আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামুতে ধূলিঝড় ও আমাদের বদনা বিয়ে



আমার হাতে একটা কটকটে লাল রঙের বদনা। মাথার উপর সূর্য। পাড়ার দোকানে রাফি ভাই তার দলবল নিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। আমি খুব ভয়ে ভয়ে তার পাশ দিয়ে এগুচ্ছি। কোনভাবেই বদনাটা লুকানো যাচ্ছে না।

সুমনের উপর রাগে আমার মাথায় আগুন ধরে যাবার অবস্থা। আমার হাতে বদনাটা ধরিয়ে দিয়ে কার সাথে যে গুজুর গুজর করছে! তাড়িতাড়ি কথা শেষ কর থাপ্পর দিয়া যদি তর কানের পট্টি লাল না করছি। অল্প বয়সের পোলাপান নিয়ে এই এক জ্বালা মোবাইলে কল আইলেই তাগো আর হুস থাকে না। ভেবেছিলাম রাফি ভাই আমাকে নিয়ে হল্লা করে উঠবেন। কিন্তু না তিনি এক অদ্ভুত দৃষ্টি দিয়ে আমার গতিবিধ অনুসরন করলেন।

তার মাথা প্রায় ১৮০ডিগ্রি কোণে ঘুরে গেল। রাফি ভাই যে দোকানটাতে বসেছেন তার আরেকটা প্লট পরেই ‘বিবি হাওয়া’ ভিলার তিন তলায় মিনুদের বাসা। রাফি ভাইয়ের আড্ডা গুরুত্বপূর্ণ কারণ মিনু। মিনুকে আমারও ভাল লাগে। আল্লা আল্লা করছি মিনু না আবার দেখে ফেলে।

রাফি ভাই দেখছে সমস্যা নাই মিনু দেখে ফেললে প্রেসটিজের ব্যাপার। সুমন আমার ভাগিনা গতকাল রাত ১২টায় গ্রাম থেকে তার আগমন ঘটেছে আমারদের বাসায়। মুখে কিছু দাড়িগোঁফ গজিয়েছে সাম্প্রতিক। যতদূর খবর জানা গেছে, কৃতিত্বের সাথে পরপর দুইবার কাশ এইটে ফেল করেছে সে। স্কুলের সামনে মনু মিয়ার দোকানে তার আড্ডা।

সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তার ডিউটি। স্কুলের মেয়েরা চকলেট, টফি, দুপুরের টিফিন মনু মিয়ার দোকান থেকে কিনে নিয়ে যায়। নিশ্চিত কোন কুকর্ম করে আমাদের বাসায় তার আগমন। পূর্বের অভিজ্ঞতা তাই বলে। বিষয়টা নিয়ে সুমনের সাথে কথা বলা হয়নি কারন ব্লগ নিয়ে খুব উত্তেজিত আছি।

বদনা বিয়ার আইডিয়াটা তার মাথা থেকে এসেছ। আজ বিকেলে বদনা বিয়ে হবে আমার রুমে। কীভাবে আইডিয়াটা ডেভেলপ করলো তার পরম্পরা নিম্নে বিবৃতি হলো: সকাল ১০টা। আমি কম্পিউটারের সামনে বসা। সুমন এসে পাশের খাটে বসল।

‘মামা’ ‘হু’ ‘কথা আছে’ ‘এক শালার পুতে জাফর ইকবল স্যার নিয়া পোস্ট দিছে’ আমি হুংকার দিলাম, নেগেটিভ পোস্ট ‘হুম দাঁড়া একটা মন্তব্য দিয়া দিই, এরা জাফর স্যাররে পাইছে কি?’ ‘মামা’ ‘হু’ ‘জাফর স্যার কি তোমাদের কলেজে পড়ায়?’ সুমন মনে করেছে জাফর ইকবাল স্যার বুঝি আমাদের কলেজের শিক্ষক। ‘আরে নারে গাথা উনি হলেন স্যারদের স্যার” ‘মামা’ ‘হু...ওফ ড. ইউনুসরে নিয়া ওই...পুতে, আরে ইউনুস তরে কামড়াইছে নাকি’ আমি দাঁত কিড়মিড় করে উঠলাম। ‘খালি তো প্যাচাল পারস কোন দিন গরিব মানুষরে ১০০ টাকা দিয়া দেখছস নাকি। ভাব দেখে মনে হয় তুই দাতা হাতেম তাঈ’ সুমন তার মাথাটা কম্পিউটারের দিকে এগিে নিয়ে এলো। ভাবছে হচ্ছো কি? ‌'মামা, ডাক্তর ইউনুস চাচার কথা কইতাছ?' আমি সুমনের দিকে ক্রূদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালাম।

তারপর খেকিয়ে উঠলাম, ‌'আরে বেক্কল ড. ইউনুস তোদের গ্রামের হোমিওপাথের ওই ডাক্তর না। ড. ইউনুস আমাদের গর্ব। লেখাপড়া না করে করে তো গোল্লায় গেছিস!' ‘মামা’ ‘হু’ ‘মামা’ ‘হু। আরে যা বলার বল’ প্যান প্যান করিস না। ‘মামা তুমি কী করতেছ?’ ‘ব্লগে আছি’ ‘কীসে আছ?’ চিৎকার করে বললাম, ‘সামু বল্গে আছি।

