আমাকে যদি পৃথিবির যেকোন দেশে থাকার সুযোগ দেয়া হয় ...তবুও আমি বলবো ...আমি এদেশে থাকতে চাই ... আমি জানি আমার দেশ ঘুনে ধরা ... মরচে পড়া ... তবুও ... আমার দেশ যদি পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে দেশ হয় ... এটা আমার ( তরুন সমাজের ) দ্বায়িত্ব আমার দেশকে সুন্দর করে গড়ে তোলা
১৯৭১ - ২০১১ প্রায় ৪০ বছর ... ভাবতে অনেক মনে হলেও একটি দেশের জন্য তা অল্পই বলা চলে ... কতটুকু এগিয়েছে দেশ এই ৪০ বছরে ... সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি , সমাজ ব্যবস্থা, জীবন যাপনের মান ... ???
১৯৭১ এ আমরা পেয়েছিলাম সদ্য স্বাধীন এক যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ ... অবকাঠামোহীন ... ভাঙ্গা রাস্তাঘাট ... অপরিকল্পিত অগোছালো এক দেশ ...
আমাদের দেশে শিক্ষিত মানুষের হার কত ২০ - ৩০ % মনে হয় ... তাহলে চিন্তা করুন ৭১ তা কি ছিলো ... মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ করেছিলো সবাই ... কৃষক, শ্রমিক, মজুর , চাষি , ছাত্র প্রায় সব পেশাজীবি মানুষ কিন্তু তাদের অধিকাংশই ছিল অশিক্ষিত ... দেশের প্রতি একান্ত ভালোবাসা আর পরবর্তি প্রজন্মের জন্য একটই সুন্দর ভবিষ্যত ই ছিলো তাদের কাম্য ...
কিন্তু দেশ স্বাধীন এর পর যখন এই ভগ্ন অর্থনীতি টাকে দাড় করাতে হবে ... বিদ্ধস্ত দেশটিকে সাজাতে হবে তখন বোধ করি তার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষিত লোক আমাদের দেশে ছিল না ... কারন যুদ্ধ করা আর একটি বিপর্যস্থ দেশের অবকাঠামো দাড় করানো কিন্তু এক কথা নয় ... বোধকরি স্বাধীন দেশে প্রত্যাশার বিপুল চাপ ও দক্ষ ও শিক্ষিত জনবলের অভাবে ক্রমাগত ধুকতে থাকলো দেশ ... সেই সুযোগে সুবিধাবাদি কিছু লোক তাদের সুবিধার জন্য দেশ নিয়ে খেলতে শুরু করলো ... সেই শুরু তারপর থেকে চলছেই ... আজ এ করছে তো কাল ও ... তা না হলে মাত্র ৪০ বছরে রাজনীতি ছাড়া অন্য সব ব্যাপারেই মোটামুটি আমরা মাথা উচু করেছি ... কিন্তু এই ব্যাক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থের কি শেষ নেই ... এর শেষ কোথায় ... !!!
এই ব্যাপার গুলোই পেলাম এই কলামটাতে ... তাই ভাব্লাম শেয়ার করি ---
খোলা কলম : আব্দুল কাইয়ুম: সাংবাদিক।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় দবির ভাইসহ দু-তিনজন নেতার সাময়িক থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব পড়ল দীপ্তেন্দু দের ওপর। তিনি তখন কলকাতায় সিপিআইয়ের একজন সার্বক্ষণিক কর্মী। তাঁর আয়-উপার্জন তেমন কিছু নেই। তাও তিনি সাহস করে এগিয়ে গেলেন।
যা আছে তাই দিয়ে চালিয়ে নেবেন। সকালে নাশতার জন্য সামান্য ভাত আর ডালের আয়োজন করলেন। দবির ভাই একমুঠো ভাত খেয়েই বললেন, ‘প্যাট ভইরা গেছে, আর কিছু লাগব না। ’
এ পর্যন্ত বলে দীপ্তেন্দু বাবু এক রহস্যময় হাসি দিলেন। তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল কলকাতায় সিআইটি রোডে রণেন্দ্রনাথ মিত্রের বাসায়।
সবাই তাঁকে মোহন নামে চেনে। প্রয়াত রমেন্দ্র মিত্র ও ইলা মিত্রের ছেলে। মোহনদার বিশেষ অনুরোধেই দীপ্তেন্দু বাবু ৪০ বছর আগের গল্পটি সবিস্তারে বর্ণনা করেন। দবির ভাই ছিলেন ন্যাপের নেতা। তিনি কিন্তু স্বল্পাহারী ব্যক্তি ছিলেন না।
এখানেই গল্পের মূল কথা। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭২ সালে ঢাকায় বেড়াতে এসে দবির ভাইয়ের বাসায় দীপ্তেন্দু বাবু আবিষ্কার করেন, অন্তত দেড় ডজন আটার রুটি আর সঙ্গে ডিম না হলে দবির ভাইয়ের সকালের নাশতা হয় না। কিন্তু একাত্তরে দবির ভাই মুক্তিযুদ্ধে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। সেখানে তিনি কেন আয়েশি খাবার খাবেন?
