আমি এক যাযাবর
খুব ইচ্ছে ছিল দার্জিলিং থেকে আবারো সিকিম ঘুরে আসার। এমনিতেই বাংলাদেশীদের জন্য সিকিম আসা খুব রিস্কি(পরিচয় লুকিয়ে আসতে হয়),ইদানিং সেটা প্রায় অসম্ভব। প্রচন্ড কড়াকড়ি সিকিম বর্ডারে। তারপরও একটা ব্যবস্থা করে ফেলেছিলাম। সেটাও ভেস্তে গেল যখন জানলাম সিকিম আবার অশান্ত হয়ে পড়েছে।
পরে ভাবলাম তাহলে আবার নেপাল যাই। আমার সঙ্গীর আবার কখনো নেপাল যাওয়া হয়নি। শিলিগুড়ি পৌঁছে দেখি সেটাও হচ্ছেনা। দু'দিনের বন্ধ শুরু হয়েছে নেপালে। এখন নতুন করে আবার প্ল্যান করতে হবে।
বিকেলে পরিচিত কিছু বন্ধুবান্ধব ছিল ওদের সাথে দেখা করলাম। বিধান মার্কেট ও হংকং মার্কেট ঘুরে ঘুরে শপিং করলাম সামার সেলে। শেষে ওদের পরামর্শে ঠিক করলাম এবার তাহলে ডুয়ার্সেই যাব।
শিলিগুড়ি থেকে চালশা যাওয়ার পথে এরকম দিগন্ত বিস্তৃত অসংখ্য চা বাগানের দেখা পাওয়া যায়
পরদিন সকাল ৮টায় শিলিগুড়ি থেকে ট্রেন। গন্তব্য ৬১কিঃমিঃ দুরত্বের চালশা।
রিসোর্ট কনফর্ম করা হয়েছে শিলিগুড়ি থেকেই। এক পাশে দার্জিলিং থেকে নেমে আসা উদ্ধত পাহাড় অন্য পাশে সুবিশাল সব চা বাগান পেড়িয়ে পৌছতে এক ঘন্টার মতো লাগলো। চালশা পৌঁছে পড়লাম আর এক বিপদে। রিসোর্ট কনফার্মেশের রিসিট খুঁজে পাচ্ছিনা। ওখানে এড্রেস সহ ডিটেইল্স ডিরেকশান দেওয়া ছিল।
এখন কি করি। ফোন করতে গিয়ে দেখি ফোনে ব্যালেন্স নেই। পুরো চালশা ঘুরেও কোন ফোন বুথ পেলাম না। শেষে একজন কে অনুরোধ করে তার মোবাইল থেকে ফোন করে শিলিগুড়িতে জানালাম যে আমাদের রিসিট হারিয়ে ফেলেছি এবং এটা যেন রিসোর্ট ম্যানেজার কে জানিয়ে দেওয়া হয়।
চালশা থেকে এবার বাসে করে লাটাগুড়ি।
এখানেই আমাদের কাঙ্খিত ডুয়ার্সের গরুমারা ন্যাশনাল পার্ক। ৮০ বর্গকিঃমিঃ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই পার্কটিকে ১৯৯২ সালে ভারত সরকার ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে ঘোষনা করে। লাটাগুড়ি নেমে ভ্যানে করে পৌঁছে গেলাম আমাদের রিসোর্ট পাঞ্চোলী। রিসোর্ট ম্যানেজার আমাদের হেনস্তার খবর ইতিমধ্যে জেনে গেছে। বাংলাদেশ থেকে আসছি শুনে সে তো গল্পের ঝাপি খুলে বসল।
সে জানাল তার পূর্বপুরুষও বাংলাদেশের এবং তা আমাদের এলাকার। তার মামাদের নাম বলার পর আমিও তাদের চিনতে পারলাম। সে এক মজার দৃশ্য। তার গল্প যেন আর ফুরোয়না।
পাঞ্চোলী রিসোর্ট
দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নিলাম।
বিকেলে বেরিয়ে পরলাম ডুয়ার্স ঘুরে দেখতে। ছোটবেলা থেকেই উপন্যাসের পাতায় পাতায় ডুয়ার্সের সাথে পরিচয়। সমরেশ,সুনীল,বুদ্ধদেবের কতো শতো উপন্যাসে আমরা ডুয়ার্সের গল্প শুনে আসছি। লাটাগুড়ি,ময়নাগুড়ি এই নামগুলির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। এবার মিলিয়ে নেওয়ার পালা।
হোটেল ম্যানেজার দিপু দা'কে বলে আগেই একটা ভ্যানের ব্যাবস্থা করে রেখেছিলাম। ভ্যান চালক হঠাত জানতে চাইল আমরা ট্রাইবাল ড্যান্স দেখতে যাচ্ছি কি না। ট্রাইবাল ড্যান্স দেখতে চাইলে আগে থেকেই হোটেলে জানাতে হয়। দিপু দা'র ভূলে এই ইভেন্ট টা দেখা হলোনা।
বনের ভেতরে প্রবেশ করছি
সন্ধ্যার মধ্যে রিসোর্টে ফিরে আসলাম।
সাথে নিয়ে আসলাম দিপু দা'র বন্ধুর বাগানের ১কেজি তাজা চা।
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।