’ ইচ্ছ করছিলো কী বোর্ড দিয়ে দুইটা ঘা লাগাই ওর মাথায়। আর কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু কারলাইল সাহেবের কথা মনে পড়ায় বললাম না। দুইটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে মেজাজ শান্ত করলাম। কারলাইল সাহেব বলেছেন, 'Speech is great, but silence is greater.” ‘মামা’ ‘হু’ ‘সামু বলগে কী হচ্ছে?’ ‘ধূলিঝড়’ ‘ধূলিঝড় কী মামা?’ ‘ধুলিঝড় হলো সেইসব ঝড়, বাতাসে অনেক ধূলাবালি থাকে। সেই ধূলা তোর চোখে এসে পড়ে, তখন তুই চোখ খুলতে পারিস ন্ াআর চোখ না খুললে হাটতে পারিস না।

’ কী বুঝলো কে জানে। সুমন চুপ করে খাটে বসে রইল। আমি একটু পরে আবার লাফিয়ে উঠলাম। ‘সাকিবের নিয়ে একটা পোস্ট আসেছে। ’ ‘মামা’ ‘হু’ আমার চোখ পোস্টের লেখায়।

পজিটিভ পোস্ট। ‘একটা কথা বলি রাগ করবে না তো?’ ‘না’ আমার এক বন্ধুর সাথে আমার তর্ক হইছ। ও বলে শাকিব খান ঠোঁটে লিপিস্টিক দেয়। কথাটা কী ঠিক?’ ‘কই ক্রিকেটার সাকিব...কই শাকিবা খানম। ’ মেজাজ চরম গরম হল চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠলাম।

কিন্তু ধপ করে বসে পড়লাম। সম্ভবত কারলাইল সাহেবের কথাটা আবার মনে পড়াতেই। ঘটনাটা ঘটলো তখন। আমার চেয়ারের তিন নম্বর পায়াটা লুলা ছিলো, সেটা ভেঙে আমি চিৎপাত। চেয়ারের পেছনে একটা কাপড় ভর্তি আলনা ছিল সেটা পাশের পানি ভর্তি বালতির উপর পড়লো।

সুমন তাড়াতাড়ি আমকে তুলতে ছুটে এলো। ঝটকা দিয়ে তার হাত সরিয়ে দিলাম। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। কুনুইএ চোট পেয়েছি। ব্যাথায় চিন চিন করছে।

কিছুক্ষণ পর। আবার ‘মামা’ ‘হু’ ‘তোমার মেজাজ খুব গরম আছে’ ‘হু’ ‘খুব গরমে কী করতে ভার লাগে বলতো?’ ‘আইসক্রীম খেতে’ আমি বললাম। ‘না মামা খুব গরমের পর ঝুম বৃষ্টি ভাল লাগে’ আমি মাথাটা অন্যদিকে ঘুরিযে নিলাম। হ্যাঁ তীব্র গরমের পর একটা বৃষ্টির চেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে। বৃষ্টি...বৃষ্টি...বৃষ্টি’ সুমন আমাকে বললো যে যখন খরা হয, তাদের গ্রামে বদনা বিয়ের আয়োজেন করা হয়।

চৈত্র বৈশাখের খরায়, পানির অভাবে যখন মাঠঘাট ধু ধু করে তখন গ্রামের মেয়েরা বৃষ্টির কামনা বদনা বিয়ার আচারটি পালন করে। ঠিক এই কাজটি আজকে আমরা করতে যাচ্ছ। তবে মেয়েদের পরিবর্তে আমরা নিজেরাই। ব্লগের উত্তাপ থেকে রেহাই পেতে ও সৃজনশীল সামু ব্লগের প্রত্যাশায় সুমন আমাকে নিয়ে বদনা বিয়ার আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই অনুষ্ঠানে আমরা একটা শ্লোক পাঠ করবো যেটা সুমনের কাছ থেকে আমি শিখে নিচ্ছি।

“দেয়ারে তুমি অধরে অধরে নামো। দেয়ারে তুমি নিষালে নিষালে নামো। খরের লাঙল যার রইল হাইলা চাষা রইদি মইল, দেয়ারে তুমি অরিশাল বদনে ঢলিয়া পড়। ” সে অবশ্য ব্লগ সম্পর্কে কিছুই বুঝে না। তবে তার মামার মাথা ঠান্ডা করার জন্য এই পদ্ধতিটাই তার মোক্ষম মনে হয়েছে।

আমিও রাজি হয়েছি। এই জন্যই বদনা কিনে আনা। কিছু খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ বিকেলেই বিয়া। প্রিটি হাশহাশ ব্যাপার।

আমার আর সুমনের মধ্যে থাকবে। তবে আমি ভাবছি রাফি ভাইকে দাওয়াত করবো। উনি বদনা হাতে আমার আগমনের যে দৃশ্য অবলোকন করেছেন তা যে একটা মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তা জানানো নিতান্ত প্রয়োজন মনে করছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।