এই ছোট্ট গল্পটা শুনতে শুনতে ভাবছিলাম, দবির ভাইয়ের সেই আদর্শ আজকের রাজনৈতিক নেতারা কতটা ধরে রাখতে পেরেছেন? গত ৪০ বছরে আমরা কি বড় হয়েছি, না পেছনে সরে এসেছি? একাত্তরে আমরা কেউ নিজের জীবনের কথা চিন্তা করিনি। ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বা লাভের কথা ভাবিনি।
লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছিলাম। কিন্তু আজ টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, নদী দখল, দলবাজি ও হাজার রকম অপকর্মে রাজনীতি অনেক নিচে নেমে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে রাজনীতি ছিল মূলত আদর্শভিত্তিক। কিন্তু আজ রাজনীতি থেকে আদর্শ নির্বাসিত।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ, সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়ন, তথা বাম ধারার ছাত্র ও রাজনীতিকদের একটি অগ্রগামী দলের সঙ্গে আমরা কয়েকজন তরুণ ছাত্রনেতা আগরতলা হয়ে কলকাতায় যাই।
গেরিলা যুদ্ধ সংগঠিত করার জন্য সেখান থেকে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্পের দায়িত্ব নিয়ে আমরা ছড়িয়ে পড়ি। শুরুতে কলকাতায় দু-চার দিন ছিলাম। তখন প্রায় প্রতিদিন যেতাম রমেন মিত্র ও ইলা মিত্রের বাসায়। খুব আপন মনে হতো। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর রাজশাহীর নাচোলে জমিদার-জোতদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাধারণ কৃষকদের অধিকার আদায়ের জন্য তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন ইলা মিত্র।
এ জন্য পাকিস্তানের মুসলিম লীগ সরকারের পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। ১৯৫৪ সালে মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই ইলা মিত্রের কলকাতার বাসাই ১৯৭১ সালে হয়ে ওঠে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক নেতা-কর্মীর যোগাযোগের কেন্দ্র।
৪০ বছর পর কলকাতার সেই বাসায় যাই মোহনদার সঙ্গে দেখা করতে। প্রয়াত রমেন মিত্র ও ইলা মিত্রের অনুপস্থিতিটা বুঝতে দেননি তাঁদের ছেলে মোহনদা।
পুরোনো দিনের কত কথা হলো। রণেশ দাশগুপ্তের কথা আলোচনায় উঠল। আমরা ঢাকা কলেজে পড়ার সময় বংশালে দৈনিক সংবাদ অফিসে যেতাম রণেশদার কাছ থেকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির কথা শোনার জন্য। তখন ষাটের দশকের মধ্যভাগ। আইয়ুববিরোধী আন্দোলন চলছে।
ছাত্র আন্দোলনের তরুণ কর্মী হিসেবে রণেশদার প্রতিটি কথায় উদ্বুদ্ধ হতাম। এর আগে বাষট্টি সালে কিউবায় পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত মিসাইল স্থাপন নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রশিয়া) ও আমেরিকার মধ্যে সংকট ও বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিলে ঢাকা জেলা বার মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সভায় রণেশদা বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলেছিলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, কিউবা থেকে হাত গুটাও! তাঁর এই কথা সে সময়ের রাজনৈতিক কর্মীদের দারুণ আলোড়িত করেছিল।
সেই রণেশদা পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর কলকাতা চলে যেতে বাধ্য হন। রমেন মিত্রের বাসার কাছেই তিনি থাকতেন। তাঁর কথা উঠতেই মোহনদা একটা খুব তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার কথা বললেন।
একবার প্রয়াত কথাশিল্পী শওকত ওসমান রমেন মিত্রের বাসায় গিয়ে তাঁকে রণেশদার কাছে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে শওকত ওসমান শ্রদ্ধা নিবেদন করে রণেশদার সামনে ৫০০ রুপির একটি নোট রাখেন। রণেশদা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলেন, ‘কী হচ্ছে?’ শওকত ওসমান বিনীতভাবে বলেন, ‘এটা গুরুদক্ষিণা!’
