আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডুয়ার্সে জঙ্গল সাফারী (শেষ পর্ব)

আমি এক যাযাবর

পরদিন ভোর ৫টায় উঠে গেলাম ঘুম থেকে। উঠে দেখি আরো ৪জন আমাদের সাথে সাফারীতে যাওয়ার জন্য তৈরি। ওরা কলকাতা থেকে আসছে। একই গাড়িতে আমরা ৬জন। সাথে ন্যাশনাল পার্কের একজন বন্দুকধারী গাইড।

গাড়ি ছাড়তেই একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতি হল। আমাদের গাড়ির সাথে আরো ১০-১২টি গাড়ি সঙ্গী হলো। এক সময় দেখলাম গাড়ি গুলি বিভিন্ন দিকে চলে যাচ্ছে। গাইড জানাল সাফারীটা হচ্ছে এক ধরনের ভাগ্যের খেলা। কার সামনে কখন কি পড়ে বলা যায়না।

কেউ হয়তো হাতি,বাইসন,হরিন,ময়ূর অনেক কিছুই দেখে আবার কারো ভাগ্য অতটা প্রসন্ন নাও হতে পারে। গাইডের গল্প শুনছি আর অধীর আগ্রহে দু'চোখ মেলে ধরেছি বন মাঝে। কখন পাব তাদের দেখা। হঠাত একজন আনন্দের আতিশয্যে চিৎকার করে উঠলো। দেখি একটু দুরেই গাছের ডালে একটা ময়ূর বসে আছে।

কাছে যাওয়া যাবেনা তাই দূর থেকেই জুম করে ছবি নিলাম। এবারে গেলাম যেখানে সচরাচর হাতি দেখা যায় এমন জায়গায়। বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করেও হাতির দেখা আর পাইনা। চলে আসব সেই সময় দেখি দূর থেকে একটা হাতি লুকিয়ে যেন আমাদেরই দেখছে সবাই চিৎকার করে উঠল। কিন্তু বেরসিক গাইড আমাদের উত্তেজনায় জল ঢেলে দিল।

সে জানাল কিছুতেই হাতির কাছাকাছি যাওয়া যাবেনা। কারন কোন কারনে বন্য হাতি একবার খেপে গেলে আর রক্ষে নেই হাতি কে টা টা করে আর একটু এগুতেই দেখি দুইটা হরিণ আমাদের চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পাড় হয়ে গেল। কত্তো ডাকলাম ওদের আর একবার আয়,তোদের সাথে একটু ফটোসেশান করি। কিন্তু আমার ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় কই ওদের। তারপর গেলাম হাতির অভয়ারন্যে।

যেটা কোর এরিয়া নামে পরিচিত। ওখানে সর্বসাধারনের প্রবেশ নিষেধ। দূর থেকেই হাতি'দের অবাধ বিচরন দেখতে হয়। দেখলাম একটু পর পর হাতির পাল আপন মনে রাস্তা পার হয়ে বনের এপার থেকে ওপার চলে যাচ্ছে। যেন নিজের বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে আপন খেয়ালে।

ওখান থেকে ফেরার পথে হঠাৎ করে গাইড আমাদের চুপ করিয়ে দিল। ড্রাইভারও সাথে সাথে গাড়ি বন্ধ করে দিল। বুঝলাম এইবার কিছু একটা পেয়েছি। দেখলাম আমাদের গাড়ির বেশ কিছু সামনে দিয়ে একটা বাইসন চলে যাচ্ছে। আমাদেরকে পাত্তাই দিচ্ছেনা মনে হয় দেখেনাই এমন একটা ভান করে চলে গেল।

গাইড আমাদের আগেই সাবধান করে দিয়েছিল বাইসন হচ্ছে এই বনে সবচেয়ে আকাঙ্খিত। সবসময় তার দেখা পাওয়া যায়না। তারচেয়েও বড় কথা এমনিতে সহজ,সরল,হাবা-গোবা দেখতে হলে কি হবে মাঝে মধ্যে এরাই স্বভাববিরুদ্ধ হিংস্র আচরন করে নাদুসনুদুস শরীর নিয়েও নাকি চিতা'র মতো লাফ দিতে পারে। আমরা সবাই স্ট্যাচু হয়ে গেলাম। উনি চলে যাওয়ার পর মনে পড়ল আরে ওটারতো ছবিই নেওয়া হয়নি।

অতি উত্তেজনায় ক্যামেরা বের করতে ভূলে গেলাম। অবশ্য ইতিমধ্যে শতো শতো ময়ূরের ছবি নেওয়া হয়ে গেছে। এই পার্কে সবচেয়ে সহজলভ্য হচ্ছে এই ময়ূর আর নাম না জানা বিচিত্র রকমের হাজারো পাখিদের দল। গাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে দলবেধে। যেন স্ট্রাইক করেছে কিছুতেই আমাদের যেতে দিবেনা আবার কখনো একলা এসে পাশে দাঁড়ায়।

মনে হয় ছবি তোলার জন্য পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাউকে শতো বার ডেকেও কাছে আনা যায়না আর কেউ এসে স্বেচ্ছায় ধরা দেয়। একসময় উত্তেজনার ট্রেন থামল। ইতিমধ্যে ৫ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। অনেক কিছু দেখলাম।

যেন এক রোমাঞ্চকর যাত্রা। হাজারো ছবির এক সম্মিলিত নোটবক। যাত্রাপ্রসাদ এবং চন্দ্রচূর ওয়াচ টাওয়ার থেকে বনের নৈশ্যব্দতার স্বাক্ষি হওয়া অসাধারন এক অভিগ্গতা। অসংখ্য পাখিদের ছন্দময় কিচিরমিচির যেন আমাদের আবার ফিরে আসারই আমন্ত্রন জানাচ্ছিল। কিভাবে যাবেন,কি করবেনঃ যদি কলকাতা হয়ে যেতে চান তবে আপনাকে শিয়ালদাহ্ থেকে কাঞ্চনজঙ্গা এক্সপ্রেস অথবা দার্জিলিং মেইলে এন্.জিপি আসতে হবে।

ওখান থেকে ট্রেনে নিউ মাল জংশন হয়ে লাটাগুড়ি। অথবা আপনি যদি শিলিগুড়ি হয়ে আসেন সেক্ষেত্রে আপনাকে ট্রেনে চালশা হয়ে লাটাগুড়ি আসতে হবে। আগে থেকেই রিসোর্ট রিজার্ভ করে আসা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারন অনেক সময়ই রিসোর্ট ফাঁকা পাওয়া যায়না। শিলিগুড়িতে এমন অনেক ট্র্যাভেল এজেন্সী আছে।

এখানে উল্লেখ্য জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পার্ক বন্ধ থাকে। প্রথম পর্বের লিঙ্ক Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।