির দিকে নজর শেরিফের। বিপদ বুঝে রবার্ট এর বাবা রবিন কে অনরোধ জানায়, তার ছেলে পরিচয়ে থেকে যেতে, যেন তার সম্পত্তি রক্ষা পায়। তার পর নানা কাহিনী। সেদিকে যাব না।
সিনেমার দৈর্ঘ্য অনেকের মনে বিরক্তির সৃষ্টি করেছে, তবে আমি বেশ আগ্রহ নিয়েই দেখেছি।
আমার মনে হয়েছে প্রথম থেকে রবিন এর রবিন হুড হয়ে উঠা স্পষ্ট করতে এই লম্বা কাহিনীর দরকার ছিল। মেকিং ভাল লেগেছ। তবে সিনেমা মুর্খ মানুষ। তাই ভালটা কত ভাল তা যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারবো না। স্রেফ বলবো, ভাল লেগেছে।
অভিনয় ভাল লেগেছে।
রাসেল ক্রো একজন যোদ্ধা, যে অনেক মৃত্যু দেখেছে, দেথেছে অনেক জয় ও পরাজয় এরকম একজন যোদ্ধার চরিত্রে অসাধারন করেছে। তবে এটাও আমার ব্যক্তিগত অভিমত।
শেষে একটা কথাই বলতে চাই, রবিন হুড ইংল্যান্ডের একটা মিথ। তার কাহিনী গল্প নির্ভর, ইতিহাস নির্ভর না।
এই সুযোগে অনেকে অনেক ভাবে তার চরিত্র চিত্রন করেছে। হয়ত সামনেও করবে। তাই সবাইকে অনুরোধ করি, কি চরিত্র তৈরি করল তা না দেখে কতটুকু ভালভাবে রবিন হুড এর চরিত্র তৈরি করল, সেটা দেখেন।
মুভি এর টরেন্ট লিংক: ফেনোপী দিলাম। পাইরেট বে ঝামেলা করতেসে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।