জ্ঞানী-গুণী মানুষকে সম্মান জানানো ও শ্রদ্ধা করার বিষয়টি বাঙালির সহজাত প্রবৃত্তি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তো বটেই, তার পরেও ছিল। কিন্তু আজ আমরা কি সেই ঐতিহ্য ধরে অগ্রসর হতে পারছি? রাজনীতি এত কলুষিত হয়ে পড়েছে যে, কারও প্রাপ্য সম্মান দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক বিবেচনার অধীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মোহনদার স্ত্রী সুকন্যা মিত্র বারইপুর কলেজের অধ্যাপক। তাঁরা দুজনই বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে গত বছর সাউথ এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তেভাগা আন্দোলনে ঐতিহাসিক অবদানের জন্য ইলা মিত্রকে বাংলাদেশ সরকারের তরফে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয়। ইলা মিত্রের আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক মানের একজন ক্রীড়াবিদ।
স্প্রিন্টে সর্বভারতীয় অলিম্পিক দলে তিনি প্রথম বাঙালি হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন। তেভাগা আন্দোলনে ইলা মিত্রের ভূমিকাকে প্রধান উপজীব্য করে সাউথ এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনীতে একটি গীতিনাট্য বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দেখানো হয়। সেই অনুষ্ঠানে আরও কিছু আকর্ষণীয় উপস্থাপনা ছিল। সেসবের দারুণ প্রশংসা করে সুকন্যা মিত্র বললেন, সংস্কৃতির সৃজনশীল বিকাশে বাংলাদেশ লক্ষণীয় অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জন করেছে।
সুকন্যা মিত্রের কথায় সত্যতা আছে।
আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এখনো মাথা উঁচু করে আছে। আমাদের ব্যান্ডসংগীত প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সুনিপুণ সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে। কিন্তু সংগীত ও নৃত্যকলার সংস্কৃতিতে যে দেশ এত অগ্রগতি সাধন করেছে, সে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কেন পেছনে পড়ে আছে? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ নয়।
সংস্কৃতির শুধু রাজনৈতিক নয়, প্রশাসনিক দিকটাও দেখতে হবে। আমরা শিলিগুড়ি থেকে অন্য কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে জিপে যাচ্ছি দার্জিলিং।
হঠাৎ পুলিশ আমাদের গাড়ি থামাল। পথে ট্রাফিক সিগন্যাল না মানার জন্য এই বিপত্তি। কিছুক্ষণ পর পুলিশ জানাল, কাগজপত্র ঠিক নেই, গাড়ি আর যাবে না। আমরা মহা বিপদে। আরও প্রায় এক ঘণ্টার পথ বাকি।
এখন কী করি? আমরা ভাবছিলাম জিপওয়ালা নিশ্চয়ই টাকা-পয়সা দিয়ে একটা কিছু মিটমাট করে ফেলবে। কিন্তু না। সেটি হওয়ার নয়। ওরা গুর্খা ল্যান্ড নামে আলাদা রাজ্য গঠনের দাবিতে আন্দোলন করছে। নীতিতে অবিচল না থাকলে জাতীয় অধিকার আদায়ের আন্দোলন হয় না।
কিছুক্ষণ পর দার্জিলিং পুলিশের একটি জিপ এল। সবার মালপত্র উঠিয়ে নিয়ে পুলিশের গাড়ি আমাদের দার্জিলিং পৌঁছে দিল, আর অনুমোদনবিহীন জিপগাড়িটি চালকসহ পুলিশের হেফাজতে আটক থাকল।
আমাদের দেশের পুলিশ যখন এ ধরনের প্রতিটি অনিয়মে দায়িত্ব নিয়ে প্রতিকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করবে, যখন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সমঝোতা ও সহনশীলতা প্রতিষ্ঠা পাবে, তখন বলতে পারব, আমরা অনেক বড় হয়েছি।
আব্দুল কাইয়ুম: সাংবাদিক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।